#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৭
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
মেঘাচ্ছন্ন আকাশটার দিকে নিশ্চুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুসকান৷ আধঘন্টা হয়েছে বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ করেছে সে। ঐ আকাশটার মতোই তার মনেও মেঘ জমে আছে খুব। কতো করে বোঝালো ইমন’কে, বোঝালো নিজের ভাই’কে, মা’কে। কেউ তার কথা শুনলো না। সবাই তাকে নিয়ে নয় বরং নিয়মকানুন পালনে ব্যস্ত। এমন ধরাবাঁধা নিয়মে তার মনের ওপর দিয়ে যে কি যাচ্ছে তা কেউ বোঝার চেষ্টাই করছে না। শুধু কি মন শরীরের ওপর কি কম ধকল যাচ্ছে? কিন্তু কাকে বোঝাবে এসব, কেউ যে বোঝার চেষ্টাই করছে না। গতরাতে ইমন রাগ করে সারারাত ঘরে ফেরেনি। সকালে যাও ফিরলো একটি শব্দও উচ্চারণ করলো না তার সাথে। আসার সময় গম্ভীর কন্ঠে শুধু বললো,তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। পিছন পিছন কিছু সময় ঘ্যান ঘ্যান করেও লাভ হলো না অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভষ্মই করে দিলো তাকে। সবটা ভাবতেই আবারো বুক ভারী হয়ে ওঠলো মুসকানের। এমন সময় পারুল রুমে এলো বললো,
“ভাবি আপনাকে মা ডাকছে পাশের বাসার চাচি আর তার ছেলের বউ এসেছে চা দিতে হবে। ”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বারান্দা থেকে সরে এলো মুসকান। চোখের জল চিকচিক করছে তা মূহুর্তেই লুকিয়ে মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
“তুমি যাও আমি এখুনি আসছি। ”
.
রাত আটটার দিকে আলটাসনোগ্রাফির রিপোর্ট ডক্টর’কে দেখিয়ে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু মেডিসিন নিয়ে গাড়িতে ওঠলো সায়রী, ইমন৷ ড্রাইভিং সিটে বসলো ইমন তার পাশে নিচের দিকে তাকিয়ে রোবটের ন্যায় বসে আছে সায়রী। দু’চোখ ভরা জলগুলো টপটপ করে গড়িয়েও পড়তে শুরু করলো। ইমন ধীর গতিতে ড্রাইভিং করছে। কারণ সে সায়রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলবে। যা আজ এ মূহুর্তে সায়রীর জানাটা খুব দরকার।
“আমি তোকে কিছু বলতে চাচ্ছি আশা করি মনোযোগ দিয়ে শুনবি এবং বোঝার চেষ্টা করবি। ”
দৃঢ়ভাবে কথাটি বলতেই সায়রী দ্রুত হস্তে অশ্রুকণাগুলো মুছে নিয়ে স্বাভাবিক ভণিতায় বললো,
“বল।”
“মেয়েরা বুঝে কম অভিমান করে বেশি এটাতো বিশ্বাস করিস নাকি? ”
আড়চোখে ইমনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো সায়রী। নিজেকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বললো,
“কি বলতে চাচ্ছিস? ”
“আমি বলতে চাচ্ছি প্রতিটি মানুষের মাঝেই বোঝার ক্ষমতা বেশি থাকা উচিৎ৷ আর অভিমানও বুঝে শুনে করা উচিৎ। একটা ড্রেস কিনলাম লাল কালার দেখে। পরেরদিন সকালে সেই ড্রো সাদা হয়ে গেলো বলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিৎ নয়৷ বরং সাদা কেন হলো এর পিছনে যৌক্তিক কারণ কি? তা সম্পর্কে অবগত হয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ আমি সে ড্রেসটা পরবো নাকি পরবো না। ”
