কি নেশায় জড়ালে পর্ব ২২

0
753

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পার্ট_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আজ কাল মৌ এর ব্যাবহারে খুবি অবাক হয় রূপা৷
সারাক্ষণ সাজ্জাদের সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা। সাজ্জাদের কি লাগবে, সাজ্জাদ কি পছন্দ করে তা রান্না করে খাওয়ানো।
আজ রূপা রান্না করতে আসলেই দেখে মৌ রান্না করছে।
সোহা জিজ্ঞেস করলো কি রান্না করছো মৌ..?
মৌঃ সাজ্জাদের বিরিয়ানি খুব পছন্দ তাই রান্না করছি।
পেছন থেকে মাহতিম বলে উঠলো, ‘ ভাবি আমার চিংড়ি চক খুব পছন্দ আপনি আমার জন্য এটা রান্না করে রাখবেন। ‘
মৌ জোর পূর্বক হেঁসে বললো, ‘ ঠিক আছে। ‘
মাহতিম ঘুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।
সুমাইয়া মৌ এর পেছনে গিয়ে বললো,’ ভাবির রান্না তো দেখছি খুব সুন্দর আর কি সুন্দর ঘ্রাণ।
মৌ খুশি হয়ে বললো,’ আমি সব রান্না শিখে রেকেছি সাজ্জাদের জন্য। কিন্তু কে জানতো আমার জিনিসে ভাগ বসাতে এমন মেয়ে চলে আসবে যার সাজ্জাদের কাজের লোক হওয়ার ও যোগ্যতা নেই।
রূপা রেগে মৌ এর দিকে তাকালো।
রূপা মৌ এর কাছে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ নিজের স্বামীর দিকে মন দাও অন্যের স্বামী নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।’
মৌঃ চিন্তা করা লাগতো না যদি তুমি আমার সাজ্জাদের ঠিক ভাবে খেয়াল রাখতে। তোমার সাথে সাজ্জাদ একটুও ভালো নেই। আমি সাজ্জাদকে আমার করে নিবো।
রূপাঃ লজ্জা করো সে তোমার বাসুর হয়।
মৌ হেঁসে বললো, ‘ তাতে আমার কিছু যায় আশে না। আমি আমার জিনিস ছিনিয়ে নিতে জানি।’
রূপাঃ চেষ্টা করে দেখো।

মৌ সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কি যেনো বলছিলে..?’

সুমাইয়া হেঁসে মৌকে নিজের পছন্দের বাসার এক এক করে সবার পছন্দের খাবারের কথা জানিয়ে বললো,’ আজকে আপনি সবার পছন্দের খাবার রান্না করবেন সেটা আমি সবাইকে বলেছি আর আপনাকেও সবার পছন্দের কথা জানিয়ে দিলাম।
মৌ খুব ভালো করেই বুঝেছে সে ভালো করেই ফেঁসেছে। তবুও হেঁসে বললো, ‘ ঠিক আছে। ‘
মৌ কে হেল্প করতে রূপা আর সোহা এগিয়ে আসলে সুমাইয়া সোহা কে আরিফ এর কথা বলে রুমে পাঠিয়ে দিলো আর রূপাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলো।
মৌ খুব ভালো করেই বুঝেছে ইচ্ছে করেই ওরা ওর সাথে এমনটা করেছে। রেগে উপরের দিকে তাকালো সে সারা রাত জেগে বিরিয়ানি রান্না শিখেছে। এখন তো বিরিয়ানি ছাড়া কিছুই পারে না সে কিভাবে এতো কিছু রান্না করবে..? মোবাইল এর কথা মনে হতেই মোবাইল হাতে নিয়ে এক এক করে সব রেসিপি দেখতে শুরু করলো।

