ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব ৩৬

0
368

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩৬

৭৯.
অর্ষা লাফ দিয়ে উঠে।অন্ধকার চারপাশ।গভীর রাত এখন।ঘামছে প্রচন্ড।কি দেখলো সে এতো সময়।স্বপ্ন,এ কেমন স্বপ্ন ছিলো।তাহলে কি অর্থৈ আর তিশাম তার ক্ষতি করতে চায়।ইরহামও জেগে গিয়েছে।অর্ষাকে অস্থির হতে দেখে ওকে বুকে আগলে নেয়।অর্ষা প্রেগনেন্ট ৯ মাসের।এই সময় এমন হয়।হয়তো কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে।অর্ষা ইরহামকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।যেনো ছাড়লেই দু’জন একে অপরের থেকে দূরে সরে যাবে।ইরহাম অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।শান্ত করার চেষ্টা করে।কিন্তু অর্ষা শান্ত হচ্ছে না।এতে ভয়ংকর স্বপ্ন কেনো দেখলো।ইরহাম পাগল হয়ে গিয়েছে।সে নেই।রুশানের অবস্থা ভালো না।এ কেমন সপ্ন।

—“কি হয়েছে জান তোমার এমন করছো কেনো?”

ইরহামের শার্ট খামচে ধরে অর্ষা।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে।এমন যদি হয়ে যায়।ইরহামকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না।কিছুতেই না।ইরহাম ছাড়াতে চাইলো অর্ষাকে।অর্ষা চেপে ধরলো গভীর ভাবে।ইরহাম বুঝতে পারলো হয়তো খারাপ সপ্ন দেখেছে।তার জন্য এমন করছে।

—“জান শান্ত হও আমি আছি পাশে।কিছু হয়নি।”

অর্ষা ইরহামের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে ইরহামের গালে হাত দিয়ে সারা মুখে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে।কাঁপছে অর্ষা।চোখের কোনে পানি জমা হয়েছে।কান্নারত গলায় বলে,,,

—“আমি খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।আপনি প্লিজ দূরে যাবেন না আমার থেকে।যদি অথৈ ফিরে আসে।আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাহলে”

—“জান কিছু হবে না।তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।আমি আছি তো তোমার সাথে।কিছু হবে না কেউ কিছু করতে পারবে না আমার অর্ষার।”

অর্ষা চোখ বুঁজে ঘুমানোর জন্য।তবুও স্বপ্নের কথা মনে পরছে।অর্ষা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইরহামকে।ইরহামও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে।ইরহাম হাসে প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে।প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে অর্ষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে ইরহামকে প্রায়ই বলে সে মোটা হয়ে যাচ্ছে।চেহায়া কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছে।ইরহাম তাকে আর ভালোবাসবে না এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে।ইরহাম কি করে বোঝাবে এইভাবে অর্ষাকে দেখলে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।আদর করতে মন চায়।কিন্তু এই মেয়ে উল্টাপাল্টা ভেবে বসে আছে।

৮০.

সকাল সকাল উঠে ইরহামকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে অর্ষা।ভার্সিটিতেও যেতে দিচ্ছে না।অর্ষা এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে না।শুধু এক্সাম দিয়ে আসে গিয়ে।সকাল সকাল ফোন দিয়ে রুশান আরিশাকেও আসতে বলেছে।মুহিব নাইম উশাকেও।ইরহামকে আজকে সে কোথাও যেতে দিবে না।কাছ ছাড়া করবে না।দরজায় টোকা দিয়ে ইলমা বাইরে থেকে বলে,,,,

—” দা ভাই ভাবিকে নিয়ে আসো,সকালের নাস্তা করবে না নাকি”

ইরহাম ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বলল,,”আসছি যা তুই”

—“বউ উঠো চলো খেতে হবে।তুমি না খেয়ে থেকে কিন্তু আমার রাজকন্যাকেও কষ্ট দিচ্ছো”

