অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী দ্বিতীয়_অধ্যায় পর্ব_৩৫

0
436

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_৩৫
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

গভীর ক্ষ*ত শুকাতে বেশ সময় লাগবে। মিঠুকে দীর্ঘদিন রেস্টে থাকার কথা বলা হলেও সে সবার কথা শুনতে নারাজ। বাসায় আসার পর থেকে কয়েকবার বেরোনোর চেষ্টা করেছে। বাবা বলে দিয়েছেন,“তুই বের হলেই আমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবো। আর ফিরবো না।”

বাবার কথায় দমে যায় মিঠু। বিছানা ছেড়ে ধীর পায়ে হেঁটে দরজা চাপিয়ে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের ক্ষ*ত গুলো নিখুঁত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো। ব্যান্ডেজের উপর দিয়েই বাহু ছুঁয়ে দেখলো। ঘাড় কাঁত করে পিঠের ক্ষ*ত দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আয়নার সামনে থেকে সরে এলো। খালি গায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। হু হু করে বাতাস বইছে। কাঁটা দিয়ে উঠছে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ। মুঠোফোন হাতে নিয়ে নড়াচড়া করলো কিছুক্ষণ। গ্যালারি ওপেন করে একজোড়া মুখের ছবি বের করলো। বিষাদমাখা মুখটি জুম করে দেখে হাসলো মিঠু। আড়াল হতে তোলা ছবিটা। হাসপাতালে থাকাকালীন ছবি। এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট অরুর। সুহা এই ছবি সম্পর্কে অবগত নয়। মিঠু ঠোঁট ফাঁক করে আওড়ালো,“আপনার সাথে কেবল আমাকেই মানায়।”

★★★

সকাল থেকে অরুর ফোনে প্রায় ত্রিশটা কল এসেছে। এখনো তীব্র শব্দে ফোন বেজে চলেছে। ইচ্ছে করেই তুলছে না সে। ফোন বেজে থেমে যাওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই মিঠুর ডাক শোনা গেল।
“অরু।”

বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে অলস ভঙ্গিতে শুয়েছিল অরু। মিঠুর ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছালেও প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মিঠুর তাকে ডেকে পাঠানোর কারণ সম্পর্কে সে অবগত। তাকে কলে না পেয়ে রামি মিঠুর নাম্বারে কল দিয়েছে। সেজন্যই ডাকছে মিঠু। আরো কয়েকবার মিঠুর ডাক শোনার পরও অরু সাড়া দিলো না। মিঠু ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বলল,“রামিকে কল ব্যাক কর অরু। আমাকে তোর ঘরে যেন উঠে আসতে না হয়। আর একবার আমার ফোনে কল এলে তোকে এসে কে*লি*য়ে যাবো।”

ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো অরু। ফোন হাতে নিয়ে রামিকে কল ব্যাক করলো। সাথে সাথেই তার কানে বিস্ফোরণ ঘটলো।
“বে*য়া*দ*ব সকাল থেকে আমাকে এভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কী? কতগুলো কল দিয়েছি তোর হিসেব আছে? হিসেবটিসেব কিছু বুঝিস?”

অরু বলল,“না, আমি জীবনে স্কুলের ধারেপাশে গিয়েছি? সব হিসেব শুধু তুমিই বোঝ। আমি তো হলাম গণ্ডমূর্খ।”

“আসলেই তুই একটা বেকুব মহিলা।”

ছ্যাৎ করে উঠলো অরু। ক্ষ্যাপাটে স্বরে বলল,“এ্যাই তুমি আমাকে বেকুব মহিলা বলছো?”

রামি রাগত স্বরে বলল,“তোর কী মনে হয়, তুই কচি খুকি? তুই তো মহিলাই, তারউপর একটা বেকুব।”

“তুমি তো তাহলে বুইড়া খাটাশ। শেষমেশ আমার কপালে সে বুড়োই জুটলো, আফসোস!”

রামি বলল,“আমি এখনো হাত বাড়ালে মেয়েদের লাইন লেগে যাবে।”

অরু ঠেস দিয়ে বলল,“তো মেয়েদের নিয়েই থাকো না, আমার কাছে কী?”

রামি কড়া স্বরে বলল,“কল ধরছিলি না কেন?”

অরু নিভু নিভু গলায় তীব্র অভিমান নিয়ে বলল,“তাতে তোমার কী? কল না ধরলেই তো তুমি খুশি।”

হুট করেই সমস্ত রাগ উধাও হয়ে গেল রামির। নরম স্বরে বলল,“কাল ইচ্ছে করে কল কাটিনি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। এজন্য আমার কল ধরবি না? আমাকে তুই না বুঝলে কে বুঝবে, বল।”

অরু কটমট করে বলল,“কেন? তোমার পেছনে না মেয়েদের লাইন লেগে আছে? তারা বুঝি তোমায় বুঝতে চায়না?”

