#হৃদয়ের_কথা
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
|৪|
আজ পনেরো ষলোদিন ধরে রিধিমার মন খারাপ। সম্রাটকে সে লাস্ট দেখেছিল নীলির সঙ্গে। হেসে হেসেই কথা বলছিল দুজন। সে জানেনা নীলি সম্রাটকে প্রপোজ করেছে কিনা। সম্রাটই বা কি উত্তর করেছিল কিছু জানে না। নীলিকে সরাসরি জিগ্যেস করেছিল নীলি হেসে খেলেই কথাটা ইগনোর করেছে। আর সম্রাট তো টুরে গেছে অফিসের কাজে। তাকে সরাসরি জিগ্যেস করতে পারেনি। রিধিমা ফোন দিয়েছিল পরশুদিন সম্রাট রিসিভ করেনি। সম্রাটের ফোনে বেশ কয়েক স্টিকার দিয়ে রেখেছে যেগুলো সবগুলো কান্না করার। সিন করে রিপলে করে নাই সম্রাট। নিজেকে বদ্ধ পাগল হওয়া থেকে কোনমতে আটকে রেখেছে রিধিমা। নিয়মিত প্রতি রাতেই তার কান্না পায়। কারণটা সম্রাট তাকে পছন্দ করে না ইগনোর করে এইসব আবিজাবি ভেবে।
স্কুল কলেজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। বেশকিছুদিন ধরে যায় না জ্বরের কারণে। আর একটা কারণ হচ্ছে ও যখনই কলেজ যায় ওর মনে হয় কেউ ওকে নজরে রাখছে সবসময়। এমনটা জারিফাকেও বলেছিল। জারিফা বাড়িতে জানাতে বলেছে। রিধিমা নিজেই জানায়নি সবাই অযথা টেনশন করবে তাই। সেদিনের পর নীলিও কেমন পাল্টে গেছে। বেশকিছুদিন কলেজ আসেনি। জারিফাকে সঙ্গে নিয়ে রিধিমা গেছিলো নীলির বাসায়। মেয়েটা আগের থেকেও মনমরা হয়ে গেছিলো। রিধিমা জারিফাকে পেয়ে এখন সবটা নরমাল। কিন্তু সব এবনরমাল ঘটনা এখন রিধিমার সঙ্গেই ঘটছে।
রিধিমা বেশ কয়েকবার কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আবার ডায়াল করতে গিয়েও কেটে দিচ্ছে। বকা খাওয়ার ভয় কার না থাকে। সম্রাটকে সে চিনে কাজে ডিস্টার্ব করলে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায়। এইতো কিছুদিন আগের ঘটনা সম্রাট ল্যাপটপে বসে কাজ করছিল। রিধিমা কফি হাতে এসেছিল। ও বারবার সম্রাটের জিনিস পত্র ছন্নছাড়া করছিল। সম্রাট এক ধমক দিয়ে বলে,
_ ওগুলো থেকে দুরে থাক! হাত দিবি না।
_ বয়েই গেছে হাত দিতে।
_ ভাইয়া আপনি বোরখা পড়ে চলাচল করবেন কেমন?
সম্রাট কফি ধরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল রিধিমার দিকে। মানে সে বোরখা পড়ে যাতায়াত করবে। সম্রাট যেন রিয়েকশন দিতে ভুলে গেছে রিধিমার বাচ্চামো কথায়।
_ রিধি তুই নিজের রুমে যা এখানে আজেবাজে বলবি না। কাজ করছি আমি।
রিধিমা ঠাই দাড়িয়ে রইল একপাও বের হয়নি রুম থেকে। সে সরাসরি সম্রাটের পাশে এসে বসে। সাদা টিশার্ট আর কালো টাওজারে সম্রাটকে অনেক সুন্দর লাগছিল। রিধিমা তো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সবটা।
একটু গলা ঝেড়ে আবারো বলে ওঠে,
_ পাশের বাসার অনামিকা আপুটা এসেছে না? ওই আপু আমার থেকে আপনার নাম্বার চেয়েছে ভাইয়া। শুধু তাই নয় ওইতো সামনের বাসার রুকসানা আপু,নিমি আপু সবাই শুধু আপনার কথা জিগ্যেস করে। আপনি যখন জগিং এ বের হোন আর ছাদে পুশ আপ করেন ওরা ছাদ থেকে আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে যেন গিলে খাবে। মেয়েদের চেয়ে বিপদে তো আপনি থাকেন। সবাই আপনার পিছনে পরে আছে।এরচেয়ে ভালো নয় কি আপনি বোরখা পরে ঘুরেন??
রিধিমা ছোট বাচ্চার মতো ফেস করে আছে যেন জানতে চাইছে সম্রাটের রিয়েকশন। আর সম্রাট তো কফি খেতে খেতে ল্যাপটপেই পরে রয়েছে। শুধু কফিটা শেষ করে রিধিমার হাতে ধরিয়ে বলল,
_ আমার নাম্বার দিয়েছিস তুই?
