হৃদপিন্ড_২ (পর্ব ৮)

0
508

#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_৮

চোখের সামনে এতো কাছে তাঁকে স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছে ইমন? ভাবতেই বুকের ভিতর যেনো ঢেউ খেলে গেলো। পুরো শরীরে কম্পন ধরে গেলো কেমন। কি করবে কি বলবে বুঝে ওঠতে পারলোনা। তাঁর সমস্ত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেলো যেনো৷ দুহাতে বেশ জোরে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলো ইমনকে।

দুকদম পিছিয়ে গেলো ইমন৷ ভ্রু কুঁচকে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চেয়ে রইলো মুসকানের দিকে। মুসকানও অবাক হয়ে চেয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকলো। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
—- নানাভাই তুমি?
এটুকুন মেয়ের কতো সাহস, গায়ে কতো জোর। একেতো ধাক্কা দিয়ে চরম বেয়াদবির সাথে চরম অপমান করেছে তাঁকে তাঁরওপর নানাভাই বলে প্রেসটিজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আবার কেমন থরথর করে কাঁপছেও। ভয়ই যদি পাবে এতো সাহস দেখাতে কে বলেছে? ভেবেই দুকদম এগিয়ে একটানে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। মুসকান কাঁদো কাঁদো হয়ে সড়ে যেতে চাইলেই ইমন খুব শক্ত করে পিঠে চেপে ধরলো৷ গলার স্বর বেশ ভারী,কঠিন করে বললো,
—- এক চড়ে সবকয়টা দাঁত ফেলে দিতাম৷ শুধু এটার জন্য সেটা পারলামনা৷ ঠোঁটের কোনার তিলটায় বুড়ো আঙুল ছুঁয়িয়ে কথাটা বললো ইমন।

মুসকান মাথা নিচু করে ফেলবে তখনি বাকি চার আঙুল থুতনির নিচে রেখে শক্ত করে ধরে রাখলো। সে আর মাথা নিচু করতে পারলো না। তবে চোখ নামিয়ে রাখলো। তাঁর শরীরের কম্পন অনুভব করতে পারছে ইমন তাঁর চোখের ঘনকালো পাঁপড়ির কাঁপতে থাকা দৃশ্যটা ইমনের চোখ জোরায় যেনো আঁটকে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে উপভোগ করতে লাগলো সেই দৃশ্যটা সে।

অস্বস্তি, ভয়,লজ্জার মাঝে হাবুডুবু খেতে লাগলো মুসকান৷ নিজেকে ইমনের থেকে দূরে সড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো খুব। কিন্তু এক ইঞ্চি ও সড়তে পারলো না৷ ইমন মৃদু হেসে ফেললো মুসকানের অবস্থা দেখে। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
—- এই মুসু এক কাজ করিস তো তোদের মেয়েদের কিসব কেনাকাটার দোকান আছে না? ঐ যে ঠোঁটে মাখিস,চোখে মাখিস, গালে মাখিস ঐ সব যে দোকান থেকে কিনিস সেই দোকানে গিয়ে দোকানিকে জিগ্যেস করবি তিল মোছার কোন উপাদান তাঁরা দেয় কিনা, যদি দেয় তাহলে যতো টাকাই লাগুক কিনে এসব ঠোঁট তিল,ঘাঁড় তিল গুলা মুছে নিবি। তারপর শাস্তি দিব বেয়াদবির চরম শাস্তি।

ইমনের মুখে এমন অস্বাভাবিক কথা শুনে মাথা ভনভন করছে মুসকানের। বুকের ভিতর যেনো হাতুড়িপেটা শুরু হয়ে গেছে। ইমন কেমন চাহনীতে যেনো চেয়ে আছে তাঁর দিকে সে চাহনীতে চোখ রাখতে পারছেনা সে৷ মাথা নিচু করে ফেলতেই ইমন ছেড়ে দিলো তাঁকে। মুসকান জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইমন দুকদম পিছিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
—- আগে তো এমন ভয় পেতিনা এখন কেনো এতো ভয় পাচ্ছিস? আর ভয় পাবি ভালো কথা কিন্তু চোখে,মুখে এমন মারাত্মক ভয়কাতুরে সৌন্দর্য ভর করে কেনো? তুই কি হঠাৎ করে সৌন্দর্য বাড়ানোর মন্ত্র জানিস?

মুসকানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো৷ তাঁর বুকের ভিতর কেমন যেনো শুরু হয়ে গেছে। কেমন অনুভূতি তা না বলতে পারবে আর না কাউকে বোঝাতে পারবে বা নিজে বুঝতে পারছে। সেই শুরু হওয়া অনুভূতি সহ্য করতে না পেরে কেঁদেই ফেললো সে৷ নাক টানার শব্দে পেয়ে ঘুরতেই মুসকানের চোখের অশ্রু দেখতে পেলো ইমন। আহত হলো তাঁর হৃদয় দুকদম এগিয়ে এসে আহত গলায় বললো,
—- আরে মুসু কাঁদছিস কেনো? আরে আমি মারবো বলেছি মারিনি তো। এতে কাঁদতে হবে কেনো? যাই বলিস তোর এমন ঘনঘন অশ্রু বিসর্জন দেওয়ার স্বভাবটা ঠিক আগের মতোনই আছে। দেখি বোস কাঁদতে হবে না বোস।

ইমনের হাতটা এক ঝটকায় সড়িয়ে দিলো মুসকান। রাগি চোখে চেয়ে ভাঙা আওয়াজে বললো,
—- হ্যাঁ আমাকেই তো মারতে চাও শুধু তুমি৷ আমাকেই তো মারবে৷ সেদিনও মারতে চেয়েছিলে আজো চেয়েছো৷ সবাইকে আদর করবে সবাইকে ভালোবাসবে শুধু আমাকেই বকবে আমাকেই মারবে। বলেই গটগট পায়ে বাথরুম গিয়ে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ইমন হা করে দাঁড়িয়ে রইলো চোখ দুটো স্থির রাখলো বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে। মনে মনে ভাবলো ‘হে আল্লাহ ওর স্মৃতি শক্তি একটু কমিয়ে দিও প্লিজ যেনো ঐসব দিন ভুলে যায়’।
_______________________
প্রায় পনেরো দিন চলে গেছে। এই পনেরো দিনে ইমন বেশ কয়েকবার মুসকানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। যখনই সময় পেয়েছে মুরাদের সাথে দেখা করার বাহানায় চলে গেছে ও বাড়ি। বন্ধুকে দেখার নাম করে দেখে এসেছে বন্ধুর বোনকে। সকলের আড়ালে মুসকান কে পেয়ে যতোবারই কথা বলতে গেছে ততোবারই মুসকান তাঁকে এড়িয়ে চলেছে। নিজেকেই নিজে চেনা হয়ে পড়েছে দুষ্কর। যে ইমন চৌধুরীর সাথে একটিবার মিট করার জন্য শহড়ের নামীদামী ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের মেয়েরা রাতদিন স্বপ্ন দেখে আসছে। ভার্সিটিতে শতশত মেয়ের প্রেম,বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে যে ইমন চৌধুরী। সেই ইমন চৌধুরী কে একদম নাকানিচুবানি খাওয়িয়ে ছাড়ছে তাঁরই বন্ধুর পুচকে বোন? তাঁর অপরাধ মিলি নামক এক ভদ্রমহিলার জন্য তাঁকে কয়েকটা ধমক দেওয়া হয়েছিলো এটুকুই? যে মিলি কিনা এখন অন্যের সংসারে গিয়ে অন্যের বাচ্চার মা হয়ে গেছে তাঁর জন্য শুধুমাএ তাঁর জন্য আজ তাঁর এই পরিণতি? কিছু ভাবতে পারছেনা ইমন আর৷ এদিকে তাঁর মাও বিয়ে বিয়ে করে কান ঝালাপালা করে ফেলছে। বাবার বন্ধুর মেয়েরা সকাল বিকাল দেখা করার জন্য প্যান প্যান করছে। শুধুমাএ মুরাদের জন্য দাঁতে দাঁত চেপে থাকতে হচ্ছে নয়তো এতোদিনে ঐটুকুন মেয়ের ত্যাজ কতোটা দেখে ছাড়তো৷ এতো জেদ এতো ত্যাজ কোথা থেকে আসে তাই দেখতো সে৷
.
বেলা এগারোটা বাজে। মুরাদ ফোন করে জানালো তাঁদের বাড়ি যেতে। গতকাল রাত বারোটার দিকে ফিরে সেই যে ঘুম দিয়েছিলো ঘুম ভেঙেছে একদম মুরাদের ফোন পেয়ে। ওঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের হাতের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লো সে।