নিঃশব্দে হাসলো রামি। তার প্রতি অরুর এই ব্যাকুলতা তাকে ভীষণ তৃপ্তি দেয়। অরুর অভিমান ভাঙাতে বিবশ কন্ঠে বলল,“আমি তো তাদের চাই না, আমার শুধু অরু হলেই চলবে। তার জন্য বাকিসব ছাড়তে পারি।”

অরু তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,“পরিবারকেও?”

রামি শান্ত কন্ঠে বলল,“সেটা তুই কখনোই বলবি না, জানি আমি।”

অরুর মাথায় দুষ্টুমির ভূত চাপলো। বলল,“আমি ঘুমাবো এখন। পরে কল দিও।”

রামি কিছু বলার আগেই সে কল কে*টে দিল। তার অনেক আগের একটা ফেসবুক একাউন্ট আছে। পাসওয়ার্ডও লিখে রেখেছিল। সর্বপ্রথম একাউন্টের নাম পরিবর্তন করলো। ওই একাউন্ট দিয়ে প্রায় সবার সাথেই এড আছে। কিন্তু এর মালিক যে অরু, সে সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। অরু “হাই” লিখে সেন্ড করলো রামির একাউন্টে। দশমিনিট অপেক্ষা করেও রিপ্লাই পেল না। এভাবে একঘন্টা কে*টে গেল। অরু আবারও মেসেজ পাঠালো “কেমন আছেন?”

কোন রেসপন্স নেই। অরু মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। বিপত্তি বাঁধলো সন্ধ্যায়। রামি ফিরতি বার্তা পাঠিয়েছে, “কে আপনি?”

“আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।”

“পরিচয় দিন।”

“পরিচয় দিয়ে কী করবেন? আমি কী বলছি সেটা শুনুন। আপনার বউকে ইদানীং একটা ছেলের সাথে দেখা যায়। ঘুরাঘুরি, হাসাহাসি, হাত ধরে হাঁটা, রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করে। একে অপরকে মুখে তুলে খাইয়েও দেয়।”

“ধন্যবাদ।”
লিখে আর কোন মেসেজ করলো না রামি। অরু অপেক্ষায় আছে রামি তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলে কি-না! দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। টেনশন হচ্ছে রামি তাকে বিশ্বাস করবে তো! না-কি ফেইক একাউন্টের কথা বিশ্বাস করে বসে থাকবে!
রাতে রামি কল দিল। খুব স্বাভাবিকই তাদের কথা হলো৷ মাঝে একটু দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়াঝাটিও হলো। সব কিছুর মাঝেও অরু একটু অস্বাভাবিক আচরণ করে ফেলেছে। রামি তো জিজ্ঞেস করেই বসলো, “কী হয়েছে তোর? কিছু নিয়ে চিন্তিত?”

অরু ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আবার ফেইক একাউন্ট থেকে রামিকে নক করলো।
“স্ত্রীর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিলেন?”

রামি ফিরতি বার্তা পাঠালো,“আপনি কি সিঙ্গেল আছেন?”

এমন রিপ্লাই আশা করেনি অরু। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোনভাবে নিজেকে সামলে রিপ্লাই করলো,“হু।”

রামি লিখলো,“আমার একজন মানুষ দরকার, ভীষণ কাছের। যার কাছে আমি নিজেকে উজাড় করে দিতে পারবো। আমার স্ত্রীর মনে তো আমি নেই। আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?”

যত সময় যাচ্ছে অরুর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। মনে মনে রামির গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলছে। রামি তাকে অবিশ্বাস করে ফেইক একাউন্টের কথা বিশ্বাস করে বসে আছে! তবে সে দেখতে চাইলো জল কতদূর গড়ায়। দাঁত কিড়মিড় করে টাইপ করলো,“কেন নয়! অবশ্যই আমি আপনাকে সাহায্য করবো।” সাথে দুটো লাভ ইমোজি সেন্ড করে দিলো।

রামি আরও এক ধাপ উপরে গিয়ে দুটো কিস ইমোজি ছুড়ে মা*র*লো। তারপর লিখলো,“আপনাকে আমার ব্যক্তিগত মানুষ বানাতে চাই, হবেন? দিনেরাতে একশো একটা চুমু পাবেন।”

ফোঁসফোঁস করে উঠছে অরু। কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না। তবে এই ফেইক প্রেমকাহিনী চালিয়ে গেল। লিখলো,
“আপনি চাইলে আমি এখনই কবুল বলতে রাজি।”

রামি পরপর তিনবার কবুল লিখে পাঠালো। অরুও কবুল বলে দিল।

“আলহামদুলিল্লাহ বিবিজান, এখন থেকে আমাদের মাঝে আর কোন বাঁধা নেই।”

অরু শ্বাস চেপে রেখে লিখলো,“আপনার প্রথম বিবিকে কী করবেন? কিছু ভেবেছেন?”