“তুই ওর হয়ে একটা কথাও বলবি না ইমন। ”
“শাট আপ আমি কারো হয়ে কথা বলি না, এটা তুই ভালো করেই জানিস। ”
চুপ হয়ে গেলো সায়রী। ইমন লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে আচমকাই গাড়ির ব্রেক কষলো। ফোন বাজছে তার। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো বারোটা মিসড কল। তৎক্ষনাৎ আবারো বেজে ওঠলো ফোন। মুসকান ফোন করেছে দ্রুত রিসিভ করে ঝাড়ি মেরে বললো,
“একবার ফোন করে পাওনি মানে অবশ্যই বিজি আছি। এতো বার বার ফোন করছো কেন? কোন কাজ না থাকলে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
মুসকানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো ইমন। সায়রী বিরক্ত হয়ে বললো,
“ওকে ধমকাচ্ছিস কেন ওর কি দোষ? ”
“চুপ তোরা প্রত্যেকেই দোষী তোদের নাকের ডগায় রাগ থাকে এই মাথায় কিচ্ছু নেই। ”
“ইমন…”
“কি ইমন? কি বোঝাবি তুই আমাকে, আমি ভাবতে পারিনি তোর মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে এমন করবে। তুই যদি এমন করিস তাহলে আমাদের পজিশন তো খুবই ডেঞ্জারাস হয়ে যাবে। ”
“আমি কোন ভুল করিনি। ”
“ভুল তো তোরা দুটোই করেছিস বাট স্টার্ট করেছিস তুই। তাই আগে তোকে থাপড়াবো তারপর ঐ গর্দব টাকে। ”
“আমি প্র্যাগনেন্ট ইমন! ”
“তো কি? ডেলিভারি হওয়ার দুমিনিট পর থেকেই থাপড়ানো শুরু করবো। ”
ক্লেশমিশ্রিত হাসলো সায়রী। মাথা দুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা যা মারিস। ”
“তার আগে অপরাধটি বলে নেই? ”
“সিওর। ”
দুরুদুরু বুকে এক ঢোক গিলে ইমনের দিকে ভয় ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সায়রী। ইমন বললো,
“তুই সেদিন ডক্টর দেখালি ভালো কথা তোর সমস্যা নেই বেশ। বাড়ি এসে দিহান’কে সবটা জানালি। তারপর হুট করেই দিহানের মন চেঞ্জ হয়ে গেলো! ”
সায়রীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতেই থাকলো ইমন,
“তোর সাথে বাজে আচরণ করলো অন্যায় করেছে। দিহান কেমন আমি তুই খুব ভালো করেই জানি৷ কিন্তু যে দিহান তোকে এতোটা ভালোবাসে সে দিহান কি করে অমন আচরণ করতে পারে? একবারো মনে প্রশ্ন জাগেনি যদি জাগেই তাহলে এভাবে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলি? সেদিন যখন দিহান তোকে ফিরিয়ে নিতে চাইলো তুই একবারো প্রশ্ন করিস নি আজ কেন? দিহান লুকাতে চেয়েছে কিন্তু সেই লুকিয়ে থাকা অনেক বড়ো সত্যিটা তুই খোঁজার চেষ্টাই করিসনি। আর সেদিন ছাদের ঘটনা! ইচ্ছে করছে এখনি কয়েকটা লাগাই গালে বেয়াদব মেয়ে। বাচ্চা নাকি নষ্ট করে দিবি, মেরে ফেলবি তো এখন দেখি কিভাবে তুই কি করিস। দিহান তো তোকে বাঁচিয়ে রেখেছে এমন কথা মুসকান যদি ওর ভাবনাতেও কখনো আনতো একদম পুঁতে ফেলতাম।”
পুরো শরীর মৃদু কাঁপছে সায়রীর। গলা শুকিয়ে কাঠ। শরীরটাও খারাপ লাগছে ভীষণ। ইমন ওয়াটার বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
“পানিটা খেয়ে নে, এতো ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তুই এখন একা নেই তোর মাঝে যে ছোট্ট প্রাণ টা আছে তার জন্য এই ঘাবড়ানোটা বর্জন করতে হবে। ”