ইরহাম কোনো মতে ছাড়িয়ে নেয় অর্ষাকে নিজের কাছ থেকে।এরপর কোলে তুলে নেয়।ওরা এখন নিচের গেস্টরুমে থাকে।উপর থেকে অর্ষার উঠানামা করতে কষ্ট হতে পারে এর জন্য ইরহাম নিচের রুমে সিফট হয়েছে।কোলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে।ইয়াদও এখন এখানে থাকে।পড়াশোনা শেষ তার।ইসরাককে ব্যবসায় সাহায্য করছে।অর্ষা যে তাকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসে তা খুব ভালো করেই জানে ইয়াদ।যাক মেয়েটা তাকে ভালোবাসে তো,হোক না ভাই হিসাবে।তবুও ভালো তো বাসে।

ইরহাম অর্ষাকে বসিয়ে দেয় সোফায়।ইসরাক বেরিয়ে গিয়েছে।ইলমা কলেজে যাবে না আজ।ভালো লাগছে না তার।আয়রা এসে খাবার দিয়ে গেলো।ইরহাম জোর করে খাওয়াচ্ছে অর্ষা।অর্ষা খেতে ইচ্ছে করছে না মোটেও।তবুও খেতে হচ্ছে ইরহামের চাপে পরে।লোকটা একটা বদ লোক।এভাবে ঠেসে ঠুসে কেউ খাওয়ায় কিছু।তার ভেতর রুশান,উশা,নাইম,মুহিব,অর্না,আরিশা বাড়িতে ঢুকলো।সবাই এসে বসলো সোফায়।অর্ষা খুশি হয়ে গিয়েছে সবাইকে দেখে।রুশানকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।রুশানকে ডেকে বলে,,,

—“রুশাইন্না আমার পাশে এসে বোস”

রুশান হেসে অর্ষার অন্যপাশে বসে।ইরহাম একপাশে বসা।আরিশা ইয়াদের পাশে বসে।ইরহাম রুশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

—“এই যে তোমার আদরের দুলালি বোন কাল রাতে সবাইকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তাই একসাথে সবাইকে ডেকেছে।”

রুশান এক হাতে জড়িয়ে ধরে বোনকে।অর্ষা যে তাকে অনেক ভালোবাসে বুঝতে পারছে।মেয়েটাকে সেও বড্ড ভালোবাসে।রুশান অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,

—‘টেনশন করিস না গাধী তাহলে আমার মামুই পাখিটার কষ্ট হবে।আর তোর জন্য যদি আমার মামুই পাখিটার কষ্ট হয় তাহলে তোকে আস্ত রাখবো না আমি”

—“তুই কি ভাবিস তোর মামুইপাখিকে আমি কষ্ট দিতে পারবো।তার বাবা থাকতে সে আশা আর পূরন হবে না।দেখলি তো কিভাবে আমাকে এতো খাবার খাওয়ালো”

উশা পাশ থেকে বলে উঠলো,,,,

—“তোর এখন খেতে হবে।দেখ অর্ষা যদি আমার ছেলের বউয়ের কিছু হয় তো তোর একদিন কি আমার একদিন”

অর্ষা অবাক হয়ে বলে,,,”ছেলের বউ মানে তোর তো ছেলেই হয়নি তাহলে আমার মেয়ে কি করে তোর ছেলের বউ হয়?”

—“আরে হয় হয় আমার ছেলে ছোট হলেও তোর মেয়েই আমার ছেলের বউ হবে”

অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,

—“জীবনেও নাইম আবালের ছেলের সাথে আমার মেয়ে বিয়ে দেবো নাহ”

রুশান ওদের চুপ করানোর জন্য বলে,,,

—“আচ্ছা থাম তোরা এখন।অনেক ঝগড়া করেছিস।”

সবাই থেমে যায়।গল্প করতে বসে সব।আজকে অর্ষা কিছুতেই কাউকে ছাড়বে না।ইলমাও এসে যোগ দিয়েছে।সবাই ফ্লোরে গোল হয়ে বসেছে।শুধু অর্ষা আর ইরহাম সোফায় বসা।লুডু খেলছে সব।অর্ষা ইরহাম বসে বসে দেখছে।অর্ষা সেই ইরহামকে যেতেই দিলো না আজ ভার্সিটিতে।ইরহামও বউয়ের জন্য আর যাইনি।হাসিঠাট্টা করে দিনটা পার করলো সবাই।

৮১.