“তার কথা মনে করে আমাদের সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট করতে চাই না। ওটা তো একটা খাটাশ মহিলা, আমার জীবনটা তেজপাতা করে খিঁচুড়ি রান্না করে ফেলেছে।
আমার মনে এখন থেকে শুধু তুমি থাকবে, শুধু তুমি।”

“আচ্ছা বাই, আমার না একটু কাজ আছে। পরে কথা বলবো।”

“সে-কি? আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো সুপ্রিয়া?”

সুপ্রিয়া! অরুর চোখ চড়কগাছ। কোনদিন তাকে এমন কোন নামে ডেকেছে? সবসময় তো তাকে দেখলেই কানাবগির ছা ছড়াটি শুনিয়ে দেয়। সাথে সাথে মেসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে গেল অরু। এখন আর তার কিছুই ভালোলাগছে না। হাতে ধরে নিজের শান্তি নষ্ট করলো।

রামি অরুর নাম্বারে কল দিল। ধরলো না অরু। রাগে তার শরীর রিরি করছে। অনেকক্ষণ ফোন রিং হওয়ার পর মেসেঞ্জারে বার্তা এলো,“বে*য়া*দ*ব কল ধরছিস না কেন? সকালের মতো কী শুরু করলি?”

অরু মেসেজ সিন করে থম ধরে বসে রইলো। রামি তাকে বে*য়া*দ*ব বলে সম্বোধন করে থাকে। তবে ফেইক একাউন্টে কেন বে*য়া*দ*ব বললো? আবার সকালের কথাও উল্লেখ করছে। সে কি টের পেয়ে গেল এটা অরুর একাউন্ট? না-কি ভুলে মেসেজ দিয়ে ফেলেছে। অরু না বোঝার ভান করে লিখলো,“আপনি আমাকে বে*য়া*দ*ব বললেন? আপনার সাথে ব্রেকআপ।”

“ফেইক একাউন্ট থেকে আমাকে উ*ত্ত্য*ক্ত না করে কল ধর, বে*য়া*দ*ব। তারপর তোর সাথে আমি ব্রেকআপ করছি।”

অরু এবার নিশ্চিত হলো রামি তার একাউন্ট সম্পর্কে অবগত। সে রয়েসয়ে টাইপ করলো,“তুমি আমাকে কীভাবে চিনলে?”

“আমি প্রথমে পাত্তা দেইনি। একটু আগে যখন আবার মেসেজ দিলি, আমি একাউন্টের পুরো ডাটা চেক করেছি। স্কুলের নাম আর জন্মদিন পরিবর্তন করতে ভুলে গেলি। সাথে ক্লাস নাইনের একটা ছবি আপলোড করা আছে। এমনি এমনি কি আর বেকুব মহিলা বলি! আমাকে পরীক্ষা করে কিছু পেয়েছিস?”

অরু নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেল। আর রিপ্লাই করলো না। রামিও সাথে সাথে কল দিয়ে বসলো। অরু রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো। তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রামি বলল,“এবার বল তো, তোর মাথায় দুদিন পর পর এসব ভূত চাপে কোথা থেকে?”

অরু উল্টো রাগ দেখিয়ে বলল,“অন্য কোন একাউন্ট থেকে মেসেজ এলেই রিপ্লাই দিতে হবে?”

“গুরুত্বপূর্ণ কিছুও তো হতে পারে। এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস? আচ্ছা তোকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি। দেখে বলতো কেমন হয়েছে?”

“কী”

রামি ক্যামেরার সামনে একজোড়া ঝুমকা তুলে ধরলো। অরুকে দেখিয়ে বলল,“পছন্দ হয়েছে?”

ঝুমকার গড়ন অরুর ভীষণ মনে ধরলো। বলল,“খুব পছন্দ হয়েছে।”

“আচ্ছা।” বলে দুলজোড়া নামিয়ে রাখলো রামি। দুজনের কথপোকথন চললো বেশখানিক সময়।

★★★

তরীর বাবা আর আয়েশা সুলতানার মাঝে অরু ও রামির বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হলো। দু’দিকের আলোচনায় তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন মিঠু, সুহার সাথে সাথে অরু আর রামির বিয়ের অনুষ্ঠানও সেরে ফেলবেন। মিঠু ঘরে বসেই ফোনে যোগাযোগ করে ছেলেপুলেদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। বাবার জন্য বেরোতেও পারছে না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। বিয়ের আগ পর্যন্ত তার বের হওয়া মানা। রামি ফিরবে দুদিন পর। তারপরই বিয়ের শপিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে সকলে। এদিকে অরুকে রামিদের বাসায় আসতে না করে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান না হওয়া অব্দি রামির থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। অরু বাধ্য মেয়ের মতো সবটা মেনে নিয়েছে।