সায়রী দেরী করলো না এক নিমিষেই পানি নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই শেষ করলো। তারপর উত্তেজিত হয়ে বললো,
“আমাকে সবটা বল ইমন আমি জানতে চাই সবটা। ”
“এতো উত্তেজিতও হওয়া যাবে না সবটাই বলবো তুই শান্ত হয়ে বোস। ”
সায়রী কিঞ্চিৎ শান্ত হয়ে বোসলো। ইমন আর সময় নিলো না চাইলো না সায়রীকে আর উত্তেজিত করতে। তাই বললো,
” তুই যখন তোর রিপোর্ট গুলো দিহানকে দেখালি দিহানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ তোর কোন সমস্যা নেই,তবুও তুই কনসিভ করতে পারছিস না। তার মানে সমস্যা টা ওরই৷ যদি তোর সমস্যা থাকতো ওর বিন্দু জায় আসতো না। সারাজীবন তোকে নিয়ে সুখেই কাটিয়ে দিতো৷ কিন্তু সমস্যা যেখানে তোর না সেখানে ওরই সমস্যা তাহলে ওর জন্য তোর জীবন নষ্ট হচ্ছে! ওর জন্য শুধুমাত্র ওর জন্য তুই মা হতে পারছিস না, কখনো মা হতে পারবিনা? এটা ভাবতেই ও পাগল হয়ে যায়। আর যাইহোক তোর থেকে বাচ্চা সুখ কেড়ে নিতে চায় না৷ বোকার মতো ভাবতে থাকে সমস্যা টা ওরই। ভয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষাও করাতে চায় না। তাই যখন তুই বললো ডক্টর দেখাতে জ্ঞানহীন হয়ে গেলো। কিভাবে কি করবে বুঝে ওঠতে না পেরে ঐসব আচরণ করলো। তোকে ও খুব ভালো করেই চেনে ঠিক জানে যে কি ধরনের আচরণ করলে তুই ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবি। তাই সে ধরনের আচরণ করেই সাকসেসফুল হলো। তুই চলেও এলি বাড়ি থেকে। ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিলি। কিন্তু কিছু দিন পর মুরাদ আর আমি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে যখন ডক্টরের কাছে পাঠালাম। সমস্ত রিপোর্ট স্বাভাবিক এলো তখন ও উন্মাদের মতো তোর কাছে ছুটে এলো। তুই অভিমান কিছু সময়ের খারাপ আচরণ কে গুরুত্ব দিয়ে তোদের এতো বছরের ভালোবাসা এতো বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের থেকে আস্থা হারিয়ে ফেললি। ও তোকে আহত করেছে আর তুই ওকে নিহত হয়ে যাওয়ার পথ খুলে দিলি! ”
দুচোখ দিয়ে ঝরঝরিয়ে অশ্রু পড়তে শুরু করলো সায়রীর। ইমন গভীর এক শ্বাস ছেড়ে বললো,
” কাঁদছিস কেন? এতো বছরের ভালোবাসা গুটিকয়েক দিনের আচরণে শেষ করে দেওয়া কি ঠিক হতো? পান থেকে চুন খসলেই ডিভোর্স আর ডিভোর্স উচ্চারণ করবি তোরা। বছরের পর বছর স্ট্রাগল করে একে অপরকে পাবি আবার ঠুনকো কিছু বিষয় নিয়েই ডিভোর্স দিবি সমাজ টা কি হয়ে গেলো সায়রী, কি হয়ে গেলো তাইনা? যেদিকে তাকাই শুধু বিচ্ছেদ আর বিচ্ছেদ। আজ কাল প্রেম, ভালোবাসার মতোই বিয়েটাও সহজলভ্য হয়ে গেছে।”
“ইমন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তুই বিশ্বাস কর আমি জানতাম অনেক বড়ো কোন কারণ আছে এর পিছনে৷ কিন্তু অসভ্যটা এমন কিছুর জন্য এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনিরে। ”
বাঁকা হাসলো ইমন গাড়ির ডোর খুলে বের হতে হতে বললো,
“অসভ্যটাকে পাঠাচ্ছি ভালো একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়প ডিনার সেরে নিস। ”
