#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ৯
#মৌমিতা_শবনাম
রিধি আর রাইদা বসে আছে তন্নিদের বাসায়। রাদ অফিসে গেছে সাথে তন্নিও চলে গেছে। তুষার সাহেব আর মিশমি বসে আছে তাদের সামনে। রিধি হাত মুচড়িয়ে বলে,–” আঙ্কেল আমি রাদের বোন রিধি। রাদ হলো তন্নি আপুর বস।”
মিশমি মিষ্টি হেসে বলেন,–” ওহ তোমার কথা অনেক বলেছে তন্নি আমাকে।”
রিধিও হাসে মিশমির সাথে। তখন রাইদা বলে,–” মিষ্টি আন্তি আমার কথা বলে নি?”
রাইদার কথায় সবাই হেসে দিল। মিশমি রাইদার গাল টেনে বলে– ” তোমার কথা আরও বেশি বলে।”
তুষার সাহেব বাজারে যেতে নিলেন তখন রিধি বলল,–” আঙ্কেল একটু বসেন কিছু কথা আছে। ”
তুষার সাহেব কৌতুহল নিয়ে বসলেন। মিশমি শরবত করে এনে ওদের দিলেন। তুষার সাহেব বললেন, –” বলো কি কথা? ”
রিধি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বলল,–” আসলে আঙ্কেল আমরা তন্নি আপুকে আমার ভাবি করে নিয়ে যেতে চাই মনে রাদ ভাইয়ার বউ করে।”
তুষার সাহেব ও মিশমি একে অপরের মুখপর দিকে তাকালো। তুষার সাহেব সঙ্কোচ নিয়ে বলল,–” কিন্তু তন্নি…. ”
তুষার সাহেবকে পুরোটা বলতে না দিয়ে রিধি বলে দিল,–” জানি উনি ডিভোর্সি এতে আমারও কোনো প্রবলেম নেই আর আমার ভাইয়ারও।”
তুষার সাহেব জোরপূর্বক হাসলেন। রিধির দিকে তাকিয়ে বললেন, –” মা আমাদের তন্নির সাথে কথা বলতে হবে। ”
রিধি হেসে বলে, –” সমস্যা নাই আপুর সাথে কথা বলে জানিয়েন।”
————–
তন্নি অফিসে যাচ্ছিল বাস স্টেশনে দাড়িয়ে ছিল বাসের জন্য তখন হঠাৎ এক জায়গায় তার চোখ আটকে যায় হাত পা কাঁপতে শুরু করে। কেন আসছে সে তার দিকে কি চায় সে? কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নিরব নামটা উচ্চারণ হয়। সেই নিরব সেজে আসছে যে নিরব তন্নিকে প্রথম ভালোবাসার কথা বলেছিল সেই আগের স্টাইল যেই স্টাইলে তন্নি ফিদা ছিল। কিন্তু এখন তন্নির সেই ফিল হচ্ছে নাহ বরং এক রাশ ঘৃণা কজ করছে। নিরব এসে তন্নির সামনে দাড়ায়,–” হেই তন্নি কেমন আছো?”
তন্নি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে– ” ভালো।”
নিরব চোখ থেকে সানগ্লাস খোলে বলে,–” তন্নি তোমার জীবনের সুখ দুঃখের ভাগিদা হওয়ার সুযোগ আবার দিবে কি আমায়?”
তন্নি জোরে হাসতে শুরু করে এতে নিরব অপমানিতবোধ করে। তন্নি নিজের হাসি থামিয়ে বলে, –” দ্যা গ্রেট নিরব আজ সেকেন্ড হ্যান্ড মালের কাছে আসলো যে!”
নিরব মাথা নিচু করে বলে– ” আমি ভুল করেছি তন্নি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
এএই বলে নিরব তন্নির হাত ধরতে যায় একটা ঝাড়ি মেরে তন্নি হাত সড়িয়ে নেয়। রাগে তার শরীর কাপছে। চিৎকার করে বলতে থাকে, –“আমাকে কি তোর খেলনা মনে হয় যে যেভাবে ইচ্ছে খেলবি। মন চাইলো আমাকে নিয়ে খেলতে তো খেললি যখন মন ভরে গেল ছুড়ে ফেলে দিলি। আমি আমার লাইফ নিয়ে এখন অনেক হ্যাপি আছি বিরক্ত করিস নাহ আমাকে।”
নিরব রাগি গলায় বলে,–” তন্নি আওয়াজ নিচে।”
তন্নি কিছু বলতে নিবে তখন সেখানে টাদ আসে গাড়ি নিয়ে। তন্নিকে দেখে গাড়ি থামিয়ে নামে সেখানে। তন্নির দিকে এগিয়ে হালকা হেসে বলে, –” মিস তন্নি আপনি এখানে? ”
তন্নিও রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– “বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
রাদ বলল,–” আর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না আমিও অফিসে যাচ্ছি। ”
তন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিরব বলে, –” নাহ ও বাসে যাবে আপনি চলে যান।”
রাদ ভ্রু কুচকে নিরবের দিকে তাকায়। তন্নি দাঁতে দাঁত চিপে বলল–” আপনি কে আমাদের মাঝে নাক গলানোর?”
