#হৃদয়_মাঝারে_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৪
মুরতাসিম দেওয়াল ধরে আস্তে আস্তে উঠে পড়ে। মুরতাসিম উঠে ফারিহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য। ফারিহা মুরতাসিমের হাত না ধরেই উঠতে যায়। তাই আবারো পড়ে যায় ফারিহা।
‘স্টুপিট মেয়ে, কোনো কান্ডব জ্ঞান নেই তোমার!’
মুরতাসিমের কথা শুনে ফারিহা ওর দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে।
‘আরে এখানে স্টুপিট বলার কি আছে! একটা ছেলের হাত ধরে উঠার চেয়ে পড়ে যাওয়া অনেক ভালো বুঝেছেন।’
ফারিহার কথা শুনে মুরতাসিম রেগে যায়। ফারিহার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দেয় মুরতাসিম।
‘এসব ভদ্রতা তুমি অন্য কোথাও দেখাও। তোমার এসব স্টুপিট মার্কা কান্ড দেখতে আসিনি আমি।’
বলেই মুরতাসিম সেই স্থান ত্যাগ করে। ফারিহাও হনহন করে রুমে চলে এসেছে।
‘কিরে মাত্রই তো বাহিরে গেলি ফিরে এলি কেনো?’
‘একটা পাগলের সাথে ধাক্কা খেয়েছি মিমী। তোমাদের বাসার মালিক কি করে এসব ননসেন্স মার্কা মানুষ কে বাসা ভাড়া দেয়।’
‘কোন পাগলের সাথে ধাক্কা খেয়েছিস? আরে মুরতাসিম আবার কোন পাগল কে বাসা ভাড়া দিয়েছে কে জানে! আচ্ছা আমি মুরতাসিমেরর সাথে কথা বলবো ও আসলে।’
‘মুরতাসিম কে মিমী?’
‘আরে মুরতাসিম আমাদের বাসার মালিকের নাম।’
‘ওহ আচ্ছা, আমি রুমে যাই আর ভাল্লাগে না।’
‘তমাল এসেছে ওর সাথে কথা হয়েছে তোর?’
‘না মিমী তমাল ভাই কে তো দেখিনি আমি কিভাবে কথা বলবো। আচ্ছা আমি পরে কথা বলবো ভাইয়ার সাথে।’
বলেই ফারিহা রুমে চলে আসে। রুমে এসে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে সে।
.
.
মুরতাসিম রুমে এসে শুয়ে পড়ে। বারবার ফারিহার পড়ে যাওয়ার কথা ভাবছে আর মিটমিট করে হাসছে মুরতাসিম। বিছানা থেকে উঠে সাইমা বেগম দের ফ্ল্যাটের সামনে চলে আসে। দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপ দেয়, কিন্তু কেউ দরজা খুলেনি। তাই এবার আনলিমিটেড ভাবে কলিং বেল চাপতে থাকে মুরতাসিম।
.
বেলকনিতেই ছিলো ফারিহা। এতবার কলিং বেলের আওয়াজ শুনে বিরক্ত হয় সে। ‘মানুষ কিভাবে পারে এরকম আনলিমিটেড ভাবে কলিং বেল বাঁজাতে।’
বলেই দরজা খোলার জন্য চলে আসে। দরজা খুলে মুরতাসিম কে দেখে ফারিহার ঠোঁটে বিরক্তের চাপ ফুটে উঠে। নিরবতা ভেঙে মুরতাসিম বললো,
‘আন্টি নেই বাসায়?’
‘আপনি এখানে কেনো? আমি মিমী কে বলেছি এসব পাগল কে যেনো এই বাসায় থাকতে না দেয়। মিমী বলেছে উনি মালিকের সাথে কথা বলবেন যাতে আপনাকে বাসা ভাড়া না দেওয়া হয়।’
কথা গুলো একদমে বলে থামে ফারিহা। ফারিহারর কথা শুনে মুরতাসিম কাঁদতে ভুলে গেছে।
‘এই মেয়ে বলে কি! আমার বাসা থেকে আমাকেই বের করে দিবে নাকি সে!’
‘তোমার মত স্টুপিটের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। আন্টি কে ডাকো তাড়াতাড়ি।’
ড্রয়িং রুমে চেঁচামেচি শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে সাইমা বেগম। ড্রয়িং রুমে মুরতাসিম কে দেখে কিছুটা অবাক হোন তিনি।
‘কিছু হয়েছে ফারিহা, এত চেঁচামেচি করছিস কেনো?’
‘আরে মিমী তুমি এসেছো! দেখে এই সেই পাগল ছেলে যার কথা তোমাকে আমি বলেছি।’
‘মানে কি বলছিস এসব তুই ফারিহা! মুরতাসিম পাগল হতে যাবে কেনো!’
মুরতাসিমেরর নাম শুনে চমকে যায় ফারিহা। তার মিমী কিছুক্ষন আগে মালিকের নাম মুরতাসিম বলেছে, তাহলে উনিই বাসার মালিক!
‘কি মিস স্টুপিট থেমে গেলে কেনো? বলো আরো বলো, আমাকে বাসা থেকে বের করে দিতে বলো তোমার মিমী কে!’
‘আরে কি হচ্ছে কি আমি কেনো মুরতাসিম কে বাসা থেকে বের করে দিতে যাবো ফারু মা! মুরতাসিম তো এই বাড়ির মালিক।’
‘না মিমী তার আর দরকার নেই, আমি যাই। তোমরা তোমাদের কাজ সেরে নাও এখানে আমার কোনো কাজ নেই।’
বলেই গুটিশুটি মেরে রুমে চলে আসে ফারিহা।
.
