#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_১১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
ইরফান, ইমদাদ আর আইরিন ইরজাকে নিয়ে টেনশন করছে। বাইরে এতো বৃষ্টি হচ্ছে অথচ ইরজার খোঁজ নেই। আয়নাকে ফোন দিয়েছিল ও নাকি আগেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে। এছাড়াও বৃষ্টিতে ভিজলে ইরজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইয়াদ কিছুক্ষণ পরপর এসে জিজ্ঞেস করছে আম্মু কখন আসবে। ওরা কিছুই বলতে পারছে না। আপাতত তমা চৌধুরী আর তুহিন বাদে সকলে মির্জা বাড়িতে রয়েছে। ওদের কে দেখে ইশতিয়াক চৌধুরী এগিয়ে এসে বললেন,,,
“কি হয়েছে তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে টেনশনে আছো?”
তখন ইরফান বলল,,
“আসলে বড়বাবা ইরজা বেরিয়েছে হাসপাতাল থেকে আরো আগে বাইরেও বৃষ্টি হচ্ছে ও কোথায় আছে বুঝতে পারছি না। বৃষ্টি তে ভিজছে নাকি জানিনা। বৃষ্টি তে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী ও চিন্তায় পড়ে গেলেন। তখনি ইয়াদ কোলে নিয়ে আয়েশা চৌধুরী ওদের কাছে এসে বলল,,
“আইরিন ইয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছে ওর রুমটা দেখিয়ে দাও শুয়িয়ে দিয়ে আসি!”
“আন্টি আপনার কষ্ট করতে হবে না আমি দিচ্ছি আমাকে দিন।”
“না না সমস্যা নেই তুমি চলো রুমটা দেখিয়ে দাও!”
আইরিন কিছু না বলে ইরজার রুম দেখিয়ে দিল। আয়েশা চৌধুরী ইরজার রুমে ঢুকে অবাক। একপাশে অনেক বই। হুট করে নজর পরলো দেয়ালে। সেখানে বড় বড় করে লেখা।
ইরজা+ফুয়াদ= ইয়াদ আইজান চৌধুরী!
এটা দেখে আয়েশা চৌধুরীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। কেন সেদিন তিনি ইরজাকে ভুল বুঝেছিলেন। কেন ওভাবে অসুস্থ অবস্থায় ওকে বের করে দিয়েছিলেন। এই কিছুর জন্য ইশতিয়াক চৌধুরী তার সাথে এত বছর ধরে কথা বলেন না। ফায়জাও দূরে দূরে থাকে।
_____________________
“আজ অনেকদিন পর চৌধুরী পরিবারের সাথে দেখা হয়েছে তোমার তাইনা।”
আইজানের প্রশ্নে ইরজা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“হুম।”
“কষ্ট হচ্ছিল পুরোনো ক্ষত গুলো তাজা হয়ে উঠছিল তাই না!”
“হয়তোবা তবে আমি স্ট্রং বুঝলেন তো। এসব কথা বাদ দিন আমি তাদের সম্পর্কে কিছু শুনতে বা বলতে চাই না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন বলো তিশা আর ওর হাজবেন্ড কেমন আছে আর ওদের এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?”
“আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে ভালো আছে। তিশা আপুরা রাতে লং ড্রাইভে এসেছিল তখন হুট একটা গাড়ি আসে ওদের সামনে তখন হুট করে আসাতে গাড়ির কন্ট্রোল করতে পারে নি। স্টেয়ারিং ঘুড়াতে ঘুড়াতে একটা বড় গাছের সাথে খুব জোরে বাড়ি খায়। তার থেকেই এই অবস্থা।”
“ওহ আচ্ছা।”
“এখন এসব টপিক বাদ দিন। যখন আমি আর আপনি থাকবো তখন শুধু আমরাই এখানে অন্য কেউ থাকবে না।”
“আমাদের ছেলেও না!”
