#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৪
#মোহনা_হক
-‘রুয়াত তুই না এখনো বিয়েতে রাজি না তাহলে এতো রাতে আমার দেবরের সাথে দেখা করতে এসেছিস কেনো?’
‘হাতে মোবাইল নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে ইনিমা। এক মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনে আয়াজ রুয়াত কে ছেড়ে দিলো। রুয়াত ছাড়া পাওয়ার পর ছিটকে দূরে সরে গেলো। যাকে নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছিল সে এখন এসে হাজির। ভয়ে মাথা তুলতে পারছে না। একবার যদি তার বোন বাবা মায়ের কাছে এসব কথা বলে দেয় নিশ্চয়ই তার মান সম্মানের ছিটেফোঁটা ও থাকবে। আয়াজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আছে। রুয়াতের মনে শুধু একটাই ভয় ইনিমা আয়াজের শেষ কথাটা শুনে ফেলেছে কিনা! প্রথম প্রথম কি ভালো অভিনয় দেখায়। তারপরই নিজের আসল রূপে চলে আসে। রুয়াত নির্লজ্জ ভাবতে লাগলো আয়াজ কে। আর এমন আকস্মিক ঘটনা হবে মাথায় ও আসেনি তার। একরাশ বিশ্বাস নিয়ে এসেছিলো সে এখানে।’
‘ইনিমা এগিয়ে গেলো আয়াজের সামনে।’
-‘তুমি এতো রাতে আমাদের বাসার সামনে?’
‘আয়াজ জাফরি কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো-‘
-‘আপনার বোন জাফরি কে দিয়ে কল দিয়েছিলো আসার জন্য। আর তার কথা কি ফেলে দেওয়ার মতো সাধ্য আমার আছে?’
‘ইনিমা হেসে দিলো। তার বোন যেনো মন থেকে মেনে নিক এটাই চাওয়া। আর এই ব্যাপারে মোটেও কিছু মনে করেনি সে। কিন্তু তৎক্ষনাত হাসি বন্ধ করে বললো-‘
-‘বিয়ের আগে এতো কিসের দেখাদেখি?’
‘ইনিমা তার বোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রুয়াত ভয়ে বিরবির করছে। এভাবে ফেঁসে যাবে ভাবেও নি।’
-‘রুয়াত তুই কেনো এতো রাতে আমার দেবর কে ডেকে এনেছিস? তুই জানিস বাবা মা জানলে কি সর্বনাশ হয়ে যাবে। বা ওই বাড়ির কোনো লোকেরা যদি এটা জানে মান সম্মান থাকবে আমাদের? মোটেও কাজটি ভালো করিস নি।’
‘কি উত্তর দিবে বোনকে সেটাই খুঁজছে রুয়াত। আশে পাশে তাকালো। আর আয়াজ দু’বোনের কাহিনী শুধু দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে। তার কিছু বলার ভাষা নেই। এখন মনেহচ্ছে এখানে সে অতিথি। ‘
‘রুয়াত ভয়ে কান্না করে দিলো। বোনের কান্না দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ইনিমা। সে তো শুধু দুষ্টুমি করেছে। কিন্তু তার বোকা বোন কি তা বুঝবে? ইনিমা তার বোনের চোখের পানি মুছে দিলো। বোনের কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘
-‘আরে আমি তো মজা করেছি। পাগলি মেয়ে কোথাকার। তোকে তো আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি, জানি তুই কেমন মেয়ে। কাঁদিস না আমি শুধু তোকে একটু ভয় দেখানোর জন্য বলেছি। আর তুই আমায় উপর সম্পুর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারিস, এসব কথা কেউ জানবে না। কাউকে বলবো না আমি।’
‘ইনিমা জাফরি কে কোলে নিলো। তারপর আয়াজের উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘শুনো এমপি মহোদয় আমার বোন কে মানানোর দায়িত্ব তোমার। যেহেতু তোমার মতামত নিয়েই বিয়েটা ঠিক হয়েছে। কেউ রুয়াতের থেকে কোনো রকম মতামত নেয়নি। আমার বোনের কষ্ট কিন্তু দেখতে পারবো না আমি। যদি তুমি না মানাতে পারো তাহলে এ বিয়ে হবে না। আর এতো রাতে দেখা করতে এসেছো, তোমাকে দাঁড়িয়ে রেখেছে অনেকক্ষন যাবত তাই তোমার উচিৎ ওকে এমনি এমনি ছেড়ে না দেওয়া। আর শুনো সব কাজ শেষ হলে আমার বোন কে নিজ দায়িত্বে বাসার দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসবে। একদিন সময় করে এসো বাসায়। এখন বললেও আসবে না জানি। তাই এখন আর বলবো না বাসায় আসার জন্য। খুব ভালো করেই চেনা আছে তোমাকে। আসছি আমি।’
‘ইনিমা জাফরি কে নিয়ে চলে যায়। এখন তো বিপদে পড়েছে রুয়াত। মনে শুধু একটাই আক্ষেপ এখন তার বোন কেনো সাথে নিয়ে গেলো না তাকে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ। তার প্রেয়সী যে ছটফট করছে তা ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে। এক হাত দিয়ে চুল হাত বুলাচ্ছে আনমনে। প্রেয়সীর এমন কাহিনী উপভোগ করছে সে। তার ভাবী খুব বড় একটা সুযোগ দিয়ে গেলো। অবশ্যই তার যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়োজন। ‘
‘রুয়াতের মনে হচ্ছে তার কপালে খুব জোড়ে কেউ আঘাত করলে ভালো লাগতো। এমন কপাল মোটেও পছন্দ হচ্ছে না তার। এক অসহনীয় যন্ত্রণা। এভাবে কি একটা পুরুষের সামনে কখনো দাঁড়িয়ে থেকেছে সে? তাও আবার এতো রাতে? আর তার বোনের কথা বলে ও বা কি হবে। সে তো নিয়ে গেলো না!’
