মায়াবতী পর্ব ১৮+১৯

0
801

#মায়াবতী
#পর্ব:১৮
#তানিশা সুলতানা

তন্নির জীবনটা হচ্ছে “এই ভালো এই খারাপ ” এই গানটার মতো।
খুব ছোট বেলায় মা মা*রা গেছে। তখন তন্নির সাত বছর বয়স হবে। এখনো ভালোই মনে আছে সব কিছু। মা মারা যাওয়ার পরে বছরখানিক মেয়েকে নিয়ে কাটিয়েছে তারেক। তার মনে হয়েছে আবার বিয়ে করলে সে যদি মেয়েকে ভালো না বাসে?
তন্নির মামা বাড়ি ঘুম বড়লোক। নাম করা পরিবার। তাদের একমাত্র বোন ছিলো তন্নির মা। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো তারা। সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিলো না কখনো। কিন্তু সবার কপালে ভালোবাসা সয় না।
মা মারা যাওয়ার পরে তন্নিকে তার মামা মামি নানা সবাই নেওয়ার জন্য অনেক জোর করেছে তারেক দেয় নি। এই মেয়েটাই যে তার প্রাণ।

এক বছর পরে যখন বুঝতে পারলো সেএকা হাতে মেয়েকে সামলাতে পারছে না। সংসার চালানোর দায়িত্ব নেওয়া আর সংসারের কাজ করা একা হাতে কখনোই সম্ভব না। তারপর ইতিকে ঘরে আনলো। বিয়ের আগেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলো “শুধু তার বউ না তার মেয়ের মা হতে হবে”

বিয়ের পর থেকে প্রতিনিয়ত তারেক তার স্ত্রীকে বুঝিয়েছে তন্নি তার জন্য কি।

এতোবছরে ইতি কখনোই তারেকের সামনে তন্নির সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে পারে নি। তার সাহসে কুলাই নি।

🥀
তারেক যখন জানতে পারলো ইতি তন্নিকে একা রেখে বাবার বাড়িতে এসেছে অনেক রাগারাগি করে ইতির সাথে। ইতি সকাল সকাল ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তন্নি বাড়ি আসার একটুখানি পরেই ইতি এসেছে।
ইতির মেজাজ ভালো নেই। প্রচন্ড রেগে আছে। কারণ ইতি ফেরার সময় তার ভাই ভাইয়ের বউরা তাকে নানারকম কথা বলেছে। তন্নির নামে বিষ ঢেলেছে কানে।

তন্নি খাটে বসে পড়ছিলো। তখনই ইতি রুমে ঢুকে পড়ে। তন্নির বই তন্নির থেকে কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এতেই সে শান্ত হয় না তন্নির গালে পরপর দুটো চর বসিয়ে দেয় তারপর চুলের মুঠি করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। খাটের পয়ার সাথে লেগে যায় তন্নির কপাল। মুহুর্তেই কপাল কে*টে গড়গড় করে র*ক্ত পড়তে থাকে।
তন্নি মাথা ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুখন ঝিম মেরে বসে থাকে। তার চারপাশ ঘুরছে।

“কু*ত্তা*র বাচ্চা। তোর জন্য আমার অসুস্থ মাকে রেখে আসতে হলো। তুই ম*র*তে পারিস না? তুই ম*র*লে তো আমার ঝামেলা কমে। ঘাড়ের ওপর পা দিয়ে বসে আছিস। তোর বাবা আমাকে দাসী পেয়েছে?

ইতি বকতে থাকে তন্নি। তন্নি হাঁটু ভাজ করে বসে কাঁদতে থাকে। দুই গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে। কপাল থেকে র*ক্ত পড়ছেই।

” সর তুই আমার চোখের সামনে থেকে। তোকে মে*রে পু*তে দিতে পারলে আমার জ্বালা জুড়োতো।

বলেই আবার মা*র*তে যায় তন্নিকে। তখনই ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে বাবা নামটা জ্বল জ্বল করছে। ইতি জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে। তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। টেবিলে রাখা পানি গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি শেষ করে। তারপর লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে।
তবুও ঠোঁট কেঁপে উঠছে। চোখের পানি গুলো উপচে পড়ছে।

“বাপের কাছে নালিশ দিলে তোকে শে*ষ করে দিবো আমি।

আঙুল তুলে স্বাশিয়ে বলে ইতি।

তন্নি কল রিসিভ করে।

” বাবা কেমন আছো?

ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে বলে তন্নি।

“এই তো মা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। আমার সোনা মা কেমন আছে?

” আমিও ভালো আছি।

“মা টাকা পাঠাচ্ছি। তোমার যা যা লাগবে কিনে ফেলো। যতটাকা লাগে এখন আমি দিবো। তোমার যা খুশি করবা। প্রাইভেট শুরু করে দাও।

” হুমম বাবা।

“মা রে তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। বাবার কষ্টের দাম রাখতে হবে তোমায়।
আমি তোমার পরিচয়ে বাঁচতে চাই।

” ইনশাআল্লাহ বাবা। তোমার স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। এখন নাও মায়ের সাথে কথা বলো। আমি কলেজে যাচ্ছি।

বলেই ইতির কাছে ফোন দিয়ে দেয়।
তারপর মুখ আঁটকে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়। কান্না আটকাতেই পারছে না সে।

অনেকখন কল পাড়ে বসে কান্না করে। কাঁদতে কাঁদতে গলা বসে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। কপালের র*ক্ত জমাট বেঁধে গেছে।
এভাবে বাড়িতে থাকলে কখনোই কান্না আটকাতে পারবে না। ভালোও লাগবে না। তাই ভাবে কলেজে যাবে।

কপালের র*ক্ত মুছে মুখে একটু পাউডার লাগিয়ে কালো রঙের ওড়নাটা মাথায় চাপিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে তন্নি বের হয় কলেজের উদ্দেশ্য। বলে যায় না ইতিকে। তামিমকে সামনে পায় নি। খোঁজার মতো মনও ছিলো না।

কড়া রোদে তন্নি রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।
অথৈদের বাসার সামনে আসতেই দেখতে পায় অথৈ গাড়িতে বসে আছে। পাশে অর্ণব। নিশ্চয় তন্নির জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
তন্নি চুপচাপ গিয়ে অথৈয়ের পাশে বসে পড়ে।
অথৈ তন্নির মুখ দেখেই বুঝতে পারে তন্নির মন খারাপ। এক হাতে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে।
ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। অর্ণব অথৈয়ের পাশে। সেও তন্নিকে দেখছে।

“কি হয়েছে জান তোর? আমায় বল।

তন্নির গালে হাত দিয়ে বলে অথৈ।

” আমি ঠিক আছি।

একটু হাসার চেষ্টা করে বলে তন্নি।

অথৈ বুঝতে পারে তন্নি বলতে চাইছে না। কিন্তু অথৈয়ের শুনতেই হবে। তন্নির কষ্ট দেখলে তারও কষ্ট লাগে।

“আমার দিকে তাকা তন্নি

তন্নির গালে হাত দিয়ে একটু শক্তি প্রয়োগ করে নিজের দিকে ফিরাতে চায় অথৈ। তন্নি ” ইসসসস” শব্দ করে ওঠে। চমকে ওঠে অথৈ। বুক ধক করে ওঠে।
অর্ণবও চমকায়। কি হয়েছে মেয়েটার?

“এই তন্নি কি হয়েছে বল আমায়?

তন্নি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চায়। কিন্তু পারে না। অথৈ এবার তন্নির কপালে নজর দেয়।

” আল্লাহ কতোটা কেটে গেছে। তন্নি তোর গালে থা*প্প*ড়ের দাগ। তোকে ওই মহিলা মে*রে*ছে?
কতোবার বলেছি তুমি আমার কাছে থাকবি শুনিসই না আমার কথা।
কতোটা কেটে গেছে। র*ক্ত জমাট বেঁধে গেছে।
কাকা গাড়ি হাসপাতালের দিকে নিয়ে যায়।

অথৈ নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করতে করতে বলে।
অর্ণব হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে তন্নির দিকে।

অথৈয়ের এমন অস্থিরতা দেখে তন্নির কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। যাক বাবার পরে কেউ তো একজন আছে যে তন্নিকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে।

বোতলের পানি দিয়ে রুমাল ভিজিয়ে তন্নির গালে ধরে অথৈ। চোখ দুটো তার চিকচিক করছে।

“আমি ঠিক আছি অথৈ। শুধু শুধু টেনশন করছিস।

অথৈয়ের গালে হাত দিয়ে বলে তন্নি।

“ওই মহিলা কি মানুষ না? ওনার কি একটুও দয়ামায়া নাই?