ইরজা কিছু বললো না। তখন আইজান বলল,,
“তুমি না বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়। আর বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না বাড়ি যাও।”
“বাড়ি গেলেই যে আপনাকে হাড়িয়ে ফেলবো। আপনি তো আর আমার সাথে যাবেন না। ঠিক এখান থেকে চলে যাবেন। কিন্তু আমার যে আপনার সঙ্গ প্রয়োজন। বৃষ্টিতে ভিজে যদি আরেকটু প্রেমিক পুরুষের সঙ্গ পাই তাহলে ক্ষতি কি!”
আইজান কিছু বললো না মুচকি হাসলো। যেন কেউ তাকে হাসির জন্য কাজে রেখেছে।
“শুভ্রপরী তুমি ভিশন চালাক হয়ে গেছো!”
ইরজা আইজানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল ,,
“আচ্ছা আপনি আমায় শুভ্রপরী ডাকেন কেন? অনেক বার একথা জিজ্ঞেস করলেও আপনি কিন্তু একবারো উত্তর দেন নি।”
ইরজার এমন কথায় আইজান চমৎকার হেঁসে বলল,,
“তোমায় যেদিন প্রথম দেখি তখন তুমি যে শুভ্ররঙের একটা গ্ৰাউন এ ছিলে মাথায় ছিল শুভ্ররঙের হিজাব।শুভ্ররঙের গ্ৰাউনটা তোমার গায়ে অনেক শোভা পাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কোন পরী হেটে আসছে। একদম পরীদের মতো লাগছিল তোমাকে সেদিনই মনে মনে তোমার নাম বানিয়ে নিয়েছিলাম শুভ্রপরী।”
“হুম শুভ্ররঙে ছিলাম আমি, ছোট ভাইয়া আর বাবা একটা অনুষ্ঠান এ গিয়েছিলাম। মাঝপথে গিয়ে জানতে পারি বড় ভাইয়া আর ওনার এক বন্ধু আসছে আমাদের বাড়িতে এসেছে । তাই বাবা অনুষ্ঠানে না গিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরেই দেখি আপনি আর বড় ভাইয়া দরজার সামনে এমনভাবে বসে ছিলেন মনে হচ্ছিল দুটো এতিম বাচ্চা বসে আছে। সেদিন আপনাদের মুখের অবস্থা দেখে হেসে উঠেছিলাম।”
কথাটা বলেই ইরজা হেসে উঠলো। তা দেখে আইজান ও হেসে বলল,,
“সেদিন ঐ মায়াবী হাসিতেই তো ফুয়াদ আইজান চৌধুরী বাধা পরেছিল। ছোট্ট কিশোরী বাচ্চার ঝলমলে হাঁসিতে।
আইজানের কথা শুনে ইরজা লজ্জা পেল। তখন আইজান আবারো বলল,,
“তোমার প্রথম দেখাটা তখন হয়েছিল তখন তুমি ক্লাস এইটে পড়তে। তবে যাই বলো না কেন আমাদের দ্বিতীয় দেখাটা হয়েছিল ঐতিহাসিক যদিও তোমার চেহারা দেখেছিলাম না তখন শুধু চোখদুটো দেখেছিলাম। আনিকারা তোমায় চিঠি দিতে বলেছিল আমাকে আর তুমিও দিয়েছিলে আমাকে চিঠি পড়ে তোমাকে কলেজের ছাদ থেকে লাফ দিতে বলেছিলাম।আর তুমি কি বলেছিলে ভেবেই আমি অবাক হয়ে যাই। তখন তুমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তে। এইজন্যই বোধহয় বুঝতে পারি নি ওটা তুমি হতে পারো।”
বলেই আইজান হাসলো,,
ফ্ল্যাশব্যাক,,
“আত্মহত্যা করা মহাপাপ তার থেকে আপনি বরং আপনাদের ভার্সিটির ছাদ থেকে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিন তাহলে আর সেটা আত্মহত্যা বলে গন্য হবে না। আমিও একটু শহিদি মৃত্যবরন করতে পারবো।”
