তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব ৩

0
797

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ৩
#মৌমিতা_শবনাম

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে হিমি। পড়নে কলাপাতা রং এর সিল্কের শাড়ি, চুল খোলা। অভিক টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিল স্যান্ডউইচ মুখে দিতে দিতে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই সেখানেই থমকে যায়। এই কালারের শাড়িতে হিমিকে অপরূপা লাগছে। স্যান্ডউইচটা টেবিলে রেখে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,–” হাই দিল মে ছুট লাগ গেয়া।”

পাশে তিতাস হোসেন বসে ছিলেন। ছেলের এমন কথা শুনে কেশে উঠলেন। বাবার কাশির শব্দে বিরক্ত হলো অভিক। হিমির উপর দৃষ্টি রেখেই বলল,–” খাবার গলায় ভেজেছে পানি খাও ছেলের রোমান্টিক মুড নষ্ট করতে কর্কশ শব্দে কাশছো কেন?”

অভিকের এই কথা শুনে তিতাস হোসেন বিষম খেলেন কাশ যেন আরও বাড়লো। ছেলের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললেন,–“লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো আমি তোমার বাবা হই।”

অভিক স্বাভাবিক ভাবে বলল, –” ওহ আচ্ছা। ”

ততোক্ষণে হিমি এসে চেয়ারে বসে পড়ে ভাগ্যিস সে অভিকের কথা শুনে নি। শুনলে বেচারি ভীষণ লজ্জায় পড়তো। অভিক সোজা হয়ে বসে আবারও খেতে থাকে। নয়না হোসেন হিমিকে দেখে মুখ বাকায়। তিতাস হোসেন বিষয়টা লক্ষ করে কিন্তু কিছু বলে না।

—————-
খাবার শেষ করে বসে টিভি দেখছে হিমি। অভিক খাবার শেষ করে কাজে বেরিয়েছে তার জুরুরি কাজ আছে। হিমির একটু দূরে নয়না হোসেন বসে আছে। হিমির দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ নয়না হোসেন বলেন,–” এই মেয়ে শোন।”

হিমি কিছু বলে না। সে নিজের মতো টিভি দেখছে। নয়না হোসেন এতে একটু কপাল কুচকে বলেন,–” এই মেয়ে ডাকছি শুনছো নাহ!”

হিমির কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মতো আরাম করে সোফায় বসে টিভি দেখছে। নয়না হোসেন এবার ভীষণ রাগলেন দাঁতে দাঁত চিপে চিৎকার দিয়ে বললেন, –” হিমি ডাকছি শুনতে পারছো নাহ।”

এবার হিমি শুনলো। বত্রিশ পাটি ভাসিয়ে সে নয়না হোসেনের দিকে তাকায়। নয়না হোসেন কপাল কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি বলল,–” কিছু বলবেন সাসুমা। ”

নয়না হোসেন বললেন, –” তুমি কি কানে কম শুনো? এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাও না?”

হিমি অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,–” কি আপনি আমায় ডাকছিলেন আমি তো শুনলাম আপনি এই মেয়েকে ডাকছিলেন আর আমার নাম এই মেয়ে নাহ তো আমার নাম হিমি।”

নয়না হোসেনের বিরক্তি আরও বেড়ে গেল মেয়েটা বেশি কথা বলে। নয়না হোসেন বিরক্ত হয়ে বলেন,–” শোন মেয়ে বেশি কথা বলো নাহ। যাও চা বানিয়ে আনো”

হিমি বলল নাহ কিছু চুপচাপ চা বানাতে চলে গেল। চা বানিয়ে এসে কাপটা নয়না হোসেনের সামনে ধরে বলে– ” মা চা।”

নয়না হোসেন একবার চায়ের দিকে তাকায় আরেকবার হিমির দিকে। ভ্রু কুচকে বললেন,– ” খেতে ভালো লাগবে তো?”

হিমি বলল,–” ইচ্ছে না থাকলে আপনার খেতে হবে না আমিই খেয়ে নিচ্ছি।”

এই বলে হিমি নিজে খেতে শুরু করলো। হিমির এমন আচরণে নয়না হোসেন বড় বড় চোখ করে তাকায়। হিমি নিজের মতো চা খেতে খেতে আবার রান্নাঘরে চলে আরেক কাপ চা এনে নয়না হোসেনকে দেয়। এবার নয়না হোসেন কোনো প্রশ্ন ছাড়া কাপ নিয়ে নেয়।এই মেয়ের বিশ্বাস নেই আবার এই কাপের চা খাওয়া শুরু করবে যদি কোন প্রশ্ন করে। হিমি হাসে একটু। নয়না হোসেন চা খেতে বললেন, –” শুনো মেয়ে আজকে আমার বোনের মেয়ে আসবে শিলা গেস্টরুম গুছিয়ে রেখো।”

হিমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে, –” কি বলেন আমার ননদিনী আসবে আচ্ছা নো প্যারা।”