চমকে ওঠলো সায়রী উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
” তুই কোথায় যাচ্ছিস গাড়ি নিবি না? ”
“না তোরা একটু রিল্যাক্স হয়ে ঘুরাঘুরি কর। আমি রিকশা করে বাড়ি চলে যাচ্ছি। ”
ইমন বের হওয়ার সাথে সাথে ঝড়ের গতিতে গাড়িতে ওঠে বসলো দিহান। হকচকিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো সায়রী। দিহান ডোর লক করে গাড়ি স্টার্ট করতে করতে তার তৃষ্ণার্থ দৃষ্টিজোড়া এক বার মেলে ধরলো সায়রীর দিকে। মুখশ্রী থেকে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে উদরের দিকে গভীর চাহনী নিক্ষেপ করলো। সায়রী এক ঢোক গিলে ওড়না দিয়ে উদর ঢেকে ফেলে দিহানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিরবতা পালন করতে শুরু করলো।
___________________
প্রেয়সীর মনে মেঘ জমেছে বহুক্ষণ। সেই মেঘ গুলো এবার অজস্র ক্ষুদ্র কণার ন্যায় বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে শুরু করেছে। সে কেবল ঝড়েনি বরং প্রিয়তম’কে হাহাকার করে জানান দিয়ে নিজের বাঁধ ভাঙা কান্না দিয়ে ভিজিয়েও গেছে। বারান্দা ঘেষে উদাস মনে দাঁড়িয়ে ইমনেরই অপেক্ষা করছে মুসকান। ভারী বর্ষণ হওয়ার ফলে রিকশায় অবস্থানরত হয়েও ভিজে চুপচপে হয়ে গেছে ইমন। এক প্রকার ইচ্ছে করেই তার এই গা ভিজানো। কিন্তু কেন এর কারণ তার জানা নেই…
যে কোন মানব-মানবীর ওপরই বর্ষার প্রভাব খুবই প্রখর হয়। কখনো কখনো প্রেমিক -প্রেমিকারা গভীর নয়নে বৃষ্টি বর্ষণ দেখে। এতে কখনো তাদের মন হয়ে যায় উদাস বা কখনো হয়ে ওঠে রোমাঞ্চকর। মুসকানের মন উদাস হলেও ইমনের মন রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠেছে কিন্তু আজ এই রোমাঞ্চকর অনুভূতির প্রকায় হবে খুবই কঠিন। এ’কথা ভাবতেই কুটিল হাসলো ইমন। তার ভেজা প্রশস্ত বুকটা যেনো মাত্রাতিরিক্ত শীতল হয়ে ওঠলো।
.
বিদ্যাপতির লেখায় ছিল ‘এ ভরা বাদর,এ মাহ ভাদর,শূন্য মন্দির মোর’ ,তেমনি কালিদাসের মেঘদূত কাব্যে বর্ষার মেঘ আর শুধু মেঘ থাকেনা,তাতে প্রেমিক প্রেমিকার মনের আকুতিতে ভরা প্রানের সঞ্চার হয়,এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তো আছেনই তার বর্ষার গানের অজস্র সম্ভার নিয়ে , অর্থাৎ মানুষ এবং তদুপরি যারা শিল্পী মনের অধিকারী তাদের ক্ষেত্রে বর্ষার প্রভাব গুরুতর ! এটা অবশ্য ফাল্গুন চৈত্রের ক্ষেত্রেও বলা যায় ,রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ফাল্গুনের কোনো এক সময় ‘এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে’,বা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত যেমন চৈত্রের চাঁচলে উদাস পথের ডাকে নিশিপাওয়ার মতো বেরিয়েপড়ে পাতাঝরা বনের রাস্তায় । যাই হোক,বর্ষায় মন উদাস বা বিষন্নতা বা মন কেমন করার সাথে হয়তো মেঘের একটা সম্পর্ক আছে । সাধারনত খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা হয়ে আসে আমাদের মনটা একটু বিষন্ন হয়ে পড়ে,অর্থাৎ বিকেলের আলো পড়ে এলেই আসন্ন আলো আঁধারি মনকে প্রভাবিত করে।
.
