#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_৮
#হালিমা_চৌধুরী
মাহতিমের গাড়ি এসে তমাল দের বাসার সামনে দাড়ায়। ফারিহা গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে যায়। তমাল গাড়ি থেকে নেমে মাহতিম কে ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় চলে যায়। ফারিহা বাসায় এসে দেখে তার বাবা মা এবং পিয়াস তার মিমীর সাথে গল্প করছে। তা দেখে ফারিহার প্রান ফিরে পেয়েছে। ফারিহা দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। ফারিহার মা ফারিহা কে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে, আর পিয়াস ফারিহা কে গাট্টা মেরে বলে,
‘তোকে একদম বাঁদরের মত লাগছে এভাবে কাঁদবিনা একদম।’
পিয়াসের কথা শুনে ফারিহা রেগে যায়, তারপরেও নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণে রেখে ফারিহা বলে,
‘তোমরা ঠিক আছো তো?’
ফারিহার কথা শুনে সালেহা বেগমের মুখ থমথমে ভাব বিরাজমান।
‘ঠিক আছি আমরা, আর সকালে যা কিছু হয়েছে সবাই সবকিছু ভুলে যাও।’
সালেহা বেগমের সাথে সায় মিলিয়ে নুরুল সাহেব বলে,
‘ফারিহা সকালে কি হয়েছে সেটা তুমি ভুলে যাও, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।’
ফারিহা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে। চাইলেই কি এই কালো অতীত ভুলা যায়? ভাবতে ভাবতেই ফারিহা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে। সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়তেই ফারিহা ডুঁকরে কেঁদে উঠে।
.
মুরতাসিম বাসায় এসে তার একজন গার্ড কে কল দেয়।
‘ শুনো রিফাত, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।’
‘কি কাজ করতে হবে স্যার?’
‘ফারিহা কি করে না করে, কোথায় যায় সেটার সম্পূর্ণ খোঁজ আমার চাই।’
‘জ্বি স্যার, কাজ হয়ে যাবে।’
‘গুড, আর হ্যাঁ কেউ যেনো না জানে যে আমি জেলের বাহিরে আছি।’
‘আচ্ছাহ।’
মুরতাসিম কল কেটে দেয়, তারপর ফোন গেঁটে ফারিহার পুরোনো একটা পিক খুঁজে পায়। সেটাকেই বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
.
.
তিতির বাসায় এসে রুমের সব কিছু ভাঙতে শুরু করে। রাগে তিতিরের মাথা কাজ করছে না, এতো অপমান কোনো দিন কেউ করেনি তিতির কে! আর সেখানে তার ভালেবাসার মানুষ তাকে অপমান করেছে ভাবতেই অবাক লাগছে তিতিরের। তিতির তার ফোন নিয়ে তার মম কে ফোন দেয়। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর তিতিরের মম কল রিসিভ করে।
‘মম তোমাদের কাছে আমাকে নিয়ে যাও আমি আর এখানে থাকতে চাই না। তোমরা কেনো দূরে পড়ে আছো আমাকে এখানে একা রেখে!’
‘বাবু কাঁদছো কেনো? তুমিই তো আমাদের সাথে ইতালি আসতে চাওনি। এখন কি হয়েছে তোমার?’
‘সব শেষ মম, যার জন্য আমি তোমাদের সাথে ইতালি যাই নি সে আজ আমাকে সবার সামনে অপমান করেছে। আমি আর এখানে থাকতে চাই না।’
‘একদম কাঁদবে না বাবু, নিজের খেয়াল রেখো আমি আর তোমার পাপা কিছু দিনের মধ্যেই দেশে ফিরবো।’
বলেই তিতিরের মম কল কেটে দেয়। রাগে দুঃখে তিতির নিজের ফোন টা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। তমালের বলা কথা গুলো বারবার মনে পড়ছে তিতরের। সে ঠিক করেছে শাড়ি পরবে। যেই ভাবা সেই কাজ, তিতির অনেক খুঁজে একটা শাড়ি পেয়েছে তার মমের। শাড়িটা নিয়ে পরার চেষ্টা করছে তিতির, কিন্তু পারছে না। ফোন খুজতে গিয়ে মনে পড়লো রাগ করে ফোন টাও ভেঙ্গে ফেলেছে সে। শেষে উপায় না পেয়ে কোনো মতে শাড়িটাকে পরে নেয় তিতির৷ তারপর আয়নার সামনে গিয়ে চুল গুলোকে ছেড়ে দেয়, চোখের নিচে কাজল আর কপালে একটা টিপ পরে তিতির। আয়নায় নিজেকে নিজে দেখেই অবাক তিতির, তাকে একদম চেনা যাচ্ছে না। সুন্দর করে শাড়ি পড়লে পরীর মত লাগতো কিন্তু এখনও খারাপ লাগছে না।
.
বিকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির এর শব্দে ফারিহার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারিহা নিচে যায়। নিচে গিয়ে শুনতে পায় তার ব্যাপারেই কথা হচ্ছে। ফারিহা কে আসতে দেখে সাইমা বেগম সবাই কে চুপ করতে বলে। কিন্তু ফারিহার বাবা চুপ না থেকে বলে,
‘না সাইমা, ওর জানার দরকার আছে যে এখানে ওর বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।’
‘মানে কি নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে?’