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুশান একা।আজও বলতে পারলো না ইলমাকে নিজের মনের কথা।এখনো বলেনি সে।ভালোবেসে চলেছে এক তরফা।অর্ষা রাতেও কাউকে যেতে দেয়নি।এখন হয়তো ১১ টার মতো বাজে।এতো সময় তাদের সাথে বসে গল্প করছিলো।এই একটু আগে ইরহাম আর রুশানসহ ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়েছে।সামনের মাসে অর্ষার ডেলিভারি।রুশান ইরহাম সবাই এখন ভয়ে আছে।টেনশন হচ্ছে প্রচন্ড।

—“রুশান ভাইয়া এখন এখানে যে আপনি?”

রুশান পেছনে ঘুরে ইলমাকে দেখে মৃদু হেসে আকাশের দিকে তাকালো।আকাশে চাঁদ তারার মেলা বসেছে।চাঁদ মামাকে ভীষণ রকম সুন্দর লাগছে।সাথে তর পাশে থাকা চাঁদকেও।রুশান নরম কন্ঠে বলল,,,

—“ভালো লাগছিলো না ইলমা তাই এখানে একটু হাওয়া খেতে এসেছি”

—“তা ভাইয়া দিনকাল কেমন চলছে”

–“এইতো কোনো মতে যাচ্ছে আরকি”

রুশান ভাবলো আজ সাহস করেই বলে দিক সে প্রিয়তমাকে তার মনের কথা।ভালোবাসে সে ভীষণ ইলমাকে।না আর নাহ অনেক হয়েছে।এখন বলবেই সে।নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো রুশান।ইলমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,,,

—“আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই ইলমা”

—“হ্যাঁ ভাইয়া বলুন”

—“আমি তোমাকে ভালোবাসি ইলমা।ভীষণ ভালোবাসি।অর্ষার বিয়ের সময় যখন দেখেছি তোমাকে তখন থেকে ভালোবেসে আসছি তোমায়।তুমি কি আমাকে তোমাকে ভালোবাসার অধিকার দিবে ইলমা”

রুশানের কথা শুনে ইলমার চোখে পানি চলে আসলো।এই দিনটার জন্য সে এতোদিন অপেক্ষা করেছে।খুব ভালোবাসে সে নিজেও রুশানকে।রুশানের মুখ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করেছিলো।শেষ পর্যন্ত বললো রুশান তাহলে।ইলমা কান্নাভেজা গলায় বললো,,,

—“এতো দেরি কেনো করলেন রুশান।আরো আগে বলতে পারতেন।আমি কতো অপেক্ষা করেছি।ভেবেছি এই বুঝি বলবেন কিন্তু আপনি বলেননি”

—‘এখন বলছি ইলমা ভালোবাসি তোমায় আমি”

—“আমিও আপনাকে ভালোবাসি রুশান”

যাক ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।সুখে থাকুক দু’জন।দুজন ছাদে বসে পরে।ইলমা তার প্রিয় মানুষের কাঁধে মাথা রেখে বসে আকাশ দেখছে।যাক তার বোকাসোকা রুশান বললো তো শেষ পর্যন্ত এটাই অনেক।রুশান ভাবছে,সে সাহস করে বলেই ফেললো তার মনের কথা।ইলমা তাকে ভালোবাসে তবুও সে বুঝতে পারলো না।অর্ষা কি সাধে তাকে বোকা বলে।সে তো আসলেই একটা বোকা।নাহলে ভালোবাসার মানুষ ভালোবাসে এটাও বুঝতে পারলো না।

#চলবে..!

আসসালামু আলাইকুম।আপনাদের কমেন্ট দেখে বিশ্বাস করুন ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছি আমি।যাই হোক খুশি তো ইরহাম অর্ষাকে পেয়ে সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here