ফাগুন ছোঁয়া পর্ব ১৩

0
208

#ফাগুন_ছোঁয়া
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_সারা মেহেক

সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে রওনা হলো সকলে একসাথে। পৌনে আটটার মধ্যে শহরে পৌঁছানোর পর আদ্রিশ চলে গেলো হসপিটালে আর মিম চলে এলো হোস্টেলে। হোস্টেল হতে বই আর এপ্রোন নিয়ে ছুটলো লেকচার ক্লাসে। ফাইনাল প্রফের আর বেশিদিন বাকি নেই। এজন্য সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যস্ততার শেষ নেই। সবাই পড়ালেখা গোছাতে ব্যস্ত। কেউ কেউ ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের উপর পরীক্ষা করে নিজের হাত পাকাপোক্ত করছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত সময়টুকুতেও পড়ছে। মিমও আজ হতে রিটেনের জন্য পড়া শুরু করবে। তাই ভাবছে আজ আদ্রিশের কাছ থেকে রিটেনের কিছু টিপস নিয়ে আসবে। ভাইভার জন্য এক মাস সময় পাবে। তখন সব স্যারদের আলাদা আলাদা পরীক্ষার পদ্ধতি দেখে নিবে ভালোভাবে।

———

দেখতে দেখতে প্রফ চলে এসেছে। আগামীকাল মেডিসিন ফার্স্ট পার্ট রিটেন। এ নিয়ে ভীষণ ভয়ে আছে মিম। সে সব পড়েছে ঠিকই। তবে মনে হচ্ছে বারবার ভুলে যাচ্ছে সবকিছু। তার ভয় হচ্ছে, পরীক্ষার হলে যদি কোনো রোগে ডায়াগনোসিস, ট্রিটমেন্ট মনে না আসে তখন কি করবে সে!

এসব চিন্তাভাবনা আদ্রিশের সাথে শেয়ার করার পর আদ্রিশ মিমকে হোস্টেলের নিচে দেখা করতে বললো। মিম নেমে এলে তারা গার্ডমামার রুমে বসলো। প্রারম্ভেই আদ্রিশ জিজ্ঞেস করলো,
” পড়া মনে থাকছে না?”

মিম মৃদুস্বরে বললো,
” মনে থাকছে না বললে ভুল হবে। আমার মনে হচ্ছে যে আমার পড়া মনে থাকছে না। ”

” এমন কেনো মনে হচ্ছে?”

” জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে। এজন্য পড়া এগুচ্ছে না।”

” তাহলে এ মনে হওয়াটা বন্ধ করতে হবে।”

” পারছি না বন্ধ করতে। ”

” বন্ধ না করলে পড়া এগুবে কি করে?”

” জানি না। ”

” আচ্ছা? টেনশন হচ্ছে খুব?”

মিম জবাব দিলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রিশের কাঁধে মাথা রাখলো। কিছুক্ষণ সেভাবেই চোখ বুজে রইলো। আদ্রিশও কথা বললো না। বেশ খানিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ আদ্রিশের মনে হলো মিম কান্না করছে। কেননা তার কাঁধের অংশের শার্টটা ভিজে গিয়েছে বেশ খানিকটা। সে তড়িতে সরে বসলো। মিমের দু বাহু ধরে জিজ্ঞেস করলো,
” আরে কান্না করছো কেনো!”

মিম নত দৃষ্টিতে অল্পবিস্তর কাঁদছিলো। তার কান্নার কারণ অতিরিক্ত চিন্তা, ডিপ্রেশন। সে ধীর স্বরে বললো,
” আমার মনে হচ্ছে আমি পারবো না কিছুই।”

আদ্রিশ এবার খানিক হেসে বললো,
” পাগল মেয়ে! এ কারণে কেউ কাঁদে নাকি!”

মিম দৃষ্টি তুলে চাইলো। বললো,
” আমার ভয় করছে, যদি ফেইল করি আমি?”

