#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_১০
#হালিমা_চৌধুরী
গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে। মুরতাসিম অনেকক্ষণ চুপ থেকে ভেবে বললো,
‘তুমি কি সত্যিই নিজের ইচ্ছেতে আমার সাথে এসেছো?’
ফারিহা ছোট্ট করে ‘হু’ বলে দেয়। আবার দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।
‘মেনে নিতে পারবে আমাকে?’
মুরতাসিমের কথা শুনে অবাক হয় না ফারিহা। বরং স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
‘বিয়ে যখন হয়েছে মেনে তো নিতেই হবে। মেয়েদের জীবন এমনই, বিয়ের আগে মা বাবার শাসনে বড় হয় আর বিয়ের পর বরের হুকুমে চলতে হয়। তাই মেয়েরা জন্ম থেকেই নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে।শুধু সময়ের অপেক্ষা আর কিছু মুহুত্ব। ধোর্য্যহীন মেয়েটাও একটা সময় ধোর্য্যশীল হয়ে যায়। রাগী মেয়েটাও একটা সময় শান্ত হয়ে যায়। অল্প ব্যাথায় কান্না করা মেয়েটাও একটা সময় কাদতে ভুলে যায়। বক বক করা মেয়েটাও একটা সময় নিশ্চুপ হয়ে যায়। হাস্যজ্জ্বোল মেয়েটাও একটা সময় তার মুখের হাসি হারিয়ে ফেলে। দায়িত্ব নিতে ভয় পাওয়া মেয়েটাও একটা সময় দায়িত্বশীল হয়ে যায়। অত্যাধিক ভালোবাসতে পারা মেয়েটাও একটা সময় ভালোবাসতে ভুলে যায়, পার্থক্য শুধু সময়ের। কেননা সময় মানুষকে সব শিখিয়ে দেয়। মেয়েরা সবখানেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। কারণ, একটা মেয়ে যে শুধু মেয়েই নয়, সে পরিবারের হয়তো কারো মা, কারো বোন ️, অথবা কারো বউ।’
ফারিহার কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো মুরতাসিম।
‘তবে আমার কাছে তোমার মূল্য সবার আগে থাকবে। তোমাকে একা মানিয়ে নিতে হবে না। আমিও নিজেকে তোমার সাথে মানিয়ে নিবো। তুমি তোমার মুখের হাসি কখনোই হারাবে না তা এই মুরতাসিম মেহতাব কথা দিচ্ছে। দায়িত্বশীল একা তুমি হবে কেনো? আমরা দুজন ভাগ করে নিজেদের দায়িত্ব টা সামলাতে পারবো। অল্প ব্যাথায় কাদঁতে থাকা মেয়েকে আমি কোনো দিন কাদতেই দিবো না সেই বিশ্বাস টুকু রাখতে পারো আমার উপর। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি কবিতাটি মুখস্ত করে রেখেছো আমাকে শোনানোর জন্য?’
ফারিহা মুরতাসিমের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। কথা গুলো শুনার সময় ফারিহার মধ্যে এক রকম ভালো লাগা কাজ করছিলো।
‘কবিতা আমার সবসময়ই প্রিয়, কারো জন্য বরাদ্দ কৃত ভাবে শিখে রাখিনি।’
ফারিহার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসে মুরতাসিম। আনমনেই বলে উঠলো,
‘পাগলী টা শুধু আমার।’
ফারিহা মুরতাসিমের কথা শুনেও চুপটি মেরে বসে আছে।
.
তিতির আয়নার সামনে থেকে উঠে তার গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তিতির ঠিক করেছে এই এলোমেলো শাড়ি পরেই সে তমালের বাসায় যাবে। তমালের বাসার ঠিকানা খুব ভালো করেই জানা আছে তিতিরের। তাই আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে তমালের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় তিতির।
এদিকে তমালের বাড়িতেও জানাজানি হয়ে গেছে যে ফারিহা কে মুরতাসিম নিয়ে গিয়েছে। সাইমা বেগম মুরতাসিম কে যতোই ভালো জানুক, কিন্তু এখন তিনি মুরতাসিমের কাজে প্রচুর বিরক্ত। এর মধ্যেই তিতির এসে হাজির তমালদের বাড়িতে। কলিং বেল বাজাতেই সাইমা বেগম তমালকে বলেন,
‘দেখ তো এ অসময়ে কে এসেছে!’
‘পারবো না তোমার বাড়ি তুমি দেখো।’
বলেই তমাল মোবাইলের দিকে নজর আবদ্ধ করে আবারো। সাইমা বেগম বিরক্ত হয় তমালের কাজে। তিনি গিয়ে দরজা খুলে দেয়, দরজা খুলে এরকম এলোমেলো শাড়ি পরা মেয়েকে দেখে সাইমা বেগম প্রথমে ভুল কিছু মনে করেছে। পরক্ষণেই তিতিরের মুখের দিকে নজর দিতেই বুঝলেন যে,মেয়েটা কোনো কাজের লোক নই, মডার্ণ যুগের শাড়ি পরতে না পারা কোনো তনয়া।
‘কি চাই এখানে?’
তিতির তমালের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। তিতির সিনেমাতে দেখেছে বউ রা তার শ্বাশুড়িকে সালাম করে। তিতির ভাবলো সে যখন তমালকেই বিয়ে করবে তখন একটা সালাম তো করাই যায়। যেই ভাবা সেই কাজ, তিতির সাইমা বেগম কে পায়ে ধরে সালাম করে। এতে সাইসা বেগম হতভম্ব হয়ে যায়।
‘কি করছো কি মেয়ে! কোথা থেকে এসেছো?’