.
অফিসের মধ্যে নিজের কেবিনে বসে আছে মাহতিম। কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না মাহতিম। তিতিরের দেওয়া আঘাত আর ফারিহার সাথে বিয়ে ভেঙে দেওয়া দুটো বিষয় নিয়েই মাথা ব্যাথা শুরু হয় মাহতিমের। ফোন টা নিয়ে ফারিহার নাম্বারে ফোন দেয় মাহতিম। কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ফারিহা ফোন ধরে।
‘কেমন আছো?’
‘জ্বী ভালো আছি, কে আপনি?’
‘মাহতিম চৌধুরী।’
‘ওহ আপনি সেই না যে আমার বর হয়েও হলো না, তবে ভালোই হয়েছে। আপনার মত একটা কিপ্টা ছেলে কে বিয়ে করতে হয়নি আমার।’
ফারিহার কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে মাহতিম। উপরে দিয়ে নিজেকে ম্যাচিওর দেখালেও কিছু বাচ্চা স্বভাব রয়ে গেছে ফারিহার মধ্যে, সেই ভেবেই হাসছে মাহতিম।
‘আরে আজব ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেনো?’
‘তোমার কথা শুনেই কথা বলার ইচ্ছে ফুরিয়ে গেছে। এই মাহতিম চৌধুরী কে তুমি কিপ্টা বলছো সাহস আছে তোমার বলতে হবে!’
‘হ্যাহহ, এটা সবাই বলে আমার একটু সাহস বেশি। তা কিপ্টা কে কিপ্টা বলবো না তো কি বলবো?’
‘দেখা করবে একটু আমার সাথে? কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো তোমার সাথে।’
‘ নাহ ভাই সেটা সম্ভব নয়, আমি আমাদের বাসায় নেই মিমীদের বাসায় আছি।’
‘ওহ, আচ্ছাহ তোমার মিমীদের বাসার এড্রেস দাও আমি কাছেই কোনো এক জায়গায় চলে আসবো।’
ফারিহা কিছুক্ষণ ভেবে তার মিমী দের বাসার এড্রেস দিয়ে দেয়। মাহতিম বলেছে সে ফারিহার মিমীদের বাসার পাশেই একটা পার্ক আছে সেখানে আসবে। তাই ফারিহা রেডি হতে চলে যায়।
.
ফারিহা একটা কালো রংয়ের কুর্তি পড়ে চুল গুলো কে ছেড়ে দিয়ে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নেয়। তারপর ফোন টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ফারিহা তার মিমী কে বলেছে আশ-পাশটা একটু ঘুরে দেখবে তাই সাইমা বেগম আর কিছু বলেনি। তাই ফারিহা ও খুশি মনে বাহিরে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সেই পার্কে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পার্কে পৌছে ফারিহা দেখে মাহতিম গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারিহা কে দেখে এগিয়ে আসে মাহতিম। মাহতিম কে দেখে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইলো ফারিহা। একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর হতে পারে! কালো টি-শার্ট পড়লে তো আরো সুন্দর লাগে ছেলে দের সেখানে মাহতিম কে তো একদম রাজপুত্রের মত লাগছে।
‘কি হয়েছে এরকম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?’
মাহতিমেরর কথা শুনে হুশ ফিরে ফারিহার।
‘ন..না কিছু হয়নি, কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন দেরী হলে মিমী টেনশন করবে।’
‘আসলে তোমাকে কিভাবে যে বলবো কথা গুলো! আসলে তোমার সাথে তো আমি অন্যায় করেছি তাই ক্ষমা করে দাও আমাকে!’
‘ক্ষমা করবো এক শর্তে, আপনি সত্যি করে বলুন তো আমাদের বিয়ের রাতে আপনি আমাকে ফোন করেছেন কিনা?’
‘নাহ ফারিহা আমি তোমাকে কেনো কল দিইনি। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।’
‘আপনি যদি আমাকে কল না দিয়ে থাকেন তাহলে কে কল করেছে আমাকে? সে লোকটি কিন্তু আপনার সম্পর্কে সব জানে। এবং আপনার নাকি একটা মেয়ের….’
আর কিছু বলার আগেই কেউ একজন পিছন থেকে ফারিহা কে হাত ধরে টান দেয়। টাল সামলাতে না ফেরে ফারিহা পিছনের লোকটির বুকে গিয়ে পড়ে।
‘স্টুপিট মেয়ে, নিজের উপর কন্ট্রোল নেই তোমার? সামান্য হাত ধরতেই বুকের মধ্যে এসে পড়েছো।’
স্টুপিট ডাকটা শুনা মাত্রই ফারিহার মুরতাসিমেরর কথা মনে পড়ে যায়। তার সন্দেহই সঠিক। মুরতাসিমই ফারিহা কে পিছন থেকে টান দিয়েছে তাই সে মুরতাসিমেরর বুকে গিয়ে পড়ে। ফারিহা মুরতাসিমেরর কাছ থেকে সরে যায়।
‘তুমি ঠিক আছো তো ফারিহা?’
‘পার্কে কি প্রেমালাপ হচ্ছে নাকি? দেশে কি আইন বলতে কিছু আছে?’
মুরতাসিমেরর কথা শুনে রেগে যায় মাহতিম। মুরতাসিমেরর কলার ধরে মাহতিম বলে,
‘তাতে তোর কি সমস্যা? আমি আমার হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।’
মাহতিমের কথা শুনে অট্টহাসিতে মেতে উঠে মুরতাসিম।
চলবে……