#কে!!
#৫ম_পর্ব
হাবীবের কথা শুনে নীতির মাথা যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। তখন একজন লেডি কনস্টেবল এসে নীতিকে বেশ জোর করে নিয়ে যেতে নিলে স্নিগ্ধ বাধা দেয়। স্নিগ্ধ এর চোখ মুখের রঙ যেনো একেবারেই পালটে গেছে। পারলে ওই মাহিলাকে মেরেই ফেলে সে। রাগ কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– হাত ছাড়ুন, কথাটা যেনো দ্বিতীয়বার বলা না লাগে।
স্নিগ্ধ এর চোখে একরকম ধ্বংসাত্মক চাহনী আছে যা হাবীবের চোখ এড়ায় নি। তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ স্নিগ্ধ এর দিকে তাকিয়ে থেকে সন্দেহাতীত কন্ঠে বললো,
– আপনি ওই ভার্সিটির টিচার না?
স্নিগ্ধ কথাটা শুনে লেডি কনস্টেবলের হাত ছেড়ে হাবীবের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায়। বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,
– হ্যা, তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে?
– মহাভারত অশুদ্ধ হয় নি, তবে স্টুডেন্ট এর সাথে এতো ঘনিষ্ঠতা আই গেজ দৃষ্টিকটু দেখায়।
– কি বলতে চাচ্ছেন?
– কিছুই না, আমাদের কাজে প্লিজ বাধা দিবেন না। মিস নীতি, নিয়ে গাড়িতে উঠুন
– আপনার কাছে কোনো ওয়ারেন্ট আছে?
স্নিগ্ধ এর কথায় পা আটকে যায় হাবীবের। চোখ মুখ কুচকে স্নিগ্ধ এর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা টেনে স্নিগ্ধ আবার ও বলে,
– ওয়ারেন্ট বাদে এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার আই গেজ দৃষ্টিকটুর সাথে সাথে বেশ নিন্দাজনক ও।
স্নিগ্ধ কথাগুলো হাবীবের চোখে চোখ রেখে বললো। স্নিগ্ধ এর চোখে কেনো জানে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না হাবীব। বুকের মাঝে একটা ভয় কাজ করলো। একটা খটকা লাগছে কিন্তু সমীকরণ মিলাতে পারছে না হাবীব। এরপর শুকনো কাশি দিয়ে বললো,
– ওয়ারেন্ট নেই, কিন্তু বের করতেও বেশি সময় লাগবে না। কারণ উনার বিরুদ্ধে বেশ ভালো প্রমাণ আমার কাছে আছে। লাশের পাশে উনার ডি.এন.এ পাওয়াটা হয়তো ভালো কিছু না। এখন থানায় যেয়ে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে আই গেস কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। আমার যদি মনে হয় যে তিনি নির্দোষ তবে আমি তাকে তো হাজতে পুরবো না তাই না? তবে ওয়ারেন্ট বের করে ধরতে আসলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে বলে দিলাম।
হাবীব ঠান্ডা কন্ঠের কথা শুনে আর কিছু বললো না স্নিগ্ধ। নীতির কান্না পাচ্ছে, তার ডি.এন.এ স্যাম্পেল কিভাবে লাশের কাছে থাকতে পারে। সেতো সেখানে ছিলোই না। মাথাটা ভনভন করছে। বিকৃত লাশ দেখে যার মাথা খারাপের জোগাড় সে নাকি খুন করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব, আচ্ছা কেউ তাকে ফাসাচ্ছে নাতো!!!
আবারো একই রুমে বসে রয়েছে নীতি, আবারো সেই হাবিবের সামনে। হাবিব লোকটা সোজাসাপটা কোথা বলে না, মিচকে হাসি দিয়ে গা জ্বালিয়ে একটা ট্যারা প্রশ্ন করে। যেমন একটু আগে সে এটা প্রশ্ন করেছে যে,
– মি. স্নিগ্ধ এর সাথে আপনার সম্পর্কটা ঠিক কেমন?
– সেটা কি এই কেসের সাথে জড়িত অফিসার?
বেশ বিরক্ত হয়েই কথাটা বলে নীতি। মাথায় একে তো ব্যাথা করছে, টেনশনে হ্যাং হয়ে আসছে। উপর থেকে এই ঝামেলা। মাকে যে ফোন দিবে সেই সুযোগটাও হাবিব দিচ্ছে না।এবার যেনো ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে নীতির। বেশ চড়া গলায় ই নীতি তাকে বলে,
– আচ্ছা আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন কেনো? আমার বিরুদ্ধে কি আদৌ প্রমাণ আছে? বিগত দু ঘন্টা যাবৎ আমি এখানে বসে রয়েছি। আপনি কেস রিলেটেড কথা না বলে শুধু ফালতু কথা বলেই কাটাবেন।
নীতির কথা শুনে মিচকে হাসি দিয়ে হাবিব বলে,
– খুনের রাতে বাসায় তুমি ছিলে না, দারোয়ান তোমাকে রাত ৮টার দিকে বের হতে দেখেছে। তুমি বাসায় ফেরো রাত দশটার দিকে। খুন হয়েছে রাত নয়টার কাছাকাছি সময়ে। আর সেখানে শিহাব নামক ভিক্টিমের বাহিরেও একটা ব্লাড স্যাম্পল পাওয়া গেছে, যার সাথে তোমার ব্লাড গ্রুপ মিলে যায়। এবার আমাকে বলো, তুমি রাত ৮-১০ কোথায় ছিলে?
