#কান্নাভেজা_রাত
#১২তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
মেহেরুন আমায় অভয় দিলো।বললো,’ এই দেখো, আমি তোমার মাথা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। তোমার কিচ্ছু হবে না।জেসি, আমি যদি তোমার মতোই নিরব থাকি। চুপচাপ সহ্য করে যাই এইসব অ*নাচার। তবে শুধু আমার এবং তোমার আমাদের দুজনেরই শুধু ক্ষতি হবে না।ক্ষতি হবে আরো অনেক গুলো মানুষের। তোমার বাবা সহ আরো অনেক গুলো মানুষ হু*মকির মুখে থাকবে সব সময়। এই রাতুল তোমায়,আমায় এবং আমাদের মতো অনেক সাধারণ নিরীহ মেয়েদের করতলগত করে, অসহায় ছেলেদের টাকা পয়সা এবং ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তার স্বার্থগুলো হাসিল করবে।দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ তার শি*কারে পরিণত হবে। তাই, সময় থাকতেই এই সমস্যা আমাদের দূর করতে হবে।’
আমি বললাম,’ আমি এসবের কিছুই পারবো না বোন। আমার মোটেও ওরকম সাহস নাই। তাছাড়া কাউকে মে*রে ফেলা অপরাধ। জ*ঘন্য অপরাধ।এটা আইন হাতে তুলে নেয়া।আমি এটা কিভাবে করবো!’
মেহেরুন বললো,’ আইন? দেশে সব আছে শুধু এই জিনিসটা নাই।থাকলেও এটা রইলাম পক্ষে সব সময় কথা বলে।’
হাসলো মেহেরুন। তারপর নিজ থেকেই আবার বললো,’তোমাকে কিছুই করতে হবে না। তুমি শুধু ঘরটা চেঞ্জ করবে।’
আমি বুঝতে পারলাম না কিছুই।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ফ্যাল ফ্যাল করে।
মেহেরুন আমার হাত ধরে টেনে তার ঘরের ভেতর নিয়ে গেলো। তারপর বললো,’ আজ সন্ধ্যার পর পর শুয়ে পড়বে। এখানে আমার খাটে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবে।ঘুম এলে ঘুমিয়ে পড়বে।ঘুম না এলেও সমস্যা নাই।ঘুমের ভান করে পড়ে থাকবে। তুমি ঘুমেই থাকো অথবা ঘুমের ভানে সমস্যা নাই। এখানেই আরাম করে শুয়ে থাকবে। উঠতে হবে না তোমায়।এটাই হবে তোমার পক্ষ থেকে আমায় সাহায্য করা। আর ওদিকে বাকি কাজটা আমি একাই শেষ করবো।কাজ শেষ হলে পুলিশকে নিজ থেকেই কল করবো। পুলিশ আসবে। এসে আমায় অ্যা*রেস্ট করবে।তোমায় জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তুমি সাক্ষী দিবে। বলবে, আমার কথা।আমিই খু*নি ।ঠিক আছে? তুমি ভয়ে না বললে সমস্যা নাই।আমি নিজেই সব স্বীকার করে নিবো।বলবো, আমি খু*ন করেছি। কেন করেছি তাও বলবো।সো, এখানে তোমার বিন্দুমাত্র ভয়ের কারণ নাই!’
আমি কোন কথা বলছি না। পিপাসা পেয়েছে হঠাৎ।মনে হচ্ছে বুক পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পিপাসায়। আমি তাড়াহুড়ো করে জগটা হাতে নিলাম।জগ থেকেই ঢকঢক করে পানি খেয়ে দপ করে খাটের উপর বসে পড়লাম।
মেহেরুনও আমার পাশে বসলো।
আমি ভ*য় পাচ্ছি। অনেক বেশি ভ*য় পাচ্ছি। কেন জানি মনে হচ্ছে, মেহেরুন সত্যি সত্যি খু*ন করবে।রাতুলকে মে*রে ফেলবে ও। তার মাকেও মে*রে ফেলবে।মুখ বন্ধ করে দিবে।সব প্রমাণাদি মুছে দিবে। তারপর আমায় বি*পদে ফেলে রেখে চলে যাবে এখান থেকে। মাঝখানে আমি ফেঁ*সে যাবো। পুলিশ এসে আমায় অ্যা*রেস্ট করবে। কোন অপরাধ না করেও ফাঁ*সির দড়িতে ঝু*লতে হবে আমায়!