‘জ্বি আন্টি, আমি তমালের বন্ধু। তমাল বাসায় আছে?’
‘ওহহ, ভেতরে আসো তমাল ভেতরেই রয়েছে।’
তিতির সাইমা বেগমের পিছন পিছন বাসায় ডুকলো। সোফাতেই সুয়ে ছিলো তমাল, তিতির যত তমালের দিকে এগোচ্ছে তত লজ্জায় মুখ ডেকে ফেলছে। সাইমা বেগম তা দেখে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে যে এদের মধ্যে কোনো একটা সম্পর্ক রয়েছে।
‘তমাল মেয়েটা কে?’
সাইমা বেগমের কথা শুনে চমকে যায় তমাল। সাইমা বেগমের দিকে তাকাতেই তমাল দেখতে ফেলো যে তিতির জড়োসড়ো হয়ে সাইমা বেগমের পিছনে দাড়িয়ে আছে।
‘মানেটা কি তিতির? তুমি এখানে কি করছো?’
‘তুমিই তো বলেছো নিজেকে বদলে তোমার সামনে আসতে তাহলে এতো অবাক হচ্ছো কেনো?’
‘একদিনেই নিজেকে বদলে ফেললে? বাহ এটাকে বদলানো বলে না। নিজের সাজ বদলালেই তো হবে না। নিজের ব্যবহার, চলাফেরা টা বদলাতে হবে। হুট করেই না বলে চলে এসেছো এটা কোনো ভদ্র মেয়ের কাজ!’
তমালের কথা শুনে চুপ করে যায় তিতির।
‘তুমি যদি আমাকে সাপোর্ট করো তাহলে আমি নিজেকে বদলাতে পারবো তমাল৷ কিন্তু এই অবস্থায় যদি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও তাহলে আমি নিজেকে সামলাবো নাকি নিজেকো বদলাবো?’
তমাল তিতিরের কথা শুনেও না শুনার ভান ধরে আছে। সাইমা বেগম তমাল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ফারিহা তো আমার বউ মা হলো না, নতুন কাউকেই না হয় বউমা করে দে আমার।’
‘মা তুমি কি বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে? ও কেমন মেয়ে তা সমন্ধে তোমার এখনো ধারনা হয়নি। ছেলেদের মত বিহেভ করে, নোংরা মেয়েদের মত চলে, ছেলেদের ভালোবাসা নিয়ে মজা করে। সে মেয়ে কেমন হতে পারে বলোতো?’
‘আমি কিছু শুনতে চাই না, আমার বউমা চাই। হয় তুই তিতির কে বিয়ে করবি নয়তো আমি তোর জন্য অন্য মেয়ে দেখবো আমি। এক কোথায় তোকে বিয়ে করতেই হবে। কি বলো মেয়ে তমালের জন্য মেয়ে দেখবো নাকি?’
‘না না আন্টি, তমাল আমাকে বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু আমি তো ভালোবাসি ওকে। ওকে ছাড়া এক মুহূর্তে ও বাঁচবো না আমি সেটা আমি আজ বুঝেছি। ও আমাকে কত মানুষের সামনে অপমান করেছে, কিন্তু আমি সেসব ভুলে আবার ওর কাছে ছুটে চলে এসেছি।’
‘তুমি যাও এখন তিতির, আমার বিরক্ত লাগছে তোমাকে।’
‘এতোই খারাপ আমি যে আমাকে তোমার বিরক্ত লাগছে? তুমি কি তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বদলাতে পারবে না? কেনো আমাকে মাঝ পথে এসে ছেড়ে দিচ্ছো তুমি?’
‘ছেড়ে দিচ্ছি না তো তোমাকে, বলেছি আমি এখন একা থাকতে চাই।’
‘থাকতে কেউ মূল্য দিতে পারে না। আমি আর কোনোদিন তোমার সামনে আসবো না, কোনোদিনেও নাহ । আজ আমাকে তুমি অবহেলা করছো তুমি দেখো তোমার সাথেও এমন কিছুই হবে।’
বলেই কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে তিতির। সাইমা বেগম তমাল কে বকতে শুরু করে দেয়।
‘তোর কি কোনো জ্ঞান নেই রে তমাল! মেয়েটা তোকে কত ভালোবাসে আর তুই কিনা ওর ভালোবাসা বুঝেও না বুঝার ভাণ ধরে আছিস?’
‘আমি কি করবো মা? ওর নিজেকে বদলানো উচিত। ওর চলাফেরা আমার পছন্দ না।’
‘এমন বদলাতে বলিস না যে তোকে ভুলে যায়। মেয়েদের মন একবার ভেঙে গেলে সেটা কখনো দৃতীয় বার জোড়া লাগানো যায় না। ওর চলাফেরা যখন পছন্দ না তখন ভালোবাসার ফাঁদে মেয়েটিকে ফেলেছিস কেনো?’
সাইমা বেগমের কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে যায় তমাল।
‘আমি কি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি মা?’
‘সেসব পরে হবে আগে তিতির কে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।’
তমাল ও আর অপেক্ষা না করে বাড়ি থেকে দৌড়ে বাহিরে বের হয়ে যায় তিতির কে খুজতে।
চলবে…..
[অন্তিম পর্ব খুব শিগরই আসছে।]