গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ১৪

0
466

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সকালের দিকে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ওষুধ খায়িয়ে আরুহির জ্বর অনেকটাই কমেছে। কিন্তু রাতভর জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল অনেককিছুই বলেছে তার কথা গুলোর মধ্য চারজন মানুষ কে সে দোষারোপ করেছে তার মা,আবরার কে, আর তার বাবাকে আরেকজন যার জন্য তাদের জীবন এত অগোছালো। আর একটা মানুষ কে খুব ভালো বেসেছে সে ছিল আরহাম। আরহাম বোনের এই অবস্থায় কেঁদেছে আবার ভালোবাসার কথা শুনে হেসেছে। রেহানা খান শুধু কেঁদেই গেছে আর সমস্ত অভিযোগ শুনে গেছে। ওনারা দুজনের কেউই রাতে চোখের পাতা এক করে নি। আরহাম নামাজ পরেছে বোনের জন্য দোয়া করেছে রেহানা খান ও তাই। অতঃপর ভোরের আলো ফুটতেই আরুহি টিপটিপ করে থাকি এ ডান দিকে দেখে তার ভাইয়া তার হাত ধরে হাতের ওপর ঘুমিয়ে আছে। বাম হাতে টান পরতেই ও সেদিকে তাকালো তার মা তার হাত ধরে ঘুমাচ্ছে। ওকি সত্যি দেখছে নাকি মিথ্যা।আরুহি হাত ছাড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করলে মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা ও আরহাম কে ডাকলো,,

“ভাইয়া ওঠো?”

বোনের আওয়াজ পেতেই আরহাম তাড়াতাড়ি করে চোখ খুলে বলে ,,

“কি হয়েছে বোনু খারাপ লাগছে?’

“না শুধু মাথাটা অনেক ভার হয়ে আছে ওয়াশরুমে যাবো।”

“আমি নিয়ে যাচ্ছি!”

মায়ের কথা শুনে দুজনেই ওদিকে তাকালো। ওদের তাকানো দেখে রেহানা খান বলল,,

“ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? আরু চল আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।”

আরুহির কাল রাতের কথা মনে পরলো। সে আসে নি তার জন্য। আরুহি বলল,,

“না আন্টি আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু আপনি এলেন কখন আমাদের বাড়ি। তাছাড়া আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন?

এ কথা শুনে রেহানা খান একটু দমে গেলেন আর বললেন,,

“সেসব পরে হবে আগে তোকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছি। আর আরহাম তুই এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে নে!”

“না আমি কোথাও যাবো না।”

“যাবি নাকি ছোটবেলার মতো বাঁদরামি করার জন্য মার খাবি।”

“এটা কিন্তু ঠিক না আন্টি আপনি একদিন এসেই আমার ওপর হুকুম জারী করছেন।”

“তো কি হয়েছে আমি হুকুম জারী করবো তাতে তোর কি! এখন তা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ! তারপর আমার সামনে আসবি। চেহারা হয়েছে দ্যাখ কি রকম বাঁদরের মতো লাগছে চুলের ঠিক নাই পাগলের মতো লাগছে শরীরে ঢোলা গেন্জি । তোর বাড়িতে তোর শুশুরবাড়ির লোকজন আছে ভুলে গেছিস নাকি। তাড়াতাড়ি যা আমি আরুকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আসছি।”

এ কথা শুনে আরহাম আর আরুহি দু’জনেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আরুহি আরহাম একসাথেই ছিল আরুহি ওর ভাইয়ার কানের কাছে এসে বলল,,

“ভাইয়া কেস টা কি বলোতো?”