উপর থেকে ইমনকে ভিজে চুপেচুপে হয়ে নামতে দেখেই ছুটে নিচে যায় মুসকান। কিন্তু তার পূর্বেই পারুল দরজা খুলে দেয়৷ ইমন মুসকান’কে উদগ্রীব হয়ে আসতে দেখে পারুলকে গম্ভীর গলায় বলে খাবার রেডি করতে তা শুনে মুসকান তৎপর হয়ে বলে,
“আমি করছি তুমি এভাবে ভিজে আসলে কেন? গাড়ি কোথায় তোমার আর সায়রী আপু? ”
“দিহানের সাথে আছে। ”
কেবল এটুকু বাক্য ব্যয় করেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে উপরে চলে গেলো ইমন। মুসকান পারুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খাবারটা গরম করতে থাকো আমি এখুনি আসছি। ”
উপরে গিয়ে ইমন কাবার্ড খুলতে নিলেই মুসকান বললো,
“আমি বের করে দিচ্ছি তোমার শরীর ভেজা। ”
ইমন থেমে গেলো। মুসকান গিয়ে তার টিশার্ট আর ট্রাওজার বের করে দিয়ে বললো,
“চেয়ারে বসো চুল মুছে দেই। ”
ইমন কোন কথা না বলে হাত থেকে টান দিয়ে সব নিয়ে বাথরুমে ঢুকে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠলো মুসকানের। গতরাতের পর থেকে মানুষ টা একটা বাক্যও উচ্চারণ করেনি তার সাথে। বুকের ভিতর টা কেমন খাঁ খাঁ করছে। কান্নাগুলো চেপেই নিচে খাবার রেডি করতে শুরু করলো। ঠিক বিশ মিনিট পর নিচে এলো ইমন। তার আগে বাবা,মায়ের ঘর পরিদর্শন করে এসেছে। ফুপু সহ ফুফাতো ভাইবোনরা চলে গেছে। দাদিকেও সন্ধ্যায় তার ছেলে এসে নিয়ে গেছে। সায়রীও বোধ হয় আর বেশিদিন থাকবে না। পুরো বাড়িটাই জনমানব শূন্য প্রায় হয়ে গেলো।
পারুল রান্নাঘরে বাসন ধৌত করছে। মুসকান খাবার গুছিয়ে বসলো মাত্র। ইমন গিয়ে চেয়ার টেনে বসতেই মুসকান তাকে খাবার বেড়ে দিলো। কিন্তু ইমন খাবারে ততোক্ষণ খাবার মুখে তুললো না যতোক্ষণ না মুসকান নিজের খাবার বাড়লো। তার পূর্বে শক্ত পাথরের ন্যায় বসেই ছিলো। দৃষ্টিতে ছিলো সীমাহীন ক্রোধ। যা বুঝা মাত্রই বিনা ভণিতায় নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলো। আর মনে মনে বিরবির করলো,
“এতো কঠোরতায় তো আমি অভ্যস্ত নই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন এমন করছো? ”
দুচোখ ভরে গেলো তার জোর পূর্বক খাবার গুলো শুধু গিলতে থাকলো। এক পর্যায়ে বমি হয়ে বের হওয়ার উপক্রমও হলো। মুখ চেপে ধরে ভয় ভয়ে ইমনের মুখপানে তাকালেই দেখলো সে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উপায় না পেয়ে আবারো খাবার খেতে লাগলো কিন্তু ইমন ওর অবস্থা বুঝতে পেরে চাপা রাগ দেখিয়ে চাপা স্বরে বললো,
“জোর করে খেতে হবে না যেটুকু খেয়েছো এটুকু বের হলে আজ কপালে ডাবল দুঃখ আছে। ”
থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো মুসকান। ইমনও অর্ধেক খাওয়া প্লেট টা রেখে ওঠে দাঁড়ালো। বললো,
“জাষ্ট পনেরো মিনিট এর ভেতরে উপরে আসা চাই। ”
.