_ না যেচে শুকুনদের হাতে আপনাকে তুলে দিতে পারিনা আমি।
_ ভেরি গুড।
_ ভাইয়া আমাদের কলেজ থেকে টুরে গেলে এবার আমি যাবো প্লীজ!
_ টুর তুর কোথাও যাওয়া হবে না। ভুলেও এমন আবদার করবি না মার খাবি আমার হাতের চলে যা এখন।
প্রচণ্ড অভিমান হলো রিধিমার এর আগেরবার ও সম্রাট তাকে যেতে দিচ্ছিলো না অনেক কষ্টে বড় বাবাকে বলে রাজি করিয়েছিল। তাও সঙ্গে রাহুল গেছিলো নাহলে যেতেই দিতো না। রিধিমা কিছু বলবে তার আগেই ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয় সম্রাট। মন খারাপ করে চলে আসে রিধিমা। সম্রাট নিজের কাজে মত্ত থেকে একবার মিটমিট করে হেসে আবার কাজে মন দেয়।
সেদিনের পর সম্রাট কাজে ব্যাস্ত থাকলে রিধিমা সচারচর বিরক্ত করেনা। আবহাওয়া বুঝে সম্রাটকে ডিস্টার্ব করে ও। ভিষণণ চালাক।
শেষে সম্রাটকে কল দিয়েই ফেলে রিধিমা। জারিফা ফোন করেছিল ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে রিসিভ করতে পারেনি হয়তো সুস্থ হয়েছে কিনা কলেজ যাবে কিনা এই নিয়ে জিগ্যেস করবে। রিধিমা ওকে পরে ব্যাক করবে ভেবে নিলো। রিধিমার ফোনে রিং হচ্ছে ধরছে না সম্রাট। শেষে চারবারের বেলা রিসিভ করলো সম্রাট। তবুও নিশব্দতা চারপাশে। দুজনেই একে অপরের নিশ্বাস শুনতে পাচ্ছে। শেষে রিধিমাই বলে উঠল,
_ আপনি কেমন আছেন ভাইয়া। আমি কি এতটাই অপছন্দের একবারো কল দেন না কেনো। কতো মেসেজ করেছি আমি আপনি দেখেন কিন্তু রিপলে করেন না। কেনো? রেগে আছেন?
ফুপিয়েঁ উঠেছে রিধিমা। সম্রাট নিশ্চুপ। রিধিমা এবার জোরেই বলল আপনি এখন আমার সঙ্গে কথা বলতে চান না তাই না সম্রাট ভাই?
_ জ্বর আছে এখনো? কলেজে কেউ ডিস্টার্ব করে? আমি রাহুল আর হৃদকে বলেছিলাম নজর রাখতে।
রিধিমা কি জিগ্যেস করলো আর সম্রাট কি বলল। কোন রকম থেমে থেমে বলে উঠল,
_ তো এজন্যই হৃদ ভাইয়াকে আমি আসতে যাইতে দেখতাম। আপনি আমাকে কল কেনো দেননা ভাইয়া?
_ ফর গড সে’ক কান্না থামা রিধিমা। তোর কান্নার ইমুজিতে কি রিপলে করতাম আমি?
_ পনেরোদিন হয়ে গেলো আপনি বাসায় নাই। আসবেন করবে চট্টগ্রাম থেকে?
_ এখানের কাজটা হলে। শোন ফোন রাখ আমি একটু বিজি।যখন তখন ফোন দিবিনা আর কান্নাকাটি করবি না। নাহলে বাসায় আসলে খবর আছে তোর। রাখছি আমি।
সম্রাট ফোন রাখতেই আবারো রিধিমার কান্না পাচ্ছে। সম্রাট ওকে ইগনোর করছে ও বুঝতে পারছে। রুমের লাইট অফ করে জারিফাকে কল দেয় ও।
অন্যদিকে সম্রাট হাসছে। ও ইচ্ছে করে কোন কন্ট্রাক রাখেনি রিধিমার সঙ্গে। সম্রাট চাইছিল রিধিমাকে একটু শিক্ষা দিতে। সেদিন নীলির সঙ্গে কথা বলার পর সম্রাট সরাসরি নীলিকে মানা করে দেয়। সঙ্গে নীলিকে যে বোন ভাবে সেটাও বলে। নীলিকে ভালো মতো বুঝিয়ে চলে আসে সম্রাট। বাসায় ফিরে বাবার কাছে জানতে পারে কাজের জন্য তাকে চ্ট্টগ্রাম যেতে হতে পারে। তাই রিধিমার সঙ্গে ইচ্ছে করে দেখা না করেই বেরিয়ে পরে। রিধিমাকে একটু কষ্ট দিতেই বাসার কারো সঙ্গে তেমন কন্ট্রাক রাখেনি। অবশ্য সম্রাটের ও খারাপ লাগছিল কিন্তু রিধিমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটা।
