#মায়াবতী
#পর্ব: ২০
#তানিশা সুলতানা
তন্নি অর্ণবের দিকে তাকায়। গাড়িতে পিনপিন নিরবতা। কারো মুখে কোনো কথা নেই। অর্ণব সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কপালে এখনো তার বিন্দু বিন্দু ঘাম। ঝাঁকড়া চুল গুলো কপালে পড়ে আছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো বেশখানিকটা বড় হয়ে গেছে। প্রতিদিনই লোকটাকে দেখছে তন্নি তবে আজকে বিষয়টা নজরে পড়লো।
এই মানুষটাকে তন্নি সম্মান করে। কারণ সে অথৈয়ের ভাই। তবে আজকে ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। এই লোকটা তন্নির জীবনের প্রথম পুরুষ যে হুটহাট করে তন্নিকে কোলে তুলে নিয়েছে হাত ধরেছে৷
এই ছোট ছোট বিষয়গুলো তন্নির মনে বিশাল বড় দাগ কেটেছে। বলা বাহুল্য তন্নি একটু হলেও এই লোকটার প্রতি দুর্বল। সেই দুর্বলতা থেকেই কখনো মুখের ওপর কথা বলে না বা ঠাসস করে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় না।
তবে আজকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। মনের ইচ্ছেকে সায় জানিয়ে তন্নি বলে ফেলে।
“কি মনে করেন নিজেকে? বড় কিছু একটা? আপনার মনে হয় আমি আপনার মতো লো ক্যারেকটার ছেলেকে বিয়ে করবো? আপনার তো একটা রেখে আরেকটা ধরার স্বভাব। এই যে আমাকে দেখে নিধি আপুকে ভূলে গেছেন ইন ফিউচার যে অন্যকে দেখে আমাকে ভূলে যাবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে?
তন্নির গম্ভীর মুখের কাঠকাঠ কথা শুনে অর্ণব চোখ খুলে তাকায় তন্নির দিকে। অথৈ চমকে ওঠে। ভাইকে সে চিনে। আর চিনে তন্নিকে। তন্নি সহজে কথা বলে না। কিন্তু যখন বলে তখন একদম ছাড় দেয় না। কয়েক বছরের ফ্রেন্ডশিপে এই নিয়ে দুই বার গম্ভীর মুখে কথা বলতে শুনেছে অথৈ।
“গ্যারান্টি নেই। তোমাকে বিয়ে করবো তারপর আবার কাউকে ভালো লাগলে তার পেছনে লেগে পড়বো।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা বলে দেয় অর্ণব। তন্নি হতাশ হয়।
” ইউ নো অথৈয়ের তন্নি তোমাকে বিয়ে আমি করবোই।
“আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপনার তো চরিত্রের ঠিক ঠিকানা নেই। আমি অন্তত একটা ক্যারেকটারলেস ছেলের সাথে সারাজীবনের থাকতে পারবো না।
থামে তন্নি। জোরে জোরে দুটো শ্বাস টানে।
“আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে। যে কখনো এক সাথে দুটোদিন ভালো থাকতে পারে নি।
বাবা দেশ ছাড়ার পরে ভালো মন্দ শেষবার কবে খেয়েছি মনে নাই।
ভালো একটা ড্রেস পর্যন্ত নেই আমার। মনে আছে আমাকে ভিখারি মনে করেছিলেন আপনি?
তারপর কি হইলো? কেনো সেই ভিখারিকে বিয়ে করতে চাইছেন?
কি ভেবেছে? গরীব মানুষ। অসহায় মেয়ে। কেউ নেই। আমি হাত বাড়িয়ে দিলে আমার হাতটা ধরবে। তারপর ইচ্ছে মতো নাচাবো দেন ছুঁড়ে ফেলে দিবো? তাই তো?
শেষের কথা গুলো খানিকটা চিৎকার করে বলে তন্নি। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে। রাগে শরীর কাঁপছে মেয়েটার। অথৈ মাথা নিচু করে বসে আছে। প্রিয় বন্ধুর মুখে ভাইয়ের নামে এইসব কথা শুনতে তার ভালো লাগছে না। কিন্তু কি করবে? ভাইকে সে যতটা ভালোবাসে তন্নিকেও ঠিক ততটাই ভালোবাসে।
“রাগীও না আমায়।
চোয়াল শক্ত করে বলে অর্ণব।
” আপনিও আমায় রাগাবেন না। আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন। আমি আর কখনো আপনার সামনে আসতে চাই না। আসবোও না।
অর্ণব এবার তন্নির হাত চেপে ধরে।
“তোমাকে টাচ করতে চাই না কিন্তু তুমি বারবার বাধ্য করো।
আমার ক্যারেকটার নিয়ে প্রশ্ন তুলছো? ডু ইউ নো মি?
