#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_৯
#হালিমা_চৌধুরী
ফারিহা বাড়ি ফিরে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। সালেহা বেগম এবং নুরুল সাহেব মেয়ের কাজে বিরক্ত হয় খুব। তাদের মতে ফারিহার ভালোর জন্যই তমালের সাথে বিয়ে দিচ্ছে তারা। কিন্তু ফারিহা তমাল কে বিয়ে করতে চায় না। সালেহা বেগমের মতে বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নুরুল সাহেব বেশ চিন্তিত নিজের মেয়ের জন্য। তাদের সিদ্ধান্ত টা যদি মেয়ের জীবনের জন্য ভুল হয় তাহলে তিনি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না সেই নিয়ে। কিন্তু সালেহা বেগম কিছুতেই বুঝতে চাইছে না যে ফারিহার বিয়েতে মত নেই। নুরুল সাহেব সালেহা বেগম কে বললো,
‘সালেহা বিয়ে করতে চায় না মেয়েটা তাহলে ফারিকে আমাদের জোর করা উচিত নয়।’
‘বিয়ে তে রাজি নই তো কি হয়েছে? ওকে আমি রাজি করে নিবো সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।’
‘কিন্তু সালেহা মেয়েটা যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলে তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তো?’
‘আরে তুমি বাঁজে চিন্তা করা বন্ধ করো তো, আপা ফারু কে কত ভালোবাসে তুমি তো জানোই। আপার কাছে ভালো থাকবে মেয়েটা। আপা আমার কাছে আমার মেয়ে টাকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে চেয়েছে আমি কি বারণ করতে পারি বলো?’
‘তাই বলে মেয়েটার কথা ভাববো না আমরা?’
‘ওর ভালোর জন্যই তো বিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওকে। তাছাড়া তুমিই বলো একটা বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেয়েকে কে বিয়ে করবে?’
সালেহা বেগম এবং নুরুল সাহেবের কথার মাঝেই পিয়াস এসে হাজির।
‘কি নিয়ে কথা হচ্ছে মা-বাবা?’
‘আরে তেমন কিছুই না, ফারুর বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।’
‘মানে?’
‘মানে টা খুব সহজ তমালের সাথে ফারিহার বিয়ে হবে খুব শিগরই।’
‘তোমাদের মাথা ঠিক আছে? ফারু এখন কোন সিচুয়েশনে আছে তোমরা জানো না? এখনই বিয়ে দেওয়ার কি দরকার?’
‘এই তোরা ছোট রা এসব বিষয়ে নাক গলাবি না। আমরা বড় রা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই হবে।’
‘তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো, তবে ফারু যদি এই বিয়ে তে রাজি না থাকে তাহলে কিন্তু আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিবো না বলে দিয়েছি।’
বলেই পিয়াস ফারিহার রুমের দিকে ছুটে যায়। ফারিহা রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। কয়েকবার দরজায় বারি দেয় কিন্তু ফারিহা দরজা খুলে না।
‘এই ফারু দরজা খুল, তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার।’
পিয়াসের কথা শুনে ফারিহা দরজা খুলে দেয়। ফারিহা কে দেখে পিয়াস হতভম্ব হয়ে যায়। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। চুল গুলোও কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।
‘কি হয়েছে ফারু?’
ফারিহা কিছু না বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তা দেখে পিয়াস ফারিহা কে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘বিয়েটা করতে চাস না তাইতো? তোর ভাই এখনো বেচে আছে, তোর যেই বিয়েতে মত নেই সেই বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দিবো না।’
পিয়াসের কথা শুনে ফারিহার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে।
.
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মুরতাসিমের। এই মুহূর্তে তার ফোনের প্রতি বিরক্ত মুরতাসিম। ফোনের স্কিনে রিফাতের নাম জলজল করছে।
‘কোনো খবর পেয়েছো ফারিহার?’
‘স্যার ম্যামের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বুধবারে ম্যামের কাজিনের সাথে বিয়ে উনার।’
‘হোয়াট! কি বলছো কি তুমি? ফারিহার আমার সাথে বিয়ে হয়েছে আবার কেনো বিয়ে হতে যাবে?’
‘এতো কিছু তো আমি জানি না স্যার।’
মুরতাসিম রিফাতের কথা শুনে ফোন কেটে দেয়। বিছানা থেকে উঠে গাড়ির চাবি নিয়ে ফারিহাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় মুরতাসিম।
.
ফারিহাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় মুরতাসিম। মুরতাসিম ফারিহাদের বাড়ির ভেতরে ডুকে দেখে ফারিহার বাবা-মা সোফায় বসে গল্প করছে। হুট করে বড়িতে একটা অপরিচিত ছেলে কে ডুকতে দেখে অবাক হয় সালেহা এবং নুরুল সাহেব।
‘কে আপনি?’
সালেহা বেগমের কথা শুনে বাঁকা হাসে মুরতাসিম।
‘আপনাদের ওয়ান এন্ড অনলি মেয়ের জামাই মুরতাসিম মেহতাব বলছি।’
মুরতাসিমের কথা শুনে সালেহা বেগম বসা থেকে দাড়িয়ে যায়।
‘আমার বউ কোথায়?’
‘কে তোমার বউ?’