” তো? ফেইল করলে কি? আবার ছয় মাস পরে বসবে।”

” আমি এই প্যারা আবার নিতে পারবো না আদ্রিশ। আপনি তো জানেন কি মানসিক চাপের মধ্যে এই দুই আড়াই মাস সময় কাটে। এই চাপ যদি ছয়মাস পর আরেকবার নিতে হয় আমি পারবো না। আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। আবার হসপিটালে আপনার মান সম্মানের একটা ব্যাপারও তো আছে। আমি ফেইল করলে আপনাট কলিগরা স্যাররা হয়তো বাঁকা চোখে দেখতে পারে। ”

মিমের এ অতিরিক্ত চিন্তা দেখে আদ্রিশ না হেসে পারলো না। মেয়েটা ভীষণ পাগল। কোথা থেকে কোথায় চিন্তা করে ফেলেছে সে!
আদ্রিশ মিমকে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
” এত চিন্তার জাহাজ নিয়ে কি করে ঘুরো বলো তো? তুমি এতো দূরে চিন্তা করে ফেলেছো!
এসব কিছুই হবে না বুঝেছো? স্যাররা জানে ফাইনাল প্রফে তারা অনেক ফেইল করায়। কেননা এরপর সেই স্টুডেন্টের হাতে একটা রোগীর দায়িত্ব থাকে। সে হিসেবে তাদের অনেক বাছবিচার করে পাশ করাতে হয়। এ নিয়ে এতো চিন্তার কি আছে? আর ফাইনাল প্রফ কিন্তু অনেকটাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। ভাগ্য ভালো থাকলে পাশ করবে। না হলে পরেরবার।”

” ফেইল করলে আমি অতোদিন বসে থেকে কি করবো? অন্য প্রফ হলে ক্লাস কন্টিনিউ করা যায়। কাউকে কিছু না বললে সে জানে না। কিন্তু এই প্রফে পাশ না করলে ঘরে বসে থাকতে হবে। ”

” ঐ ছয়মাস বেকার ঘরে বসে থাকতে হবে বলে এতো চিন্তা? ”

” হুম। বলা যায়।”

” আচ্ছা, তোমার চিন্তা দূর করে দেই। ঐ ছয়মাস বেকার বসে থাকতে হবে না। একটা ছোট্ট মেহমান নিয়ে আসি দুজনে। তখন ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সময় কেটে যাবে। পাশাপাশি পড়াশোনাও করবে।”

মিম কান্নার মাঝেও হেসে দিলো। আদ্রিশের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বললো,
” আমি মজা করছি না আদ্রিশ। আমার ভালো লাগছে না আর আপনি বসে আছেন বাচ্চা নিয়ে!”

” সত্যি বলছি তো। একটা বাচ্চা হলেই তোমার সব টেনশন শেষ!”

এবার মিম অকপট রাগ দেখিয়ে আদ্রিশকে ছেড়ে দিয়ে বসলো। ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে বললো,
” সবসময় মজা ভালো লাগে না আদ্রিশ। কি পরিমাণে ডিপ্রেসড লাগছে আমার আমি বলে বুঝাতে পারছি না। ”

আদ্রিশ মিমের কথায় খানিক গম্ভীর হলো। হাসি থামিয়ে মিমের বাহু ধরে নিজের কাছে এনে বললো,
” শোনো মিশমিশ, এতো টেনশন করো না। আমি তো তোমার পাশে আছি। সব ভালো হবে ইন শা আল্লাহ। চিল মুডে পরীক্ষা দাও। পাশ হবে ইন শা আল্লাহ। আর হ্যাঁ, এই পরীক্ষার দুই মাস কিন্তু আমাদের মাঝে লম্বা কোনো কনভারসেশন হবে না। কারণ আমি তোমার পড়ালেখার ক্ষতি হোক তা চাই না। এজন্য রোজ সকালে একবার আর রাতে একবার কথা হবে। ওকে?”