বলতে বলতে কেঁদে ফেলে অথৈ।
তন্নি অথৈকে জড়িয়ে ধরে। নিজের কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু অর্ণবের দিকে চোখ পড়তেই কান্না আটকে যায়।
অর্ণবের চোখ দুটো লাল। যেনো সে রেগে আছে।

এখন অর্ণব ভালো মতো তন্নির গাল দুটো আর কপাল দেখতে পেলো।
মুহুর্তেই রাগ তরতর করে বাড়তে থাকে।

” হাউ ডেয়ার সী?
হাত কতো লম্বা হয়েছে তার?

সিটে ঘুসি মেরে চিৎকার করে বলে ওঠে অর্ণব।
কেঁপে ওঠে অথৈ আর তন্নি। তন্নি অথৈকে ছেড়ে দেয়।

“এই মেয়ে তোমার কি পবলেম? কেনো কল করলে না আমায়? কেনো ডাকলে না আমায়? তোমার হাত নেই। নিজেকে সেফ করতে জানো না তুমি? এতো বোকা কেনো তুমি?

তন্নির দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে অর্ণব। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।

” তোকে বলেছিলাম না?
চল এগিয়ে যাই ওদের বাড়ির দিকে? বলে ছিলাম কি না?
এগিয়ে গেলে এসব কিছুই হতো না। আমি সেফ করতে পারতাম ওকে।

অথৈ শুকনো ঢোক গিলে।

“ভাইয়া রিলাক্স। এতো হাইপার কেনো হচ্ছিস?

অথৈ অর্ণবের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে।

” ওর গাল দেখেছিস তুই? হাইপার হবো না?
আমি তিন বছর অপেক্ষা করতে একদম পারবো না। ওই বাড়িতে ও তিন বছর থাকবে? ফাজলামো পেয়েছিস?
আজকেই বিয়ে করবো৷

তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায়। অথৈ কপালে হাত দেয়। অর্ণব রাগ কমাতেই পারছে না। ড্রাইভার ভয়ে ভয়ে ড্রাইভ করছে। যেনো পেছনে টর্নেডো বইছে।

চলবে

#মায়াবতী
#পর্ব:১৯
#তানিশা সুলতানা

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে তন্নি আর অথৈ। ডাক্তার নেই চেম্বারে। তাকে খুঁজতে গেছে অর্ণব৷
অথৈ এখনো তন্নিকে জাপ্টে ধরে আছে। তন্নি হাজার বার বলেছে সে ঠিক আছে। তবুও অথৈ শুনছে না। অথৈয়ের শরীর কাঁপছে এখনো। মনে হচ্ছে ব্যাথা তন্নি নয় অথৈ পেয়েছে।

“ডাক্তার কেনো আসছে না তন্নি? আর খানিকটা এগোলেই হাসপাতাল পাওয়া যেতো। শুধু শুধু জোর করলি তুই।

অথৈ কপাট রাগ দেখিয়ে বলে।

” এইটুকু ব্যাথা নিয়ে কেউ হাসপাতালে যায়?

এরই ডাক্তারের কলার ধরে টেনে নিয়ে আসে অর্ণব৷ তার পেছনে কাচুমাচু হয়ে আসছে ড্রাইভার চাচা। ডাক্তারের হাতে আধখাওয়া কাটা রুটি। সে খেতেই গেছিলো।
তন্নি আর অথৈ দাঁড়িয়ে যায়।

ডাক্তারের কলার ছাড়তেই উনি খেঁকে উঠে

“আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেনো? এটা কি ধরণের অসভ্যতামী? পাবলিক প্লেসে আমাকে রীতিমতো ইনসাল্ট করেছে।

ডাক্তার রেগে বলে।

অর্ণ হাতা গোটাতে থাকে। ডাক্তার ভয় পেয়ে যায়। অথৈ শুকনো ঢোক গিলে। মারা শুরু করবে না কি এখন?

