#তুমি_শুধু_আমারই_হও
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#অরনিশা_সাথী
|৯|
–“ছাড়ুন আমাকে, আমার উৎসব যদি জানতে পারে এসবের পেছনে আপনি আছেন তাহলে আপনাকে ও আস্ত রাখবে না মাহির।”
অর্নির এমন ঝাঁজালো কন্ঠ শুনে মাহির আবারো ঘর কাঁপিয়ে হাসলো। হঠাৎই হাসি থামিয়ে টেবিলে জোরে থাবা মেরে মাহির বললো,
–“উৎসব, উৎসব আর উৎসব। কতবার বলেছি ওই নামটা তোমার মুখে শুনতে আমার একদমই ভালো লাগে না।”
–“এই নামটাই শুনতে হবে আপনার। উৎসব নামের মানুষটাকে ভালোবাসি আমি। সে আমার অস্তিত্বে মিশে আছে। খুব আদর যত্নে তাকে আমি আমার সারা গায়ে মেখেছি।”
মাহিরের রাগ হলো ভীষণ। অর্নির গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“এখন থেকে তোমার অস্তিত্বে শুধু আমি মিশে থাকবো। আর তোমার সারা গায়েও আমি নিজেকে মাখাবো। সেটা তোমার ইচ্ছেতে হোক বা অনিচ্ছায়।”
কথাটা বলেই মাহির অর্নির গাল ছেড়ে দিলো। অর্নি তেজী স্বরে বললো,
–“উৎসব যদি একবার জানতে পারে আপনার ওই নোংরা হাত দিয়ে আপনি আমায় স্পর্শ করার মতো জঘন্য কাজ করেছেন তাহলে আপনার টিকিটিও আর এই দুনিয়ায় অবশিষ্ট থাকবে না।”
মাহির আরো কিছু বলে উঠার আগেই রিয়াদ একজন কাজী নিয়ে সেই ঘরে প্রবেশ করলো। রিয়াদ একটা চেয়ার টেনে দিলো কাজী সাহেব বসার জন্য। কাজী সাহেব মাহিরের পাশে বসে খাতা খুলে বিয়ের কাগজপত্র ঠিক করছে। মাহির ধমকের স্বরে কাজী সাহেবকে বললো,
–“দ্রুত বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করুন।”
কাজী সাহেব ভয়ে ভয়ে বললো,
–“এই তো করছি।”
আরো কিছু লিখালিখি করে কাজী সাহেব কাবিননামা মাহিরের দিকে এগিয়ে দিলো। মাহির ঝটপট সাইন করে দিলো। কাজী সাহেব আবার কাবিননামা অর্নির দিকে এগিয়ে দিলো। অর্নি ঘৃণায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মাহির অর্নির গাল চেপে ধরে বললো,
–“দ্রুত সাইন করো।”
–“করবো না।”
–“অর্নি ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ভালোই ভালোই সাইন করে দাও।”
–“করবো না, কি করবেন আপনি?”
মাহির রাগ সামলাতে না পেরে সজোরে অর্নির গালে চ/ড় বসালো। মাহির চ/ড় এতো জোরে মেরেছে যে অর্নি হুমড়ি খেয়ে টেবিলের উপর পড়লো। অর্নির ঠোঁট ফেঁটে সামান্য রক্ত বের হলো। মাহির আবার অর্নিকে টেনে তুলে বললো,
–“সাইন করো বলছি।”
–“বললাম তো করবো না।”
মাহির আবারো চ/ড় বসানোর জন্য হাত তুলতে গেলেই রিয়াদ আমতা আমতা করে বললো,
–“বস আমি একটা কথা বলি?”
মাহির ঘাড় ঘুরিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কি?”
–“অর্নির___”
মাহির রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো রিয়াদের দিকে। মাহিরের ওরকম চাহনি দেখে ঘাবড়ে গেলো রিয়াদ। আমতা আমতা করে বললো,
–“না মানে, ম্যামের তো হাত বাঁধা। উনি সাইন করবে কি করে?”
