সাল ২০১২ আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সে সময় আমি ২৬ দিনের জন্য কোমায় চলে যাই। আমাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল অনেকদিন। জ্ঞান ফেরার পর আমার হাত পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। হাত, পা নাড়াতে পারতাম না। শুধু শুনতে পারতাম আর বলতে পারতাম। সে সময় একভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে আমার পিঠে ঘা হয়ে পুঁজ বের হত। কথা বলতে পারলেও কোনোকিছু চিবিয়ে খেতে পারতাম না। জিহ্বা নাড়াতে পারতাম না। আর সে সময়টার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা কষ্ট এবং প্যারানরমাল ঘটনার শিকার হয়েছি তাই এই বলতে যাচ্ছি এখন। আমার তুলে ধরা কাহিনিকে সুন্দর করার জন্য কিছুটা মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে পারি। তবে মূল ঘটনা সত্যকে কেন্দ্র করেই হবে।
সাল ২০১২, মার্চ মাস। খাওয়া দাওয়া শেষে আমি আমার রুমে শুইতে যাই। খাটে শুইতে যাওয়ার সময় মাথার পেছন দিকটা খাটের ফুলের সাথে লেগে আচমকা আঘাত পায়। সে সময় আমার কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করল। পুরো মাথা ব্যথা হয়ে চোখ ঝাঁপসা হতে লাগল। মনে হলো কোনোকিছু এসে আমার বুকে চেপে বসেছে৷ এতটা খারাপ লাগছে যে আমি কথা বলতেও পারছি না। জিহবা নাড়াতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একটা সময় মনে হলো গলায় কেউ চেপে ধরেছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার গলায় আঙ্গুল বা কিছু দিয়েছে। যাতে করে আমি গড়গড় করে রক্ত বমি করতে শুরু করি। একটা পর্যায়ে নাক দিয়েও ব্লাড বের হওয়া শুরু হয়। আমার চোখে ভয়ংকর এক আবছা অবয়ব ভেসে উঠে। এরপর আমার কী হয় আমার মনে নেই। আমি পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাই।
ঘটনা ঘটে রাতে আর আমাকে আবিষ্কার করা হয় সকালে। আমার মা আমাকে ডাকতে গিয়ে লক্ষ্য করে আমার নাক আর মুখ দিয়ে ব্লাড যাচ্ছে। আর পুরো খাট ব্লাড দিয়ে মেখে আছে। আম্মু এটা দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। তখন আমরা কিশোরগন্জ থাকতাম। তাই আমাকে সরাসরি নিয়ে যায় আমাদের এলাকার হাসপাতালে। মফস্বলে থাকায় সবাই ভেবেছিল আমি হয়তো বিষ খেয়েছি। আর সেজন্য মনে হয় আমার গলা, নাক দিয়ে ব্লাড বের হয়েছে। কারণ আমার বয়সটাও তখন কম। সবেমাত্র ক্লাস টেনে উঠেছি। এরকম ধারণা করাটা অস্বাভাবিক না। তার উপর শরীরের কোনো জায়গায় কোনো ক্ষত নেই। জলজ্যান্ত স্বাভাবিক মানুষ ঘুমাতে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমার পরিবারও বুঝতে পারছিল না আমার কী হয়েছে৷ আর আমি তো অজ্ঞান থাকায় কোনো কিছু ব্যখ্যা দিতেও পারিনি। যার দরুণ আমার ভুল চিকিৎসা হয়। অবস্থার অবনতি হয়।
এরপর দিক, বেদিক না পেয়ে আমাকে নিয়ে আসা হয় সরাসরি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে আমি ছিলাম টানা তিনদিন। তবে আমার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। সব মিলিয়ে আমাকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখানে আমাকে দেখার পর অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, ঘন্টা তিনেক রেখে তারা আশা ছেড়ে দিয়েছিল। আমার শ্বাস বন্ধ ছিল ফলস্বরূপ আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারপর শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের সূচণা। সে মৃত আমি কীভাবে আবার বেঁচে উঠি সেটাই বলব পরের পর্বে। আর জ্ঞান হারানোর আগে সে ভয়ানক জিনিসটায় বা কী ছিল সেটার ব্যখ্যা করা হবে আস্তে আস্তে।
#অদৃশ্য এক সত্ত্বা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১
[পুরোটায় সত্য ঘটনা। তবে আমি বেশি বড়ো করে দিতে পারব না। যেহেতু আমি এটা প্রতিদিন পোস্ট করব। ছোটো হওয়ার জন্য আন্তরিক দুঃখিত। অনেক দিন পরপর দেওয়ার চেয়ে প্রতিদিন ছোটো করে দেওয়ায় ভালো মনে করি]