হৃদয় মাঝারে সিজন২ (পর্ব ৩)

0
650

#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_৩
#হালিমা_চৌধুরী

সকাল সকাল পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মুরতাসিমের। বিরক্ত ভঙ্গিতে একবার বারান্দার দিকে তাকিয়ে নিজের ফোন নিয়ে টাইম দেখে। প্রেয়সী নামে সেভ করা নাম্বারে একটা ম্যাসেজ সেন্ড করে। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হয় মুরতাসিম।
.
.
‘এসব কি বলছো তুমি তিতির? তোমার জন্য আমি ফারিহার মত একটা মেয়ের সাথে বিয়ে ভেঙে দিয়েছি আর তুমি এখন আমাকে বলছো তুমি আমার সাথে প্রেম নই ফান করেছো!’

‘এভাবে কথা বলছো কেনো মাহতিম? তুমি আমার পিছন পিছন কু’কু’রের মত ঘুরতে তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু মজা করা যাক।’

‘এভাবে আমাকে না ঠকালেও পারতে, তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার জন্য আজ আমি আমার ফ্যামিলির কাছে খারাপ প্রমাণিত হয়েছি। ফারিহার মত একটা মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছি। ছিঃহ তিতির তুমি এতোটা বাজে একটা মেয়ে জানলে আমি তোমার পিছনে জীবনেও ঘুরতাম না!’

‘আরেহহ, তোর জ্ঞান তোর কাছে রাখ! এসব জ্ঞান দেওয়া লোক আমার একদম পছন্দের না। তোদের মত কত ছেলে আমার পিছন পিছন ঘুরে। এখন আমার সামনে থেকে সর।’

তিতিরের মুখে তুই ডাক টা মাহতিমের বুকে গিয়ে লাগলো। গত ২ বছর ধরে তিতিরের পিছন পিছন ঘুরতো। এই তো কিছু দিন হলো তিতির বলেছে সেও মাহতিম কে ভালোবাসে। তিতিরের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে মাহতিম খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আজ সেই তিতির বলে সে সবকিছুই ফান করে বলেছে। এইতো কিছুক্ষণ আগের কথা, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই মাহতিম তিতির কে ফোন দেয়। তিতিরের কাছে আবদার করে বসে দেখা করতে চায়। তিতিরও সহজেই মেনে যায়। অফিস যাওয়ার সময় তিতিরের সাথে দেখা করার জন্য একটা পার্কের পাশে দাড়িয়ে ছিলো সে। তিতির এসেই যে এসব বাজে কথা বলবে জানা ছিলো না মাহতিমের। মাহতিম আর দাড়িয়ে না থেকে পার্ক থেকে চলে যায়। রাস্তায় তার গাড়ি ছিলো। গাড়িতে উঠে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আজ মাহতিমের প্রচুর আফসোস হচ্ছে সে মানুষ চিনতে ভুল করেছে। তিতিরের জন্য নয়, ফারিহার জন্য। মেয়েটা কেনো বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সেটা তার জানা নেই। তবে ফারিহা যে একটা ভালো মেয়ে সেটা সে নিঃশব্দে বলতে বাদ্য। অন্যদিকে তিতির চলে গেছে এতে তার কোনো আফসোস হচ্ছে না। কারন সে ভুল মানুষ কে ভালোবেসেছে। আরো বড় কিছু ভুল হওয়ার আগেই যে তিতিরের সত্য টা সামনে চলে এসেছে তাতেই কৃতঙ্গ সে।
.
.
এলার্মের শব্দে এক প্রকার বিরক্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে ফারিহা। নিজেই নিজেকে এক প্রকার বকতে শুরু করেছে।

‘নিজেই নিজের জন্য সকালে একটা নাগিন কে ঘুম ভাঙানোর জন্য সেট করে রাখি।’

বিড়বিড় করে কথা গুলো বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সেই আননোন নাম্বার থেকে আজও একটা ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজটা ওপেন করে দেখে,

‘শুভ সকাল ঘুমের রাণী।’

ম্যাসেজ টা দেখে ফারিহার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

‘আরে বাপ এতোই যখন ভালোবাসিস সামনে আসিস না কেন? সামনে আসলে আমি গিলে খাবো নাকি?’