মাহির চকিত তাকালো অর্নির দিকে। সত্যিই অর্নির হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। মাহির ইশারা করলো হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্য। রিয়াদ এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে অর্নির হাতের বাঁধন খুলে দিলো। মাহির বললো,
–“এবার সাইন করো।”
অর্নি কাবিননামা হাতে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো। মাহির আবারো চ/ড় বসায় অর্নির গালে। অর্নির ফর্সা গাল মূহুর্তেই রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে মাহিরের ওমন শক্তপোক্ত হাতের চ/ড় খেয়ে। মাহির এবার রেগে বললো,
–“সাইন করবা না? ওকে ফাইন। টিপ সই নিবো।”
কথাটা বলেই মাহির কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“কালি দিন।”
কাজী সাহেব ভয়ে ভয়ে বললো,
–“আ্ আনিনি তো।”
–“আচ্ছা ব্যাপার না।”
কথাটা বলে মাহির ধারালো ছুড়ি দিয়ে নিজের হাতে বসিয়ে এক টান মারলো। মূহুর্তে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো। মাহির অর্নির ডান হাত চেপে ধরে অর্নির বৃদ্ধাঙ্গুলি নিজের রক্তে চেপে ধরলো। তারপর অর্নির আঙ্গুল নিয়ে কাবিননামায় টিপ সই দিতে গেলেই কেউ একজন মাহিরের হাত চেপে ধরে। মাহির ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পায় পাশে উৎসব দাঁড়ানো। ওর সাথে আর সাত/আট জন লোক আছে। যারা কালো পোশাক পড়া। ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো মাহির।
–
নূর নিলয় আবরারকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বসে কাঁদছে। শায়লা বেগম নূরের আরেক পাশে বসে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নূর ওর বাবা-মা’কে চিনতে পেরেছে। সাথে উৎসবকেও চিনতে পেরেছে। শান্ত’র সাথে কাটানো কিছু মূহুর্তের এক ঝলক নূরের চোখে স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সেটা মনে করতে পারছে না নূর। নূর নিলয় আবরারের বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। আবারো দুহাতে মাথা চেপে ধরে আর্তনাদ করলো। ওর চোখের সামনে এবার পাহাড়ে এক্সিডেন্ট এর দৃশ্যটা স্পষ্ট ভেসে উঠলো। অর্নির দিকে একটা গাড়ি ধেঁয়ে আসছে নূরের কাছে স্পষ্ট হতেই নূর অর্নি বলে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
শায়লা বেগম, নিলয় আবরার, শান্ত ব্যস্ত হয়ে যায় নূরের জ্ঞান ফেরানোর জন্য। নূরের চোখ মুখে পানির ছিঁটা দেয় শায়লা বেগম। শান্ত নূরের কোমড়ের পাশে বসে ওর এক হাত জড়িয়ে আছে। আর নিলয় আবরার নূরের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। পাশেই রুশান আর তরী’ও আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় নূর। শান্ত নূরের হাত ধরে অস্থির কন্ঠে বললো,
–“নূর? ঠিক আছো তুমি?”
নূর শান্তর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আচমকাই সবার সামনে শান্তর বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। দুহাতে শান্তর শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নূর। এতেই সবাই বুঝে গেলো নূরের সবটা মনে পড়ে গেছে। শায়লা বেগম আর নিলয় আবরার মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। নূর কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। শান্ত পরম ভালোবাসায় নূরকে আগলে নিয়ছে বুকে। আলতো ভাবে নূরের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। নূরের কপালে চুমু খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শান্ত দুহাতে ধরে নূরকে ঠিক করে বসিয়ে বললো,
–“আমার ফুল-বউ কাঁদছে কেন? আমার নূরকে কিন্তু এরকম ইমোশনাল একদম মানায় না। আমার নূরকে সেই রণচণ্ডী রুপেই একদম জোস লাগে।”
শান্ত এমন ভাবে কথাটা বললো যে কান্নার মাঝেই নূর হেসে দিলো। নূরের হাসি দেখে শান্ত রুশান তরী তিনজনেই হেসে উঠলো। শান্ত নূরের গাল স্পর্শ করে বললো,
–“এ ক’মাস তোমাকে মিস করেছি ভীষণ জানো? আমি জানতাম আমার নূর এভাবে আমায় ছেড়ে যেতে পারে না। আমার বিশ্বাস ছিলো আল্লাহ এভাবে আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নিয়ে আমায় এতটা কষ্ট দিতে পারে না।”
নূর আবারো শান্ত’র বুকে মাথা রেখে বললো,
–“আর আমার তো কিছু মনেই ছিলো না। এ কয়েকটা মাস আমি সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষ হয়ে হাসি আনন্দের মাঝেই বেঁচে ছিলাম। আপনার কষ্টটা আমি অনুভব করতে পারিনি শান্ত। কিন্তু এখন, এখন আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে শান্ত।”
শান্ত নূরকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“আরে পাগলী কষ্ট পাওয়ার কি আছে? তুমি চলে এসেছো না? আমাদের সকলের সব কষ্ট লাঘব হয়ে গেছে।”
নূর মেকি হাসলো। পাশে তাকাতেই দেখলো রুশান আর তরী দাঁড়িয়ে আছে। নূর উঠে গিয়ে রুশানকে জাপ্টে ধরলো। রুশানের চোখেও পানি। রুশান চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে হাসিমুখে নূরকে বললো,
–“দোস্ত কাঁদিস না তো। তুই চলে এসেছিস এটা তো খুশির কথা, এসময়ে কেউ কাঁধে বোকা?”
নূর চোখ রাঙিয়ে তাকায় রুশানের দিকে। তারপর তরীর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কেমন আছো তরী?”
–“তোমাকে পেয়ে আমরা সবাই এখন খুব ভালো আছি আপু। এখন শুধু অর্নি আপু___”
–“অর্নি? কোথায় অর্নি? কি হয়েছে ওর? এখানে সবাই আছে ভাইয়া আর অর্নি নেই কেনো?”
নূরের প্রশ্নে রুশান ক্ষানিকটা এগিয়ে এসে বললো,
–“অর্নিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে নূর। উৎসব ভাই হয়তো সেখানেই গেছে।”
অর্নির কথা শুনে নূর অস্থির হয়ে পড়লো। কান্নায় ভেঙে পড়লো ও। এতদিন পর স্মৃতি ফিরে পেয়েছে, আর এখনই যে এমন একটা খবর শুনতে হবে ওর ও কল্পনা’ও করেনি। শান্ত আর রুশান নূরের দুই পাশে বসলো। শান্ত বললো,
–“চিন্তা করো না, উৎসব ভাই আমাকে ম্যাসেজ করেছিলো। সেদিন ওই দূর্ঘটনা আর আজকের এই কিডন্যাপের পেছনে কে কে আছে সেটা উনি জানতে পেরেছে।”
–“ম্ মানে? সেদিন ওটা ইচ্ছাকৃত ভাবে অর্নিকে মারার প্ল্যান করা হয়েছিলো? কিন্তু কে করেছে এটা?”
নূরের প্রশ্নে শান্ত সেদিনের পর আজ অব্দি যা যা হয়েছে সব জানালো সবাইকে। নূর হতভম্ব হয়ে বললো,
–“ইশা আপু অর্নিকে মেরে ভাইয়াকে পাওয়ার চেষ্টা করছিলো? আমরা সবাই জানতাম ইশা আপু ভাইয়াকে পছন্দ করে কিন্তু ইশা আপু যে এরকম সাইকো দের মতো কাজ করবে এটা আমাদের কল্পনার বাইরে।”
রুশান আর তরীও অবাক হয়েছে বেশ। রুশান অবাক কন্ঠে বললো,
–“তার মানে এতদিন অর্নি নিখোঁজ ছিলো না? সব অর্নির আর উৎসব ভাইয়ের প্ল্যান ছিলো?”
শান্ত মাথা নাড়ায়। নূর রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
–“ওই মাহিরকে তো আমি জানে মেরে ফেলবো। ভার্সিটি থাকতে ভাইয়া ওকে এত মেরেছে আমি এত ঝেড়েছি তারপরেও ওর একটুও লজ্জা হয়নি ও এখনো অর্নির পেছনে পড়ে আছে, আমার ভাইয়ার জীবন থেকে অর্নিকে কেড়ে নিতে চেয়েছে।”
শান্ত নূরকে বিছানায় বসিয়ে বললো,
–“তুমি, তুমি শান্ত হও। এখন এত হাইপার হইয়ো না।”
–“আমি ওখানে যাবো শান্ত, আমাকে নিয়ে চলুন। আমি নিজের হাতে মাহিরকে কয়েকটা চ/ড়, থা/প্প/ড় দিতে না পারলে আমার শান্তি হবে না।”
–“রিল্যাক্স, রিল্যাক্স নূর। উৎসব ভাইয়া উনার সকল গার্ডস নিয়ে গেছে তো ওখানে। পুলিশ’ও সময় মতো চলে যাবে। অর্নির কিচ্ছু হবে না। তুমি চিন্তা করো না।”
–
মাহিরকে একটানে দাঁড় করিয়ে সজোরে ওর নাক বরাবর একটা ঘুঁষি মারলো উৎসব। মাহির হুমড়ি খেয়ে কাজী সাহেবের পায়ের কাছে গিয়ে পড়লো৷ উৎসব আবারো মাহিরকে টেনে তুলে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় লাগালো ওর গালে। মাহিরের কলার ধরে বললো,
–“তোর কত বড় কলিজা তুই আমার বউকে কিডন্যাপ করেছিস? আমার বউয়ের গাঁয়ে হাত দিয়েছিস? তোর ওই হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিবো কু/কু/রে/র বাচ্চা।”
বলেই মাহিরের হাত মুচড়ে ধরলো উৎসব। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো মাহির। রিয়াদকেও বেধরক পেটাচ্ছে উৎসবের গার্ড। আর এখানে মাহিরের যত চ্যালাপেলা ছিলো সকলকেই মেরে আধমরা বানিয়েছে উৎসবের গার্ডসগুলো৷ উৎসব মাহিরের হাত আরো জোরে মুচড়ে ধরতেই মাহির চিৎকার করে উঠলো। উৎসব দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“তোর অনেক শখ না আমার বউকে বিয়ে করার? আমার বউকে বিয়ে করবি তুই? এই সা’য়াদাত আবরার উৎসবের বউকে বিয়ে করবি তুই? বিয়ে করাচ্ছি তোকে।”
কথাগুলো বলে আবারো মারতে শুরু করলো উৎসব। মাহিরের নাক-মুখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে পড়লো। অর্নি থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু উৎসব কিছুতেই ছাড়ছে না মাহিরকে। বেধরক পিটিয়ে যাচ্ছে ওকে।
চলবে~