“কি কেস আবার কাল তুই অজ্ঞান হওয়ার আগে ওনাকে কল দিয়েছিলে উনি ফোনেই বুঝতে পেরেছে তোর কিছু হয়েছে কাল মা হয়ে আমার শুশুরবাড়ির সব লোকদের নিয়ে এখানে এসেছে কাঁদতে কাঁদতে। আর এটাও বলেছে উনিই আমাদের মা।”

‘বারে এতকিছু হয়ে গেল আর আমি কিছুই টের পেলাম না।”

“আমাদের টেনশনে ফেলে এখন বলছে এত কিছু হয়েছে আর আমি টেরই পেলাম না ঢং।”

“ইস জ্বর টা আরেকটু কম হলে কি হতো। সব একবার লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পেতাম।”

“এই তোরা দুজনে কি ফুসুর ফুসুর করছিস।”

তখন আরহাম বলল,,

“কিছু না খালাম্মা আমরা দুই ভাইবোন মিলা দুইটা সুখ দুঃখের কথা কইবার লাগছিলাম।”

এ কথা শুনে রেহানা খান পুরো থম মেরে গেল। ছেলে বলে কি মায়েরে খালাম্মা। আর আরুহি নিজেকে আটকাতে পারলো না। হেসে উঠলো খিলখিল করে আর বলল,,

“ভাইয়া ইউ আর জিনিয়াস।”

“টেনে লাগাবো এক চর আরহাম তুই আর ভালো হবি না। সর তোরে দেখলেই আমার মারতে মন চাইতেছে যা রুম থেকে বের হ। আর আরুহি তুই কি দাঁত কেলাচ্ছিস উঠ এখন।”

রেহানা খান আরুহির হাত ধরলেন আরহাম আরুহি দু’জনেই খুশি তাদের মা তাদের ওপর অধিকার ফলাচ্ছে ওরাও ছোট বেলার মতোই মজা করছে। ওরা তো এরকমই একটা জীবন চেয়েছিল। আরুহি আস্তে আস্তে উঠে বলল,,

“ভাইয়া এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও নাহলে তোমার খালাম্মা রেগে যাবে। ফ্রেশ হয়ে আসলে আমরা দুই ভাইবোন আবার সুখ দুঃখের কথা বলবো।”

এ কথা শুনে রেহানা খান আরুহির কান ধরে বলল,,

“বেশি বাঁদরামি করবি তো মার খাবি। অসুস্থ দেখে কিছু বলছি না কিন্তু।”

“ওকে সরি ছেড়ে দিন আর কিছু বলবো না।”

আরুহিকে নিয়ে রেহানা খান এগিয়ে গেল। আরহাম হাসতে হাসতে বের হলো রুম থেকে। আজ অনেকদিন পর দুই ভাইবোন মন খুলে হাসলো। আরহাম ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা টি শার্ট পরে এলো এখন সব গোছানো। ততক্ষনে আরুহিও ফ্রেশ হয়ে এসেছে । আরহাম এলে রেহানা খান বলল,,

“তোকে না বললাম একটু ঘুমিয়ে নিতে!”

“লাগবে না আমি এখন আরুহির কাছে আছি আপনি বরং একটু রেস্ট নিন। তাছাড়া রাত জাগার অভ্যাস আমার আছে।”

“আমি ঠিক আছি! আমার রেস্টের দরকার নেই। আচ্ছা তাহলে তোরা থাক আমি সকালের নাস্তা বানাই।”

“নানা আপনার বানাতে হবে না খালারা বানিয়ে নেবে।”

“আমার ছেলে মেয়ের জন্য আমি রান্না করবো তুই বলার কে?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। ”

রেহানা খান চলে গেলেন। তখন আরুহি বলল,,

“এখন ঘটনা খুলে বলো?”

“তার আগে তুই বল!”

এ কথা শুনে আরুহি কিছুক্ষণ চুপ করে সব এক এক করে বলল আবরার ওকে ফোন দিয়েছিল ওর ভিশন কষ্ট হচ্ছিল। বৃষ্টি তে ভিজে হুট করে মায়ের কথা মনে পরে ফোন করে উনার সাথে তা তা কথা হয়েছে সব বলল। আরহাম ও সব খুলে বললো তার পর কি হয়েছে। সব শুনে আরুহি আর আরহামের দুজনের দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আরহাম বলল,,

“আচ্ছা মা কি কোন কারনে রেগে আছে। কথা বলার ধরন দেখেছিস সেই ছোট বেলায় মা যখন আমাদের সাথে রেগে থাকতো তখন ওভাবে কথা বলতো।”

“আসলে মা নিজের ওপর রেগে আছে। কাল আমি ওভাবে বলেছি কিন্তু মা সত্যিটা বলে নি। আমার অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করছে তাই নিজের ওপর রেগে আছে। তোমার ওপরও রেগে আছে কারন তিনি আসার পর তোমায় সব জানালেও তুমি কিছুই বলো নি তার সাথে কথাও বলো নি তাই।”

“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে এখনি বলছি!”