খুশিমনে প্রচুর শপিং করে বাড়ি ফিরছে রামি। প্রতিবারই বাড়ি আসার সময় তার মনে ইদের মতো আমেজ থাকে। এবার খুশিটা দ্বিগুণ হলো। বাড়িতে আসার পরই তার খুশি খুশি মুখখানা চুপসে গেল। অরুর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। বিয়ে হতে এখনো কয়েকদিন বাকি। এতগুলো দিন কীভাবে থাকবে? কিছুতেই সে মানতে চাইলো না। সাদাদ ফিচেল হেসে বলল,“কেমন লাগে?”

“মীরজাফর, কোন কথা বলবে না তুমি। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছো? এসব যে তোমার কারসাজি, সেটা কি আমার অজানা?”

“তোর লজ্জা করে না বড়ো ভাইয়ের সামনে বউ বউ করছিস? ছিঃ!”

“এমনভাবে নাক ছিঁটকাচ্ছো, যেন আমি পঁচা ডোবা থেকে ডুব দিয়ে এসেছি! তোমার লজ্জা কোথায় থাকে, যখন আমার বউ নিয়ে টা*না*হেঁ*চ*ড়া করো। তুমি ছিঃ! তোমার চৌদ্দগোষ্ঠী ছিঃ!”

সাদাদ হুহা করে হেসে বলল,“তুই কি আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর বাইরে না-কি!”

“বাইরেই তো। তোমাকে দেখে তো কোনদিন মনে হয় নি তুমি আমাদের বংশের। তোমার মাঝে একটা প্লে-বয় ভাব। যা আমার বাপ, দাদা, তাঁর বাবা, তাঁর দাদা, কারো মাঝে আমি দেখিনি।”

“থাম্ তুই, যে ব্যাটা দাদাকেই দেখেনি, সে চৌদ্দ পুরুষ দেখবে কীভাবে? আর আমি প্লে-বয় না। আমার মন বিশাল। সবাইকেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ইরাটার জন্য পারিনা বুঝলি! পান থেকে চুন খসলেই আমাকে আর ঘরে জায়গা দেয়না। নয়তো গিয়ে মেয়ের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে।”

রামি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“আমার বারোটা বাজানোর জন্য তোমার একটা আমি ঠিকই বাজিয়ে ছাড়বো। শিওর থাকো, আজও তুমি ঘরে জায়গা পাচ্ছো না।”

“ভালো হবে না রামি! অরু কিন্তু আমার এককালের বউ। আমি তাকে তোর জন্য স্যাক্রিফাইস করেছি। আর সে তুই কি-না আমার জন্য বাঁশঝাড় রেডি করছিস? খবরদার ইরার কানে বি*ষ ঢালবি না।”
রামি ক্রুর হেসে সাদাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

অফিস থেকে ছুটি নেওয়া হয়নি। নিজের ডেস্কে বসে কাজ করতে করতে মিঠুর কথা ভেবে আনমনে হেসে উঠলো সুহা। অবনি সূঁচালো চোখে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলল,“আজকাল নেতাসাহেব কি কারো মনের ঘরেও রাজনীতি শুরু করলো না-কি!“

সুহা সচকিত হয়ে বলল, “কী উল্টোপাল্টা কথা বলছিস? আমি কি হাসতেও পারবো না?”

“সে আমি বলেছি না-কি! তবে হাসির কারণটা যে নেতাসাহেব, তা আমি বুঝে গিয়েছি।”

“বাজে বকিস না তো। চল ক্যান্টিনে যাই।”

অবনিকে নিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো সুহা। দুটো কফি অর্ডার দিয়ে টুকটাক কাজ নিয়ে আলাপ করলো। কফি এসে গিয়েছে। অবনির কল আসায় সে কফি হাতে উঠে একপাশে দাঁড়ালো। সুহা কফি মগে ঠোঁট ভিজিয়ে হঠাৎই ফোন বের করলো। ফটাফট হাতে কফি মগ নিয়ে একটা ছবি তুলে মিঠুর ইনবক্সে পাঠিয়ে লিখলো “কফি খাবেন?”

পরক্ষণে নিজের এমন ভিত্তিহীন কাজে লজ্জা পেল। মিঠু কী মনে করবে ভেবে ডিলিট করে দিল ছবি, মেসেজ দুটোই।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here