‘আয়াজ রুয়াতের সামনে এসে দাঁড়ালো। গালে হাত দিয়ে মাথা তুলে দিলো। রুয়াতের চোখের কার্নিশে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। প্রেয়সীর এহেন অবস্থা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না সে। হাতের একটি আঙুল পানিগুলো মুছে দিলো পুরোপুরি।’
‘কন্ঠ মিইয়ে এলো আয়াজের। নরম স্বরে বললো-‘
-‘কিছু হলে কাঁদতে হবে এমন কোনো কথা আছে? আর কখনো যেনো অন্তত আমার সামনে কাঁদতে না দেখি। আর কাঁদলেও আমি দেখে ফেলার আগেই চোখের পানি মুছে ফেলবে।’
‘রুয়াত অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। এই ব্যক্তি কি সে যে প্রথম দিন এতো গম্ভীরস্বরে কথা বললো? রুয়াত আসলে চিনতে পারছে না আয়াজের এরুপ রূপ। চোখেও পলক পড়ছে না। যেনো এক অচেনা পুরুষ কে দেখছে আজ।’
‘প্রেয়সীর এমন আচরণে আয়াজ আবেগে আপ্লুত। জমিয়ে রাখা সব ভালোবাসা কি উগ্রে ফেলবে আজ। নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সে আয়াজ কি বের হয়ে আসবে? আয়াজ ছেড়ে দিলো রুয়াতকে।’
‘সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। এক ঘন নিঃশ্বাস বের হয়ে আসলো। আবারও রুয়াতের দু বাহুতে হাত দিয়ে বললো-‘
-‘তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আজ কালকের নয়। সে ২ বছর আগে থেকে ভালোবাসি আমি তোমায়। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের সাথে কম কথা বলতে পছন্দ করি বলেই তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনো কথা বলিনি। আর যখন ভালোবেসেছি তখন কথা না বলার কারণ হচ্ছে তোমার প্রতি আমার কোনোরূপ অধিকার ছিলো না। যেদিন জাফরির পৃথিবীতে আগমন ঘটে ওদিন থেকে ভালোবাসি তোমায়। ভাবি কে আমাদের বাসা থেকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর তুমি আর তোমার মা এসেছিলে কাঁদতে কাঁদতে। তোমার বোন ওটিতে থেকে যুদ্ধ করছে আর তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদছো রীতিমতো। তখন আমার মাথায় শুধু একটাই কথা এসেছিল একটা মেয়ের কান্না এতো সুন্দর হতে পারে কিভাবে। কি তোমার মনে হচ্ছে না আমি পাগল? হ্যাঁ আসলেই আমি পাগল। শুধুমাত্র তোমার জন্য।’
‘কিছুক্ষনের জন্য থামলো আয়াজ। আবার বলা শুরু করলো।’
-‘সেদিন তোমাকে কাঁদতে দেখে মনের ভিতর এক ঝড় বয়ে চলেছিলো। বিশ্বাস করো এর আগে তোমাকে শুধু আমি আমার ভাইয়ের শালীকা হিসেবেই দেখতাম। তোমাকে ভালোবাসার পর ও কখনো অন্য রকম নজরে দেখা হয়নি। তুমি যদি সেদিন না কাঁদতে এই বরফের ন্যায় আয়াজ কখনো গলে তরল পদার্থে পরিণত হতো না। না আয়াজ তোমাকে কখনো ভালোবাসতো। ওইদিনের পর থেকে তোমাকে নিয়ে আমার কল্পনায় এক নতুন জীবনের শুরু হয়। যেখানে তুমি আমি ব্যতিত আর কেউই ছিলো না। নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে তোমায় চেয়েছিলাম ভুলে যেতে, কিন্তু আমি ব্যর্থ। বরাবরের মতোই ব্যর্থ আমি। ভুলে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিলো আমার কাছে। ভালোবেসেছিলাম তাও অন্য পুরুষের মতো তার প্রেমিকার কাছে যেভাবে