ম্যাসেজ টা লিখে ফারিহা সেই নাম্বারে সেন্ড করে দেয়। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। বাড়ির সদর দরজা পার হওয়ার পূর্বেই ফারিহার মা তাকে দাড়াতে বলে।

‘তুমি জানো না মা পিছন থেকে ডাকতে নেই, এতে অমঙ্গল হয়।’

‘বাহ কবে থেকে তুইও এসব সংস্কার মেনে চলতে শুরু করেছিস?’

‘ওমনি শুরু হয়ে গেলো তোমার খোঁচা দিয়ে কথা বলা। আসলে বাবা ছাড়া আমাকে কেউ ভালোবাসে না।’

‘বাপের আদর পেয়েই তো আমার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছিস তোরা দু ভাই-বোন।’

‘হ্যাহহ, এবার বলো ডেকেছো কেনো?’

‘বলছি কি শুন না, আজ তোকে ভার্সিটিতে যেতে হবে না।’

ফারিহার মায়ের কথা শুনে সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। যেই মা তাকে সারাদিন উঠতে বসতে বলে পড়তে বস। তিনি আজ বলছে ভার্সিটিতে যেতে না।

‘কিন্তু কেনো আম্মু?’

‘আসলে কালকেই তো তোর বিয়ে ছিলো তুই তো বিয়েটা করলি না। তুই ব্যাপার টা যতটা ছোট করে দেখছিস ব্যাপার টা ততটাও ছোট নয়। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তুই প্রেম করিস অন্য কারো সাথে। তাই বিয়েটা করিস নি। ব্যাপার টা বাহিরের লোকে তো আর জানে না। তাই এরকম আজে-বাজে কথা রটাচ্ছে তোর নামে। তাই কিছুদিন বাড়ির বাহিরে বের না হওয়াই ভালো।’

ফারিহা তার মায়ের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। কিছু না বলেই ফারিহা নিজের রুমে চলে আসে। ফারিহার পিছন পিছন ওর মা ও আসে। ফারিহা রুমে ডুকে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ব্যাগ গোছানো শুরু করে।

‘কোথায় যাবি তুই? ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেন?’

‘মিমীর(আন্টি) কাছে গিয়ে কয়েকদিন থেকে আসি। যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে। এই বাড়ির কেউ তো আমার কথা বিশ্বাস করে না তাই আপাতত এখানে থাকতে চাই না আমি।’

ফারিহার কথা শুনে হতাশ হোন আবারো সালেহা বেগম (ফারিহার মা)। বাঁধা না দিয়ে তিনি নিজের বোন কে ফোন দিয়ে বলে দেন যে ফারিহা তার বাসায় যাচ্ছে। ফারিহা যে জেদি মেয়ে কারো কোনো কথাই শুনবে না এখন তাই তার মিমীই তাকে শান্ত করতে পারবে।
.
ফারিহা তার মিমীর বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে। ১৩ তলা একটা ফ্ল্যাট বাসায় ৯ তলায় থাকে ফারিহার মিমী। নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে ফারিহা লিফটের মধ্যে ডুকে পড়ে। ফারিহা ডুকার সাথে সাথেই একটা ছেলেও লিফটের মধ্য ডুকে যায়। ফারিহা আর ওই ছেলেটা ছাড়া লিফটের মধ্যে আর কেউ নেই তাই ফারিহা অস্তিতে পড়ে যায়। মনে মনে তার মিমীকে বকতে থাকে। লিফট ৯ তলায় আসতেই ফারিহা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যায় লিফট থেকে। বেরিয়ে ওর মিমীর বাসায় চলে আসে।
____________________
নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে ডুকে পড়ে মুরতাসিম। ফারিহার মিমীদের বাসাটা তার। সে এখানে তেমন থাকে না তাই বাড়িটা ভাড়া দিয়ে দেয় মুরতাসিম। নিজের জন্য একটা ফ্ল্যাট খালি রেখে বাকি গুলোতে ভাড়াটিয়া রা থাকে। ফারিহা কে প্রথম বার মুরতাসিম ফারিহার মিমীদের বাসায় দেখে। সেই থেকেই ফারিহার প্রেমে পড়ে যায়। ফারিহা নিজেদের বাড়ি থেকে তার মিমীদের বাসাই বেশি থাকতো আগে। এখন আর বেশি আসে না ফারিহা তার মিমী দের বাসায়। তাই দেখে শুনে ফারিহার মিমীদের ফ্ল্যাটের পাশের ইউনিট টা নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ভাবে রেখেছে।
আজ সকালে ফারিহার করা ম্যাসেজ টা দেখে মেজাজ খারাপ হলেও সে খুশি। তার প্রেয়সী প্রথমবার তাকে ম্যাসেজ করেছে। সে যে তার প্রেয়সীর উপর রেগে থাকতে পারে না।
‘তবে মুরতাসিম কে বাপ ডাকার জন্য ছোট্ট একটা শাস্তি তো তোমার প্রাপ্যই।’

