#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৮
শিশিরের সামনে বসে শিশিরের মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে রাত। শিশিরের দৃষ্টি রাতের ব্যস্ত চোহারায়। বাঁধন ছাড়া চুলগুলো কপালে,গালে এসে পড়েছে। রাত আধভেজা শরীর নিয়ে শিশিরের চুল মুছে দিয়ে বললো,
-“আমি আপনার জন্যে খাবার আনছি। আপনি এখানেই থাকুন।পেছন পেছন সিড়ি বেয়ে নামতে আসিয়েন না।”
বলতে বলতে রাত চলে যাচ্ছিলো।পেছন থেকে শাড়ির আঁচলে টান পড়ায় থেমে যায় রাত। পিছনে ফিরতেই দেখে শিশির অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু রাতের আচলটা তার হাতের মুঠোয়। রাত অবাক হয়ে সুধালো,
-“কি হলো?”
শিশির আচলটা ছেড়ে দিলো। হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে কপালটা চুলকে ঢোক গিলে বললো,
-“আগে গোসল করে এসো।”
শিশিরের এমন বিহেভিয়ার এর মানে বুঝতে পারছে না রাত। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আরে আগে আপনাকে খাওয়াতে হবে।”
-“না পরে। আগে আধভেজা শাড়িটা পাল্টাও।”
-“ধূর। আপনার খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। আমি গেলাম।”
বলেই রাত যেতে নিলো। শিশির আবার কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
-“এভাবে নিচে যেয়ো না রাত।লজ্জা পাবে।”
রাতের আবারো ভ্রু কুঁচকে গেলো। নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো শাড়ির আঁচল অনেকটাই সরে গেছে।চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার।কোনোমতে শাড়িটা টেনে আলমারি থেকে থ্রি-পিছ বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শিশির কিছুক্ষণ বসে রইলো। তারপর হেসে উঠে বিরবির করলো,
-“মেয়েটা আসলেই বাচ্চা।”
প্রায় ১০ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় রাত।শিশির তখন আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। সায়ান জেগে উঠেছে।তার মুখে ফিডার ধরে আছে।রাত শিশিরের সামনে লজ্জায় যেতে পারছে না। তবুও আমতা আমতা করে বললো,
-“আমি নতুন করে ফিডার বানিয়ে দিচ্ছি। এটা বাসি।”
শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-“তোমার ছেলে বাসি খেতে পারে না এটা আমি জানি। তাই নতুন বানিয়ে নিয়েছি।”
রাত আর কিছু বললো না। শিশিরের জন্যে খাবার আনতে নিচে চলে গেলো।এদিকে শিশির বেশ রাতের লজ্জা পাওয়াটাকে এনজয় করছে। রাত খাবার এনে শিশিরের সামনে বসতেই শিশির বলতে লাগলো,
-“এসব কি এনেছো?”
-“কেন!খাবার!”
-“আমি এসব খাবো না।খিচুড়ি খাবো।”
রাত মুখ ভেঙিয়ে বললো,
-“ওরে আমার খিচুড়ি পাগল রে!এখন সব হেলদী খাবার খেতে হবে।”
-“খিচুড়িও হেলদী।”
-“বাট আপনার ডায়েট চার্টে নাই।”
-“তাই বলে এসব কি ভাজি টাজি।”(নাক ছিটকে)
-“ঢেঁড়স ভাজি। খান তো।”
বলেই রাত শিশিরকে খাওয়াতে লাগলো। রাত আচমকা নিজের হাতে শিশিরকে খাওয়াবে শিশির কখনো ভাবতেও পারেনি। রাত খাওয়ায়নি এমন না। খাইয়েছে তবে চামচ দিয়ে। এই প্রথম শিশির রাতের হাত দিয়ে খাচ্ছে। শিশির মুচকি মুচকি হাসছে। তা দেখে রাত ভ্রু নাচিয়ে বললো,
-“কি সাহেব!হাসছেন কেন?”
শিশির হালকা হেসে বললো,
-“এইযে একটা পিচ্চির কান্ড দেখে।”
রাত চোখ ছোট ছোট করে ফেললো। সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
-“কোন পিচ্চির? আর কি কান্ড হুম?”
-“এইযে একটা পিচ্চি মেয়ে যে কিনা আমার সামনে বসে।নিজেই হাত দিয়ে খেতে পারে না আবার আমাকে হাত দিয়ে খাওয়াচ্ছে। বড় সাজা হচ্ছে!”