ইরজার এমন কথায় ভার্সিটির ওর আশেপাশে থাকা সকল স্টুডেন্ট অবাক হলো। সাথে সবথেকে অবাক হলো যে ওকে ছাদ থেকে লাফ দিতে বলেছে সে হলো আইজান । ও ভাবছে এই মেয়ে একটুও ভয় পাচ্ছে না উল্টো ওকে বলছে ধাক্কা দিতে তাহলে নাকি আত্মহত্যা বলে গন্য হবে না। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“এই তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। তোমার কি একটুও ভয় করছে না।
“আরে ভয় করবো কেন? আল্লাহ তায়ালা জন্ম মৃত্যু আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন আমার যদি এই ভাবে মৃত্যু হয় তো হবে। তাতে আর কি করা যাবে বলুন তো।”
এ কথা শুনে আইজান আরো অবাক হলো আসলে কি হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না। তবে কি এই চিঠিটা ও লেখেনি। ও বলল,,
“তাহলে চিঠিতে যে লিখেছো আমার জন্য তুমি সব করতে পারবে এমন কি মরতেও পারো আমার কথায়।
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এই চিঠিটা লিখিনি। আমি ভার্সিটি ঢুকতেই কিছু মেয়েরা আমার পথ আটকায় আর একটা চিঠি দিয়ে বলে আপনাকে দিতে। আমি আপনার সামনে দাঁড়ালাম আপনি হাত বাড়ালেন আমিও আপনার হাতে দিয়ে দিলাম। আমি কিছু বলবো তার আগেই চিঠি খুলে পরতে লাগলেন আমি ডিস্টার্ব করলাম না। চিঠিটা পরেই আপনি আমাকে বললেন আমাকে ছাদ থেকে লাফ দিতে। আমাকে বলার কোন সুযোগ-ই দিলেন না এখানে আমার কি দোষ বলুন তো।’
আইজান অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি যে সত্যি বলছো সেটা বিশ্বাস করবো কিভাবে। তুমি তো এখন আমার থেকে বাঁচতে মিথ্যেও বলতে পারো।
তখন ইরজা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“এই ইরজা আজরিন কখনো মিথ্যে কথা বলে না। তার থেকে বড় কথা আমি এ ভার্সিটি তে পড়ি না। আমি আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।।
ইরজা এমন কথায় আইজান একটু ভরকালো। কারন নামটা চেনা চেনা লাগছে মুহুর্তেই মনে পরলো তার শুভ্রপরীর কথা। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“কোন মেয়েরা তোমার পথ আটকিয়ে ছিল দেখাতে পারবে?
“হ্যা পারবো তো ঐ যে গেটের বা দিকে চারজন মেয়ে আছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে সেই মেয়ে গুলোই বলেছে।
আইজান ঐ দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল আসল কাহিনী টা। ওরা আইজানের সাথে পড়ে নানাভাবে আইজান আর ইরফান কে জালানো।। ওরা নতুন মেয়েদের দেখলেই এরকম উদ্ভট উদ্ভট জিনিস করে। একটু পরেই ওকে এসে কথা শোনাবে ওর মাঝে মাঝে মনে হয় এদের যদি কিছু করতে পারতো। ও এমনিতেও খুব রাগী একদিন রেগে বলেওছিল অনেক কিছু কিন্তু ওরা কানে নেয় নি।ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি দাঁড়াও আমি দেখা করাবো তোমার ভাইয়ার সাথে!
“আমাকে ধাক্কা দিবেন না?
“তার কোন প্রয়োজন দেখছি না কারণ চিঠিটা তুমি লেখনি।
“আচ্ছা এই চিঠিতে কি আছে বলুন তো আমাকেও দিন আমিও একটু পরি।
“আচ্ছা তোমাকে দেখতে তো অনেক ছোট লাগছে তুমি কোন ইয়ারে পড়?
“ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।
আইজান অবাক হয়ে বলল,,
“কি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে!