মিম চোখের জল মুছে বললো,
” ওকে ডান। ”

” আচ্ছা,এবার রুমে যাও। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। কালকে পরীক্ষা। রিভিশন দিয়ে দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমি আসি তাহলে।”

মিম মাথা নাড়ালো। আদ্রিশ আর কথা বাড়ালো না। চলে গেলো বাসায়। মিম চলে এলো হোস্টেল রুমে।

——————-

প্রফ শেষ হলো। দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাসের নির্ঘুম রাত, মুড সুইং, পাহাড়সম পড়াশোনার চাপ, অতিরিক্ত চিন্তার মাঝে বহু কষ্টে পরীক্ষা শেষ করলো মিম। এই আড়াই মাসে সে ঢের টের পেয়েছে ডাক্তার হতে হলে কত ধানে কত চাল গুণতে হয়। বহুদিন যাবত আদ্রিশের সাথে মন খুলে কথা বলতে পারেনি সে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে ভীষণ রাগ হতো তার। কিন্তু আদ্রিশকে কিছু বলতো না। তার রোজ মন চাইতো আরেকটুখানি কথা বলতে। আর পাঁচ মিনিট অতিরিক্ত কথা বলতে। কিন্তু আদ্রিশ কথা বলতো না। পরীক্ষা কেমন হয়েছে, রিভিশন কতদূর, খাওয়াদাওয়া হয়েছে কি না এ বাদে আড়াই মাসে তাদের তেমন কথা হয়েছে বলে মনে পড়ে না তার। এ নিয়ে তার ভীষণ অভিমান। এজন্য আজ পরীক্ষা দিয়ে এসে আদ্রিশকে কল করেনি সে। আদ্রিশের কলও রিসিভ করেনি। বরং আদ্রিশকে না বলে এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে চলে গিয়েছে সে।
এদিকে আদ্রিশের অবস্থা যায় যায়। সেই কখন থেকে মিমকে কল করছে সে। কিন্তু মিম কল রিসিভ করছে না। চিন্তায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। ফারহার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো মিম হোস্টেলে নেই। বরং বাসায় চলে গিয়েছে। এ কথা শুনে কোনোমতে ডিউটি শেষ করে নিজের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটলো সে।

.

রাত প্রায় দশটা বাজে। নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাচ্ছে মিম। আহ, কতদিন পর একটা শান্তির ঘুম দিতে পারছে সে। এখন নেই কোনো চিন্তা, নেই কোনো পরীক্ষা। শুধু আছে আরাম আর ঘুম। এই তো জীবন!

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো মিমের। আধো আধো চোখে আঁধারের মাঝে অনুভব করলো তার পাশে কেউ শুয়ে আছে। প্রারম্ভে সে ভেবেছিলো তার বোন শুয়ে আছে। কিন্তু পাশে শোয়া ব্যক্তিটার গা হাতড়ে হাতড়ে দেখলো এ কোনো মেয়ে মানুষের শরীর নয়। বরং বলিষ্ঠ এক পুরুষের শরীর। তৎক্ষনাৎ ভয়ে আতঙ্কে মৃদু গোঙানি করতে করতে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো মিম। দ্রুত উঠে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখলো মানুষটি আর কেউ নয় বরং আদ্রিশ।
এদিকে মিমের গোঙানির শব্দে আদ্রিশের কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেলো। লাইটের আলোতে চোখমুখ কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে। মিমের চেহারায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বুকটা ভয়ে ধুকপুক করছে। সে পাশে দাঁড়িয়ে আদ্রিশের উদ্দেশ্যে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,
” এভাবে ভূতের মতো পাশে শুয়ে ছিলেন কেনো? আর কখন এলেন আপনি?”

আদ্রিশ ততক্ষণে পুরোপুরি সজাগ হয়ে গিয়েছে। সতর্ক কণ্ঠে মিমকে বললো,
” আস্তে কথা বলো। বাইরে থেকে কি ভাববে বলো?”

মিম পূর্বের ন্যায় বললো,
” কি ভাবার আছে? এভাবে একটা মানুষকে না জানিয়ে কেউ আসে? আর আমি কি আপনাকে আসতে বলেছি?”

মিমের কণ্ঠে রাগ ও অভিমানের মিশ্র ছাপ স্পষ্ট। আদ্রিশ তার এ অভিমানিনীর কথায় মুচকি হাসলো। অতঃপর অকস্মাৎ শোয়া অবস্থাতেই মিমের কোমড় ধরে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দিলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
” এতো রাগ কেনো শুনি?”