ভালোবাসার কথা বলে, সেভাবে বলতে পারিনি। আগের মতোই তোমার সাথে কথা বলা হতো না আমার। আমি ভাবতাম মানুষ কি বলবে আমায়! তুমি শুধু আমার ভাবীর বোন বলেই কথা বন্ধ রেখেছিলাম। আমার নিজের সম্মানের দিকে তাকিয়ে। এখন কেনো জোড় করেছি জানো? তোমাকে ছাড়া আয়াজ থাকতে পারবে না। পারছে না এখনো। অনেক কষ্ট হয়েছিলো আমার। না পেরে বাবা মা কে তোমার কথা জানাই। তারাও আলহামদুলিল্লাহ বলে দিলো। তোমার বাবা মা সবটা জেনেই রাজি হলো। তোমার মতামত কেনো নেওয়া হয়নি আমি বলেছিলাম। তোমার বাবার সাথে একান্ত কিছু কথা বলেছি আমি। আবার তোমার ভালোর জন্য ও তোমাকে এখন বিয়ে করিনি। সামনে এক্সাম তোমার তাই কোনো প্রেশার দিতে চাইনি তোমায়। যখন তোমায় ভালোবাসি তখন তুমি নিতান্তই ছোট একটা মেয়ে ছিলে। চাইলেও তোমাকে পাবো না তখন জেনে চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কঠিন হওয়ার আগেই তোমাকে আমার করে নিলাম। তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমার তোমার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। আমারটাই যথেষ্ট। এসব ভেবে নিজের মন কে ছোট করার কোনো মানেই হয় না প্রেয়সী। এই দু’মাসের ৩দিন চলে গিয়েছে। সময় ফুরিয়ে আসছে। এবার তুমিও একটু একটু করে ভালোবেসো। নাহলে আয়াজের ভালোবাসা একসাথে সব সহ্য পারবে না তুমি। কাল থেকে সম্পুর্ণ নজরদারি থেকে শুরু করে সব সময় না হোক কিছু কিছু সময়ে আয়াজ তোমার পাশে থাকবে। শুধুমাত্র তোমার মন পরিবর্তন করার জন্য। মানুষ বলে নিজের দুর্বলতা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই। আমি সব সময় কথাটা মেনে চলতাম। কিন্তু আজ তোমার জন্য সে নিয়ম লঙ্ঘন করেছি। আয়াজ তার প্রেয়সীর জন্য সব করতে পারে। আমি আমার সব দুর্বলতার কথা তোমায় বলেছি। ‘
‘রুয়াত আয়াজের কথা শুনে স্তব্ধ। আর এতোদিন তার বাবা মায়ের উপর অযথাই অভিমান করে বসেছিলো সে। কিছুক্ষণ আগে আয়াজের উপর জমে থাকা ঘৃণা ও বাতাসের সাথে উড়ে চলে গিয়েছে মনেহচ্ছে। একটি মানুষ এমন নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারে তা জানা ছিলো না আগে।’
‘আয়াজ রুয়াতের মাথাটা হালকা করে তার বুকের সাথে চেপে ধরলো। পরক্ষণেই বললো-‘
-‘এ স্পর্শ হারাম না প্রেয়সী। তুমি আমার বাগদত্তা। তোমার উপর আমার এখন সব রকম অধিকার আছে। একদম শুদ্ধ মনে স্পর্শ করেছি আমি তোমায়। যা পানির ন্যায় সচ্ছ। কখনো ভয় করো না আমার পেশা নিয়ে। আমি মা’রা গেলেও তোমাকে একদম অক্ষত রেখে যাবো। আমার শত্রুরা আমার কঠোর রূপ দেখে। সাধারণ জনগণ দেখে একজন নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে। আর তুমি আমায় দেখবে তোমার ভয়ংকর প্রেমিক হিসেবে।’
#চলবে…
[আসসালামু আলাইকুম। রুয়াতের থেকে কেনো মতামত নেওয়া হয়নি তা নিয়ে অনেকের রাগ হয়েছিল। আজ সব ক্লিয়ার করে দিলাম। এরপর থেকে আপনারা শুধু আয়াজের ভয়ংকর প্রেম দেখবেন🙊। মাথা ব্যাথার কারণে পার্টটা বড় করতে পারিনি। এইজন্যই আজ ছোট করে দেওয়া। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]