মুরাদদের বাড়ির সামনের পুকুরপাড়েই মিলি আর লিলি দাঁড়িয়ে আছে৷ মিলির কোলে তাঁর দুবছরে মেয়ে ইসরাত। প্রচন্ড গরম পড়েছে কারেন্ট চলে যাওয়ায় মেয়ে আর বোনকে নিয়ে পুকুরঘাটে এসেছে। বড় বড় দুটা আম গাছ আর একটি জলপাই গাছ থাকায় পুকুর পাড়ে বেশ ছায়া থাকে সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস৷ দুবোন এটা সেটা গল্প করছিলো তখনি লিলি গেটের সামনে দেখতে পায় ইমনকে। বেশ উত্তেজিত হয়েই বলে,
—- এই আপু ইমন ভাইয়া৷
লিলির কথা শুনে চমকে তাকায় মিলি। সত্যি ইমনকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে। ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে ফেলে,
—- আল্লাহরে এটা ইমন? ওহ মাই গড আগের থেকে হাজারগুন বেশী হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে রে। বাবুকে নে আমি দেখা করে আসি ওর সাথে। বলেই মেয়েকে লিলির কাছে দিয়ে বেশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় ইমনের দিকে।

গেটে কয়েকবার ঠকঠক করে ঘড়ির টাইম দেখে চোখের পলক ফেলতে থাকে ইমন। তখনি শুনতে পায় পরিচিত এক কন্ঠস্বর।
—- এই ইমন কেমন আছো তুমি?
—- আরে মিলি যে? ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
—- ভালো ছিলাম। তোমায় দেখে আরো দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেলামগো। কতোদিন পর দেখা আমাদের। শুনলাম তুমি নাকি এখন ব্যারিস্টার সাহেব?
মৃদু হাসলো ইমন মাথা চুলকে বললো,
—- ঐ আর কি।
মিলি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইমনের দিকে। ইমন বেশ ইতস্ততবোধ করছে। জোর পূর্বক হাসি টেনে মিলির কথার জবাব দিচ্ছে সে। তখনি গেট খুলে দিলো মুসকান। তাঁর মুখ স্বাভাবিক থাকলেও যখন ইমনের পাশে মিলিকে দেখলো শরীর জ্বলে গেলো তাঁর। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে পিছন ঘুরে গটগট পায়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো সে।

