#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১২
#মৌমিতা_শবনাম
বৃষ্টি নিরবের জন্য অপেক্ষা করছে রাত ১ টা বাজে তখন। নিরব একটু পর বাসায় আসে। নিরবকে দেখে খুশি হয়ে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টি এখনও জেগে আছে দেখে বিরক্ত হয় নিরব। বৃষ্টি বলল,–” তুমি এসেছো নিরব!”
নিরব ত্যাড়া ভাবে বলল,–” হ্যা তো?”
নিরবের ত্যাড়া উত্তরে মন খারাপ হয়ে গেল বৃষ্টির। মাথা নিচু করে বলে– ” আসলে কিছু কথা ছিল। ”
নিরব বিরক্ত হয়ে বলল,–” বল।”
বৃষ্টি বলল,–” তুমি বাবা হতে চলেছো। ”
এই বলে বৃষ্টি অধীর আগ্রহে নিরবের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বুঝি নিরব এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলবে,” বৃষ্টি জান আমার তুমি সত্যি বলছো কি আমাদের পিচ্চি আসতে চলছে! ”
কিন্তু এটা হলো না। হলো এটার বিপরীত টা শান্ত গলায় বলল নিরব,–” রেডি থেকো কাল এবরেশন করিয়ে আনবো।”
বৃষ্টি বলল,–” হোয়াট? ”
নিরব আবারও বলল,–” এবরেশন করিয়ে আনবো। ”
বৃষ্টি রেগে গেল। নিরবের কলার ধরে বলে– ” এবরেশন করাবো মানে?”
নিরব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,–” এই বাচ্চা আমার চাই নাহ।”
বৃষ্টি কলারটা আরও চেপে ধরে বলে– ” আমাকে খেলনা মনে হয় তোমার তন্নিকেই যদি চাও তাহলে খনিকের জন্য আমাকে তোমার সাথে জড়ালে কেন? ”
নিরব এক ঝাড়া দিয়ে নিজের কলার থেকে বৃষ্টির হাতটা সরিয়ে ফেলে। বৃষ্টির গালে জোরে একটা চর মারে সেখান থেকে চলে যায় নিরব। বৃষ্টি সেখানেই বসে পড়ে। চিনিয়ে নেওয়া কোনো কিছুর স্থায়িত্বকাল বেশিদিন হয় নাহ তা সে বেশ বুঝতে পারছে। সে কি করবে বুঝতে পারছে না সে ত বাচ্চাটাকে বাচাতে চায়।
———-
সকাল ৭ টা বাজে তন্নি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। রাদকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে মায়া হয়। ঠিক কর শুতেও পারছে না বারবার পড়ে যেতে নিচ্ছে। তন্নি উঠে গিয়ে রাদকে ডেকে বলে, –” এই যে মিস্টার যান গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন। ”
রাদ ঘুম ঘুম ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তন্নি গিয়ে তার পাশে বসে। রাদ চোখ বন্ধ করে বলে,–” কিছু বলবে মিসেস তন্নি।”
তন্নি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে বলল,–” আসলে আজকে থেকে আপনি বিছানায় শুবেন। বিছানা তো অনেক বড় বড় আমরা তিনজন খুব সুন্দর হয়ে যাবে। ”
এতটুকু বলে তন্নি বোকা বোকা চোখ করে রাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাদ চোখ পিটপিট করে তন্নির মুখের অবস্থা দেখে ঠোঁট মেলিয়ে হেসে বলে, –” এরকম কিউট ফেইস করো না নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয়।”
রাদের কথার মানে বুঝতে একটু সময় লাগে ততক্ষণে রাতে গভীর ঘুমে। রাদের কথার মানে বুঝতে পেরে মুখ দিয়ে একটা শব্দই বের হয় তা হলো অসভ্য।
তন্নি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো রিধি রান্না করছে আর রাইদা টিভি দেখছে আর খেলা করছে। তন্নি রাইদাকে আদর করে রিধির কাছে যায়। রিধি তন্নিকে দেখে হেসে বলে, –” গুড মর্নিং ভাবি।”
তন্নিও হালকা হেসে বলে, –” গুড মর্নিং। দাও আমি করছি তুমি রাইদার সাথে বসো গিয়ে। ”
রিধি বলল, –” না কোন সমস্যা নেই মিষ্টি ভাবি তুমি যাও আমার শেষ প্রায়। ”
তন্নি ধমকে বলল,–” চুপ মেয়ে যাও গিয়ে টিভি দেখো আমি করছি বাকি গুলো।”
ধমক খেয়ে রিধি আর কিছু বলে না গাল ফুলিয়ে গিয়ে টিভি দেখতে থাকে। রিধির গাল ফুলানো দেখে তন্নি হাসে।
তন্নি অনেক রকম খাবার তৈরি করে। রান্না করতে করতে ১০ টা বেজে যায়। রাইদার জন্য দুধ গরম করে রিধির হাতে দিয়ে আসে তন্নি। দুধ দেখে রাইদার হাজার বাহানা শুরু রিধি হাজার চেষ্টা করেও দুধ খাওয়াতে পারলো না। তন্নি এসে রিধির কাছ থেকে দুধের গ্লাস টা নিয়ে বলে,–” আমি খাওয়াচ্ছি।”
রিধি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে– ” দেখো এই ত্যাড়া মেয়েকে খাওয়াতে পারো কিনা।”
তন্নি হালকা হেসে রাইদার কাছে গিয়ে বসল,–“রাইদা মনি কি দুধ খাবে নাহ?”
রাইদা নাক ছিটকে বলে, –” নাহ খাবে না।”
তন্নি মন খারাপ করে বলে, — ” মাম্মাম খাইয়ে দিলেও খাবে নাহ?”