“মা!!!!!!!!!”

“মা!!!!!!”

“ও মা!!!!”

আরহাম এত জোরে মা মা করে ডাকলো যে পুরো বাড়িতেই ওর আওয়াজ প্রতিধ্বনি বারবার। আবরার রা উঠে পরেছে ওরাও ওর ডাকে ছুটে এলো আরুহির রুমে । ভাবলো হয়তো ভালো মায়ের কিছু হয়েছে। সবার শেষে রেহানা খান রুমে ঢুকে বলল,,

“কিরে এরকম ষাঁড়ের মতো চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?”

“না মানে সম্মান আর কিছুই রাখলে না গো খালাম্মা!”

আরহামের কথায় আরুহি ফিক করে হেসে উঠলো। আবরার এর পরিবার তখন দম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে এটা ওদের আদরের রুনা তো। আর আফরিন তো আরহামের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। তখন রেহানা খান বলল,,,

“এই আরু তোর আজ কি হয়েছে শুধু দাঁত কেলাচ্ছিস কেন? জ্বর মাথায় উঠে পাগল হয়ে গেছিস নাকি।”

“আরে কিছু না খালাম্মা, না আম্মা, না মা, সরি আন্টি!”

এ কথা শুনে আরহাম জোরে জোরে হেঁসে উঠল। আর আরুহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ওরা দুইভাইবোন হাই ফাইভ দিল। রেহানা খান ওদের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ওরা চাইছে টা কি?” উনি বললেন,,

“আসলে তোরা দুই বদের হাড্ডি আসলে করতে চাইছিস টা কি বল আর আরহাম তুই ওভাবে ডাকছিলি কেন?”

“আসলে আজ খিচুড়ি আর হাঁসের মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি বললেন আপনি রান্না করবেন তাই আপনাকে ডাকলাম আমার এই অসুস্থ বোনকে ছেড়ে তো আর যাওয়া যায় না। তাই ডাকছিলাম ভাবি নি আবরার রা চলে আসবে। সরি আপনাদের সকল কে!”

“ঢং দেখলে বাঁচি না।”

‘আর হ্যা খিচুড়ি টা একটু নরম কইরেন আমার বোন অসুস্থ তো নরম খাবার খাওয়ালে বেটার হবে। ঝাল মশলা কম করে দিয়েন।”

‘এখন তোর থেকে রান্না শিখতে হবে নাকি আমি কি জানিনা কারন জন্য কি করতে হয়।”

“না তা না শুধু বলে দিলাম আর কি! এখন আপনি যান রান্না করেন।”

ভালো মা তাড়াতাড়ি করে নিচে গেলেন উনি হবেই রান্নার সব জোগাড় করছিলেন। উনি যেতেই আফরিন বলল,,

“আরুহি এটা সত্যি তোর ভাই আর আমার ভালো মা তো! কথার যে ভাব ও মাই আল্লাহ! মা ছেলে হলে কি হবে। মনে হয় সাপে নেউলে সম্পর্ক।”

আরুহি বলল,,

“হুম এটা আমার ভাই আর তোর ভালো মা। ভাইয়া তোর ভালো মাকে জ্বালাতে খুব ভালোবাসে। মাঝে মাঝে মধ্যে আমিও যুক্ত হই।”

তখন আবরার বলল,,

“এখন কেমন লাগছে মিস?”

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো মিস্টার নিশান আবরার!”

“আপনি ঠিক আছেন তো?”

তখন আরুহির বলতে ইচ্ছে করলো না আমি ঠিক নেই। আমার ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। কিন্তু মুখে বলল,

“ইয়া আই এম ওকে!