সব কিছু গুছিয়ে মুসকান উপরে গিয়ে দেখলো সোফায় বসে কোলে ল্যাপটব নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ঘাটাঘাটি করছে ইমন৷ সে দরজা অবদি গিয়েছে মাত্র চোখ তুলে তাকায়ও নি ইমন ল্যাপটবে দৃষ্টি স্থির রেখেই গম্ভীর গলায় বললো,
“দরজা লক করো। ”
বুকের ভিতর যেনো একের পর এক সুঁচ ফোটানো হচ্ছে ঠিক এমন একটিই অনুভূতি হচ্ছে মুসকানের। সে এক ঢোক গিলে দরজা লক করে যেই পিছনে ঘুরেছে অমনি ইমনের রাগান্বিত প্রশ্ন,
“বিয়ে হয়েছে কদিন হলো? ”
কেঁপে ওঠলো মুসকান। পুরো শরীর ভয়ে শিউরে ওঠেছে। ইমনের আচরণ গুলো খুবই ভয়ার্ত লাগছে আজ। হঠাৎ এমন করছে কেন? এ কোন রূপের সম্মুখীন হচ্ছে সে? প্রশ্নগুলো বুকে চেপে এক ঢোক গিলে বললো,
” দু,দুদিন। ”
“আজ এসব পরার অনুমতি কে দিলো? ”
শাড়ি নয় সেলোয়ার-কামিজ পরাতেই এই রাগ! বিস্মিত হয়ে কাঁপা কন্ঠে মুসকান বললো,
” মা,মা’কে বলেছিলাম। ”
“আমার থেকে পারমিশন নিয়েছো? আমি বলেছি? ”
চিবিয়ে চিবিয়ে প্রশ্ন করলো ইমন। কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী তে ইমনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মুসকান। ইমন ল্যাপটব অফ করে সোফার এক কোণায় রেখে শাহাদাৎ আঙুলটি ঠোঁটে ঘষতে ঘষতে বললো,
“পাঁচ মিনিটে শাড়ি পরা চাই। ”
মুসকানের মাথা ঘুরছে। তার সাথে এসব কি হচ্ছে সে কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে? ইমন তার সাথে এতো কঠোর হতে পারে? মনে মনে অজস্র ভাবনা ভাবতে থাকলো সে। ইমন এবার আরো চটে গেলো। ধমকে ওঠে বললো,
“কথা কানে যায়নি? ”
ভয়ংকর মাত্রায় কেঁপে ওঠলো মুসকান৷ হাত, পা কাঁপতে থাকলো অবিরত। বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস শব্দগুলো মুখরিত হয়ে ওঠলো। কোনক্রমে ইমনের সম্মুখ থেকে মুখ ঘুরিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো কাবার্ডের দিকে। একটি সুতি শাড়ি,ব্লাউজ,পেটিকোট বের করে বাথরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। তখনি আবারো সুঁচ বিঁধানো বাক্যগুলো শুনতে পেলো,
“আমি কি বলেছি বাথরুম গিয়ে শাড়ি পরতে? ”
শরীরটা অসাড় হয়ে এলো মুসকানের। ক্রন্দনরত গলায় বললো,
“মরে যাবো আমি। ”
“মেরেই ফেলবো আমি। ”
বলেই বসা থেকে ওঠে এসে পুরো রুমের বাতি অফ করে দিলো ইমন। তারপর ধীরপায়ে মুসকানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর পিছন বরাবর দাঁড়ালো। একহাতে জামার পিছনের চেইন খুলে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” কি মনে হচ্ছে ছিপ ফেলে মাছ ধরেছি তাই তো? ”
মুসকান পিছন ঘুুরার জন্য উদ্যত হতেই ইমন ওর বলিষ্ঠ উষ্ণময় হাতটি দ্বারা পিঠ আঁকড়ে ধরলো। শিউরে ওঠে চোখ বুজে ফেললো মুসকান৷ ইমন এবার কথার তীক্ষ্ণ আঘাত না দিয়ে মুসকানের ঘাড়ে ওষ্ঠজোড়ার তীক্ষ্ণ আঘাত দিতে শুরু করলো। সহ্যের সীমানা অতিক্রম করে ইমনের দিক ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুসকান। ফুঁপিয়ে ওঠে বললো,
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ”
চলবে…
রিচেক দেইনি জানিনা কেমন হলো।