মিম খানিক চমকে গিয়েছিলো। কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করে আদ্রিশের নিকট হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতো লাগলো। তবে আদ্রিশের শক্তির সাথে পেরে উঠলো না সে। শেষমেশ অগত্যা হাল ছেড়ে ওভাবেই পড়ে রইলো। রাগত কণ্ঠে স্তিমিত ভাব এনে বললো,
” কারণ কি আপনার জানার কথা নয়?”

” এতোদিন ভালোভাবে কথা হয়নি তাই?”

মিম জবাব দিলো না। তবে আদ্রিশ ঠিকই বুঝলো। বললো,
” তোমার ভালোর জন্যই এমনটা করেছিলাম মিশমিশ। এটা তো তোমার অজানা নয়। আমি চেয়েছিলাম তুমি যেনো সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়ার উপরে দাও। আমার উপরে নয়। আমাদের কথা বলার জন্য তো সময় পড়েই আছে। এই যে এখন অফুরন্ত সময়। এখন যত মন চায় তত কথা হবে। ”

মিম বুঝে আদ্রিশ তার ভালোর জন্যই এমনটা করেছিলো। কিন্তু একটু অভিমান না করলেই নয়। একান্ত এই পুরুষটির উপর একটুখানি অভিমান করা কি সাজায় না? এ মান অভিমানের পর্ব চুকিয়ে নিতে নিতেই তো একে অপরের প্রতি আরো অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একে অপরকে কিছুটা বেশি হলেও সময় দেওয়া যায়। এভাবেই সম্পর্কটা জিইয়ে থাকে।
মিম বুঝদার ভঙ্গিতে বললো,
” সব বুঝেছি। কিন্তু মাঝে মাঝে আমারও মন চাইতো আপনার সাথে মন খুলে কথা বলবো। অনেকক্ষণ কথা বলবো। আপনার কি হিসাব আছে কতদিন কথা হয় না ভালোভাবে?”

” হিসাব আছে। সে হিসাবের পাটই আজ চুকিয়ে দিবো। আজ সারারাত গল্প করবো। কালকে শুক্রবার। কালকে সারাদিন এখানে থেকে গল্প করবো তোমার সাথে। এবার হ্যাপি তো?”

মিম মুচকি হাসলো। প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং আদ্রিশকে আলতো করে আলিঙ্গন করলো। আদ্রিশও তার মিশমিশকে আদরে আলিঙ্গন করলো।

——–

রাত তখন প্রায় একটা বাজে। মিম আজকের শুকনো কাপড় গুছাচ্ছিলো। আর আদ্রিশ শুয়ে শুয়ে চুপচাপ তাকে দেখছিলো। হঠাৎ সে বলে উঠলো,
“আমার না ভীষণ বুকে ব্যাথা হয়। বুঝলে মিশমিশ?”
মিম কাপড় গোছাতে গোছাতে আদ্রিশের পানে আড়চোখে চাইলো। সে এ মুহূর্তে আদ্রিশের ভাবসাব বেশ বুঝতে পারছে। তাই তো আদ্রিশের সাথে সেও তাল মেলালো। বললো,
” ডাক্তার দেখান। আমাকে বলছেন কেনো?”

আদ্রিশ ঠোঁট উল্টে বললো,
” তোমাকে বলবো না তো কাকে বলবো?”

” আমাকে বলবেন কেনো? আপনি নিজেই একজন ফিউচার কার্ডিওলজিস্ট। আপনার নিজের ট্রিটমেন্ট নিজেরই করা উচিত।”

” এসব ট্রিটমেন্ট কি নিজে করা যায় নাকি!”

” তাহলে আফসার স্যারকে দেখান৷ আপনার বুকে ব্যাথার কারণ জেনে ওষুধও দিয়ে দিবে।”

আদ্রিশ এবার শোয়া হতে উঠে বসলো। দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
“আহ, ওসব ওষুধ-টষুধে কাজ হবে না। ”

মিম এবার কথায় বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলো। এই মজায় মজায় কথা এগিয়ে নিতে বেশ লাগছে তার। সে এবার হাসি চাপিয়ে বললো,
” তাহলে চলুন আপনাকে ওটি টেবিলে নিয়ে বুক-টুক কেটে দেখি, কি সমস্যা। কোনো আর্টারি, ভেইন ডিস্টার্ব করছে নাকি। কোনো বাল্বে সমস্যা নাকি।”

মিমের এহেন কথায় আদ্রিশের চোখ যেনো কপালে উঠলো। সে ভারী বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” কি সাংঘাতিক মেয়ে তুমি! আমাকে একদম ওটি টেবিলে নিয়ে গেলে!”

