#অদৃশ্য এক সত্ত্বা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব -২
ডাক্তার সাময়িকভাবে বলে দিল আমি আর বেঁচে নেই। কথাটা আমার পরিবারের কানে আসতেই সবার মধ্যে বিষাদের সুর বাজা শুরু করল। ঢাকা থেকে কথাটা আমাদের গ্রাম পর্যন্ত চলে এসেছে। আর সবাই সে অবস্থায় যার যার মতো কুরআন খতম দেওয়া শুরু করতে লাগল। আমার খালু আমার জন্য মসজিদে ইয়াতিম বাচ্চাদের দিয়ে কুরআন খতম দেওয়া শুরু করল। আমার আম্মু সেন্সলেস হয়ে যাওয়ায় তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমার আব্বু, ভাইয়েরা সবাই আমার জন্য কাঁদতে লাগল। উল্লেখ্য যে তখন আমার ছোটোবোনের জন্ম হয় নি। সুতরাং আমার পরিবারের একমাত্র কন্যা সন্তান আমি ছিলাম। সুতরাং আমার প্রতি সবার ভালোবাসাও ছিল দ্বিগুণ।
এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তার যখন ডিসচার্জ দিবে আমাকে, ঠিক সে মুহুর্তে লক্ষ্য করল আমি দম নিচ্ছি। আমি বেঁচে আছি। কিছুক্ষণের জন্য দম আটকে হার্টবিট বন্ধ ছিল তাই ডাক্তাররা ভেবেছিল আমি মরে গেছি। আমার বেঁচে থাকার কথা শুনে সবার দেহে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। আবার সবাইকে জানানো হয় আমি বেঁচে আছি। আমার মা জ্ঞান ফিরে কথাটা শুনে সরাসরি নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েছিল।
এরপর আমাকে সরাসরি নিয়ে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম টানা ১০ দিন। আমার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমার চিকিৎসা চলমান। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অনেক অবহেলা হয়, এটা সবার জানা। যার দরুণ ডাক্তারের পরামর্শে আমাকে আনা হয় ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে। সেখানে আমার চিকিৎসা চলতে থাকে। ডাক্তার সব ধরণের চেকআপের পরও যখন কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারছিল না, তাই বাধ্য হয়ে একটদ সময় আমার বাবা, মাকে বলল
“আপনাদের রোগী বাসায় নিয়ে যান। আর কোনো আশা দেখছি না। এখানে রাখলে শুধু শুধু টাকা খরচ হবে। ”
এটা শুনার পর আমার বাবা মায়ের একটায় কথা ছিল
“আপনারা আমার মেয়েকে রাখুন। টাকা গেলে আমাদের যাবে। যতক্ষণ দম আছে চিকিৎসা করুন। আমাদের মন বলছে আমার মেয়ের সব ঠিক হবে।”
এদিকে আরও ১০ দিন রাখার পরও আমার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সারা শরীর চেক আপ করেও আমার কোনো রোগ ধরতে পারছিল না। সব মিলিয়ে আমার চিকিৎসা বা শারিরীক কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। বরং দিনকে দিন আমার অবনতি হতে লাগল। টানা চব্বিশ দিন পার হওয়ার পরও কোনো আশার আলো দেখছে না কেউ। এর মধ্যে ছাব্বিশ দিনের দিন চক্ষুগোচর হয় আমার হাঁটু সমান চুল গুলো হঠাৎ করে জট পাঁকাতে শুরু করেছে। বলা চলে একদম জট পাঁকিয়ে গেছে। বিষয়টা একজন নার্স আমার পরিবারকে অবহিত করে। এরপর আমার মায়ের মনে সন্দেহ জাগতে লাগল যে, আমার যেহেতু কোনো রোগ ধরা পড়ছে না। সেহেতু আমাকে হয়তো কোনোকিছু আছর করেছে। আছর মানে হচ্ছে জ্বিন বা ভূতে ধরা।
আম্মুর মাথায় এটা আসার সাথে সাথেই আম্মু আমার ফুফাকে জানায়। তখন আমার ফুফা একজন রাকিকে জানালে চুল কাটার পরামর্শ দেয় (রাকি হলো যারা কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে জিন বা বদনজর থেকে মানুষকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করে দেয়)। যদিও আমাকে হাসপাতালে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে রাকি বর্ণণা শুনে পরামর্শ দিল প্রথমে চুল কাটার।
এ কথা শুনার পর আম্মু ডাক্তারের কাছে এসে চুল কাটার বিষয়টা উপস্থাপন করল। ডাক্তার প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়েছে। এরপরের দিন আমার চুল কাটার সময় নির্ধারণ করা হয়। আর সেদিন একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে।
চলবে?