ও মনে মনে ভাবলো তার শুভ্রপরী এখন আর ছোট নেই অনেকটাই বড় হয়ে গেছে তখনি ঐ মেয়েগুলো ওদের কাছে এসে বলল,,
“আরে বাহ আইজান তুই তো দেখছি খুব এগিয়ে মেয়েটা একটু আগে তোকে লাভ লেটার দিল আর এখনি তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিস।
“তুমি ভালো করেই জানো আনিকা আমার এসবে কোন ইন্টারেস্ট নেই। আর এটাও জানো তুমি যে এই চিঠিটা ও না তোমরা দিয়েছো। কিন্তু এবার একটু ভুল জায়গায় লেগে গেছে বুঝলে তো।
“মানে?
তখনি ইরফান এলো। ইরজা ভাইয়া বলে ইরফানের কাছে গেল। মেয়েরা তা দেখেই ওখান থেকে চলে গেল। কারন সব জানার পর ইরফান কি করবে ওদের জানা নেই। ইরজা ইরফানের সাথে কথা বলল। তখন ইরফান বলল,,
“আয় তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই ও হচ্ছে আইজান যে আমার সাথে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল।”
“ওহ আচ্ছা!”
__________________
বর্তমানে,,
ইরজা পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিল। পুরোনো স্মৃতি মনে করেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে। এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ওর খুব ঠান্ডা লাগছে শরীরটা ভিজে সাদা হয়ে গেছে। এখন অবশ্য বৃষ্টি টা নেই কিছুক্ষণ আগে বন্ধ হয়ে গেছে। ওর চোখ দু’টো ঝাঁপসা হয়ে আসছে । ও দেখতে পেল আইজান চলে যাচ্ছে। ও আস্তে আস্তে হাত বাড়িয়ে বলল,
“আইজান প্লিজ যাবেন না এখন! আইজান।’
আইজান চলে গেল আর ওখানে ও ঝাপসা চোখে কাউকে দৌড়ে আসতে দেখলো। ও আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ঢলে পড়ল ধরনীর বুকে। কিন্তু পরার আগেই ইমদাদ ওকে ধরে ফেলল। বৃষ্টি কমার পরেই ইমদাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বোনকে খুঁজতে।ইমদাদ ইরজাকে ডাকতে লাগলো “ফুল বোনু কি হয়েছে তোর” তখন ইরজা আস্তে করে বলল,,
“ছোট ভাইয়া উনি আজও চলে গেছেন ভাইয়া উনি আমার ডাক শুনেন নি।”
বলতে বলতে ইরজা অজ্ঞান হয়ে গেল।ইরজা কি বলল ইমদাদ বুঝতে পারল না। ইমদাদ তাড়াতাড়ি করে ইরজা কে বাড়ি নিয়ে এলো। বোনের অবস্থা দেখে ইমদাদের চোখটা ভিজে উঠলো।ইরজার সাথে ইমদাদ ও ভিজে গেছে। এদিকে বাড়িতে সবাই চিন্তা করছিল। হুট করে কলিংবেল বাজাতেই ইরফান তাড়াতাড়ি করে দরজা খুললো আর অচেতন অবস্থায় ইরজাকে দেখে বলল,,
“ইমদাদ কি হয়েছে ওর ?”
“ভাইয়া আগে ওকে চেন্জ করাতে হবে অনেকক্ষন বৃষ্টি তে ভেজার জন্য অ্জ্ঞান হয়ে গেছে। জ্বর আসছে বোধহয়।
ইশতিয়াক চৌধুরীরা ওখানেই ছিল। ফায়জা দৌড়ে এলো ইরজার কাছে ইমদাদ গিয়ে ইরজাকে রুমে দিয়ে এলো। ফায়জা আর আইরিন ওকে চেন্জ করিয়ে দিল। আয়েশা চৌধুরী কিছু করতে চাইলেও এগোলো না। কারন এগোনোর সাহস নেই। ইরফান আর ইমদাদ বোনের জন্য অস্থির হয়ে উঠলো। দিনদিন ওদের বোন যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর কারো চোখের পানি ইরজার মুখের ওপর পরতেই চোখ খুললো ইরজা ইয়াদ ওর মাথার কাছে বসে কাঁদছে।ইয়াদ কে দেখেই ও তাড়াতাড়ি করে উঠলো ও তো মাঠে ছিল এখানে এলো কি করে সব ভাবনা সাইডে রেখে নিজের সন্তান ইয়াদ কে জরিয়ে ধরে বলল,,
“কি হয়েছে আমার বাবাটার কাঁদছো কেন? ”
ইয়াদ কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
“জানো তোমাকে কতো ডাকছিলাম তুমি উঠছিলেই না। বিকেলে আমি ঐ দাদুটার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম তুমি আমার পাশে শুয়ে আছো তোমাকে ডাকলাম তুমি তো উঠলেই না তাই আমি ভিশন ভয় পেয়ে গেছিলাম!”