কোনো আইডিয়া আছে আমার সম্পর্কে?
নিধিকে তুমি আর অথৈ টেনে আনো নি?
তোমাদের কখনো বলেছিলাম? আমি নিধিকে বিয়ে করবো?
কখনো জিজ্ঞেস করেছিলে আমি নিধিকে ভালোবাসি কি না?
নিধির সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক কি রকম? জিজ্ঞেস করেছিলে?
অথৈ তুই জিজ্ঞেস করেছিলি?
অর্ণব প্রচন্ড রেগে বলে। তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে৷ অথৈ আর তন্নি শুকনো ঢোক গিলে।
” তোমার সাগরকে একটু হলেও ভালো লাগে। এটা জানি আমি। বুঝতে পারি। সাগরের সঙ্গ তোমার ভালো লাগে। এখন এটার ভিত্তিতে আমি যদি তোমার মাকে গিয়ে বলি সাগরকে তুমি বিয়ে করবে তার বাইকে তুমি লিফট নাও।
তখন কেমন লাগবে?
রিয়াকশন কেমন হবে?
তন্নি জবাব দেয় না। চুপ করে মাথা নিচু করে ফেলে। অথৈ তন্নির হাত ধরে। বেশ কিছুখন নিরবতা চলে। তার অথৈ বলে ওঠে।
“ভাইয়া তুই তন্নিকে বিয়ে করতে চাস?
তো তোকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিলাম। এর মধ্যে তুই নিধিকে বিদেয় করবি। নিধি হাসি মুখে এসে বলবে ” অর্ণবের সাথে আমার তেমন গভীর কোনো সম্পর্ক নেই”
তবেই তন্নি বিয়েতে রাজি হবে। আর রাজি না হলেও আমি জোর করে রাজি করাবো।
অথৈয়ের কথা অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকায়। তন্নিও তাকায় অথৈয়ের দিকে।
অর্ণব মনে মনে বলে “বিয়ে তো আমি আজকেই করবো। হয় তোমার মতে না হয় অমতে”
“চাচা গাড়ি থামান।
ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। কেঁপে ওঠে অথৈ আর তন্নি। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে ফেলে। সাথে সাথে অর্ণব নেমে যায়।
” ভাইয়া কোথায় যাচ্ছিস?
অথৈ চিন্তিত গলায় বলে।
“চাচা ওদের বাড়ি নিয়ে যান।
বলেই অর্ণব উল্টো দিকে হাঁটতে থাকে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে থাকে।
অথৈ কেঁদে ফেলে। তন্নি অথৈকে জড়িয়ে ধরে।
” কাঁদিস না অথৈ। তোর ভাই বাচ্চা না।
তন্নিকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার পরে পুরো বাসা ফাঁকা পায় অথৈ। আর্থি শশুড় বাড়িতে গেছে। আশা বেগম কিছু কেনাকাটা করতে গেছে। আনোয়ার অফিসে।
তন্নি সোজা অথৈয়ের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অথৈ টেনশনে পায়চারি করছে। বেশ ক্লান্ত থাকায় একটুখানিতেই ঘুমিয়ে পড়ে তন্নি। তন্নি ঘুমিয়ে গেছে দেখে অথৈ ফ্যান চালিয়ে দেয় আলো নিভিয়ে জানালার পর্দা টেনে দেয়।
মেয়েটার সত্যিই একটু রেস্ট দরকার।
কতোখন ঘুমিয়েছে জানা নেই তন্নির। কিন্তু চোখ খুলতেই রুমটা অন্ধকার দেখে। বাইরে থেকে চেঁচামেচির শব্দ আসছে। মায়ের গলার স্বর।
তন্নি ধরফরিয়ে উঠে বসে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলতে যায় কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ।
ওইদিকে মায়ের চেঁচামেচি বেড়েই চলেছে।
তন্নি দরজা ধাক্কাতে থাকতে আর অথৈকে ডাকতে থাকে।
“অথৈ দরজা খোল। কোথায় তুই? আমাকে কেনো আটকে রেখেছিস?