সকালে রাহুলের সঙ্গে পাচঁদিন ছুটি কাটানোর পরে কলেজ যায় রিধিমা। গিয়েই জারিফা আর নীলিকে নিয়ে বেশ আড্ডা চলে। রাহুল রিধিমাকে পৌঁছে ব্যাক করে। কলেজের পুরোটা সময় রিধিমা অন্যমনষ্ক ছিল। বলতে গেলে এই পনেরো ষোলদিন থেকেই অন্যমনষ্ক। সম্রাটের জন্য এমনটা হচ্ছে বুঝতে বাকি নেই। রিধিমার এখন ইচ্ছে করে সম্রাটের সঙ্গে সারাক্ষণ কথা বলতে। সারাক্ষণ ওর সামনে থাকতে। সম্রাটকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে। এদিকে সম্রাট ওকে পাত্তা দেয়না ভেবেই মূলত ডিপ্রেশন। নীলি আর জারিফা কাউকেই জানায়নি ঘটনাটা। জানালে সবাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা ভেবে আরো গোপনীয়তা। এদিকে অতি কষ্টে রিধিমা পাথর হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে আরো দুইদিন চলে যায়। আজকে সম্রাটের ফেরার কথা। রিধিমা দুইঘন্টা ধরে শাওয়ার নিয়েছে। শিফনের সাদা সুন্দর একটা থ্রিপিচ পড়েছে। লম্বা সোজা চুলগুলো কমড় পযর্ন্ত ছেড়ে রেখেছে। পারফিউম দিয়ে পরিপাটি হয়ে বের হয়েছে। কানে শুধু একটা ইয়ারিং ব্যাস এতেই এতো সুন্দর লাগছিল ওকে। রুবাইয়াত বেগম মেয়ের কান্ড দেখে জিগ্যেস করেই ফেলেছিল কোথাও যাচ্ছে নাকি। রিধিমা বিরক্ত হয়ে কোন কথার উত্তর দেয়নি। নিজের ঘরে বসে অপেক্ষা করে সম্রাট কখন আসবে আসবে। পরে গাড়ির শব্দে ঠিকই বের হয়ে আসে।
সাদা হোন্দাই গাড়িতে সম্রাটের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ছেলে আর দুটো মেয়ে গাড়ি থেকে বের হয়। এর মধ্যে রিধিমা সৌভিক আর হৃদকেই চিনে। বাকি সবাই অচেনা। সম্রাটের ক্লোজ বন্ধু এরা দুজন। রাস্তায় দেখা হলেই রিধিমাকে কেমন আছে এসব এসব জিগ্যেস করে। সম্রাটের সুত্রেই পরিচয় এদের।
গাড়িতে আরো দুটো মেয়ে ছিল। দুজনেই সুন্দর। তারা সম্রাটের সঙ্গে হেসে হেসেই বাড়িতে ঢোকে।তাদের পরনে ছিল সুন্দর শাড়ী। রিধিমার অকারণে ভয়ে হাত পা কাপছে দুটো মেয়েকে দেখে। সম্রাট সহ সাতজন ওদের বাসায় প্রবেশ করে। সবাই রিধিমাকে দেখে সম্রাটকে ইশারা করে বলে ওঠে,
_ বাডি ইজ দ্যাট শি?
সম্রাটের ইশারা পেতেই সৌভিক আর হৃদ ভাইয়াসহ সবাই একসঙ্গে বলে,
_ রিধিমা কেমন আছো? অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে মাশ আল্লাহ্!
রিধিমা অবাক হয়ে যায় তাদের কি তাকে চেনার কথা? পরে আবার ভাবলো সম্রাট গল্প করেছে ওদের সঙ্গে। সবার চোখেমুখে খুশির ঝলক। রিধিমাও হেসে সালাম দিয়ে বলে, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। ধন্যবাদ।
এর মধ্যে সম্রাট বেশ কয়েকবার রিধিমার দিকে তাকিয়েছিল। চোখ সরাতে পারছিল না।হৃদ আর সৌভিক তো মজা করেই চলেছিল। এদিকে বেচারা রিধিমার তো ওদের কিছুই অবগত ছিল না।
সম্রাট ভাইয়া সবাইকে পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় পর্ব শেষে আম্মু,বড় আম্মু,সেজো আম্মু সবাই খাবারের ব্যবস্থা করতে শুরু করে। এদিকে সম্রাট ভাইয়া, বড় আব্বু, সেজো আব্বু, আব্বু, রাহল ,সাহিল ভাই সবার সঙ্গে হেসে গল্প করছে।
ড্রয়িংরুমের পুরো সোফা বুকিং করে বসেছে সবাই। রিধিমা আর মেধা দুর থেকেই সবটা দেখছিল। কতোদিন পর সম্রাটকে দেখছে রিধিমা। রিধিমার চোখ শুধু সম্রাটের উপরেই সীমাবদ্ধ ছিল। বারবার আড়চোখে তাকিয়ে সবটাই লক্ষ্য করেছে সম্রাট। আর ঠোঁটের কোনে ছিল সুক্ষ্ম হাসি।
চলবে ~