আমার চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। মেহেরুন অবাক চোখে তাকালো।ওর চেহারা এখন মায়াবী দেখাচ্ছে।ও আলতো করে আমার চোখ দুটো মুছে দিয়ে বললো,’ জেসি, আমি খা*রাপ মেয়ে না। বিশ্বাস করো আমায়। খারাপ মেয়ে হলে এক্ষুনি পালাতে পারতাম আমি।তোমায় রেখে পালিয়ে যেতে পারতাম।আমি পালিয়ে গেলে ও আমায় সহজে খুঁজে পাবে না। কারণ আমি সাহসী।আমি চৌকস।আমি ইচ্ছে করলেই যেখানে সেখানে গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারবো। কোন রকম সমস্যায় পড়বো না।দিন দিন মা*র খেতে খেতে এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মৃত্যুকে যে ভ*য় পায় না তার জন্য অনেক গুলো পথ আপনা আপনি খুলে যায় জেসি। সে অনেক দিন বাঁচে। এই যে ভ*য় পায় না এই জন্যই বাঁচে।আর যারা মৃত্যুকে ভ*য় পায়। এদের সব পথই বন্ধ থাকে।কারণ তারা ভ*য় পায়।ভাবে যে পথেই যাবে সে পথেই য*মদূত দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য।গেলেই জান ক*বজ করবে। এই ভ*য়ে তারা আর বাঁচার রাস্তা খুঁজে পায় না।তো আমি যে পালিয়ে যেতে পারি তবুও কেন থেকে যাচ্ছি এখানে? তোমার জন্য।আরো কিছু মেয়ের জন্য।আরো কিছু মানুষের জন্য।যেন রাতুল এই নোং*রা খেলাটা আর খেলতে না পারে। মেয়েদের পণ্য বানিয়ে যে তার ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিল, এটা যেন এখানেই শেষ হয়ে যায়। বিশ্বাস করো জেসি, তুমি বাঁচবে।মুক্ত হবে। কিন্তু আমি ব*লি হবো। কেন আমি ওকে শে*ষ করতে চাই? কেন আমি ব*লি হবো? কেন আমি নিজ থেকেই পুলিশের কাছে ধরা দিবো?কেন এসব করবো আমি? প্রশ্ন করো আমায়? প্রশ্ন করো তুমি।’
আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,’ কেন করছো এসব? কি লাভ তোমার এসব করে?’
জেসি আমার একটা হাত শক্ত করে ধরলো।বললো,’ সারা জীবন সিনেমায়, নাটকে, উপন্যাস,গল্পে কি দেখে এসেছো? নায়ক নায়িকার জীবন বাঁচায়। এই তো? ওসব কিছুতে কি প্রমাণ হয়? নারী দূর্বল? এই তো?
কিন্তু আমি প্রমাণ করে দিবো, নারী মহা শক্তিধর।নারী জীবন গড়ে দিতেও পারে। কে*ড়ে নিতেও পারে।নারী কক্ষনো দূর্বল নয়। সামান্য নয়। ফালতু নয়।পণ্য নয় । নারীকে মুক্ত করতে পুরুষ নায়কের প্রয়োজন নেই। নিজেদের মুক্তির জন্য তারা নিজেরাই যথেষ্ঠ।’
খুব সাহসের সঙ্গে কথাগুলো বললো মেহেরুন।আমি ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম।কি সুন্দর লাগছে ওকে।ওর দিকে তাকিয়ে ইতিহাসে পড়া প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদারের কথা হঠাৎ মনে পড়লো। চোখ ভিজলো আবার জলে। সেই জল আমি মুছে দিলাম না।
আমার আর ভয় লাগছে না।আমি হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে বললাম,’ আমি সন্ধ্যা হতেই চুপচাপ তোমার খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়বো।ঘুম না এলে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকবো।’
জেসি বললো,’ খুব ভালো।ভয় নেই।কারণ আজকাল বাইরে থেকে আসার সময় রাতুল আমার ঘরে উঁকি টুকি দেয় না। উঁকি দিলেও ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কাছে আসবে না আর।মাকেও খুঁজবে না। আজকাল তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকটি হলে তুমি। কারণ শুক্রবারে তোমায় নিয়ে তার বিরাট প্লান। তুমি আপাতত তার কাছে সোনার হরিণ।তো ঘরে ফিরে সবার আগে তোমার খোঁজটাই করবে।’
আমি বললাম,’ এটাই তো বি*পদের! ওই ঘরে গিয়ে সে দেখবে আমি নাই। তুমি। তখন তো বি*পদ হবে।তোমায় ধরে ফেলবে ও। তুমি তো কিছুই করতে পারবে না। তোমার হাতে অ*স্ত্র টস্ত্র কিছু নাই।তার হাতে আছে।’
মেহেরুন হাসলো। বললো,’ আমার কাছেও অ*স্ত্র আছে।’
আমি চমকে গেলাম। বললাম,’ কই? দেখি?’
