#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৪
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
আচমকাই ইমন’কে রেগে যেতে দেখে স্থির হয়ে গেলো মুসকান৷ ইমন চোখ,মুখ শক্ত করে দু’হাতে মুসকানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“কি সমস্যা মনে কি ভয় ডর নেই? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের, যা খুশি তাই করবো এতো বাঁধা কিসের? ”
শিউরে ওঠলো মুসকান৷ লজ্জায় মুখটা কাঁচুমাচু করে মাথাটা নুইয়ে ফেললো। নিঃশ্বাসে বেড়ে গেলো চঞ্চলতা। ইমন দৃঢ় দৃষ্টিতে কয়েক পল তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ একটি শ্বাস ছাড়লো৷ তারপর আবারো মুসকান’কে পিছন ঘুরিয়ে এক এক করে ব্লাউজের প্রতিটি হুক লাগিয়ে দিলো। এতে যতোবার ইমনের আঙুলগুলো পিঠ ছুঁয়ে দিলো ততোবার মৃদু কেঁপে ওঠলো মুসকান। যা ইমন খুব বেশিই টের পেলো। তার মাথাটাও ঝিম ধরে আসছিলো কিন্তু কিছু করার নেই ধৈর্যের ফল মিঠা বেশি এটুকু স্মরণ করে ওষ্ঠে কোণে ফুটিয়ে তুললো বক্র হাসি।
অজস্র উত্তপ্ত শ্বাসের ভীরে শিহরিত অনুভূতিগুলো’কে সন্তর্পণে নিয়ন্ত্রণ করে অত্যন্ত যত্নশীলভাবে শাড়ি পরানো কমপ্লিট করলো ইমন৷ এক হাঁটু গেড়ে কুঁচিগুলোও ঠিক করে দিলো। তারপর আয়নার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে পিছনে দাঁড়ালো সে। মুসকান অবুঝ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই ইমন ইশারায় আয়নার দিকে তাকাতে বললো৷ মুসকান যখন আয়নাতে চোখ রাখলো আচম্বিত হয়ে শিউরে ওঠলো। নিজেকে দেখে নয় বরং তার স্বামী নামক সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে। ধবধবে ফর্সা বক্ষঃস্থলের ঘনকালো কৃষ্ণবর্ণীয় লোমগুলো দৃষ্টিগোচর হতেই বুকের ভিতর অদ্ভুত এক ঢেউ খেলে গেলো। পুরো শরীরে বইয়ে গেলো শীতল স্রোত। চোয়ালজোড়া লজ্জায় রক্তিম আভা ধারণ করলো। এক ঢোক গিলে শুষ্ক গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। ইমন তার স্বভাবসুলভ বক্র হাসিটি বজায় রেখে মুসকানের কাঁধে আলতোভাবে চিবুক ছোঁয়ালো। আঁতকে ওঠে একহাতে শাড়ি অপরহাতে ইমনের হাতটি স্পর্শ করে সরানোর চেষ্টা করলো। যে হাতটি শাড়ি ভেদ করে তার উন্মুক্ত উদরে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠছিলো। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে ঘন নিঃশ্বাসের বেগে নিচু স্বরে মুসকান বললো,
“আমি নিচে যাবো। ”
মুসকানের কথাটি ইমনের কর্ণকুহরে পৌঁছালো কিনা বোধগম্য হলো না। সে তার নিজ জগৎে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে তাই আচরণ শুরু করলো। শেভ করা চিবুক দিয়ে ক্রমশ ঘষতে থাকলো মুসকানের কাঁধ, কখনো বা নাক ঘষতে থাকলো ঘাড়ে। একহাতে মুসকানের দুহাতই আঁটকে দিয়ে অপরহাতে উদরে উষ্ণময় দুষ্টু ছোঁয়ায় মেতে ওঠলো। মুসকান বেহুশ প্রায় হওয়ার অবস্থা ইমনের হাত থেকে বুঝি আজ তার রক্ষা নেই এমন অনুভূতিতে যখন সিক্ত হয়ে ওঠলো শরীর,মন এবং মস্তিষ্ক তখনি দরজায় করাঘাত শুরু হলো।
বিরক্তি’তে চোখ মুখ কুঁচকে মুসকানের হাতজোড়া আরো শক্ত করে এবং উদর খামচেই ধরলো ইমন। মুসকান ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করতেই হুঁশে ফিরল ইমন। দু’হাতই নরম করে সরে দাঁড়ালো। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে ঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ইমনের দিকে তাকিয়ে রইলো মুসকান। ইমনও কয়েক পল নিশ্চুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বললো,
” যেই থাকুক না কেন বলো পাঁচ মিনিট পর নিচে যাবে। ”
আঁচল ঠিকঠাক করে দুকাঁধ ভালো মতোন ঢেকে বার কয়েক ঢোক গিললো মুসকান। ইমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সরে গিয়ে কাবার্ড থেকে নিজের পোশাক বের করতে লাগলো। মুসকান নিজের নিঃশ্বাসগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে করতে ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললো। সায়রী থাকাতে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বললো,
“আপু নানাভাই বললো পাঁচ মিনিট পর নিচে যেতে। ”
সায়রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর হাস্যরসাত্মক সুরে বললো,
“বইন তুই পারিসও বটে বাসর শেষেও জামাইকে নানাভাই! ”
ভিতর থেকে ইমন বললো,
“বাসর আর কই করতে পারলাম তুই আর আসার সময় পেলি না।”
লজ্জায় জমে গেলো মুসকান। সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কেন ভাই সারারাত কোন মহান কাজে ব্যস্ত ছিলেন?”