” দশ মিনিট হলো আমরা এখানে বসে আছি। চেম্বার খালি রেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন আর আড্ডা দিচ্ছেন। আপনার দাঁত ভেঙে পেটে দিতে পারলে আমার শান্তি হতো।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে অর্ণব। ডাক্তার শুকনো ঢোক গিলে। ভয় পাচ্ছে তবুও এক বুক সাহস নিয়ে বলতে যায়

“আআপনি আমার চেম্বারে এসে আমাকেই অ

বাকিটা আর বলতে পারে না। অর্ণব আবার দুই হাতে কলার টেনে ধরে। ডাক্তারকে খানিকটা শূন্যে তুলে ফেলে।

” বাইরে পেশেন্টের লাইন পড়ে গেছে। আর আপনি আড্ডা দিচ্ছেন। ডাক্তার কে বানিয়েছে আপনাকে? ডাক্তার হওয়ার যৌগ্যতা আছে আপনার? একজন ডাক্তারের রেসপন্সিবিলিটি কিরকয় হয় বিন্দু মাত্র আইডিয়া আছে?
ইচ্ছে করছে আপনার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে এখানে বসিয়ে রাখতে। ননসেন্স

তন্নি শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে আসে। অর্ণবের মুখের দিকে তাকায়।

“প্লিজ

ব্যস হয়ে গেলো অর্ণব শান্ত। কলার ছেড়ে দেয় ডাক্তারের। ডাক্তার হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বেচারা ঘেমে গেছে একদম। শুকনো ঢোক গিলছে ঘনঘন।

“অথৈয়ের তন্নির ভালো করে টিটমেন্ট করেন। একটুও যেনো ব্যাথা না পায়। আমার মায়াবতী যদি ব্যাথা পায় না তাহলে আপনাকে একদম উপরে পাঠিয়ে দিবো আমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অর্ণব।
ডাক্তার কিছু বলার জন্য হা করে। তন্নি ইশারায় থামতে বলে।

” ব্যাথা পাবো না। আপনি বসুন।
অর্ণব চুপচাপ বসে পড়ে চেয়ারে।
তন্নিকে ডাক্তার বেডে বসতে বলে। অথৈ তন্নিকে ধরে রাখে।
কপালের রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেস করে দেয়।

” এভাবে থাপ্পড় কে মেরেছে? নিশ্চয় তোমার বর? ওনাকে দেখেই বোঝা যায় পাগলা ঘোড়া।

তন্নির কানে কানে ফিসফিস করে বলে ডাক্তার। পাগলা ঘোড়া শব্দ শুনে তন্নি ফিক করে হেসে ফেলে। অর্ণব অথৈ ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে।
ওদের তাকানো দেখে ডাক্তার আবার শুকনো ঢোক গিলে।

“বিশ্বাস করুন
উনি ব্যাথা পেয়ে হাসছে না। খুশিতে হাসছে। মামনি কিছু বলো। দেখো কিভাবে তাকাচ্ছে।

ডাক্তার অসহায় চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে। তন্নি এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে।

” পাগলা ঘোড়া যে এভাবেই তো তাকাবে।

তন্নি হাসতে হাসতে বলে৷ অথৈ ঠোঁট টিপে হাসে। অর্ণব রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তন্নির দিকে। কোন দিক থেকে তাকে পাগলা ঘোড়া মনে হয়?