” তোমাকে আমি আটকে রেখেছি।
পেছন থেকে অর্ণব বলে। তন্নি চমকে পেছনে তাকায়। অর্ণব চেয়ার টেনে তাতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।
“আপনি কেনো আটকে রেখেছেন? যেতে দিন আমায়। আমার মা ডাকছে।
তন্নি কপালে ভাজ ফেলে বলে।
” অনেকখন হলো তোমার মা ডাকছে তোমায়। এবার সত্যিই তোমার যাওয়া উচিত। তারওপর তোমার বাবা সমানে কল করে যাচ্ছে। তোমার কন্ঠ না শুনতে পেয়ে তার বেহাল দশা।
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করতে করতে বলে অর্ণব।
তন্নি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। বাবা কল করছে? তন্নির গলা না শোনা ওবদি উনি টেনশন করবে। আর ইতি বেগমকে খুব বকবে। বকা খেয়ে কি ইতি বেগম আবার মা*র*বে তন্নিকে?
ভয়ে শিউরে ওঠে তন্নি।
“তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিন প্লিজ।
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে তন্নি।
” দিবো জাস্ট এখানে একটা সাইন করে দাও।
কাগজটা তন্নির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে অর্ণব।
“এটা কিসের কাগজ?
” অথৈ তখন যে কথা গুলো বললো সেই কথা গুলোই এখানে লেখা আছে। এই যে অথৈ সাইন করে দিয়েছে এবার তুমি করে দিলেই হবে।
তন্নি ভাবে নিধিকে ওনার লাইক থেকে সরানো এতো ইজি হবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে অর্ণব নিধিকে দিয়ে ওই কথা বলাতে পারবে না এটা শিওর তন্নি। তাই আর দেরি না করে চট করে সাইন করে দেয়। অর্ণব বাঁকা হেসে তন্নির থেকে কাগজটা নিয়ে নেয়।
“অর্ণব চৌধুরী যা বলে সেটা করেই ছাড়ে।
বলেই বাঁকা হাসে অর্ণব। আর সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। অথৈ খুলেছে।
” তুই একদম তোর মায়ের সাথে যাবি না তন্নি। ওই মহিলা একদম নাছর বান্দা। এতোখন ঝগড়া করলাম তবুও হাল ছাড়লো না। তোকে না নিয়ে তিনি যাবেই না।
অথৈ কোমরে হাত দিয়ে বলে।
“যেতেই হবে আমায়। মা হয় উনি আমার৷ ভালোবাসলেও উনি আমার মা বকা দিলেও উনি আমার মা।
আমি যাবোই রে অথৈ।
দরজার কাছ থেকে শুনে সেটা ইতি বেগম।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকে।
তন্নি তার কাছে এগিয়ে যায়।
” মা চলো।
অথৈ আসছি।
বলেই মায়ের হাত ধরে হাঁটতে থাকে। অথৈ দৌড়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। তার চোখে পানি টলমল করছে।
“একদম আমার তন্নির গায়ে হাত তুলবেন না আপনি। নেক্সট টাইম এমনটা দেখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। ইতি বেগম অবাক হয়। একজন বন্ধু আরেকজন বন্ধুকে এতোটা ভালোবাসতে পারে?
তন্নি অথৈয়ের চোখের পানি মুছে দেয়। কপালে চুমু খায়।
” কালকেই তো দেখা হবে।
“ড্রামা শেষ কর অথৈ। যেতে দে। ভাল্লাগছে না আর।
অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে। তন্নি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। তারপর মায়ের সাথে চলে যায়। অর্ণব হাসে।
চলবে
#মায়াবতী
#পর্ব: বোনাস
#তানিশা সুলতানা
তন্নি তারেকের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় পৌছায়। তামিম দরজার কাছেই অপেক্ষা করছিলো ওদের জন্য। তন্নিকে দেখে দৌড়ে যায় তন্নির কাছে। তন্নি ভাইকে কোলে নিতে যায় ইতি নিতে দেয় না। তন্নির থেকে টেনে সরিয়ে দেয় তামিমকে। তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়।
“তুমি আপির থেকে সরালে কেনো?