ইরজা ইয়াদ কে কিছু বললো না জরিয়ে ধরে বসে রইল। ইরজার জ্বর এসেছে ও বুঝতে পারছে কিন্তু সব কিছুর আগে এই সন্তান। ইরজা দেখতে গেল ইয়াদ ঘেমে যাচ্ছে তাই ও বলল,,
“ওকে আমার রাজকুমার এখন তুমি তোমার মামনির কাছে যাও তোমার আম্মু একদম ঠিক আছে।”
ইয়াদ কিছু বললো না। ইরজার কোলে থেকে নেমে চলে গেল। ইয়াদ বুঝতে পারল তার মায়ের কষ্ট হচ্ছে। ও গিয়ে নিচে খবর দিল ওর মা উঠে পড়েছে। ইরফান আর ইমদাদ তাড়াতাড়ি করে বোনের রুমে চলো। তা দেখে ইরজা মুচকি হাসলো। ইরফান বলল,
“বোনু ঠিক আছিস?”
“একদম ঠিক আছি শুধু একটু জ্বর এসেছে । ভাবি কে খাবার আনতে বলো খেয়ে ওষুধ খাবো। আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে। নাহলে আমার প্রান কষ্ট পাবে।”
তখন ইমদাদ একটু রাগ দেখিয়ে বলল,,
“বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে যাস জানিস যখন তখন বৃষ্টি তে ভিজতে গেলি কেন?”
“বৃষ্টিবিলাশ করতে ইচ্ছে হলো তাই।”
“তোকে সবসময় মারের ওপর রাখা উচিত তাহলে যদি একটু ঠিক হোস।”
“আমি বেঠিক ছিলাম কবে আমি সবসময় ঠিকই ছিলাম শুধু মানুষ আমায় বুঝলো না।”
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ইরফান গিয়ে বোনের কপালে হাত রেখে চেক করলো। তখনি আইরিন ঢুকলো খাবার নিয়ে। ইরফান খাবারটা নিয়ে বোনকে খাওয়াতে লাগলো। খাওয়া শেষ হলে ওরা চলে গেল। ইরজা একটু একা থাকতে চাইছিল।
দুদিন পর,,
আজ ইশতিয়াক চৌধুরীরা চলে যাবেন। অবশ্য পরের দিনই যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইরফান যেতে দেয় নি। আজ তিশাদের ঢাকায় শিপ্ট করা হবে। এ দুদিন ইরজা ওবাড়ির কারো সাথেই তেমন কথা বলে নি। এমনিতেও ও বাড়ি বেশি থাকে না। সকালে ইরজা রুমে কিছু করছিল তখন ইশতিয়াক চৌধুরী আসলেন, আর বললেন,,
“আসবো ইরজা?’
“আরে বাবা আসো আসো!”
ইশতিয়াক চৌধুরী গিয়ে চেয়ারে বসলেন আর বললেন,,
“কেমন আছো এখন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?”
“হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এ দুদিন তো কথাই হলো না। ইয়াদ দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে।”
“হুম। তা সবাইকে দেখলাম মিস্টার ইসহাক চৌধুরী কে তো দেখতে পেলাম না। নাকি ওনার মেয়ের ওপর ওনার কোন টান নেই।”
ইশতিয়াক চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,
“ইসহাককে জেলে দিয়েছি আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।”
এ কথা শুনে ইরজা অবাক চোখে ইশতিয়াক চৌধুরীর দিকে তাকালো। আর বলল,,
“তুমি ওনাকে জেলে দিয়েছো কিন্তু কেন?”
“আমার ছেলের খুনিকে কি করে শাস্তি না দিতাম। আর কতো সহ্য করবো।”
“ছেলের খুনি তুমি কিভাবে,না মানে?”
“তোমার বাবা আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল তোমার মনে আছে। সেখানে কি লেখা ছিল তুমি জানতে চেয়েছিলে তাই না। তোমার বাবা আগে থেকেই সব জানতো ইসহাক এর ব্যাপারে এম পি শরীফুল আলম এর সাথে সেও সবকাজে জড়িত ছিল। এমন কি তোমার বাবার মৃত্যুর পেছনেও সে দায়ী। তোমার বাবার কাছে ইসহাক আর শরীফুল আলম এর অবৈধ কাজের একটা ভিডিও ক্লিপ ছিল। সেই ক্লিপ টা তোমরা অনেক খুঁজেছো। সেই ক্লিপ টা তোমার বাবা আমায় পাঠিয়েছিল। কারন তোমার বাবা জানতো আমি আমার ভাইকে অনেক ভালোবাসি। তাই তোমার বাবা জানতে চেয়েছিল ইসহাক এর অবৈধ কাজের জন্য আমার কি মতামত। তোমার বাবা আর আমার মাঝের দূরত্বের কারন ছিল ইসহাক। তাই ও আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমি ইসহাক কে শাস্তি দিব কি না।
তাছাড়া ও আমার ভাই হলে কি হবে ওর সবসময় ইচ্ছে ছিল আমার সব সম্পত্তি ভোগ করতে। যেদিন শরীফুল আলম ধরা পরলো। সেদিন ইসহাক বুঝতে পেরেছিল ওকেও হয়তো বা আইজান ধরে ফেলবে। তাই তো সেদিন নিজেকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের ওপর অ্যাটাক করেছিল। আর সেখানেই তো,,”
ইশতিয়াক চৌধুরী এটুকু বলেই থেমে গেলেন। ইরজার চোখে পানি চিকচিক করছে। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“আয়েশা চৌধুরীর সাথে তুমি কথা বলো না তাই না?”
“হুম কথা বলি না। এটা ওর ভুলের শাস্তি। ও বিনা দোষে ইসহাকের কথায় তোমাকে শাস্তি দিয়েছে। ঐ রকম অসুস্থ শরীর নিয়ে তোমাকে বের করে দিয়েছে।চিঠিতে তোমার বাবা এটাও লিখেছিল তুমি আমার ছেলের বউ হলে আমি যেন তোমাকে দেখে রাখি। কিন্তু আয়েশা আমাকে আমার কথা রাখতে দেয় নি।”
ইরজা কিছু বললো না। ইশতিয়াক চৌধুরী উঠতে উঠতে বললেন,,
“আজ চলে যাচ্ছি তাই মনে হলো তোমাকে এ কথাগুলো বলা দরকার তাই বলে দিলাম। অবশ্য ইসহাকের বিষয়টা যদি আগেই দেখতাম তাহলে এই দিনটা দেখতে হতো না। এখানে আমারও ভুল আছে। ইসহাক যে তোমাদের ওপর অ্যাটাক করেছিল আমি জানতে পারি তার দু বছর পর। ও কাউকে বলছিল এই কথা গুলো তখনি বুঝতে পারি ও কি করেছে। তাই পুলিশের কাছে সকল তথ্য প্রমান দিয়ে ওকে পুলিশে ধরিয়ে দিই।
ইশতিয়াক চৌধুরী উঠে চলে গেলেন এই সবকিছু বাইরে থেকে আয়েশা চৌধুরী শুনলেন। ইশতিয়াক চৌধুরী চলে যাওয়ার পর ইরজা ফোন বের করে আইজানের একটা ছবি বের করে বেলকনিতে চলে গেল। ইরজার ভিশন কান্না পাচ্ছে সেদিনের কথাগুলো মনে পরছে। ও ভাবতে লাগলো সেদিন কি হয়েছিল,,
পাঁচ বছর আগে,,
আইজান আর ইরজা হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসছে। হুট করে ইরজা বলল,,
“চলুন এখন বাড়ি ফিরে যাই। অনেক রাত হয়েছে।”
“হুম ঠিক বলেছো ঐ দিকে মা টেনশন করবে আবার।”
আইজান আর ইরজা গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো। হুট করে আইজান বলল,,
“শুভ্রপরী একবার ভালোবাসি বলবে?”