নয়না হোসেন মুখ বাকায়। মেয়েটা অসহ্যকর একবার শিলা আসুক তারপর সে এই মেয়েকে তাড়াবে আর শিলাকে বাড়ির বউ করবে। মনে মনে শয়তানি হাসি হাসে নয়না হোসেন

——————
নিজের রুমে বসে ফোনে ফানি ভিডিও দেখছিল আর হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। তখন অভিক বাহির থেকে বাসায় ফিরে। নিজের রুমে ঢুকতেই হিমির হাসির শব্দে ভয় পেয়ে যায়। হিমিকে হাসতে দেখে একটা বড় শ্বাস ছাড়ে। বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে বলে,–” বউ যেভাবে হাসতেছো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”

অভিকের কন্ঠ শুনে সাথে সাথে নিজের ফোন রেখে সোজা হয়ে বসে। হিমিকে ভয় পেতে দেখে ঠোঁট মেলে হাসে। হিমি অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,–” আপনি কখন এলেন? ”

অভিক বলল,–” কিছুক্ষণ আগে। ”

এই বলে অভিক গিয়ে হিমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। হিমি অভিকের দিকে তাকায়। অভিক নিজের মাথা তুলে হিমির কপালে চুমু খায়। হিমি এটার জন্য প্রস্তুত ছিল নাহ। সে উঠে চলে যেতে নেয় তখন অভিক ওর হাত ধরে বলে, –” আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দিবে হিমশীতল। ”

এক জোড়া ক্লান্ত চোখ হিমির দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, –” আনছি তবে আমার নাম হিমশীতল নাহ।”

এই বলে হিমি চলে যায়। হিমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে এই সম্পর্কটা মেনে নিতে। অভিককে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করতে একটা বেইমানের জন্য সারাজীবন নষ্ট করার মেয়ে সে নয়। সে সুখী হবে একদিন নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সব সুখ দিবে তার বিশ্বাস।

———————-
হাফিজ আলম একা বসে আছেন চায়ের দোকানে। মেয়েটার জন্য তার মন কেমন করছে কিন্তু সে যাবেন নাহ। সে তার মেয়েকে বোঝাবেন যখন সে শুনেছে হিমি পালিয়েছে তখন তার কতটা কষ্ট হয়েছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে চমুক দিলেন হাফিজ আলম। তখন তার কাঁধে কেউ হাত রাখলো পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বাল্যকালের বন্ধু আসাদুল্লাহ। আসাদুল্লাহকে দেখে হাসলেন হাফিজ আলম। আসাদুল্লাহ পাশে বসে বললেন, –” কেমন আছিস হাফিজ?”

হাফিজ আলম আরেকটা চায়ের ওর্ডার দিয়ে আসাদুল্লাহকে বললেন, –” ভালো আছি তুই কেমন আছিস?”

আসাদুল্লাহ বন্ধুর পিঠে হাত রেখে বললেন, –“ভালো। হিমি মা কেমন আছে? ”

হাফিজ আলম বললেন, –” এই তো ভালো বিয়ে হয়েছে তার। ”

আসাদুল্লাহ অবাক হয়ে বললেন, –” কি বলিস হিমিকে বিয়ে দিয়ে দিছিস?”

হাফিজ আলম মাথা নেড়ে হ্যা বললেন। আসাদুল্লাহ এর যেন মন খারাপ হয়ে গেল তিনি আশেপাশে তাকিয়ে বললেন, –” আজ আসি রে পরে কথা হবে। ”

হাফিজ আলমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আসাদুল্লাহ উঠে চলে গেলেন। হাফিজ আলম কিছু বুঝতে না পেরে আসাদুল্লাহ এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

—————–
হিমি রন্নাঘরে সার্ভেন্টদের হেল্প করছিল রান্নার কাজে। ঘড়িতে তখন বিকেল৫ টা বাজে বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। হিমি নিজের হাত ধুয়ে শাড়ির আচলে হাত মুচতে মুচতে গিয়ে দরজা খুলে দেখে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। পড়নে থ্রিপিস, গায়ের রং শ্যামলা, হাইটে হিমির থেকে একটু খাটো হবে। হিমি নিজের শরীরের ঘাম মুছে বলে,–” কে আপনি?”

মেয়েটা হিমির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হিমিকে উল্টা প্রশ্ন করে বলে, –” হো আর ইউ? ”

হিমি ভ্রু কুচকে উত্তর দিতে যাবে তখনই নয়না হোসেন এসে হিমিকে সড়িয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। নয়না হোসেন মেয়েটাকে বলেন,–” কেমন আছো শিলা?”

হিমি বুঝতে পারে মেয়েটা শিলা,নয়না হোসেনের বোনের মেয়ে। তার একে অপরের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর নয়না হোসেন শিলাকে নিয়ে হিমিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় উপরে শিলার জন্য নাস্তা পাঠাতে। ওরা চলে যেতেই হিমি মুখ বাকিয়ে নয়না হোসেনের কথাটা ভেঙ্গালো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here