রাইদা অসহায় ফেইস করে বলে, –” রাইদার দুধ একদম পছন্দ না।”
তন্নি বলল,–” তাহলে রাইদার কি পছন্দ?”
রাইদা লাফিয়ে বলে,–” চকলেট। ”
তন্নি উঠে দুধ আর চকলেট মিক্সড করে গরম করে আনলো। এবার রাইদা বাহানা করলো নাহ খেয়ে নিল। রাদ এতক্ষণ পিছনে দাড়িয়ে তন্নি আর রাইদার কাজ দেখছিল। ওদের কান্ডে রাদ হালকা হাসলো। তবে কি তার সুখের সংসার শুরু নাকি নতুন কোনো ঝড় আবার আসবে।
——————-
নিরব বৃষ্টিকে অনেকবার বলে গেছে রেডি হতে কিন্তু বৃষ্টি সেই একইভাবে বসে আছে। নিরব এবার এসে বৃষ্টিকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে প্রচন্ড রেগে যায়। বৃষ্টির কাছে গিয়ে তার হাতে ধরে টেনে তুলে গালে থাপ্পড় মারে। বৃষ্টি ছিটকে গিয়ে বিছানায় পড়ে। নিরব আবার বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে তোলে। বৃষ্টি অস্পষ্ট সুরে বলে,—” নিরব আমি প্র্যাগনেন্ট।”
নিরব রাগে দাতে দাত চেপে বলে,–” হ তুই প্র্যাগনেন্ট এখন তুই যাবি আমার সাথে এবরেশন করাতে। ”
বৃষ্টি রেগে যায় চুল থেকে হাত ছাড়িয়ে জোরে থাপ্পড় মারে নিরবকে। নিরবকে থাপ্পড় মেরে বলে,–” ফাইজলামি পেয়েছিস এটা আমার বাচ্চা। তোকে পালতে হবে না আমি পালবো ওকে। ”
নিরব আবার বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে বলে– ” বাচ্চার মাধ্যমে আমার উপর অধিকার খাটাতি নাকি?”
বৃষ্টি নিরবের পায়ে পড়ে বলে, –” আমি কখনো কোনো দাবি নিয়ে আসবো না তোমার কাছে প্লিজ আমার সন্তানটাকে মেরো না।”
বৃষ্টির কথায় নিরব হেসে উঠে বলে, –” তোর মতো মেয়েকে বিশ্বাস করা যায় না যেই দশ বছরের বন্ধুত্বের সাথে বেইমানি করে সে আমার সাথে বেইমানি করবে না তার কি গ্যারেন্টি জলদি উঠ। উঠে রেডি হয়ে নে হাসপাতালে যাবো।”
বৃষ্টি বলে,–” আমি যাবো নাহ হাসপাতালে। ”
নিরব প্রচন্ড রেগে যায়। বৃষ্টিকে মারতে শুরু করে। তার একটা আঘাত অনেক জোরে এসে পেটে লাগে। বৃষ্টি চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। তার ব্লিডিং হচ্ছে। রক্ত দেখে নিরব থেমে যায় ভয়ে তার মাকে ডাকতে শুরু করে। রুনা ছেলের ডাকে জলদি আসে। বৃষ্টিকে দেখে বলে,–” হায়রে এটা কি করে হলো ওরে জলদি হাসপাতালে নিয়ে চল নয়তো তুই জেলে থাকবি।”
নিরব ভয়ে মা যা বলে তাই করে বৃষ্টিকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
—————–
মনি হোটেলে নিরবের জন্য অপেক্ষা করছে। নিরব আসলে তাকে নিয়ে গিয়ে রাদ আর ওর বিয়ের ফেইক ছবি বানাতে হবে। মনি বিরক্ত হয়ে বলে, –” উফফ এই ছেলেটা এখনও আসছে না কেন?”
নিরব আসে ২ ঘন্টা পর। মনি নিরবকে দেখে রাগী গলায় বলে, –” কি সমস্যা এতো লেইট করলে যে?”
নিরবের শরীর ঘেমে একাকার। নিরব তাড়া দিয়ে বলে– ” একটু কাজ পড়ে গেছিলো ম্যাডাম চলুন জলদি।”
মনিও কথা বাড়ালো নাহ। নিরবের সাথে যেতে থাকলো। নিরব একটা স্টুডিও এর সামনে নামল গাড়ি থেকে। মনিও নামলো সাথে। স্টুডিও এর ভিতরে গিয়ে নিরব একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটার নাম আকাশ নিরবের বন্ধু। আকাশ বলল,–” কিরে কি মনে করে এখানে?”
নিরব বলল,–” তোকে একটা কাজ করতে হবে। ”
আকাশ বলল,–” কি কাজ বল?”
নিরব বলল,–” তোকে কিছু বিয়ের ফেইক ছবি বানাতে হবে। ”
তরপর নিরব আকাশকে সব বুঝিয়ে বলল। সব শুনে আকাশ বলল,–” আরেহ নো প্যারা সব হয়ে যাবে। ”
অতঃপর নিরব আর মনি একসাথে কিছু ছবি তুলে। বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি তুলে। মনি আকাশকে বলে,–” এডিট করা হয়েছে তা যেন বুঝা না যায়।”
আকাশ বলে,–” চিন্তা করবেন নাহ ম্যাডাম সব হয়ে যাবে। ”
মনি বলল,–” কবে পাবো?”
আকাশ বলল,–” কালকেই। ”
তারপর নিরব মনি কিছুক্ষণ আকাশের সাথে গল্প করে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মনির মনে মহা আনন্দ রাদকে সে কখনো শান্তিতে থাকতে দিবে না।
চলবে
আমার হাত পুড়ে যাওয়ায় এর বেশি লিখতে পারলাম না। কেমন হয়েছে জানাবেন।