“মহান কাজই বটে বউকে ঘুম পাড়ানো কিন্তু মহান কাজই। ”
সায়রী অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো। সে দৃষ্টির মানে ঠিক বুঝলো ইমন তাই বললো,
“বউয়ের চেহেরা দেখে তোর মনে হচ্ছে বাসর হয়েছে? ”
প্রশ্নটি করে দাঁড়ালো না ইমন শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বিছানায় গিয়ে বসলো। এদিকে লজ্জায় মাথা নুইয়ে আছে মুসকান। কানদুটো দিয়ে গরম হাওয়া বেরুচ্ছে যেনো। সায়রী তো বন্ধু’র খপ্পরে পড়ে ভুলেই গেছিলো ছোট্ট বোনটি লজ্জায় শোকাহত হয়ে যাচ্ছে। তাই বেশি সময় নষ্ট না করে মুসকান’কে নিচু স্বরে বললো,
“আমি কাছেই আছি পাঁচ মিনিটের ওপরে লেট করবি না। ইমনের দাদি খুব খ্যাঁকখ্যাঁক করছে, মাথা ধরাই ফেলছে একদম। ”
_________________
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই শুনতে হলো,
“বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবন এক হয় না। পরের ঘর করতে আসলে এতো আরাম করা যাবে না। বউদের এতো বেলা করে ঘুম থেকেও ওঠা যাবো না৷ এইটা বাড়ির বউয়ের মতোন আচরণ না। ”
দাদির কটাক্ষ সুরে বলা বাক্যগুলো শুনতেই মুসকানের জবাব দিতে ইচ্ছে করলো,
“আমিতো পরের ঘর করতে আসিনি দাদি, আমি আমার স্বামীর হাত ধরে নিজের ঘরই করতে এসেছি। ”
অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের পর বদহজম হয়ে সেগুলো যেমন গলা দিয়ে উগ্রে বের হয়, ঠিক তেমনি দাদির কটাক্ষ বাক্যগুলোও বদহজম হয়ে তীক্ষ্ণ বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে উগ্রে আসার পথেও বাঁধা প্রাপ্ত হলো। কারণ সায়রী তার বাহু চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,
“মুসু কিছু বলিস না এই বুড়ি’কে যা বলার ইমনই বলবেনি৷ তুই চুপচাপ গিয়ে ইরা আন্টির পাশে দাঁড়া। তাছাড়া এই বুড়ি এ বাড়িতে দু’দিনের অতিথি মাত্র। এর কথা এতো পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই। ”
সংযত হয়ে গেলো মুসকান৷ পুরো ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে চাপা একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে৷ সত্যি এখন সে কিছু বলে ফেললে সবাই হয়তো তাকে বেয়াদব উপাধি দিতো। নতুন বউ সে মুরুব্বি মানুষ যতোই ভুলভাল বকুক এর উত্তরে কিছু তীক্ষ্ণ কথা বললে অবশ্যই সবাই তার ভুল ধরবে৷ কিন্তু এই সবাইয়ের ভীরে ইমনও কি তার ভুল ধরতো? মস্তিষ্কের আসা প্রশ্নটি মস্তিষ্কেই চেপে রাখলো মুসকান৷ ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইরাবতী’র পাশে দাঁড়ালো। নমনীয় সুরে প্রশ্ন করলো,
” মা আমি কি বাবা’কে সহ সবাই’কে চা দিতে পারি?”
