অদৃশ্য এক সত্ত্বা পর্ব ৩

0
106

#অদৃশ্য এক সত্ত্বা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৩

আমার চুল কাটার জন্য সেদিন নার্সকে বলা হয়। নার্স আমার চুল কাটতে গিয়েও কাটতে পারছিল না। যতবার চুল কাটতে যাচ্ছিল ততবার তার হাত কেঁপে উঠছিল। সবমিলিয়ে তিনি চুল না কেটেই বের হয়ে গেলেন। বের হওয়ার পর আমার মায়ের লক্ষ্যগোচর হলো উনি বেশ ভীত হয়ে আছেন। মা উনাকে স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলেন

“চুল কাটা কি শেষ?”

মায়ের কথা শুনে নার্স কোনো জবাব দিল না। সরাসরি ডাক্তারের রুমে গিয়ে জানালো,

তিনি আমার চুল কাটতে পারবেন না। অন্য কাউকে দিয়ে যেন কাটানো হয়। এরপর নার্সকে যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল কেন তিনি কাটতে পারবেন না। উত্তরে তিনি জবাব দিলেন

“আমি রোগীর চুল যতবার কাটতে গিয়েছি ততবার মনে হয়েছে হাত ধরে কেউ টানছে। আমাকে কেউ বাঁধা দিচ্ছে। আমার মন সায় দিচ্ছে না এমন কাজ করতে। আর রোগীর চুল অস্বাভাবিকভাবে জট পাঁকিয়েছে। আমার একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব না। স্যার আপনি জুবেদাকে বলেন। তিনি মনে হয় এ কাজ পারবেন।”

ডাক্তার আর নার্সকে কোনোরূপ প্রেসার দিল না। জুবেদা নার্সদের মধ্যে সিনিয়র ছিলেন এবং সাহসী ছিলেন। এরপর ডাক্তার জুবেদাকে দিলেন আমার চুল কাটার দায়িত্ব।

তিনি বেশ সাহস করেই আমার চুল কেটেছেন এবং আমার মায়ের হাতে আমার চুলগুলো হস্তান্তর করেছেন। আমার মা চুলগুলো আমার ফুফাকে দিলে, সেগুলো রাকির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেদিন রাতেই আমার জ্ঞান ফিরে। ২৬ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরার পর, আমি হাত মাথায় দিলে লক্ষ্য করি আমার মাথায় চুল নেই। বিষয়টি আমার চক্ষু গোচর হলে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না। জোরে চিৎকার দিয়ে আবারও অজ্ঞান হয়ে যাই।

ডাক্তাররা এবার একটা আশার আলো খুঁজে পেল আমাকে নিয়ে। যেখানে আমার জ্ঞান ফিরলছিল না, সেখানে আমার একদিনে এত উন্নতি তাদের একটা নতুন পথ দেখালো।

ডাক্তাররা আবার চিকিৎসা শুরু করল। আগের থেকে আমার অবস্থার উন্নতি ঘটছে। এরপর দুদিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি আমার হাত, পা নাড়াতে পারছিলাম না এবং চোখেও কিছু দেখতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে বুঝতে পারলাম আমি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। তবে আমার বাবা মায়ের তাতে কোনো আফসোস ছিল না। আমার যে জ্ঞান ফিরেছে এতেই তারা খুশি ছিলেন।

একে তো আমি হাত, পা নাড়াতে পারছিলাম না। অন্য দিকে অন্ধের মতো চোখে দেখতে পারছিলাম না। বয়সও কম। সবমিলিয়ে আমার কী অসহায় অবস্থা যাচ্ছিল সেটা কেবল আমি জানি। শারিরীক যন্ত্রণা, মানসিক যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করতে শুরু করে।

এদিকে জুবেদা নার্স হাসপাতালে আসছে না দুদিন যাবত। আমার মা সবকিছুর মধ্যে এ বিষয়টিও লক্ষ্য করে। তাই তিনি সরাসরি হাসপাতালের রিসিপশনে গিয়ে উনার খোঁজ করে জানতে পারেন তিনি বেশ অসুস্থ। বিষয়টা আম্মুর ভালো ঠেকলো না। তিনি জুবেদার নন্বর জোগাড় করে কল দিলেন। তারপর উনার মুখে কিছু বয়ান শুনে মা স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here