খাবার টেবিলে সবাই অবাক হয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমেনা বেগমঃ এই খাবার কে রান্না করেছে..?
সোহা আমতা আমতা করে বললো,’ আম্মু আজ সব রান্না মৌ করেছে…’
আমেনা বেগম কিছু না বলেই উঠে গেলেন টেবিল থেকে।
সুবর্ণা বেগম চেষ্টা করলেন বুঝানোর কিন্তু আমেনা বেগম কারো কথা না শুনে নিজের রুমে চলে গেলেন।
মৌ গর্বের সাথে সবাই কে খাবার বেড়ে দিলো৷
মাহতিম খাবারের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার খিদে নেই। ‘
মাহতিম এর সাথে সুমাইয়া ও বললো ওর খিদে নেই। আরিফ ও উঠে গেলো।
সোহা আর বাকি সবাই খাবার মুখে দিয়ে চুপচাপ হাত ধুয়ে নিলো।
খাবার কোনোটা লবন বেশি আবার কোনোটা জ্বাল। আবার দেখে যাচ্ছে পানি একদিকে অন্য দিকে তরকারি। আবার কোনোটায় লবন নেই।

রূপা মৌ এর সামনে গিয়ে বললো,’ প্রথম প্রথম সবার খারাপ হয়। সামনে আবার চেষ্টা করলে ভালো হয়ে যাবে।
মৌ রেগে বলে উঠলো, ‘ আর সবার সামনে তোমার ভালো সাজতে হবে না।’
রূপাঃ এখানে কেউ নেই মৌ।
মৌঃ তোমাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। তুমি আহনাফ আর সাজ্জাদ এক সাথে ২জনের মাথা কিনে নিয়েছো। কি দেখিয়ে ওদের এভাবে নিজের বসে করে নিলে!!?? এখন বাসার সবাই কেও নিজের বসে করে নিয়েছো। অনেক চালাক। তোমার থেকে এক টক করে সব ছিনিয়ে নিবো তারপর এই বাড়ি থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
রূপাঃ আমি তোমার মতো নই। তুমি নিজেই এমন তাই সবাইকে এমন ভাবতে শুরু করেছো। আমার জায়গায় না আবার তুমি চলে এসো দেখো।অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেই পড়তে হয় মনে রেখো।

মৌ রেগে সেখানে থেকে চলে গেলো।

রূপা রুমে আসতেই মাহতিম আসলো।
রূপা কিছুটা অবাক হলো মাহতিম কে দেখে।
রূপাঃ কিছু দরকার ভাইয়া..?
মাহতিমঃ বসে কথা বলি।
রূপাঃ আচ্ছা আপনি বসুন আমি কফি নিয়ে আসি।
মাহতিম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

রূপা কফি নিয়ে এস মাহতিম এর থেকে কিছুটা দূরে বসলো।

মাহতিম কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললো,’ ভাবি আমার কেমন জেনো আহনাফ আর মৌ এর উপর সন্দেহ হচ্ছে..
রূপাঃ কেনো..?
মাহতিমঃ আমার মনে হয় ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রী কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা সবার সামনে অভিনয় করছে।
রূপাঃ আমার তো দেখে মনে হচ্ছে না।
মাহতিমঃ একটু ভালো করে লক্ষ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন।
রূপা নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো। সে কবেই জেনে ফেলেছে ওদের মধ্যে আসলে যেমনটা ওরা সবাইকে বলছে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এতো নাটক।

মাহতিম রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার মাথায় একটা প্লেন এসেছে। আপনার হেল্প লাগবে তাহলেই সত্যিটা সবার সামনে আনা সম্ভব।
রূপা কিছু একটা ভেবে রাজি হয়।

সুমাইয়া সুন্দর করে সেজে বাসা থেকে বের হলো যা মৌ দেখে বলে উঠে, ‘ কোথায় যাচ্ছো সুমু..?
সুমু ভয় পেয়ে বললো, ‘এই তো ফ্রেন্ড এর বাসায়। ‘
মৌঃ দেখে তো মনে হচ্ছে না…
সুমুঃ কেনো মনে হচ্ছে না..?
মৌঃ এতো সাজগুজ করে অবশ্য কেউ ফ্রেন্ড এর বাসায় যায় না।
সুমুঃ আজ ফ্রেন্ড এর বার্থডে পার্টি তাই একটু সেজে যাচ্ছি।
সুমুর কথা শুনে মৌ হেঁসে বললো আচ্ছা।
সুমু আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো।
মৌ সুমুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ” আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি কোথায় যাচ্ছো..? সময় আসুক আমার হাতে তখন সবটা সবার সামনে নিয়ে আসবো।

সাজ্জাদ বাসায় আসতেই মৌ এর মুখোমুখি হলো।
মৌঃ আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
সাজ্জাদ ভ্রু কুঁচকে মৌ এর দিকে তাকালো।
মৌঃ ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমার পছন্দের খাবার রান্না করেছি।
সাজ্জাদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো , ‘ তুমি বরং নিজের স্বামীর পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াও তাকে। আর আমার জন্য আমার বউ আছে।
মৌঃ তোমার বউকি তোমার কোনো খবর রাখে.? তোমাকে ভালোবাসে..? তোমার পছন্দ অপছন্দ নিয়ে ভাবে..?
সাজ্জাদঃ তুমি আমাদের সম্পর্কের দিকে নজর না দিয়ে নিজের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করো।
মৌ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ নজর দিলাম কোথায় যেটা সত্যি সেটাই বললাম। তুমি রূপার সাথে ভালো নেই সাজ্জাদ ওকে ছেড়ে দাও।

সাজ্জাদ রেগে মৌ কে থাপ্পড় মারতে গিয়েও থেমে যায়। মৌ এখর ওর ছোটো ভাইয়ের বউ৷

সাজ্জাদঃ নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো। না হলে পরিণাম ভালো হবে না। আমি কার সাথে ভালো আছি বা থাকবো তা অবশ্য তোমার কাছে শুনতে চাইনি। এর পরের বার আমার আশেপাশে জেনো তোমাকে না দেখি। বলেই উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।

রূপা সাজ্জাদ কে দেখেই বুঝলো সাজ্জাদ কোনো কারনে রেগে আছে।
সাজ্জাদ রূপার সাথে কোনো কথা বললো না।

সাজ্জাদ ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।

রূপা গিয়ে সাজ্জাদের জন্য কফি নিয়ে আসলো।
সাজ্জাদ দেখেও না দেখার মতো নিজের কাজ করছে।
রূপাঃ আপনার জন্য কফি।
সাজ্জাদঃ রেখে দাও।

রূপা ঘুরে ফিরে কয়েকবার সাজ্জাদের সামনে আসলো কিন্তু সাজ্জাদ তাও রূপার সাথে কথা বললো না।
রূপা মন খারাপ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। সে নিজেই বুঝছে না ওর কেনো এতো খারাপ লাগছে সাজ্জাদের কথা না বলাতে। সেও কি সাজ্জাদ কে আবার ভালোবাসতে শুরু করেছে..? নিজের ভাবনায় নিজেই আঁতকে উঠল না সে দ্বিতীয় বার আর ভালোবাসতে চায় না।

আরিয়ান চাচ্চু মাহতিম কে কল দিলো কিন্তু মাহতিম দেখেও ধরলো নাএতো এতো নিষেধ করার পরেও আরিয়ান চলে গেছে। আরিয়ান শুধু নিজের কথাই ভেবেছে পরিবারের আর কারো কথা সে ভাবেনি।

মাহতিম মাহিকে কল দিয়ে বললো বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে।
মাহিঃ এতো রাতে কিভাবে..?
মাহতিমঃ তুমি কি আসতে পারবে না..?
মাহি কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ আসছি আমি’