তামিম রেগে বলে।
” তোর আপি অসুর। সুস্থ হোক তারপর কোলে নিবে তোকে।
বলে ছেলেকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছন পেছন যায়।
তন্নি ঘুমচ্ছে। গভীর রাতে মনে হয় কেউ তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তন্নি এই ছোঁয়া চিনে না। পিটপিট করে একটুখানি চোখ খুলে ইতি বেগমকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। মায়ের আদর পেতে চায় তন্নি। খুব ইচ্ছে করে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে খানিকক্ষণ জাপ্টে ধরে রাখতে। খুব করে ফিল করতে চায় মায়ের শরীর থেকে আসা মা মা গন্ধটা। কিন্তু আজ ওবদি কখনোই মা কাছে টেনে নেয় নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। ভালোবেসে তন্নি বলে ডাকে নি। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও কখনো এক লোকমা ভাত খাইয়ে দেয় নি। কখনো টিফিন বানিয়ে দেয় নি।
এতে তন্নির আফসোস নেই। আছে এক বুক হতাশা। মা যে তাকে মা বলে ডাকতে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।
এতেই সন্তুষ্ট। তবে তন্নি কখনো বাবাকে নিয়ে একা স্বপ্ন দেখে না। সে শুধু বাবার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে চায় না। সে মায়ের ইচ্ছেও পূরণ করতে চায়। মা কখনো মুখ ফুটে কিছু বললে তন্নি জীবন দিয়ে হলেও রাখবে।
কিন্তু ইতি কখনোই তন্নিকে কিছু বলে না। স্বপ্ন দেখায় না। বারবার শুধু স্বপ্ন গুলো ভেঙে দিতে চায়। মনোবল নষ্ট করে দেয়।
ইতি বেগম তন্নির কপালে চুমু দেয়। তন্নির কপালে কপাল ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে। তন্নি খুব কষ্ট নিজেকে আটকে রাখে। তারও যে খুব কান্না পাচ্ছে। মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তন্নি জানে এখন তন্নি চোখ খুললে মা চলে যাবে। আদর করবে না তন্নিকে।
তাই মায়ের আদরটুকু উপভোগ করতে থাকে চোখ বন্ধ করে।
ফজরের আজানের সময় প্রতিদিনকার মতো ঘুম ভেঙে যায় তন্নির। পাশে মাকে পায় না। তবুও মুখে হাসি ফুটে তন্নির। চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। তন্নি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। চটজলদি ওজু করে নামাজটা আদায় করে নেয়।
___
অর্ণব সারা রাত ঘুমতে পারে নি। নিধি অনেকবার কল করেছে অর্ণব রিসিভ করে নি। এতো বছরের সম্পর্ক অর্ণব কখনো আগে আগে নিধিকে কল করেছে কি না মনে নেই। কখনো নিধির হাত ধরেনি। এসবে একদম ইন্টারেস্ট নেই। নিধি মাঝেমধ্যেই অর্ণবের হাত ধরে। অর্ণব কৌশলে ছাড়িয়ে নেয়।
সকাল সকাল অর্ণব রেডি হয়ে গেছে৷ অথৈ এখনো ঘুমচ্ছে। নয়টার আগে তার ঘুম ছোটে না।
অর্ণব রেডি হয়ে অথৈয়ের রুমে চলে যায়।
প্রথমেই জানালা খুলে। এক ফালি রোদ এসে পড়ে অথৈয়ের চোখে মুখে। অথৈ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মুখের ওপর হাত দিয়ে রোদ আড়াল করার চেষ্টা করে। অর্ণব মজা পায়। সে এবার রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়৷ ফ্যান বন্ধ করে দেয়। তারপর বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে পড়ে অথৈয়ের চিৎকার শোনার জন্য।
বেশিখন দাঁড়াতে হয় না। মিনিট দুয়েক পেরুতেই অথৈ মা বলে এক চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে। ঘুম তার ছুটে গেছে।