রাদ জিজ্ঞেস করল, –” মিস তন্নি কে উনি চিনলাম নাহ তো?”
তন্নি আবারও দাতে দাত চিপে উত্তর দেয়,–” কাল নাগ।”
রাদের হাত ধরে তন্নি গাড়িতে উঠে যায়। নিরব রাগে সেখানেই ফুসতে থাকে। নিজে নিজে বলতে থাকে, –” তোমার সাহস বড্ড বেড়ে গেছে তন্নি যে তুমি আমাকে অপমান করে আমার সামনে দিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যাও।”
পাশে থাকা পিলারে জোরে লাত্তি মারে নিরব।
————–
তন্নি রাগে ফুঁসছে গাড়িতে বসে। কি চায় নিরব ওর কাছে আবার কেন ফিরে এসেছে। একবার শেষ করে দিয়ে শান্তি হয়নি তার। রাদ তন্নির এ অবস্থা দেখে গাড়ি থামায়। রাদ জিজ্ঞেস করে, –” কি হয়েছে মিস তন্নি এমন করছেন কেন?”
রাদ বলতেই অশ্রুভরা চোখ নিয়ে তন্নি তার দিকে তাকায়। রাদের বুকটা কেমন চ্যাত করে উঠে। হ্যা এই কয়েকদিনে সে তন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছে। তন্নি নিজের চোখের পানি মুছে রাদকে বলতে থাকে, –” যেই লোকটা ছিল তখন সে আমার এক্স হাসবেন্ড। ”
রাদ ছোট করে ওহ উচ্চারণ করে আর কিছু জানতে চায় না সে এই বিষয়ে। লোকটা যে বারি বদ তা দেখেই বোঝে গেছে রাদ। রাদ নিজের ফোনটা বের করে ম্যানেজার সজীবকে ফোন দেয়। সজীব সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে। রাদ বলল,–” মিস্টার সজীব আপনি অফিসের দিকটা সামলে নিন আমি আজকে আসতে পারবোনা। ”
সজীব বলল,–” ওকে স্যার।”
রাদ গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যদিকে যাওয়া শুরু করে। তন্নি অবাক হয় সাথে একটু ভয়ও পায়। ভীত গলায় বলে, –” কোথায় যাচ্ছেন স্যার?”
রাদ বলল,–” চিন্তা করবেন না কিডন্যাপ করছি নাহ।”
তন্নি আর কিছু বলে নাহ। রাদও চুপ থেকে নিজের মতো গাড়ি চালিয়ে একটা পার্কের সামনে গাড়ি থামায়।
———————
১৮ দিন পর,
সকাল থেকে বৃষ্টির প্রচন্ড বমি হচ্ছে। খাবারের গন্ধ নাকে আসতেই বমি হতে শুরু করে। অনেক কষ্টে সে সকালের রান্না শেষ করে। বৃষ্টি যেটা সন্দেহ করছে সেটা যদি সত্য হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ তার থেকে খুশি আর কেউ হবে না। বৃষ্টি রান্না শেষ করে রুনাকে খাবার দিয়ে চলে যায় রেডি হতে সে ডাক্তারের কাছে যাবে। বৃষ্টি রুনাকে বলে,–” মা আমি একটু ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। ”
রুনা মুখ বাকিয়ে বলেন,–” কেন কি হয়েছে?”
বৃষ্টি বলল,–” আসলে এই কয়দিন ধরে মাথা ঘুরায় বমি আসে তাই ডাক্তার দেখাতে যাবো। ”
রুনার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে আজ বৃষ্টি আর নিরবের বিয়ে হয়েছে ২২ দিন হলো। এই কয়দিনের মাঝে ছেলে এমন কোনো ভুল করে নি তো যার কারণে বৃষ্টি…. না না রুনা আর ভাবতে পারছেন নাহ।
বৃষ্টি ততক্ষণে চলে গেছে। বৃষ্টি চলে যেতেই রুনা নিরবকে কল করেন। নিরব সাথে সাথে কল রিসিভ ও করে। নিরব কল রিসিভ করতেই রুনা রাগি গলায় বললেন,–” তুই বৃষ্টির সাথে কি করেছিস?”