“এতো দাঁত কেলানোর কিছু হয় নি।

অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে ওঠে। তন্নি চুপ হয়ে যায়। ডাক্তার শুকনো ঢোক গিলে তার জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে।

” ফিস হয়েছে……. টাকা।

রিনরিনিয়ে বলে।

“আপনাকে ফিস দিবো এটা আপনার মনে হয়? নাকটা আস্ত রেখেছি এতেই শুকরিয়া আদায় করুন।

অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে বলে।

” তন্নি জান চল

অথৈ তন্নির হাত ধরে বলে। তন্নিও উঠে দাঁড়ায়। তারপর আচমকা অর্ণব কোলে তুলে নেয়। তন্নি বড়বড় করে ফেলে। অথৈ দুই হাতে চোখ চেপে ধরে।ডাক্তার ভেমরি খেয়ে যায়।

তন্নি শুকনো ঢোক গিলে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে।

“আরে আরে কি করছেন? আমার মাথায় লেগেছে পায়ে না। হাঁটতে পারবো আমি।

তন্নি বলে ওঠে।

“বেশি কথা বললে একদম ছাঁদে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলবো। ইডিয়েট

বলেই হাঁটতে থাকে। ডাক্তার অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। অথৈ নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ডাক্তারকে দেয়।

” সরি আংকেল আমার ভাই একটু বেপারোয়া।

বলেই অথৈ চলে যায়। ডাক্তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
“একটু বেপারোয়া? পুরো পাগলা ঘোড়া। এর সাথে যেনো আর কখনো আমার দেখা না হয়।

ডাক্তার বিরবির করে বলে।

ড্রাইভার গাড়িতেই অপেক্ষা করছিলো। অর্নবের কোলে তন্নিকে দেখে দরজা খুলে দেয়। অর্ণব তন্নিকে বসিয়ে পাশে বসে পড়ে। অথৈ এসে তন্নির আরেকপাশে বসে পড়ে।

” চাচা কাজি অফিসে নিয়ে যাও।

অর্ণব সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে। তন্নি চমকে ওঠে। অথৈ চোখ বড়বড় করে ফেলে।

“কারো কোনো কথা শুনবো না আমি। ও রাজি না থাকলে জোর করেই বিয়ে করবো। তবুও আমি বিয়ে করবোই। এট এনি কস্ট।

তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকায়।

” ভাইয়া বাবা মাকে বলবি না বল? তাছাড়া তন্নি ভীষণ সিক। ওর রেস্ট দরকার। দেখ মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আগে ওকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত।

অথৈ আমতা আমতা করে বলে। অর্ণব একটুখানি ভেবে দেখে।

“ঠিক আছে তাই করেন।

অথৈ খুশি হয়। তন্নি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। গাড়ি চলতে শুরু করে। অর্ণব এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তন্নি একটুপর পর অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছে।

” আপনাকে আমার পছন্দ না।

ফট করে বলে তন্নি।

“আই নো দেট।
বিয়ে হয়ে গেলে এক সাথে থাকতে থাকতে পছন্দ হয়ে যাবে।

অর্ণবের সোজাসাপ্টা জবাব। তন্নি গাল ফুলিয়ে অথৈয়ের দিকে তাকায়।

” তোর নিধি

অথৈ বলে।

“সাটআপ অথৈ। তুই আর তোর তন্নি ঘাড়ে চাপিয়েছিস আমার।

” আর তুই যে প্রেম করেছিস।

“জাস্ট গার্লফ্রেন্ড ছিলো। প্রেমের মানে বুঝিয়ে তুই? খালি পকপক। চুপ করে থাক।

ধমক খেয়ে অথৈ ভেংচি কাটে।

” আমার সাগর ভাইয়াকে ভালো লাগে।

তন্নি বলে ওঠে। অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

“এতোখন ভেবেছিলাম বিয়েটা দুই চারদিন পরে করবো। কিন্তু এখন আমাকে কেউ থামাতে পারবে না।
চাচা গাড়ি ঘোরান।

তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। অথৈ কপাল কুঁচকে তন্নির দিকে তাকায়। এটা বলা কি খুব দরকার ছিলো?
অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে

” দশ মিনিটের মধ্যে শাড়ি মালা গহনা আই মিন বিয়ে করতে যা যা প্রয়োজন সব নিয়ে চলে আস কাজি অফিসের সামনে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here