“দশটায় ক্লাস আছে তোর। জলদি ফ্রেশ হয়ে নে।
বলেই অর্ণব শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। অথৈ দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে।
“এই শয়তানের নানার সাথে আমার তন্নি সারাজীবন থাকবে কি করে? আমার তন্নিকে তো এ
অথৈয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্ণব দরজায় উঁকি দিয়ে বলে ওঠে
” কোলে তুলে রাখবো।কোল থেকে নামাবোই না। আর তোকে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখে দিবো। তুই আমাদের রেধে বেরে খাওয়াবি।
অথৈ বালিশ ফিক্কে মারে অর্ণবের দিকে। অর্ণব চলে যায়।
তন্নি আজকে রিকশা করে এসেছে। বাবা টাকা পাঠিয়েছে অনেকগুলো। মা আজকে তন্নিকে তিন হাজার টাকা দিয়েছে। আর পঞ্চাশ টাকা দিয়েছে খাওয়ার জন্য।
টেইলার্সের কাছে বানাতে দেওয়া থ্রি পিছ দুটো মজুরি দিয়ে আনবে আজ আর দুই জোড়া জুতো কিনবে। এক জোড়া নিজের জন্যই আর আরেক জোড়া মায়ের জন্য।
ইতি বেগমের ভালো জুতো নেই। বাড়িতে পড়ে থাকা স্যান্ডেল পড়েই বেড়াতে যান তিনি। তন্নিরও জুতো নেই ভালো। বাবা থাকতে পাঁচশো টাকা দিয়ে এক জোড়া বাটা স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিলো সেইএক জোড়া জুতোই সে পড়ে।
অথৈয়ের বাড়ির সামনে রিকশা মামাকে দাঁড়াতে বলে তন্নি৷ অথৈ আর অর্ণব গাড়িতে বসেছিলো তন্নির জন্যই। তন্নিকে রিকশায় দেখে ভীষণ ভালো লাগে অথৈয়ের। অথৈ রিকশায় উঠতে ভীষণ ভালোবাসে।
অর্ণব মুখটা কালো করে ফেলে। বুঝে যায় অর্ণবের সাথে যেতে চায় না বলে রিকশা করে এসেছে। কিন্তু অর্ণবের সাথেই যে যেতে হবে। কিচ্ছু করার নাই।
অর্ণব গাড়ি থেকে নেমে যায়। অথৈ নামতে গিয়েও পারে না অর্ণবের জন্য।
অর্ণব বড়বড় পা ফেলে ঠাসস করে রিকশায় তন্নির পাশে বসে পড়ে।
এটার জন্যই তন্নি প্রস্তুত ছিলো না। সে তাকিয়ে ছিলো অথৈদের গেইটের দিকে। তার জানা ছিলো না অথৈ আর অর্ণব গাড়িতে অপেক্ষা করছে।
“মামা চলেন।
অর্ণব তন্নির পেছন দিয়ে হাত নিয়ে হুড় টেনে দিয়ে ধরে থাকে। তন্নি হা করে তাকিয়ে আছে।
অথৈ গাড়ি থেকে চেঁচাচ্ছে। নামতে ভূলে গেছে সে।
মামা অর্ণবের কথা মতো চলতে শুরু করে। তন্নিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব তন্নির ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে ফু দেয়। তন্নি কেঁপে ওঠে। মুখটা বন্ধ করে একটু নরেচরে বসতে যেতেই পিঠ ঠেকে অর্ণবের হাতে। আবারও শিউরে ওঠে।
শুকনো ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” মামা যাচ্ছেন কেনো?
রিনরিনিয়ে বলতে যায় কিন্তু এতো আস্তে কথা বের হয়ে আসে যে মামার কান ওবদি পৌছায়ই না।
“ওয়েদারটা দারুণ না?
হুড় থেকে হাত সরিয়ে তন্নির হাতের ওপর রেখে হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে বলে অর্ণব।
তন্নি অর্নবের হাত সরিয়ে দেয়।
” আমি এখানে কেনো?
“তোমার জন্য। আই নো দেট তুমি আমার সাথে পারসোনালি কিছু সময় কাটানোর জন্য রিকশা করে এসেছো। তোমার মনের কথা আমি বুঝতে পারি মায়াবতী।
কলার টেনে বলে অর্ণব।
” দেখুন
“সবে সাইন হলো
আগে কবুল বলো তারপর নাহয় দেখাদেখি হবে।
ঝাঁকড়া চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঢেলে বলে অর্নব।
” আপনি একটা যা
“গাঁধার জামাই।
চলবে