হেসে ফেললো ইরাবতী মাথা দুলিয়ে বললো,
“চা শুধু তোমার ফুপু শাশুড়ি আর বাবা’কে দেবে। সায়রী, ইমন আর অভ্রকে কফি দেবে,আজ এইটুকু কাজ এর বেশি কিচ্ছু করবে না। ”
ইরাবতীর কথামতো চা,কফি বানিয়ে ট্রি টেবিলের ওপর রাখলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ফোনে কথা বলছিলেন। আজ বউ ভাতের অনুষ্ঠান। সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে পুরান বাড়িতে। অর্থাৎ ইমনের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ইমনের দাদার বাড়ি। যা পুরান বাড়ি নামে পরিচিত। সেখানেই করা হচ্ছে বিশাল আয়োজন। সকালের নাস্তা সেরে সকলে সাজগোজ করে বর বউ নিয়ে সেখানেই চলে যাবে। ইমনের পক্ষের প্রায় দুইশত আত্মীয় স্বজন সেখানেই আসবে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র পুত্রবধুকে দেখতে। মুসকানের পক্ষেরও প্রাশ শত আত্নীয় স্বজন আসবে আজ বউ ভাতের অনুষ্ঠানে। সব আয়োজনের জন্য অগণিত লোক ঠিক করা হয়েছে। বাড়ির কারো তেমন পরিশ্রমই করতে হচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে যা করার ঠিক করা লোকেরাই করছে। তবুও ইমন সেখানে দেখভাল করার জন্য যাবে বলে মনোস্থির করলো। বাবার পাশে কিছু সময়ের জন্য বসতেই মুসকান যখন যত্নসহকারে চা,কফি এনে রাখলো নির্নিমেষ দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়েই রইলো ইমন। এর থেকে বড়ো প্রশান্তি আর কি হতে পারে? একহাতে মাথায় কাপড় টেনে ইমনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আকরাম চৌধুরীর দিকে তাকালো মুসকান। নিম্নস্বরে বললো,
“বাবা আপনার চা। ”
আকরাম চৌধুরী ফোন রেখে বেশ শব্দ করেই হেসে দিলেন। বললেন,
“মাশাআল্লাহ কি সৌভাগ্য আমার পুত্রবধু আসতে না আসতেই সেবা শুশ্রূষা পাচ্ছি। ”
স্মিথ হাসলো ইমন হাত বাড়িয়ে কফি তুলে নিলো৷ লজ্জায় মাথা নুইয়ে ঈষৎ হাসলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ওকে তার পাশে বসতে বললো। মুসকান বাঁধ্য মেয়ের মতোন তাই করলো। ইমন এবার আড় চোখে মুসকানকে দেখতে থাকলো আর অতি সন্তর্পণে কফির মগে চুমুক দিতে থাকলো। আকরাম চৌধুরী চা খেয়ে খুবই প্রশংসা করলেন মুসকানের। বাড়ির ছোটো বড়ো সকলেই খুশি এমন সময় আকরাম চৌধুরীর ফুপু ইমনের দাদি এসে ড্রয়িংরুমের ফাঁকা মেঝেতে এক বাটি পেঁয়াজ এবং রসুনের খোসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললেন। সবাই আশ্চর্যান্বিত হয়ে দাদির কর্মকাণ্ড দেখতে থাকলো। আকরাম চৌধুরী বললেন,
“আহ ফুম্মা এইসব নিয়ম আমার বাড়ি পালন না করলেই পারতে। ”
“তুই চুপ থাক মহিলাগোর কাজে কোন পুরুষ নাক গলাবি না। নাত বউ এদিকে আসো,আলিয়া ঝাড়ুটা নাতবউয়ের হাতে দে তো। ”
আকরাম চৌধুরী চুপ মেরে গেলেন। মুসকান কেবল ওঠে দাঁড়িয়েছে এমন সময় ইমন গম্ভীর মুখে বললো,
“এসব কি হচ্ছে দাদি’কে এসব মাতলামি করতে নিষেধ করো। ”
আকরাম চৌধুরী ইমনকে বোঝাতে যাবে তার পূর্বেই মুসকান বললো,
“আমি পারবো সমস্যা নেই। ”
বলেই মাথায় আঁচল টেনে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আলিয়ার থেকে ঝাড়ু নিলো মুসকান। সায়রী নিরব দর্শকের মতো কাহিনী দেখছে আর ইমনকে ইশারায় কি সব বোঝাচ্ছে। কিন্তু মুসকান হেরে যাওয়ার পাত্রী নয়। সে ঠিক বুঝেছে দাদি তাকে ছলে বলে কৌশলে ইমনের অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টায় মেতে ওঠেছে। তাই সে খুবই নিখুঁত ভাবে পুরো রুম ঝেড়ে পরিষ্কার করে দাদির সামনে গিয়ে মিষ্টি এক হাসি দিলো। আর মনে মনে বললো,
” তিনটা বছর যে দহন আমি সহ্য করেছি সে দহন আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে। তিনটা বছর স্ট্রাগল করে নিজেকে এমনি এমনি তৈরী করেছি নাকি দাদি… বয়স কম বলে কম তো সহ্য করিনি। কিন্তু আমি মুসকান নিজেকে প্রমাণ করতে জানি। সকলকে পই পই করে বুঝিয়ে দেবো ইমন চৌধুরীর জন্য মুসকান ব্যতিত অন্য কেউ পারফেক্ট হতেই পারে না। ”
চলবে…
ডান হাতের বুড়ো আঙুলের পিঠে এক্সিডেন্টলি কেটে গেছে ফলস্বরূপ মাত্র ১৩০০+ওয়ার্ড লিখতেই বেশ,অনেকটা সময় লেগে গেলো। রিচেক দেইনি।।