‘আরে শ্বশুরজী এসব কি বলছেন আপনি? ফারিহা আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ।’
বলেই মুরতাসিম জোরে জোরে ফারিহা কে ডাকতে থাকে। ফারিহা নিজের রুমেই ছিলো, হঠাৎ জোরে কারো মুখে নিজের নাম শুনে নিচে নেমে আসে ফারিহা। নিচে নেমে মুরতাসিম কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় ফারিহা। ফারিহা কে নিচে আসতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে আসে মুরতাসিম।
‘দেখো তো ফারিহা তোমার বাবা মা এসব কি বলছে! তুমি ওদের বলোনি যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে?’
মুরতাসিমের কথার প্রতিউত্তের কোনো জবাব দেয় না ফারিহা।
‘সে যাই হোক আমি আমার বউ কে নিয়ে যেতে এসেছি।’
নুরুল সাহেব মুরতাসিম কে বাঁধা দিয়ে বলে,
‘আমার মেয়ে কে আমি কোথাও নিয়ে যেতে দিবো না।’
‘আমি কিন্তু এখানে ঝগড়া করতে আসিনি, বিবাহিত বউকে নিয়ে যেতে এসেছি।’
চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পিয়াস নিচে নেমে আসে। মুরতাসিম কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রেগে যায় পিয়াস।
‘কি হচ্ছে কি এখানে?’
‘আরে শালাবাবু যে, এসো এসো। তোমার অপেক্ষায় তো রইলাম।’
‘আপনি কেনো এসেছেনে এখানে?’
ফারিহার কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মুরতাসিম ওর দিকে।
‘জানো না কেনো এসেছি এখানে? তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এরা তো তোমাকে সুন্দর ভাবে বিদায় দিবে না জোর করেই নিয়ে যেতে হবে তোমাকে।’
বলেই ফারিহার হাত ধরে টেনে বাড়ি থেকে বাহিরে নিয়ে আসে মুরতাসিম। ওদের পিছন পিছন পিয়াস ও তার মা বাবা এসেছে। পিয়াস মুরতাসিমের হাত থেকে ফারিহা কে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘ফারুর হাত ছাড়ো বলছি।’
‘পিয়াস ভাই হিসেবে তোমার দায়িত্ব আমার হাতে ফারিহা কে তুলে দেওয়া।’
‘দায়িত্ব পালন তখন করতাম যখন বোন আমার ভালো কোনো ছেলের সাথে বিয়ে হতো।’
‘আমার মধ্যে খারাপের কি দেখেছো?’
‘অনেক কিছুই দেখেছি কোনটা রেখে কোনটা বলবো বলো?’
পিয়াসের কথা শুনে বিরক্ত হয় মুরতাসিম।
সালেহা বেগম পিয়াস কে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ ফারু কে ছেড়ে দাও, আমি কিন্তু পুলিশ কে ফোন করবো।’
‘করুন শ্বাশুড়ি মা, কোনো লাভ হবে না। আপনার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করুন যে পুলিশ আমাকে কতক্ষণ আটকে রাখতে পেরেছে? আর পুলিশ কে ফোন করলে আপনারাই বিপদে পড়বেন। কারন, আমার বউ কে নিয়ে যেতে এসেছি কোনো পরনারী কে নিয়ে যেতে আসিনি। বরং আপনারা বাঁধা দিচ্ছেন আমার বউ কে নিয়ে যাওয়া থেকে।’
বলেই মুরতাসিম গাড়ির দরজা খুলে ফারিহা কে গাড়িতে উঠতে বলে। ফারিহাও নিশ্চুপ ভাবে গাড়িতে উঠে বসে। তা দেখে পিয়াস অবাক হয়ে যায়। পিয়াস ভেবেছে যে ফারিহা হয়তো মুরতাসিমের সাথে যাবে না। কিন্তু পিয়াস কে অবাক করে দিয়ে মুরতাসিমের সাথে চলে যায় ফারিহা। সালেহা বেগম পিয়াস কে বললো,
‘তুই ফারু কে বাঁধা দিলি না কেনো?’
‘আমি মুরতাসিম কে বাঁধা দিয়েছি প্রথমে কারন, আমি ভেবেছি ফারু মুরতাসিমের সাথে যেতে চায় না। কিন্তু যখন ফারু নিজ ইচ্ছেতে মুরতাসিমের সাথে গিয়েছে সেহেতু বাঁধা না দেওয়াই উচিত।’
বলেই পিয়াস বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আর এদিকে মুরতাসিম ড্রাইভ করছে আর ফারিহা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে গাপটি মেরে বসে আছে। মুরতাসিমের আজ খুশির কোনো শেষ নেই কারন তার ভালোবাসার মানুষ টি তার পাশেই বসে আছে। মুরতাসিমের বিশ্বাস ফারিহাও তাকে কোনো একদিন ভালোবাসবে। গাড়ি তার আপন গতি তে চলছে। গাড়ির ভিতরে দুজন নববিবাহিতা নারী পুরুষ বসে আছে কিন্তু তাদের মাঝে নেই কোনো কথাবার্তা! এভাবেই গাড়িটি নিজের গন্তব্যে স্থলের দিকে এগোচ্ছে।
চলবে…..