রাত ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
-“কে বললো আমি নিজের হাতে খেতে পারি না?আর বার বার খালি পিচ্চি পিচ্চি কি হুম? নিজে মনে হয় কত্ত বড়।”
শিশির পানি খেয়ে নিলো। তারপর বলে উঠলো,
-“এই!ঝগড়া ছাড়া কিছু পারো না। তাই না?”
-“কিহহ! আমি ঝগড়া করি!”(রেগে)
-“হ্যা। এত ঝগড়াটে তুমি।”
-“দেখুন, বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।”
শিশির দাঁত কেলিয়ে হাসলো। রাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এত হাসছেন কেন হুহ? গফের কথা ভেবে নাকি?”
-” হ্যা।”
-“কিহ!গার্লফ্রেন্ড ও আছে?”(চোখ বড় বড় করে)
শিশির মুখ টিপে হাসলো।তবে সেটা রাতকে বুঝতে না দিয়ে বললো,
-“হ্যা আছেই তো।”
রাতের চেহারাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো।নাকিকান্না কেঁদে বললো,
-“ধূর। আপনার সাথে কথাই নাই আমার।”
বলেই সে খেতে চলে গেলো। শিশির মাথা দুলিয়ে হাসলো।মেয়েটা আসলে পারেও!
কিছুক্ষণ পরেই রাত আবার ধুপধাপ শব্দ করে রুমে ঢুকলো।সায়ানের পাশে শুতেই শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এরমধ্যে খাওয়া শেষ?”
রাত সায়ানের হাত নিয়ে খেলতে খেলতে বললো,
-“হু শেষ।”
-“সাত-আট মিনিট হলো গেলে।”
-” হ্যা তো।”
-“গোসল করলে দশ মিনিটে।খেলেসাত-আট মিনিটে।এত তাড়াহুড়ো করছো কেন রাত?”
-“কারণ এখানে একটা ধামড়া রোগী আছে।”
-“হোয়াট ধামড়া!”(রেগে)
-“আমাকে যখন পিচ্চি বলেন?”(ঠোঁট উল্টে)
শিশির কিছু না বলে অন্যদিকে তাকালো।রাতও মুখ ভেংচি কাটলো।কিছুক্ষণ পর রাত নিজেই বলতে লাগলো,
-“সে কি আমার থেকেও সুন্দর? ”
শিশির আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“কে?”
-“আপনার গার্লফ্রেন্ড। ”
শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” হ্যা।”
-“ভালো।”
বলেই রাত উল্টোদিকে ফিরে গেলো।শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো।সায়ান রাতের পিঠে মুখ রেখে লালা দিয়ে ভরাচ্ছে। শিশির সায়ানকে কোলে নিতে নিতে বললো,
-“মাকে জ্বালায় না বাবা।”
আচমকা রাত এদিকে ফিরে সায়ানকে বুকে জড়িয়ে বললো,
-“একদম আমার ছেলেকে আমার থেকে সরাবেন না।”
শিশির অবাক হয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাতের চোখে পানি দেখে মাথায় হাত তার।
-“রাত তুমি কাঁদছো! ”
-“আপনাকে দেখতে বলেছি?”
রাতের গর্জনে শিশিরের শরীর কেঁপে উঠলো।শিশির এবার ধমক দিয়ে বললো,
-“বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে?”
রাত আর কিছু বললো না।চোখের মধ্যে অভিমানের অশ্রুধারা জমছে।শিশির রাতের মাথায় হাত দিতেই রাত সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিলো।।শিশির হেসে বললো,
-“আমি তো মজা করছিলাম রাত।”
-“আমার কি?”