ইমনের সাথে মিলিও বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। একি ভার্সিটির একি ব্যাচ এর স্টুডেন্ট তাঁরা। তিনবছর আগেই বিয়ে হয়ে যায় মিলির৷ কিন্তু ভার্সিটি জীবন থেকেই ইমনকে সে খুব পছন্দ করে। তাঁর এই পছন্দের কথা কারো জানতে বাকি নেই। তাঁর হাজব্যান্ড পর্যন্ত জানে সে ইমন চৌধুরী কে মন থেকে ভীষণ পছন্দ করে। প্রপোজও করেছিলো কিন্তু ইমন তাঁকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছে সে রিলেশনশিপে যাবেনা। তাছাড়া বন্ধুত্বের মধ্যে এসব টেনে যেনো বন্ধুত্বকে সে অসম্মান না করে। যেদিন মিলিকে এসব বোঝায় ইমন সেদিন মুরাদদের ছাদে মিলি আর ইমন একা ছিলো। ইমনের পাশে কোন মেয়েকে ছোট থেকেই সহ্য করতে পারতোনা মুসকান। তখন তাঁর ধারনা ছিলো তাঁর নানাভাই শুধুই তাঁর একার৷ সকলের কাছে যখন শুনেছিলো মিলি ইমনকে প্রপোজ করেছে এর মানেটা ঠিক বুঝেছিলো সে। সবে ক্লাস সিক্সে ওঠেছে সে তখন। এসবে তখন নিত্য,নতুন ধারনা হতে থাকে তাঁর। ডিজিটাল যুগে এসব বুঝতে তাঁর খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তাঁর ভালোবাসায় ভাগ বসাতে অন্য কেউ আসবে ভাবতেই রেগেমেগে ছাদে যায় সে।

ছাদে গিয়ে যখন দেখে মিলি কান্না করছে আর ইমন তাঁর হাতের ওপর হাত রেখে কিসব বোঝাচ্ছে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে সে। এক দৌড়ে তাঁদের কাছে যায় আর মিলির হাত থেকে ইমনের হাত সড়িয়ে মিলির হাতে সাজোড়ে এক কামড় দেয়। ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে মিলি আর ইমন মুসকানকে মিলির থেকে ছাড়িয়ে বেশ কয়েকটা ধমক দেয়। এতোটা রেগে এতো জোরে ধমকায় যে রাতের বেলা গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে মুসকানের। সেই থেকেই বড্ড অভিমান আর জেদ চাপে মাথায়। সেই অভিমান আর জেদ থেকেই দূরে দূরে থাকে সে। তাঁর সেই এক ভাবনা তাঁর নানাভাই মিলিকেই বেশী ভালোবাসে তাইতো তাঁকে ওভাবে ধমকেছিলো সেদিন। যদি তাঁকে ভালোবাসতো তাহলে তো ধমকাতে পারতো না৷
.
মিলি, মুরাদ আর ইমন বেশ অনেকটা সময় গল্প করলো। মুরাদের মা মরিয়ম আক্তার গতকাল বিকালে বাপের বাড়ি গেছে। মুরাদের নানি অসুস্থ তাই কিছু ফল কিনে নিয়ে দেখতে গেছে। বাড়িতে মুসকান আর ওপাশে চাচা,চাচি,চাচাতো বোন ছাড়া কেউ নেই। মুসকান নিজের রুমে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। এ কদিন ইমনকে তাঁর পিছনে ঘুরিয়ে যতো মজা নিয়েছে সবটায় আজ জল ঢেলে দিলো এই মিলি ভাবতেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তাঁর।

অনেক সময় গল্পগুজব করার পর ইমন ভাবছে মুসকানের ছোটবেলার সেই জেলাসি হওয়ার কথাগুলো। তাঁর সাথে কোন মেয়ে দেখলেই মুসকান কেমন মেয়েগুলোকে মারতে যেতো। মিলিকেও তো কামড়ে দিয়েছিলো একবার৷ সেইরকম কি এখনো হবে ওর? কই আজ তো কিছু হলোনা নাকি মিলির বিয়ে হয়ে গেছে বলে কিছু বললো না? নাকি আগের বাচ্চামি করে জেলাসি হওয়াটা বড় হয়ে পরিবর্তন হয়ে গেছে? ইশ কতো ভালোই না হতো আগের মতো যদি জেলাসি হতো। কেশে ওঠলো ইমন।
—- একি ইমন বিষম খেয়েছো? পানি খাবে আমি এখনি আনছি। বলেই মিলি ওঠে বসার ঘরে গেলো।
ইমন ও কাশতে কাশতে ওঠে বসার রুমের দিকে গেলো। মুসকানের রুমের দিকে মুখ করে বেশ শব্দ করে কাশতে শুরু করলো।