মেহেরুন আরো শব্দ করে হাসলো।বললো,’ সবচেয়ে বড় অ*স্ত্র হলো মানুষের বুদ্ধি। বুদ্ধি হলে অ*স্ত্র না থাকলেও চলে।অন্যের হাতের অ*স্ত্র বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের হাতে নিয়ে আসা যায়।’
আমি আবাকই হলাম। বললাম,’ কিভাবে?’
মেহেরুন বললো,’ রাতুলকে আমি আগে কয়দিন ফলো করেছি।দেখেছি, ও বাইরে থেকে এসে সবার আগেই বিছানার নিচে ওর পি*স্তল রাখে। আমার স্বামীও এরকম ছিল। ওদের সবাই হয়তো এরকম। সারাক্ষণ বোঝা বয়ে বাসায় ফেরার পর হয়তো এই জিনিসটার উপর এরা বিরক্ত হয়ে পড়ে । এই জন্য হয়তো এরকম করে।কোমড়ের কাছ থেকে নামিয়ে রেখে দেয়।’
আমি বললাম,’ যদি আজ এরকম না করে? যদি পি*স্তল রাখার আগে তোমার কাছে যায়?’
মেহেরুন বললো,’ সমস্যা নাই। আমার গায়ে কাঁথা মুড়ি দেয়া থাকবে।ও কাছে গিয়ে প্রথমে ডাকবে। না উঠলে আরো কাছে এসে উপুড় হয়ে যখন কাথায় টান দিবে সঙ্গে সঙ্গে আমি হাত চালিয়ে ওর পেছন দিক থেকে এটা কেড়ে নিবো।আমি পারবো আশা করি।’
আমি বললাম,’ এটাও যদি না পারো?’
মেহেরুন ঠোঁট ফাঁক করে মৃদু হাসলো।ও একটু একটু ঘামছে। বিশেষ করে ওর কপাল আর নাকের ডগা ঘামছে।এতে ওকে এতো মিষ্টি দেখাচ্ছে ! মনে হচ্ছে, ওর বয়স সবে পনেরো ছাড়ালো। নতুন যৌবনে পড়েছে এই মেয়ে।
কিন্তু তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, তার মনেও সামান্য ভ*য় কাজ করছে। কিন্তু ভ*য়ের চেয়েও জয়ী হবে এরকম আত্মবিশ্বাসটাই মনে হচ্ছে ওর বেশি।
আমি বললাম,’ মেহেরুন, এটাতেও যদি ব্যর্থ হও?’
মেহেরুন বললো,’ শেষ একটা প্লান আছে!’
আমি বললাম,’ কি সেটা?’
মেহেরুন বললো,’ এখন এটা বলবো না।যদি ব্যর্থ হই প্রথম দুটিতে তখন এমনিই জানতে পারবে। নিজের চোখেই দেখবে তৃতীয় বা শেষ প্লানটা কি! তবে আশা করি প্রথম দুই প্লানেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। ভেতরটা কাঁপছে থরথর করে।কাঁপবেই তো।আজ এই বাসায় কা*রবালা হয়ে যাবে একটা! কেউ না কেউ ম*রবেই। হয়তো রাতুল নয়তো মেহেরুন। মাঝখানে আমি। আমিও হয়তো মরে যাবো। হয়তো বেঁচে যাবো।কি হয় জানি না। কিন্তু এরকম দুশ্চিন্তায় আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে।
‘
সন্ধ্যার পর পর মেহেরুনের ঘরে আমি এসে শুয়ে পড়েছি। দরজা ভেজিয়ে রেখেছি।যেন রাতুল এসে কোন রকম সন্দেহ না করে। এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ মেহেরুনের। মেহেরুন নিজেও আমার ঘরে চলে গেছে।সে বলেছে, ওখানে গিয়ে সেও শুয়ে থাকবে আমার মতোই। সমস্যা হলো, সময় বয়ে যাচ্ছে।রাত বাড়ছে। কিন্তু রাতুল এখনও ফিরছেই না!
রাতুল কি তবে আজ ফিরবে না? যদি না ফিরে রাতে, যদি দিনের বেলায় ফিরে তখন আমাদের কি পরিণাম হবে? ভাবতেই গা কাঁটা দিয়ে উঠলো!
‘
(আজও শেষ করা গেলো না।মায়া লাগছে শেষ করতে। আগামীকাল শেষ করে দিবো ইনশাআল্লাহ।)
‘
#চলবে