-“তোমারি তো সব। তুমি না আমার একমাত্র বউ।”
-“এহ!গার্লফ্রেন্ডের কথা বলে আমাকে বলে কিনা আমি বউ।”
বলেই রাত গাল ফুলালো। তা দেখে শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“মেয়ে মানুষ বেশিই বুঝে।”
রাত ভেঙালো।তবে তার অভিমান কমে গেছে অনেকটাই।শিশির মজা করছিলো। শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হইছে এত ভাব না করে বইটা নিয়ে তো বসতে পারেন।”
-“রাতে।”
-“এখুনি।”
-” না না না।”
-” কি বললাম?”(চোখ রাঙিয়ে)
রাত মন খারাপ করে উঠে বই নিয়ে শিশিরের সামনে বসে পড়লো।সায়ান তো ততক্ষণে মায়ের কোলে ঘুমিয়েই গেছে।
_____
আজ অনেকদিন পর কলেজে পা রাখলো রাত। শিশিরের জোরাজোরিতে অবশেষে তাকে আসতেই হলো।শিশিরও আসবে। তবে তাকে নেওয়ার জন্য! গাড়ি করে।কারণ শিশিরের পায়ে এখনো ব্যাথা রয়েছে। পুরোটা ঠিক হয়নি।অবশ্য শিশির ক্লাস করাবে।এমনিতে তো চাকরী ফেলে বসে থাকা যায় না। নেহাতই হেড স্যার শিশিরকে পছন্দ করেন। নয়ত এই চাকরী কি থাকত?শিশির মাঝে মাঝে এসে কয়েকটা ক্লাস করাবে।
কলেজে আসার পর রাতের মনটা কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে।কতদিন পর সবার সাথে দেখা!ক্লাসে যেতেই ধাক্কা লাগলো রিসাবের সাথে। রাত পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।রিসাব কান ধরে বললো,
-“সরি সরি সরি দোস্ত।”
রাত ততক্ষণে ক্ষেপে রণচণ্ডীর রূপ ধারণ করেছে। রিসাবের পিছনে থাকা নিপার হাতে নিজের ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললো,
-“চোখদুটো কি গার্লফ্রেন্ডের কাছে দিয়ে এসেছিস?”
রিসাব ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই।”
রাত মুখ ভেংচি দিয়ে রিসাবের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না।”
রিসাব রাতের পিছনে পিছনে আসতে আসতে বললো,
-“আরে সত্যি ইয়ার।আমার কেউ নাই।আমি শুধু তোর।”,
রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই আমার মানে?”
রিসাব আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
-“মানে তোদের। আমার বন্ধুদের গ্রুপ ছাড়া আর কেউ আছে নাকি আমার।”
-“ওহ তাই বল।”
বলেই রাত বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসে পড়লো।রিসাবও রাতের পাশে বসে রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু রাতের তো খেয়াল নাই।সে নিজের মত কথা বলতে ব্যস্ত। সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে। নিপা বলেই ফেললো,
-“এতদিন পর কলেজে কেন রে?আর শুনেছিলাম তোর এক্সিডেন্ট হইছে।আমরা গিয়েছিলাম বাট আংকেল-আন্টিকে পাইনি।”
রাত সম্মতি জানিয়ে বললো,
-“হ্যা। ছোটখাটো এক্সিডেন্ট। বাট আমার ক্ষতি কম হয়েছে। ওনার তো একদম অবস্থা টাইট।”
রাতের বন্ধু শিহাব এবার মুখ টিপে হেসে বললো,
-“এই ওনার টা আবার কে রে?”
বলেই সে নিপাকে ইশারা করে হাসতে লাগলো। রাতের কেমন যেন লজ্জা লাগলো।আসলে তারা তো জানে না যে রাতের বিয়ে হয়েছে তাও শিশিরের সাথে। শিশিরের কথাটা বলতে যাবে এমন সময় রিসাব বলে উঠলো,
-“আরে কিসের ওনার ওনার শুরু করছিস!কোনো ওনার ফোনার নাই। রাত মজা করছে।”
রাত রিসাবের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-“তোরে বলছে না?”
রিসাব অবাক হয়ে বললো,
-“মানে?”
রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করলেন।তাই রাতেরও আর কিছু বলার থাকলো না। সে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে লাগলো।এদিকে রিসাব ভাবছে,
-“রাত কিসের কথা বলতে চাইছিলো?আচ্ছা রাতের কি আসলেই কেউ আছে?”
আবার কিছুক্ষণ রাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখ এড়ায় না শিহাব আর নিপার।তারা একে-অপরের চোখাচোখি করলো।রিসাব হেসে ভাবলো,
-“ধূর রাতের এসব কখনোই ছিলো না।”
তারপর সে পকেট থেকে আড়ালে একটা রিং বের করে মুচকি মুচকি হেসে ভাবলো,
-“খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে মনের কথা বলবো রাত।”
চলবে…..
(