মিলি গ্লাসে পানি ভরে ইমনের কাছে নিয়ে ব্যাস্ত গলায় খেয়ে নিতে বললো। ইমন আরেকটু শব্দ করে কাশতেই মুসকান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মুসকান কে দেখেই ইমন মিলির হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো৷ হাঁটু গেড়ে বসে নিচু স্বরে বললো,
—- একটু মাথায় হাত বুলাও মিলি। আমার মা হাত বুলালে বিষম থেমে যায় মা তো নেই আপাতত তুমি হেল্প করো।
বলামাএই মিলি পিঠে আর মাথায় আস্তে করে হাত দিয়ে চাপর দিতে লাগলো। মুসকান তাঁর দ্রুত হাঁটা পা থামিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকলো কতোক্ষন। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তাঁর। এই মিলিকে সহ্য করতে পারছেনা সে৷ আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না সেখানে ফিরে গেলো নিজের রুমে। ভয়ংকর রেগে গেছে সে। হাতের কাছে যা যা পেলো সব ছুঁড়ে ফেললো নিচে। কাচের জগ,গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ফুলদানী থেকে শুরু করে বই খাতা সব ছুঁড়ে ফেললো। পুরো রুম এলোমেলো করে মেঝেতে বসে দুহাঁটুতে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।

রুমে ভাঙচুরের শব্দ শুনে মিলির ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। ইমন তো হতবাক হয়ে গেছে। এমন কিছু ঘটবে ভাবতেও পারেনি সে৷ ওদিকে মুরাদ সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। পাশের ঘর থেকে রিমি আর নিলুফা বেগম ছুটে এসেছেন। মিলি আর ইমনকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিমি প্রশ্ন করলো,
—- মিলি আপু কিসের শব্দ মুসু কাঁদছে না? হ্যাঁ তাই তো মুসু কান্না করছে তো কিন্তু কেনো? বলতে বলতেই মা মেয়ে ছুটে গেলো মুসকানের ঘরে।

মিলি হা হয়ে তাকিয়ে আছে ইমনের দিকে। মুরাদের চেঁচানোতে বিরক্ত হয়ে ইমন মুরাদের ঘরের দরজার দিকে একবার তাকালো তারপর চলে গেলো মুসকানের ঘরের দিকে।
.
মুসকান কেঁদেই চলেছে। রিমি আর নিলুফা বেগম তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করছে, কি হয়েছে কি নিয়ে রেগে গেছে৷ কিন্তু মুসকান কিছু বলছেনা। মিলি অপরাধীর মতোন দাঁড়িয়ে আছে। ইমন কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় গিয়ে বসলো৷ মুসকানের সামনাসামনি বসেছে সে৷ তাঁর সামনেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কাঁদছে মুসকান। ইমন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মুসকানকে। যাকে বলে পা থেকে মাথা অবদি মুখস্থ করে নেওয়া। কিন্তু তাঁর মুখস্থ করতে একটু অসুবিধা হচ্ছে কারণ মেয়েটা যে কাঁদছে। খুব বিশ্রি কান্না দুনিয়ার সবচেয়ে জঘন্য কান্নাটাই বোধহয় কাঁদছে মুসকান। যা তাঁর বুকের ভিতর বিশ্রি একটা অনুভূতির সৃষ্টি করছে। তাঁর খুব বলতে ইচ্ছে করছে ‘মুসু আমার কাছে জগতের সবচেয়ে বিশ্রি মূহুর্ত হচ্ছে তোর কান্নার মূহুর্ত’। মুরাদকে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘এমন বোন যেনো আর কারো বন্ধুর ঘরে না জন্মায়। কপাল পুড়েছে এক আমারই পুড়ুক এ জগতের আর কোন পুরুষের যেনো আমার মতো করে কপাল না পোড়ে’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here