নিরব অবাক হয়ে বলল,–” আমি আবার কি করলাম বৃষ্টির সাথে? ”
রুনা আবারও রেগে বললেন,–” বৃষ্টি মনে হয় প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। ”
নিরব এবার হালকা হেসে বলে, –” আরে মা এটা নিয়ে এতো টেনশনের কি আছে অবরেশন করিয়ে নিব আচ্ছা মা রাখো আমি তন্নিদের বাসায় যাবো। ”
রুনা বিরক্ত হয়ে বলে, –‘ কাল যাস আজ এখন বাসায় আয় কথা আছে। ”
নিরব বিরক্তিতে ফুস করে শ্বাস ছাড়ে। ফোন কেটে বাসার দিকে হাটা ধরে।
—————–
তন্নি এতোক্ষণ আড়াল থেকে নিরবকে দেখছিল। নিরব চলে যেতেই তার মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠে। নিরব প্রতিদিন তার বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকে। পরক্ষনেই তার কপালে ভাজ পড়ে এই ছেলে তার পিছনে হাত ধুয়ে লেগেছে। সেদিন পার্কে রাদ তন্নিকে প্রপোজ করছিল কিন্তু তন্নি রিজেক্ট করে দিয়েছিল এমন কি রাদের কম্পানির চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে। তবে রাদ প্রতিদিন কল দিয়ে তার খোঁজ খবর নেয়। ইদানিং তন্নিরও রাদকে ভালো লাগা শুরু করে দিয়েছে। রাদ এক বেলা কল না দিলে হাজারটা চিন্তা হয়।
হঠাৎ তন্নি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে পেয়ে গেছে সকল সমাধান। সে রাদকে বিয়ে করবে এটাই একটা রাস্তা নিরবকে তার পিছন থেকে ছাড়ানোর সমাজের মানুষের মুখ বন্ধ করার আর নিজে সুখী হওয়ার। রাদের মতো যত্নে আর সম্মান কেউ দিতে পারবে না। তার মা বাবা তাকে অনেক বুঝিয়েছে যেন সে রাদকে বিয়ে করতে রাজি হয় কিন্তু সে রাজি হয় নি।
তন্নি উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়। নিচে নেমে বের হতে যাবে তখন মিশমি জিজ্ঞেস করলেন,–” কোথায় যাচ্ছিস?”
তন্নি তার মায়র দিকে তাকিয়ে বলে– ” নিজের ভুলটা শোধরাতে রাদের কাছে যাচ্ছি।”
মিশমি খুশি হয়ে বললেন,–” তাহলে তোর বুদ্ধি হলো অবশেষে। ”
তুষার সাহেব বসে ছিলেন সোফায়। উঠে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে– ” চিন্তা করিস নাহ রাদ ছেলেটা অনেক ভালো তুই নিশ্চিন্তে ওর হাত ধরতে পারিস।”
তন্নি আর কিছু নাহ বলে মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১২ টা বাজে তার মানে রাদ এখন অফিসে। সিউর হওয়ার জন্য সে সজীবকে কল দেয়। সজীব কল রিসিভ করতেই বলে,–” সজীব ভাইয়া রাদ কি অফিসে আছেন? ”
সজীব বলল,–“হ্যাঁ।”
তন্নি সজীবকে ধন্যবাদ জানিয়ে কল কেটে দিয়ে বেরিয়ে পরে তন্নি রাদের অফিসের উদ্দেশ্যে।
———————
–” আমাকে বিয়ে করবেন রাদ সাহেব?”
রাদ ডিজাইন চেক করছিল আচমকা এমন কথা শুনে চমকে তাকায় রাদ। তন্নিকে দরজায় দেখে আরও অবাক হয় মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ” মিস তন্নি’ নামটা। তন্নি হালকা হেসে এগিয়ে গিয়ে রাদের সামনে বসে। রাদ এখনও একিভাবে তাকিয়ে আছে। তন্নি আবারো বলল,–” উত্তর দিলেন নাহ যে।”
রাদ বলল,–” আপনি সত্যি এসেছেন? ”
তন্নি হাসলো। রাদ বলল,–” আমাকে সত্যি বিয়ে করতে চান?”
তন্নি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। রাদ আবারও বলল,–” আমার একটা মেয়ে আছে জেনেও বিয়ে করতে চান।”
তন্নি বলল,–” রাইদার জন্য আমার কোনো সমস্যা নেই বরং খুশি আমি যে কষ্ট ছাড়াই আমি একজনের মা হয়ে যাবো।”
রাদ উঠে তন্নির হাত ধরে বলল,–” উঠুন আপনাকে কিছু বলার আছে। ”
এ বলে তন্নিকে ক্যান্টিনের দিকে হাটা ধরে রাদ। তন্নি বুঝতে পারে না কি কথা বলবে যে ক্যান্টিনে যেতে হচ্ছে তাদের ঐখানে বসে বলা যাবে না।
চলবে
দেরি করার জন্য দুঃখিত এই দুইদিন খুব জ্বরে ভুগছি আমি। তাই গল্প দিতে পারি নি কালকে।