তুমি আমার মুগ্ধতা পর্ব ৫

0
337

#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#পার্ট:০৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

২৬.

অর্ষা অবাকের চ’র’ম সীমানায় পৌঁছে গেছে। অবাক হয়ে বললো,

“রোমাঞ্চ মানে? এ্ এই আপনি আমার সাথে কি করে্ করেছেন হুম?”

অর্ষার ঘা’ব’ড়া’নো কথার ধরণ দেখে হেসে ফেলে প্রান্তিক৷ অর্ষার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টি’প দিয়ে বললো,

“আরও লাগবে নাকি আ’দ’র বউউ?”

“এইবার বেশি করছেন কিন্তু… ”

“শীট..বেশিতো করিনি৷ বেশি রোমাঞ্চ করার দরকার ছিল তোমার সাথে, তাইনা বউ?”

অর্ষা এইবার ব্যর্থ। প্রান্তিকের সাথে কথা’ই পেরে উঠেনি মেয়েটা। রাগে দুঃখে কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ডিরেক্টলি ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুমে গিয়ে মিনমিন করে ভাবলো,

“এই যাহ, আমিতো শাড়ি পড়তে পারিনা। এখন কি হবে? এইখানেতো টপ, জিন্সও নেই।”

প্রান্তিক আবার শু’তে যাচ্ছিলো কিন্তু অর্ষা সাথে সাথে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো,

“আমি শাড়ি পড়তে পারিনা। কাউকে দিয়ে আমার জন্য টপ, জিন্স আনান’তো।”

প্রান্তিক শুনেও না শুনার ভান ধরে শুয়ে পড়ে। অর্ষা আরেকটু উচ্চ স্বরে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,

“আমি শাড়ি পড়তে পারিনাহহহহ।”

প্রান্তিক কানে হাত রেখে উঠে আবার। তারপর বলে,

“আমি কেন আছি বউ? তুমি শাড়ি পড়তে না’ই পারো,আমিতো তোমাকে পড়িয়ে দিতেই পারি তাইনা?”

“এই এই আপনার কি মাথা ঠিক আছে? কি যা তা বলছেন। আমি যার তার কাছে শাড়ি পড়ব কেন? আর কোনো ছেলের থেকে তো নয়’ই।”

“কোনো ছেলে কোথায় পেলে বউ? আমিতো তোমার স্বামী…”

“চুপ থাকুনননন আর টপ জিন্স আনান।”

“পারবনা। তোমাকে শাড়ি’ই পড়তে হবে। এ ছাড়া তোমার কাছে কোনো সেকেন্ড অপশন নেই।”

“কি!”

২৭.

আফ্রা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে চোখ বড় বড় করে। কি অ’স’ভ্য ছেলে। প্রেম করবে বললো! আফ্রা রাতে তাড়াতাড়ি ফোন রেখে শুয়ে পড়েছিল। তাই অর্ণীকের মেসেজ সিন করতে পারেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনলাইনে গিয়ে দেখে এই মেসেজ “প্রেম করবেন।” আফ্রা অর্ণীক’কে এক্টিভ আছে বলে রিপ্লাই দিল,

“আমি যার তার সাথে প্রেম করিনা।”

“তার মানে এর আগে করেছেন নাকি প্রেম?”

এমন প্রশ্নে থ’ত’ম’ত খেয়ে যায় আফ্রা। ছেলেটা সাথে সাথে রিপ্লাই দেয়! ওর মেসেজের অপেক্ষা করছিল নাকি?

“আমি ওরকম মেয়েদের মধ্যে পড়ি বলেতো মনে হয়না।”

“তা ঠিক। এতো সুন্দরী মেয়ে কি আর যার তার প্রেমে পড়বে?”

“পটানোর চেষ্টা?”

“যদি একটু সুযোগ দিতেন…”

অর্ণীকের রিপ্লাই দেখে ফিক করে হেসে ফেলে আফ্রা। ছেলেটা বেশ মজার মানুষতো।

“সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন নাকি মিস্টার অর্ণীক?”

“ভুল করেছি নাকি? ভুল করলে শাস্তি স্বরূপ আপনার ভালোবাসা দিন।”

২৮.

“এই এই কি করছেন?”

অর্ষা ওয়াশরুম থেকে কোনোরকমে শাড়ি পেঁচিয়ে বের হয়। প্রান্তিক সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেই। অর্ষা ল’জ্জ’য় কথা বলেনা। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক জায়গায়। প্রান্তিক চ’ট করে অর্ষার সামনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে অর্ষাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।

“দেখলেতো বউ? তোমার হাসবেন্ড কত সুন্দর শাড়ি পড়াতে পারে?”