‘তোর আর তমালের বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে।’
‘আসলে তোমাদের মাথা ঠিক আছে? বারবার কেনো বিয়ে দিতে চাইছো আমাকে? এতোই বোঝা হয়ে গেছি তোমাদের?’
‘দেখ ফারিহা তোর সাথে সকালে যা কিছু হয়েছে তা কিন্তু সামান্য কিছু না। একটা ছেলে তুলে নিয়ে গেছে তোকে, তুই কিভাবে ভাবলি তুই আমাদের বোঝা হয়ে গেছিস?,তোর তো ভাগ্য ভালো যে আপা তোকে পুত্রবধূ করতে চায়।’
‘দেখো মা আমার বিয়ে যেভাবেই হোক হয়ে গেছে, আর তমাল ভাইকে তো আমি নিজের ভাইয়ের মতই জানি । তাহলে কেনো এখানে বিয়ের কথা উঠেছে?’
‘তারমানে তুই বিয়ে টা মেনে নিয়েছিস মুরতাসিমের সাথে।’
সালেহা বেগমের কথা শুনে নিরবতা বিরাজ করে ফারিহা কে। বিয়ে মেনে না নিলেও তার বিয়ে হয়ে গেছে এটাই বাস্তবতা। কেউ চাইলেও সেই অতীত মুছে দিতে পারবে না। এমনিতেও ফারিহা কোনো বিয়ে করতে চায় না। সে একা থাকতে চায়।
‘তোর আর তমালের বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছি আমরা। আর চাইলেও বদলাতে পারবে না কেউ।’
‘আমি বিয়ে টা করবো না বলেছি তারপরও কেনো এমন করছো?’
‘তোকে বিয়ে করতেই হবে, আপা আপনি বিয়ের আয়োজন শুরু করে দেন। আমরা ফারিহা কে নিয়ে আজই বাড়িতে যাচ্ছি।’
‘মা এটা কিন্তু অবিচার করছো তোমরা আমার সাথে। আমি বিয়ে টা করতে চাইনা বলেছি তোমাদের।’
‘সেগুলো বাড়িতে গেলে বলিস এখান থেকে চুপচাপ বাড়িতে চল এখন!’
.
.
তমাল বাড়িতে ফিরতেই সাইমা বেগম তমাল কে তাদের বিয়ের কথা জানায়।
‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছে মা? ফারিহা আমার বোন হয়, আর ওর বিয়ে হয়ে গেছে তোমরা এমন করছো কেনো?’
‘দেখ তমাল বিয়ে টা করে নে, ফারিহার বিয়ে ভেঙে গেছে। ওর মা এবং আমি দুজনেই চাই ফারিহা আমাদের নিজেদের কাছেই থাকুক। তুই আর দ্বিধা করিস না।’
‘তোমাদের ব্যাপার তোমরা সামলাও, আমি বিয়েটা করছি না। আর আমি যতদূর ফারিহা কে চিনি ও জীবনেও বিয়ে করবে না।’
‘ফারিহা কে ওর বাবা মা সামলে নিবে, আর বিয়ের পর এমনিতেও মেয়েরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে।’
‘বললাম তো আমি বিয়েটা করবো না। ফারিহা আমার বোন, ওকে আমি বউ বেশে দেখতে পারবো না।’
‘একদম কথা বাড়াবি না, বিয়ে টা তোকে করতেই হবে। এতো ভালো একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায় তোর?’
‘ফারিহা যে ভালো মেয়ে সেটা আমিও জানি, তবে ফারিহা আমার বোন তোমাকে আবারও বলছি। তাই বিয়ে টা নিয়ে তোমরা আর কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না।’
‘আমরা বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিয়েছি, তুই বিয়ে করলে মান সম্মান থাকবে আমাদের৷ কয়েকদিন পর তো মরেই যাবো, মরার আগে বুঝি তোর বউ কে দেখে যেতে পারবো না?’
‘বাঙালির এই এক সমস্যা, সবসময়ই মরার ভয় দেখিয়ে সন্তানের মতের বিরুদ্ধে কাজ উশুল করে নেয় ব্ল্যাকমেইল করে।’
বলেই তমাল নিজের রুমে চলে আসে। আর সাইমা বেগম বসে বসে ভাবছে কিভাবে তমাল কে বিয়ে তে রাজি করানো যায়। সাইমা বেগম তমালের জন্য খাবার নিয়ে ওর রুমে যায়।
‘তমাল, বাবা খাবার গুলো খেয়ে নে।’
‘তোমরা যা কিছু শুরু করছো কেউ আমার সামনে আসবে না। ফারিহার বিয়ে হয়ে গেছে একবার, তোমরা কেমন মানুষ যে একটা মেয়ে এখন তার ভয়ংকর অতীত নিয়ে চিন্তিত আবার তার উপর আরেকটা বিয়ের চাপ সৃষ্টি করছো।’
সাইমা বেগম ছেলের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে আসে।
চলবে,….
[এখন থেকে নিয়মিত গল্প দিবো আর কাউকে অপেক্ষায় রাখবো না।]