হাবিবের কথা শোনার সাথে সাথেই নীতির মাথায় বাজ পড়ে। এটা কিভাবে সম্ভব!! নিজেকে ঠান্ডা রাখতে চাইলেও পারে না। বেশ উত্তেজিত হয়েই বলে উঠে,
– আমার ব্লাড স্যাম্পেল ওই ছেলের কাছে থাকার সম্ভবনাই নেই। এটা কিভাবে সম্ভব? যেখানে আমি ওই ছেলেটাকে দেখেছি সেদিন। আর আমার গ্রুপ এতো ও রেয়ার নয়। এ পজেটিভ ব্লাড পাওয়া খুব ইজি। এটা যে আমার ব্লাড গ্রুপ তার কি প্রুভ?
– তাহলে আমাকে বলে দিলেই তো ঝামেলা মিটে যায় তোমার রাত ৮-১০টা কোথায় ছিলে তুমি?
– আমি?
নীতি চাইলেও বলতে পারছে না সে কোথায় ছিলো! সে সেই রাতে পাবে গিয়েছিলো, নির্ভীককে খুজতে ওর বাড়ি যেয়ে যখন পায় নি, তখন নির্ভীক যে পাবে ছিলো সেখানে যায়। সেখান নির্ভীক তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছিলো বিধায় নীতি সেখান থেকে চলে আসে। এটা সে চাইলেও বলতে পারছে না। ঠিক তখনই হাবিবের একটি কল আসে। হাবিব ইন্টারোগেশন রুম থেকে বের হতেই দেখে স্নিগ্ধ সেখানে উকিল সমেত বসে আছে। উকিল এগিয়ে যেয়ে হাবিবকে বলে,
– এখানে কিছু পেপারস আছে, আই গেস তাতে মিস নীতির এলিবাই প্রুভ হয়ে যাবে। মিস নীতি রাত ৮-১০ টা মি. স্নিগ্ধর সাথে রেস্টুরেন্টে ছিলেন এখানে সেটার প্রমাণ আছে। আপনি চাইলে ইনভেস্টিগেশন করতে পারেন। এবার আমার মক্কেলকে ছেড়ে দেবার অনুরোধ জানাচ্ছি।
হাবিব দেখলো স্নিগ্ধ সত্যি ই বেশ গুছিয়ে প্রমাণ তৈরি করে এনেছে। এবং সাথে উকিল ও সে চাইলেই নীতিকে আর আটকে রাখতে পারবে না। স্নিগ্ধ লোকটার মতিগতি কিছুই যেনো হাবিবের মাথায় আসছে না। খুব ধুর্ত কিসামের একজন মানুষ, যার তল বুঝা খুব কঠিন।
রাত ৮টা,
স্নিগ্ধ এর গাড়ি নীতির বাসার নিচে দাঁড়ানো। নীতিকে বাসায় পৌছে দেয়ার জন্য আসা। নীতি এখনো গাড়িতে বসে রয়েছে। স্নিগ্ধকে এক মনে দেখেই যাচ্ছে সে।
– চলে এসেছি, তুমি রেস্ট করো
স্নিগ্ধ কথাটা বলা শেষ না হতেই নীতি বলে,
– আমি আপনার সাথে ছিলাম না, আপনিও জানেন তবে কেনো মিথ্যে কথা বলেছেন?
– সত্যিটা বললে তুমি কষ্ট পেতে
– কিন্তু
– তোমার এতো চিন্তা না করলেও হবে। আমার জিনিসটাকে দেখে রাখার দায়িত্ব টাও তো আমার তাই না?
স্নিগ্ধ এর কথা যেনো প্রজেক্টাইল গেলো নীতির মাথার উপর থেকে। হা করে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধ এর দিকে। বাঁকা হাসি দিয়ে স্নিগ্ধ বলে,
– বাসায় যাও। এতো চাপ নিয়ো না।
নীতি আর কথা বাড়ালো না, লোকটা কি চায় কি বলে তার কোনো ঠিক ই নেই। তবে লোকটার প্রতি একটা ভালো লাগা কাজ করছে। অন্যরকম ভালোলাগা যেটা এতো নির্ভীকের প্রতি অনুভব হতো। তবে কি নির্ভীকের জায়গা দখল করে নিচ্ছে লোকটা!! অবশ্য এতে ভুল তো কিছু নেই। নির্ভীকের কাছে নীতির দাম আর দশটা বন্ধুর মতোই। আজ সারাটাদিন কি একবারও খোঁজ নিয়েছে তার। নাহ নেয় নি। হয়তো নিবেও না। সে তো তার জীবনে ব্যস্ত। থাক না সে তার মতো, নীতি ও নতুন করে সব অনুভুতিগুলোর সূচনা করুক। তাতে কি খুব ক্ষতি হবে!! হয়তো না______
রাত তিনটা,
ঘুমে মগ্ন নীতি। আজ ঘুমের ঔষধ খেয়েই ঘুমিয়েছে সে। ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাহিরের সোডিয়ামের আলোতে একটা আলো ছায়ার খেলা তৈরি হয়েছে। সে আলো ছায়ার খেলায় একটা কালো অবয়বকে নীতির কাছে আসতে দেখা যাচ্ছে। মানুষটা ধীর পায়ে নীতির পাশে এসে বসলো। নীতির ঠোঁটে গভীর স্পর্শ করে ধীর কন্ঠে বললো,
– বাবুইপাখি, তোমার চার হাতের সীমানায় আমি কাউকে আসতে দেবো না। তাতে যদি তোমাকে ফাঁসাতেও হয় তাতেও আমি রাজী। ধীরে ধীরে সবাই কে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে দেবো। শুধু আমার বিচরণ হবে তোমার আশেপাশে, মস্তিষ্কে এবং মনের গহীনে। শুধু একটা নাম ই তুমি মনে রাখবে তা হলো কেবল মাত্র………..
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি