#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_১৮
#আজরিনা_জ্যামি
“আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন ভার্সিটির পার্কিং লটে একটা গাড়ি বোমা ব্লাস্ট হয়েছে। তথ্য সুত্র থেকে জানা যায় সেখানে বিজনেস ম্যান আরহাম মাহমুদ খান এর বোন আরুহি মাহমুদ খান ছিলেন। তিনি এই ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং সাথে একজন বিজনেস ওমেন ও বলা চলে। আজকে ভাইয়ের সাথেই তিনি ভার্সিটি আসেন আরহাম মাহমুদ খান গাড়ি থেকে নেমে গেলেও সে কোন একটা কারনে গাড়ি থেকে নামেনি তার কিছুক্ষণ পরেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়। এখনো পর্যন্ত কোন কিছু সিওর হয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে আরুহি মাহমুদ খান মারা গেছে।
আরেকটু পর এই খবরটাই টেলিকাস্ট হবে তাই না আব্দুল লতিফ। ইউ আর জিনিয়াস তুমি চাইলে সব করতে পারো একটু আগেই কতো সুন্দর করে খবর পরলে। এই খবরটা যখন সত্যি সত্যি টেলিকাস্ট হবে তখন দেখে আমি খুব করে হাসবো । আমার পথের কাঁটা শেষ খুব বলেছিল আমাকে সারপ্রাইজ দেবে।
মিস্টার আব্দুল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে বাহবা দিচ্ছে আর বিশ্রি ভাবে হাসছে। সে আজ তার পথের কাটা দূর করেছে। আসলে কি তাই নাকি সে নিজের অন্তিম হাসি হেসে নিচ্ছে। কে জানে কি হবে।
_________________
আপাতত আরহাম এক দৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার ও তাই। এই মুহূর্তে আফরিন আর রোজা কি করবে বুঝতে পারছে না। ওরা তো শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। গাড়িটা ব্লাস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আরহাম আর আবরার গাড়ির দিকে দৌড়ে যায়। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য ওখানে থাকা কয়েকটা স্টুডেন্ট বাধা দেয়। আরহাম কিছুক্ষণ পরেই শান্ত হয়ে ওখানে হাঁটু গেড়ে বসে পরে আর বিরবির করে বলতে থাকে,,,
“না এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমার বোন এভাবে কখনোই আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। কিছু তো একটা আছে। আমার বোন ঠিক আছে কিছু হয়নি ওর। মা মা না এখানে মা’কে আসতে দেওয়া যাবে না। যা হবে আমাকেই সামলাতে হবে। এতদূর এসে আমি আরুহি হেরে যেতে পারি না। আরুহির কিছু হয় নি। ”
আরহাম উঠে দাঁড়িয়ে ওর মাকে ফোন করে। আর বলে,,
“যাই হয়ে যাক না কেন? তুমি বাসা থেকে বের হবে না। যে খবরই শুনতে পাওনা কেন মনে রাখবে সব ঠিক আছে।কারো কিছু হয় নি। তুমি বের হবে না।”
আরহাম ঠান্ডা মাথায় আশেপাশে দেখতে থাকে। সবাই তো আরহামের কাজে অবাক। একটু আগেই পাগলামো করছিল আর এখন শান্ত হয়ে সব দিক সামলাচ্ছে। ওদিকে আবরার কে নিবিড় আর ইমান সামলাতে পারছে না ওর কতো আহাজারি,,
“আমাকে ছাড় নিবিড় আমার সুভাসিনী জানিস ও না আমায় বড্ড জ্বালিয়েছে আমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল ও আমায় বলে নি। আজকে বলেছে আজকেও ওর হাসিমুখ দেখেছি আমি। তৃপ্তির হাসি। আমি ওর কাছে যেতে চাই যেতে দে আমায়। আমার সুভাসিনীর কিছু হবে না। কিছু হতেই পারে না।”
আরহাম এর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে চোখ থেকে পানি ও বের হচ্ছে কিন্তু ও গড়াতে দিচ্ছে না। এক হাত দিয়ে মুচছে আর চারদিকে দেখছে। আফরিন আর রোজার তো কাঁদতে কাঁদতে বেহাল অবস্থা। আফরিন আরহাম এর কাছে এসে বলল,,
“আরুহির কিছু হয় নি তাই না। আমার মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। আরুহির কিছু হয় নি তাই না আরুহি ঠিক ফিরে আসবে আমাদের কাছে। ঐ গাড়িতে আরুহি ছিল না তাই না।”
আরহাম কিছু বললো না শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার মাথায় ঘুরপাক অন্যকিছু। আবরার শান্ত হয়ে বসে আছে আরহাম ও আপাতত মাটিতে বসে আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে কার কি করা উচিত কেউ বুঝতে পারছে না। ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার প্রয়োজনীয় সবাইকে ইনফর্ম করে দিয়েছে। হুট করে কেউ আরহাম এর পাশে বসে বলল,,
” যে গাড়িটা ব্লাস্ট হলো সেই গাড়িতে কে ছিল?”
আরহাম সামনের দিকে তাকিয়েই ছোট করে বলল,,
‘আমার বোন!”
“আহারে মেয়েটা কি ভালো ছিল গো ইস অকালেই প্রানটা গেল বোধহয় কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার কোন কষ্টই হচ্ছে না।”
“আপনি,,, এই কথা টা বলে ঘুরতেই আরহাম চিৎকার দিয়ে ওনাকে জরিয়ে ধরে বলল,,,
“বোনু! আমি জানতাম আমার বোনের কিছু হতে পারে না। আমার বোন আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারে না।”
আরহাম এর চিৎকার এ সবাই আরহাম এর দিকে তাকায় আর তাকিয়ে তো অবাক আরুহিকে জরিয়ে ধরে আছে আরহাম। আবরার, আফরিন রোজা তাড়াতাড়ি করে সেখানে গেল। আরহাম আরুহিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আরুহি ভাইকে শান্তনা দিয়ে বলল,,
“ওহ হো ভাইয়া প্লিজ স্টপ ক্রাইং আই এম অ্যাবসুলেট লি ফাইন।”
“তুই জানিস আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
“হুম তা তো দেখলামই বোনের গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে আর সে শুধু তাকিয়ে আছে একটু কাঁদবে তা না।
আরুহি আরহামের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। আরহাম হেঁসে বলল,,
‘তুই যদি সত্যি হারিয়ে যেতিস তাহলে তো আমি খুশি হতাম। এখন হাসলে তো লোকজন আমাকে কতকিছু বলতো তাই কোন রিয়্যাকশন না দিয়ে বসে ছিলাম। বাড়ি গিয়ে খুশিতে নাচতাম আর কি।”
“ভাইয়া! বলে আরুহি জরিয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলল,,
‘সে তো আমি জানতাম আমার কিছু হয়ে গেলে আমার ভাই পাগল হয়ে যেত না হলে মরে যেতো আর পাগলরা তো যা খুশি হয় তাই করে। আমাকে আমার ভাইকে চেনাতে এসো না বুঝলে।”
আরহাম হেঁসে বোনের কপালে চুমু দিল। তখন রোজা আর আফরিন আরুহিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।আরুহি ওদের সামলিয়ে আবরার এর সামনে গেল। আবরার সেই কখন থেকে আরুহির দিকে তাকিয়ে আছে আরুষি সেটা খেয়াল করেই ওর কাছে আসলো আর বলল,,
“এখনই আপনার পিছু ছাড়ছি না মিস্টার নিশান আবরার। আপনাকে এখনো অনেক জ্বালানো বাকি আছে। তবে ছেলেরা এই রকম ছিচ কাঁদুনে হলে হয় বলুন তো। দেখলাম তো কিভাবে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। তবে জানেন কি ছেলেদের কাদা বারন। ছেলেরা শক্ত মনের অধিকারী হয় এটা সবাই বলে।
আবরার হাসলো আর বলল,,
“প্রিয়জনের মৃত্যু দেখার থেকে বোধহয় পৃথিবীতে আর কোন বড় কষ্টের কিছু হয় না। আমি তো ভেবেছিলাম আমি তোমায় হাড়িয়ে ফেললাম আবার। ইচ্ছে তো করছে জরিয়ে ধরে বসে থাকি। কিন্তু এখানে ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। ”
আরুহি একটু সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,,
“আপনার কান্না ভেজা চোখ আর মুখে হাসি
এই দৃশ্যটা আমি খুব ভালোবাসি।”
আবরার হাসলো আরুহিও হাসলো। এগুলো দেখে সবাই বুঝতে পারলো আবরার আর আরুহির মধ্যে কিছু তো আছে। কোন না কোন সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে আরহাম আরুহি এর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,,
‘দেখি তোর হাত ইস কতোখানি পুরে গেছে আমি তো খেয়ালই করি নি।”
“আর বলো না গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নামতে নামতে কয়েকটা পা এগুতেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয় আর আমি সামলাতে না পেরে নিচে পরে যাই তখন গাড়ি ব্লাস্ট হওয়া ছোট এক টুকরো আগুনের ফুলকি আমার হাতে পরে। আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে সামনে দোকান থেকে পানি নিয়ে হাতে ঢালতে থাকি। তারপর এসেই দেখি তোমরা আমায় নিয়ে কতো কান্না কাটি করছো। দেখতে অবশ্য ভালোই লাগছিলো এরকম দৃশ্য তো আর সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। বুঝতে পারলাম তোমরা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসো। এরকম কিছু না হলে বুঝতেই পারতাম না। থ্যাক্স টু মিস্টার আব,,,,, সরি সরি নাম বলা যাবে না।”
তখন আবরার বলল,,
“তুমি জানতে কে করেছে এটা?”
আবরারের কথা পাত্তা না দিয়ে আরুহি বলল,,
“সেসব পরে হবে ভাইয়া এখানে তা হয়েছে সব যেন এখানেই শেষ হয়। একটা খবরও যেন বাইরে বের হতে না পারে তার ব্যবস্থা করো।”
“ওকে! বলে দিচ্ছি তার আগে চল ডক্টরের কাছে যেতে হবে। ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।”
“হুম চলো হাতটা খুব জ্বালা করছে।”
আরহাম কাউকে ফোন করলো কিছুক্ষণ এর মধ্যেই সবাই এসে সবকিছু ঠিক করলো। যারা ভিডিও করেছিল সবার ফোন থেকে ভিডিও ডিলেট করা হলো। ভার্সিটির প্রিন্সিপাল কে বলা হলো একটা খবর ও যেন বাইরে না যায়।
____________________
“কি হলো ব্যাপারটা আরুহির গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা হতে চললো কেউ কোন খবর পেল না কেন? কিন্তু আমি তো স্পষ্ট শুনলাম ওর গাড়ি ব্লাস্ট হলো। এমন কি যাদের খবর দেওয়ার জন্য বলেছিলাম তারাও তো বলেছে গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে তাহলে খবরটা বাইরে বের হলো না কেন?”
মিস্টার আব্দুল লতিফ চিন্তায় পরে গেল। তাহলে এর মধ্যে অন্য কিছু আছে নাকি। না এভাবে হবে না ওনাকেই আবার সব চেক করতে হবে।
______________
এদিকে আরুহির মা আরুহিকে ধরে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। আরহাম গালে হাত দিয়ে দেখছে আবরার, আফরিন আর রোজা চুপ করে সোফায় বসে আছে। আরুহির ও ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে কান্না দেখতে কিন্তু পারছে না। আরুহি মুখ তুলে মাকে ছাড়িয়ে বলল,,
“আহ মা অনেক তো হলো এবার থামো প্লিজ। আমার তো কিছু হয় নি। আলহামদুলিল্লাহ আমি ঠিক আছি।”
“যদি তুই ঠিক সময় গাড়ি থেকে না বের হতে পারতি তাহলে কি হতো?”
“বের তো হয়েছি তাহলে এত কাঁদছো কেন?”
“এখন বুঝবি না যখন তুই মা হবি তখন বুঝতে পারবি। সন্তানদের গায়ে একটু আঁচড় লাগলেও মায়েদের কেমন লাগে।”
আরুহি মায়ের হাত ধরে বলল,,
“সেটা আমি জানি মা কিন্তু তোমাকে কাঁদতে দেখে কি আমাদের ভালো লাগছে। মায়েরা যেমন সন্তানের আঘাত সহ্য করতে পারে না।তেমন তো সন্তানেরাও মায়ের চোখের পানি সহ্য করতে পারে না। এবার থামো প্লিজ এখন খেতে দাও আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে।”
মেয়ের কথা শুনে রেহানা খান চোখ মুছলেন।আর বললেন,,
“আগে বলবি না আমি এখনি সবার জন্য খাবার বাড়ছি।”
উনি চলে গেলেন তখন আবরার বলল,,
“আমি জানি আরুহি তুমি জানো কে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তুমি আমার জীবন সঙ্গী হতে চলেছো আমি জানতে চাই তোমার লাইফের সব কিছু। কে তোমাকে মারতে চায় আমি যদি ভুল না হই তাহলে এর আগে আরহাম ভাইয়া এর ওপর যে এ্যাটাক করেছিল সেই এই কাজ টা করেছে।”
“হুম সেই করেছিল কিন্তু এখন আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না। তবে কাল আমাদের সাথে আপনারা দুজন মানে আপনি আর আফরিন কুমিল্লা যাবেন। ”
“কেন?”
“আমাদের বাড়িতে যাবো ওখানে আমাদের দাদুভাই ও তার পরিবার থাকে। আপনাদের দেখিয়ে নিয়ে আসবো আর তাদের দাওয়াত করে আসবো। আমাদের বিয়েতে আসার জন্য।”
“ঠিক আছে! কিন্তু তোমাদের পরিবার আছে সেটা আমরা জানতাম ই না।”
“সেখানে গেলেই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”
“ওহ আচ্ছা!”
তখন রেহানা খান বলল,,
“ওখানে যাওয়া কি খুব প্রয়োজন আমরা তো আমাদের মতো ভালো আছি আর তারাও তাদের মতো ভালো আছে তাহলে।”
“তোমার গায়ে যে কলঙ্কের দাগ লেগেছিল সেটা মুছতেই যাবো। তাছাড়া তার অন্তিম এসে গেছে। আজ যেটা হয়েছে সেটা সেই করেছে। এখন একটা নরমাল জীবন কাটাতে হলে আগে তাকে সরাতে হবে। অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে আর না।”
তখন আফরিন বলল,,
“ভালো মায়ের ওপর কিসের কলঙ্ক? আমরা তো কিছুই জানি না।”
তখন আরহাম বলল,,
“আমি বলছি আসলে আমার মা আমার বাবার তুলনায় কালো ছিল। এজন্য আমাদের দাদার বাড়ির লোকজন মাকে খুব একটা পছন্দ করতো না। তবে আমার বাবা মাকে পছন্দ করতো। ছেলের জেদের কাছে হেরে আমার দাদুভাই মাকেই বউ করে ঘরে তুলে। কিন্তু আমার ফুপু এবং আমার দাদির আমার মাকে পছন্দ নয়। তাই মাঝে মাঝেই তারা আমার মাকে কথা শোনাতো। দাদি ও ফুফুর সাথে আরেকজন মাকে একেবারে পছন্দ করতেন না । তিনি খুব করে চাইতেন আমার বাবা আর মা যেন ঐ খান বাড়িতে না থাকে। একদিন মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক বান্ধবীর বাড়িতে যায় অবশ্য সেই যাওয়াটাকেই সে কাজে লাগায় । সেদিন আর মা বাড়িতে আসেন না বান্ধবীর বাড়িতে খোঁজ লাগানো হয় মা সেখানে যাই-ই নি। তখন থেকেই সবাই ধরে নেয় আমার বাবা মায়ের মাঝে ঝামেলা আছে সেই জন্যই মা বাবাকে ছেড়ে কারো হাত ধরে পালিয়ে এসেছে। সেই কলঙ্ক এর কথায় আরুহি বলেছে।”
সব শুনে রোজা,আবরার আর আফরিন চুপ হয়ে গেল ওরা ধরে নিল সেই বান্ধবী বাড়ি যাওয়ার পথেই রেহানা খানের এক্সিডেন্ট হয়েছিল। কিন্তু সত্যিই কি তাই। হুট করে আরহাম জিজ্ঞেস করল,,
“গাড়ি থেকে কি ফোনটা সেই করেছিল?’
“হুম! তার কথার ধরনেই বুঝতে পেরেছিলাম সে কিছু করতে চাইছে চোখ বুঝতেই টিক টিক আওয়াজ শুনতেই বুঝতে পারি কি হয়েছে তখনি আমি গাড়ি থেকে নামি ততক্ষনে উনি কথা বলতে থাকে আর কয়েকটা পা এগোতেই তখনি ব্লাস্ট হয়। এখন অনেক কথা হয়েছে মা খায়িয়ে দাও। আর হ্যা আজ ভাইয়াকে ও খায়িয়ে দেবে।”
“হুম!”
ওরা সবাই একসাথে খাবার খেল। আবরার আর আফরিন আর রোজা বাড়ি চলে গেল। তখন রেহানা খান বলল,,
“ওদের পুরো সত্যি টা জানালি না কেন?”
“তার ব্যাপারে কিছু জানাতে চাই নি তাই। ওরা টেনশন করতো তাই। সবকিছু তাড়াতাড়ি করছি তাই এখন ওদের এসবে জরাবো না।”
“তবে আমার গল্পটা যতটা সহজে বলে দিলি আসলে কি এতটা সহজ ছিল ছিল না।”
এ কথা শুনে আরুহি চুপ মেরে গেলো। আরহাম ছলছল চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো।
অতীত,,
দশ বছর আগে,,
সেদিন বাড়ি থেকে বের হলে তার পেছন পেছন আরেকটা গাড়ি বের হয় কিছুদূর যেতেই শুনশান রাস্তা থেকে তাকে কিডন্যাপ করা হয়। তাকে জঙ্গল এর মাঝে একটা বাড়িতে রাখা হয়। প্রায় দুদিন অন্ধকার রুমে রাখা হয় শুধু একটু আলোর জন্য ছোট জানালা খোলা রাখে । হুট করে কেউ তার রুমে প্রবেশ করলে উনি ভয়ে একটু দূরে যায় উনি বলল,,,
‘কে? আমাকে এখানে কে এনেছে আর কেনই বা আনা হয়েছে আমি আমার ছেলে মেয়ের কাছে যাবো আমার পরিবারের কাছে যাব।”
“পরিবারের কাছে যাতে না যেতে পারো তাই তো এখানে আনা!”
“কে?”
লোকটা সামনে এগিয়ে আসে লাইটের আলোতে রেহানা খান স্পষ্ট দেখতে পান তাকে আর চেহারা দেখেই উনি অবাক হয় আর বলে,,
“বড় ভাইয়া আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কিন্তু কেন?”
“আমাদের জীবন থেকে তোমাকে দূর করতে ?”
“মানে?”
“তোমাকে আমার কোনকালেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু মাহমুদ তোমার মধ্যে কি এমন দেখলো বুঝতে পারলাম না বিয়ে করলে তোমাকেই করবে বলে জেদ ধরে বসলো তাই তোমাকেই বাড়ির বউ করতে হলো।”
“যদি আমাকে শুধু বাড়ির বউ নাই করতে চাইতেন তাহলে আগেই এরকম কিছু একটা করতে পারতেন আরহাম আর আরুহি এত বড় হওয়ার পর এরকম কিছু করতেন না।”
“ইউ নো ইউ আর ভেরি ইন্টিলিজেন্ট ! হ্যা আমি শুধু তোমার বাড়ির বউ হওয়া নিয়ে এরকম করছি না আমি করছি মাহমুদ কে শেষ করার জন্য।”
“মাহমুদ তো আপনার ভাই তাহলে?”
“কিসের ভাই ও আমার ভাই নয়। এমনকি আহমদ ও আমার ভাই নয় শুধু মনে রেখো আমি মাহমুদ কে ঘৃনা করি । আমি মাহমুদ কে ঐ পরিবার থেকে আলাদা করে দিতে চাই। আগে তোমাকে তো সরাই তুমি জানো ও বাড়ির লোকজন এখন কি জানে তুমি অন্যকারো হাত ধরে পালিয়ে গেছো বান্ধবী বাড়ি যাওয়ার নাম করে। তোমার ছেলেমেয়েকে মানুষ তা ইচ্ছে তাই বলছে মাহমুদ সহ্য করতে না পেরে দুদিন ধরে বাড়িতেই আসে না।”
“আমাকে ছেড়ে দিন বড় ভাই আমাকে আমার ছেলেমেয়ে মাহমুদুর কাছে যেতে দিন নাহলে ওদের জীবন যে অন্ধকার হয়ে যাবে।”
“সেটাই তো চাই আমি।”
“বেশি কষ্ট করতে হবে না তোমায় এখানে যাস্ট এক মাস থাকবে তারপরেই আমি তোমায় ছেড়ে দিব কিন্তু কি নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়াবে তুমি এমনিতেই তো বাড়ির মান সম্মান সব ডুবিয়েছো। আনোয়ার খান তোমায় বাড়িতে তুলবে নাকি মাহমুদ খান! নাকি তাদের পালিয়ে যাওয়া মাকে আরহাম আর আরুহি মেনে নেবে। তোমার তো কোন কিছুই খোলা রাখি নি আমি।”
“না না এটা হতে পারে না মাহমুদ আরহাম আরুহি আমাকে বিশ্বাস করবে।”
“কেউ তোমাকে বিশ্বাস করবে না। সেই পথ আমি খোলা রাখি নি সবাইকে প্রমান ও করে দিয়েছি তুমি চলে গেছো। ওকে অনেক কথা হলো এবার আসি বাই।”
এ কথা বলেই উনি চলে গেলেন। রেহানা খান হাঁটু গেড়ে বসে কাদতে লাগলেন। তার দুই তিন দিন পর দরজা খোলা পেয়ে রেহানা খান পালিয়ে যান আর তার পেছনে আব্দুল লতিফ এর লোক ধাওয়া করে বেখেয়ালি ভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে আবরারের বাবার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়। তখন আব্দুল লতিফ এর লোক পালিয়ে যায় আর খবর দেয় তিনি এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে। সেটাই আব্দুল লতিফ খান বাড়িতে জানিয়ে দেন।
~চলবে,,