অর্ষা তাকিয়ে থাকে প্রান্তিকের দিকে। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনটা? আফ্রাকে সবটা জানাতে হবে। নয়তো… নয়তো পথ পাবোনা সমাধানের এইটা ভাবতেই তাড়াতাড়ি প্রান্তিকের থেকে সরে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অর্ষা৷ প্রান্তিক ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে অর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। দী’র্ঘ’শ্বা’স ফেলে নিরবে। এই মেয়েটার মাঝে কিছু একটা আছে, নয়তো.. এইভাবে প্রান্তিক চৌধুরীকে এক দেখাতে ইমপ্রেস কিভাবে করে ফেললো! হাউ!

প্রান্তিক এইসব ভেবে কাবার্ড থেকে এ্যাশ কালার আর এ্যাশের মধ্যে ব্লু কালারের একটা টিশার্ট আর এ্যাশ কালারের একটা স্কিন প্যান্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে যায় গোসল করতে।

২৯.

“অর্ণীক তুমি কি তোমার ব্রো এর ওইখানে গেছো?”

ওপাশ থেকে মায়ের কাঠ’কাঠ গলায় এই কথা শুনে অর্ণীক বললো,

“যদি এসেই থাকি, ভুল কি করেছি মম?”

“ভুল করোনি৷ তবে বাড়ি ফিরে এসো, তোমার বাবা চায়না তুমি ওইখানে থাকো।”

“প্রাণহীন, মনহীন ওই বাড়ির মানুষগুলোর, কারোর কথা শুনার’ই আমার ইচ্ছে নেই৷ দেখো মম আমাকে তুমি অথবা ডেড কেউ ফোর্স করলে আমিও ব্রো’র মতো কোথাও চলে যাব। ওই বাড়িটা বাড়ি নয়, একটা ন’র’ক।”

“অর্ণীকক…”

“রাখছি মম। আপাতত কোনো কথা বলতে চাইনা৷ আজ ব্রো’র রিসেপশন। যদি আসতে মন চায় এসো।”

কথাগুলো বলেই কল কে’টে দেয় অর্ণীক। আহানা চৌধুরী ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে বললো,

“মাজেদা চাচী, আমার খাবারটা রুমে দিয়ে দিন।”

এক মুহুর্তও ড্রইং রুমে থাকেননা তিনি। চলে যান নিজের রুমে।

পর্ণা মলিন চুপচাপ চেয়ে আছে খাবারের দিকে। সে হাত দিয়ে নাড়ছে ঠিকি তবে খাবার খাচ্ছেনা। সে বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। এই শান্ত মেয়ে অশান্ত পরিবেশ ক্লা’ন্ত হয়ে উঠছে। তার বড় ভাইয়াকে তার ভীষণ মনে পড়ছে আজ। ভীষণ ভালোবাসে তার ভাইয়া তাকে। হঠাৎ একদিন ভাইয়া রে’গে চলে গেলো তাদের রেখে। এইসব ভাবতেই চোখের কো’ণে পা’নি জমাট হয় পর্ণার।

নীলয় চৌধুরীর চোখে তা এড়াইনি। চোখ থেকে চশমাটা খুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“তুমিও কি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছো পর্ণা?”

পাশ থেকে টয়া খোঁ’চার স্বরে বললো,

“এই বাড়ি থেকে গো তো কপাল পু’ড়’লো।”

পর্ণা নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনি। টয়াকে বললো,

“তোমার কপাল যেন না পু’ড়ে তাইতো অন্যের বাড়িতে পড়ে আছো টয়াপু। আর ডেড, আমি এই বাড়ি থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা কোনোটাই করিনা। কারণ আমি এই বাড়ির মেয়ে। আমার ভাইয়াতো বোকা! নয়তো বা’ঘে’র হাতে পরিবার রেখে যায় নাকি?”

কথাটা বলেই পর্ণা উঠে চলে যায়।

কথাটা টয়ার হ’জ ম হলোনা। তাই ন্য কা কা’ন্না’র ভ’ঙ্গি’মাতে বললো,

“দেখলে আংকেল? পর্ণা আমাকে বা’ঘ বললো। আমি আজই চলে যাব।”

‘এইসব ধরোনা টয়া। ছোট মানুষ তাই কি বলে কি না। বাদ দাও৷ খাওয়া শুরু করো।”

৩০.

হঠাৎ আননোন নাম্বার দেখে তড়িঘড়ি করে কল ধরল আফ্রা। আফ্রা যদি খুব ভুল না করে তাহলে সে শিউর এইটা অর্ষার কল।

“হেলো… আফ্রা আমি অর্ষা।”

আফ্রা তাড়াতাড়ি করে রুমের দরজা বন্ধ করে এসে বিছানায় বসে। ফি’স’ফি’স করে উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে বললো,

“হ্যাঁ অর্ষা কেমন আছিস তুই? কোথায় আছিস? সব ঠিক আছেতো? ভালো আছিসতো তুই? ৩ দিন ধরে কোনো খবর নেই কেন? আমিতো চিন্তায় শে’ষ হয়ে যাচ্ছিলাম।”

“আরে তুই এতো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি উত্তর দিব কেমন করে? সব বলব তোকে। আগে বল..আজ একবার দেখা করতে পারবি?”