মুরতাসিম আবারো ফারিহার করা ম্যাসেজটা পড়লো। তারপর ফোন রেখে শাওয়ার নিতে যায় সে।
.
ফারিহা কে আসতে দেখে সাইমা বেগম ( ফারিহার মিমী) তাকে জড়িয়ে ধরে। ফারিহাও তার মিমীকে জড়িয়ে ধরে। তারপর এক এক করে মায়ের নামে তার মিমীর কাছে নালিশ দেওয়া শুরু করেছে। সাইমা বেগম ও ফারিহার করা নালিশ গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এই মেয়ে তো তার মেয়ের মতই । তবুও পুত্রবধূ রুপে তাকে বরণ করে ঘরে তুলতে চান তিনি। ফারিহার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে তার মন ভেঙে যায়। কাউকে কিছু না বলেই বিয়েতে যাননি তিনি। যখন শুনেছে ফারিহা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে তখন তিনি আরো দূঢ় ভাবে ফারিহা কে পুত্রবধূ বানানোর জন্য পড়ে আছেন। সেই ব্যাপার টা হয়তো বা ফারিহা জানেই না।

‘অনেক নালিশ দেওয়া হয়েছে ফারু মা এবার কিছু খাবি চল।’

‘হু মিমী প্রচুরর খিদে পেয়েছে। তোমার বোন তো কিছু খেতেই দেয়নি।’

ফারিহার কথা শুনে সাইমা বেগম হেসে দেয়। তারপর ফারিহা কে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে খাবার খাইয়ে দেন সাইমা বেগম।

‘এবার একটু ঘুমিয়ে নে ফারু মা। অনেক জার্নি করে এসেছিস।’

‘না মিমী, আমি দুপুরে ঘুমাই না। চলো ছাদে যাই।’

‘ছাদে এখন প্রচুর রোদ যেতে হবে না তোর।’

‘না আমি যাবো, তোমার যাওয়ার দরকার নেই।’

বলেই ফারিহা সাইমা বেগমের কথার অপেক্ষায় না থেকে দৌড় দেয়। দৌড়ে বাহিরে আসতে নিতেই মুরতাসিমেরর সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনেই নিচে পড়ে যায়। মুরতাসিম মাত্র শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছিল। ফারিহা যে দৌড়ে আসছে তা সে লক্ষ্য করেনি। ফলাফল অনুযায়ী দুজনেই নিচে বসে আছে কোমরে হাত দিয়ে!

চলবে…..

[ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দূষ্টিতে দেখবেন। ভিলেনের নাম দেওয়ার জন্য কিছু ছেলের নাম সাজেস্ট করুন। যেটা পছন্দ হয় সেটাই দিবো।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here