” আপনিই তো বললেন আপনার ওষুধে কাজ হবে না। তাই তো ভাবছি আপনার উপর কাটাকুটি করবো।”

” ইয়া আল্লাহ, এমন বেদরদি মেয়ে কেনো বানালে তুমি! স্বামীর উপর একেবারেই মায়াদরদ নেই। এক ব্যাথার কথায় ডিরেক্ট ওটিতে নিয়ে গেলো আমাকে। হায়!”

মিমের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু বেশ কষ্টেসৃষ্টে সে হাসি ঠেকিয়ে বললো,
” আহহা, আপনিই তো বললেন ওষুধে কাজ হবে না। ”

” তো? ওসব সার্জারীতেও কাজ হবে না৷ ”

” তাহলে কাজ হবে কিসে শুনি?”

আদ্রিশও এতক্ষণ মজার ছলে সব বলছিলো। কিন্তু এবার বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ একটা ভাব নিয়ে ঈষৎ ঠোঁট বাঁকা করে বললো,
” বুঝো না কিসে কাজ হবে?”

মিম ঠোঁট উল্টে বললো,
” উঁহু বুঝি না।”

আদ্রিশ তখন অকপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“উফ, এতো অবুঝ কেনো তুমি? এত অবুঝ মেয়ে ভালো লাগে না আমার। ”

মিম ভেঙচি কেটে বললো,
” তো ভালো লাগাতে কে বলেছে? ভালো না লাগলেও চলবে।”

“উঁহু। আমার চলবে না৷ যাই হোক এই অবুঝ মেয়েকেই আমার ভালো লাগে। ”

” তাহলে দোষটা তো আপনার। আমাকে ভালো লাগে যে!”

” হই এমন দোষে দোষী। কোনো আক্ষেপ নেই এতে। আচ্ছা তোমার কি বুকে ব্যাথা হয় না?”

মিম এবার আদ্রিশের পাশে বসলো। দু হাত বুকের উপর আড়াআড়ি রেখে বেশ ভাব নিয়ে বললো,
” উঁহু। আমি আপনার মতো রোগী না। আমি একদম সুস্থ সবল মানুষ।”

আদ্রিশ ভারী ব্যথিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” আমাকে দেখেও বুকে ব্যাথা হয় না?”

” আপনাকে দেখে বুকে ব্যাথা হবে কেনো?”

” ইশ, তুমি তো ভারী আনরোমান্টিক মানুষ।”

” আপনি বুঝি ভীষণ রোমান্টিক মানুষ?”

আদ্রিশ তখন মিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

” কেনো? কোনো সন্দেহ আছে? ”

মিম আঙুল দিয়ে সামান্য পরিমান বুঝিয়ে বললো,
” আছে একটু।”

আদ্রিশ তখন মিমের খোলা চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে দিতে দিতে বললো,
” তুমি বললে সে সন্দেহ দূর করে দিতে পারি। ”

আদ্রিশের এহেন কথায় মিম তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভেঙচি কেটে বললো,
” এত উপকার করতে বলিনি ডাক্তার সাহেব। আপনার বুকের ব্যাথা নিয়ে আপনিই থাকুন এখন। আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে, খেতে যাবো।”
বলেই সে চলে যেতে লাগলো। পিছে আদ্রিশ বলতে লাগলো,
” এই বউপ্রেমিকা, শুনে তো যাও! এই প্রেমিকের বুকের ব্যাথা একটু হলেও কমিয়ে দিয়ে যাও। আধমরা হয়ে আছি। তোমার ছোঁয়ায় হয়তো জীবিত হয়ে যেতে পারি। শোনো গো বউপ্রেমিকা!”

#চলবে

®সারা মেহেক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here