“কখন? কোথায় বল?”

“চৌধুরী ম্যানশনের বাগান বাড়িতে।”

“মানে! তুই ওখানে কি করছিস? ওটাতো মেবি..চৌধুরী কোম্পানির ফিউচার Owner প্রান্তিক চৌধুরীর হাউজ।

” হ্যাঁ হ্যাঁ। আমি তোকে পরে সব বলব.. তুই সন্ধ্যা ৭ টায় এ বাড়ির পেছনের বাগানে দাঁড়িয়ে থাকিস আমি আসব। যেভাবেই হোক তুই এইখানে আসবি৷ খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

“আচ্ছা আসব। কিন্তু এখনতো বল..তুই ওখানে পৌঁছালি কিভাবে?”

“তুই এলে সব বলব। এখন বল মাম্মাম কেমন আছে?”

“ছোট মা ঠিক মতো খাচ্ছেনা, ঘুমুচ্ছেনা। সবসময় তোকে নিয়ে ভাবে।”

“এমন হলেতো মাম্মাম সিক হয়ে যাবে আফ্রা। প্লিজ বুঝিয়ে সুজিয়ে ঠিক রাখ মাম্মামকে।”

“ট্রাই তো ভাইয়া করে।”

“আফ্রা দরজা খোল, এই অসময়ে দরজা বন্ধ করে কি করছিস?”

নিজের মায়ের কন্ঠ শুনে ভ’র”কে যায় আফ্রা। তড়িঘড়ি করে ফোন কে’টে দিয়ে মোবাইল অফ করে করে ফেলে।

অর্ষা বুঝতে পেরে মন খা’রা’প করে রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে যেতেই দেখে প্রান্তিক আয়নার সামনে ভে’জা চুল বার বার মাথা নাড়িয়ে ঝাড়ছে। এ্যাশ কালার টিশার্ট, স্কিন প্যান্ট। ফি’গা’র স্টীল। হাতে চা’ম’রা’র ব্রাউন ফিতার ঘড়ি। সব মিলিয়ে মিস্টার হ্যান্ডসাম লাগছে প্রান্তিক কে।

“বউ..কি দেখছো এইভাবে?”

চমকে উঠে অর্ষা। সে ভাবনায় এতোটাই ম’গ্ন ছিল যে কখন প্রান্তিক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তা সে টের পায়নি।

“আপনি না এখনি ওখানে ছিলেন?”

“আমাকে দেখতে দেখতে তোমার চোখও ব্লাইন্ড হয়ে গেছে বউ..”

“আসলেই ব্লাইন্ড হয়ে গেছি৷ কারণ আপনার মাঝে শুধু আঁধার আঁধার দেখতে পাই আমি।”

“আঁধারেও কিন্তু আলো আসে বউউউ।”

৩১.

“দরজা বন্ধ করে কি করছিলি এতক্ষণ?”

“আজব,মা আমি ঘুমাচ্ছিলাম।”

“তোর চোখ মুখ দেখেতো মনে হচ্ছেনা তুই ঘুমাচ্ছিলি।”

“তুমি কি আজকাল গোয়েন্দা’গিরি করছো আমার উপর মা?”

তানিশা মির্জা মেয়ের কথার জবাব না দিয়ে মেয়ের পাশ এড়িয়ে আলমারি খুলেন। কাপড়চোপড় সব ভাজ করতে করতে বললেন,

“তোর ছোট মায়ের মতো আমারও মনে হয়, তুই জানিস অর্ষা কোথায়। তাই ভালোর ভালোই বলছি, বলে ফেল অর্ষা কোথায়?”

“আমি জানিনা মা অর্ষা কোথায়। এইভাবে তোমরা আমাকে স’ন্দে’হ করতে পারোনা।”

৩২.

“বউ..মন খারাপ?”

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল অর্ষা। প্রান্তিকের কথা শুনে পেছনে না তাকিয়ে বললো,

“কিছু বলবেন?”

প্রান্তিক কিছু না বলে পেছন থেকে জ’ড়ি’য়ে ধরে অর্ষাকে। অর্ষার কো’ম’ড় এক হাত দিয়ে ঝা’পটে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই তাকে। অর্ষার চুল সরিয়ে, ঘা’ড়ে না’ক ঘ’ষে প্রান্তিক। অর্ষার সারা শ’রী’র কেঁ’পে উঠে। সে যেন নড়ে উঠার শক্তি পাচ্ছেনা। অর্ষা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে আগের মতো। অর্ষা আমতা আমতা করে বললো,

“কি্ ক্ কি কর্ করছেন এ্ এস্ এসব?”

“তোমার মাঝে মিশে আছে হাজারো মা’দ’ক’তা,

জানিনা এ মনে চলছে কি, তবে তুমিই আমার মুগ্ধতা। ”

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here