“ভালোবাসি!”
“কাকে ভালোবাসি এটা বলবে না।”
“আরে বাবা আপনিই তো বললেন ভালোবাসি বলতে তাই ভালোবাসি বললাম।”
“আমাকে ভালোবাসো না।”
“বাসি তো!”
“আমায় ভালোবাসো কেন?”
“হযরত আলী (রা) বলেছিলেন ,,,ভালোবাসা সবাইকে নিবেদন করো; তবে তাকে সর্বাধিক ভালোবাসো, যার অন্তরে তোমার জন্য তোমার চেয়েও অধিক ভালোবাসা বিদ্যমান” আর আমি জানি আপনার অন্তরে আমার জন্য কতো ভালোবাসা বিদ্যমান।”
“তাই বুঝি!”
“হুম তাই!”
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আইজান থেমে যায়। ইরজা সামনে তাকিয়েই দেখতে পায় কতো গুলো লোক ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আইজান বলল,,
“কারা তোমরা এভাবে আমাদের পথ আটকিয়েছো কেন?”
তখনি একটা লোকের আওয়াজ পাওয়া গেল ,,
“তোদের শেষ করতে !”
লোকটা কথা বলতে বলতে সামনে এলো মুখটা স্পষ্ট হতেই আইজান চমকে গেল পরশ কে দেখে। আইজান অবাক কন্ঠে বলল,,
“পরশ তুই!”
তখন পরশ বলল,,
“হুম আমি। তুই কি ভেবেছিলিস তোরা আমাদের সব লুট করবি আর আমরা বসে বসে দেখবো। অবৈধ কর্মকান্ডের বস হচ্ছি আমি এই পরশ।”
“আমরা মানে?”
“এই যে আমি! মানে আমরা!
তখনি পেছন থেকে ইসহাক চৌধুরী হেসে বেরিয়ে এলো। আর বলল,,
‘তুই কি ভেবেছিলিস আমার বন্ধুকে জেলে পাঠাবি আর আমি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো। তোর জন্য আমার কতো টাকার লস হয়েছে তুই জানিস। আমি কবে থেকে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। কবে তোকে শেষ করবো। কবে সব সম্মতির মালিক আমি হবো।”
তখনি কেউ এসে ইরজার মাথায় খুব জোরে বাড়ি মারল। ইরজা মাটিতে পড়ে যায়। তখন আইজান ওর দিকে আসে তখন আইজান কেউ পেছন থেকে আঘাত করে।
তখনি কারো ডাকে ইরজা স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসে। ও পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর পেছনে আয়েশা চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। হুট করে আয়েশা চৌধুরী ইরজাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো আর বলল,,
“আমাকে ক্ষমা করে দাও ইরজা আমি তখন পুত্র শোকে পাগল হয়েছিলাম তাই তোমার ওপর অন্যায় করে ফেলেছি।”
তখনি ইরজার নজর পরলো সামনের দিকে আইজান ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি।দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্ব পড়ে হয়তো অনেকেই বুঝতে পারবেন কি হয়েছে। গল্পটা অন্যভাবে সাজাতে চাইলেও পারছি না। তাই তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাইছি। লেখালেখিতে মন বসাতে পারছি না। তাই কালকে গল্পটার ইতি হবে। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন অবশ্যই। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।