মাহি বাসার নিচে এসেই দেখে মাহতিম দাঁড়িয়ে আছে।
মাহিঃ কি বলার জন্য নিচে ডেকেছো জলদি বলো..?
মাহতিমঃ আমার সাথে চলো।
মাহিঃ কোথায়..?
মাহতিমঃ মরতে…
মাহিঃ কিইইই.!!
মাহতিমঃ জ্বি চলো।
মাহিঃ আমার এতো জলদি মরার কোনো শখ নেই। এখনো বিয়ে টাও হয়নি, জামাই কে জড়িয়ে ধরাও হয়নি।
মাহির কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহতিম মাহিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ এবার একটা শখ পুরন হয়ে গেছে।
মাহি কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলো। ইসসস সময়টা কেনো থমকে গেলো না। এখানেই সব কিছু থেমে যেতো মাহতিম ঠিক এইভাবে সারাজীবন জড়িয়ে ধরে রাখতো। প্রিয় মানুষটির একটু হাত স্পর্শ করাই যে অনেক কিছু পাওয়ার সমান।
মাহতিম মাহিকে ছেড়ে বললো,’ এবার চলো.
মাহি লজ্জা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
মাহতিম বাইকে উঠতে পেছনে মাহি বসে পরলো।

রূপা রেগে সাজ্জাদের সামনে গিয়ে দুই হাত কোমরে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনার সমস্যা কি..?’
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
রূপা সাজ্জাদের সামনে থেকে ল্যাপটপ নিয়ে গেলো।
সাজ্জাদঃ কি হয়েছে..?
রূপাঃ আমারও একি প্রশ্ন কি হয়েছে..?
সাজ্জাদ রূপার সামনে এসে দাঁড়ালো।
রূপা সরে যেতে নিলে সাজ্জাদ রূপার হাত ধরে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসলো।
সাজ্জাদ যত্ন করে রূপার মুখটা উপরে করে বলে উঠলো, ‘ আর কি করলে আমাকে ভালোবাসবে রূপা..? আমি তোমার প্রতি ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছি। ‘
রূপা সাজ্জাদের হাত স্পর্শ করতেই সাজ্জাদ আবার বললো,’ আমি জানি একদিন আমার থেকেও বেশি তুমি আমাকে ভালোবাসবে। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো।’
রূপার ইচ্ছে হলো বলতে,’ আমি আবার ভুল করছি সাজ্জাদ। আমি আবার কারো ভালোবাসায় জড়িয়ে যাচ্ছি। এমনটা আমি চাই না। কিন্তু আমার মন আমার কথা শুনছে না। আমি আপনার ভালোবাসায় জড়িয়ে যাচ্ছি।

মাহতিম নাদিমকে দেখে বাইক থামালো৷
নাদিম মাহতিম কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখে সুমাইয়া ফুচকা খাচ্ছে এখনো মাহতিম কে দেখেনি।

মাহতিমঃ কেমন আছো নাদিম..?
নাদিমঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি..?
মাহতিমঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা এখানে কি করছো..?
নাদিম মাহিকে দেখে হেঁসে বললো, ‘ মাহি কোথায় যাচ্ছো..?’
মাহি ভয়ে চুপসে গেলো।
মাহতিম হেঁসে বললো, ‘ একটু দরকারে ভাবি বলে ছিলো নিয়ে যেতে।
মাহি রাগী দৃষ্টিতে মাহতিম এর দিকে তাকালো।
নাদিমঃ বাসায় চলেন মাহতিম ভাই।
মাহতিম কিছু বলার আগেই নাদিমের পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ নাদিম কার সাথে কথা বলছো..?
পরিচিত কন্ঠ শুনে মাহতিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷
নাদিম কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।
সুমু মাহতিম কে দেখেই ভয়ে নাদিমের পেছনে লুকিয়ে গেলো৷
মাহতিমঃ সুমু তুই এখানে..?
সুমাইয়াঃ আসলে ভাইয়া..
মাহতিমঃ আসলে কি..?

হঠাৎ আশেপাশে চিৎকার শুনে সবাই তাকালো।
একটা ট্রাক এক্সিডেন্ট করেছে।
মাহতিম মাহি নাদিম সুমাইয়া ও গেলো দেখতে।
ট্রাক এক্সিডেন্ট করে চলে গেছে। যাকে এক্সিডেন্ট করেছে তার দেহ পরে আছে রাস্তায়। রক্তে পুরো রাস্তা লাল হয়ে গেছে। কিছু মানুষ ভীড় করে আছে।ভীড় ঠেলে ওরা সামনে যেতেই সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। সুমাইয়া স্তব্ধ হয়ে সেখানেই বসে পরলো।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here