আফরিন এসে আরুহির হাত ধরে বলল,,

“কাল তো পুরো ভয় পেয়েই গেছিলাম। ভালো মা খুব কাঁদছিল সে শুধু বলছিল তোমরা আমার মেয়ের কাছে শুধু যেতে দাও আমার আর কিছু চাই না। আমার মেয়ের কিছু হয়েছে কাল সারা রাস্তা ভালো মা কেঁদেছে।”

“সঠিক সময় সবকিছু করা উচিৎ নাহলে সেটা অন্যদিকে চলে যায়। সেদিন তোর ভালো মাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি আমার মা কিনা কিন্তু তোর ভালো মা সেটা নাকচ করলো। কাল যদি আমি অজ্ঞান হয়ে না যেতাম তাহলে তোর ভালো মা কালকের বলতো না উনি আমার মা।”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

‘এ সম্পর্কে আমরাও কিছু বলতে পারবো না। কারন তোমার মা এর আগে আমাদের এ সম্পর্কে কিছুই বলে নি কালকেই তোমার অবস্থা দেখে আমাদের বলেছে তুমি ওর মেয়ে।”

তখন আবরার বলল,,

“সেটা পরে শোনা যাবে ভালো মায়ের থেকে। কেন ভালো মা ওরকম করেছে কেউ কিছু করলে অবশ্যই তার পেছনে কোন না কোন কারন থাকে।”

‘হুম তা ঠিক!”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

” আরহাম এখন আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিত। আজ ইম্পোর্টেন্ট একটা মিটিং আছে সবকিছু বাড়িতেই রেখে এসেছি।”

“ব্রেকফাস্ট না করে কেউ কোথাও যাবে না। ইমপোর্টেন্ট মিটিং আছে বুঝতে পারছি খেয়ে তারপর যাবেন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

ওনারা রুম থেকে চলে গেলেন এখন শুধু আবরার, আফরিন, আরহাম আর আরুহি। কেউ কোন কথা বলছে না তাই আফরিন বলল,,

“মিস্টার আরহাম আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল এখন কি বলা যাবে।”

“হুম বলুন না!”

“চলুন বাগানে যাই ওখানে একটু হাঁটাহাঁটি করতে করতে বলি। ততক্ষন ভাইয়া থাকুক আরুহির কাছে।”

আরহাম বুঝতে পারল আফরিন কেন এরকম কথা বলল। আরহাম আর আফরিন চলে গেল। আবরার আরুহির বিছানা থেকে দুরে সোফায় বসেছে। আরুহি আবরারের দিকে তাকাচ্ছে না। কেউ কোন কথা বলছে না। আবরার বলল,,

“তাহলে আপনার এই অবস্থার জন্য কি আমি নিজেকেই দায়ী করবো।”

তখন আরুহি অন্যদিকে তাকিয়েই বলল,,

“আমার এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী নন মিস্টার নিশান আবরার। আমার এই অবস্থার জন্য আমার মস্তিষ্ক দায়ী। মস্তিষ্ক বারবার আমায় পুরোনো কথা মনে করাচ্ছিল।”

“পুরোনো কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করা যায় না।”

“চাইলেই কি সব ভোলা যায়! না চাইলে নতুন করে শুরু করে যায়।”

‘একটু সময় নিন আপনি পারবেন সুভাসনী শুধু একটু চেষ্টা প্লিজ।”

আরুহি এবার আবরারের দিকে তাকালো আবরারের কন্ঠ স্পষ্ট আকুলতা ও শুধু বলল,,

‘চেষ্টা করবো!আপনি এখন যান আমি একটু শুয়ে থাকবো।”

“চেষ্টা করবো” এই কথায় কি ছিল জানা নেই কিন্তু আবরারের ঠোঁটে হাসি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। আবরার বিনা বাক্যে রুম থেকে চলে গেল।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। ছোট হওয়ায় জন্য দুঃখিত। আজকে জানি না কি লিখেছি। খুবই ব্যস্ত ছিলাম রিচেক হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here