তুমি গহীন অনুভব পর্ব ৬

0
437

#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“হ্যালো মিস্টার কাল সদ্য নতুন হওয়া অন্ধকার জগতের একমাত্র বস ওরফে ১ কোটি টাকার মালিক।”

এ কথা শুনতেই সামনের লোকটি ক্লান্ত চোখে আইজানের দিকে তাকালো। লোকটার বয়স ৩০-৩৫ হবে। এখানে আইজান ছাড়াও আরো দুজন লোক আছে। তাদের মুখে মাস্ক চোখে চশমা তাদের মুখ বোঝা যাচ্ছে না। লোকটিকে আনার পর থেকেই অনেক মারধর করা হয়েছে। তাই মার খেয়ে বেচারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। লোকটি বলল,,

“তোমরা আমাকে এখানে এনেছো কেন? তোমাদের সাথে আমার কি শত্রুতা।”

তখন মাস্ক পরিহিত লোকের মধ্যে একজন বলল,,

“না তোর সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। তবে এখানে তোকে এনেছি একটা ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য। যদি ঠিকমতো ইরফরমেশন দিতে পারিস তাহলে তোকে আর কিছু করবো না। আর যদি না দিস তাহলে মনে কর এখানেই তোর প্রানপাখিটা উরে যাবে। চয়েজ ইজ ইওর।”

“কি জানতে চাও তোমরা?”

“শাওনকে কে মারতে বলেছিল তোকে?”

এ কথা শুনে লোকটা হকচকিয়ে গেল। আর ঘামতে লাগলো। ও যে শাওনকে মেরেছে সেটা তো অন্যকারো জানার কথা না তাহলে ওরা জানলো কিভাবে। সেগুলো ভাবতে ভাবতেই ওকে আরেক জন মাস্ক পরিহিত লোক আবার ধমক দিয়ে বললো,,

“কিরে কোন ভাবনার জগতে চলে গেলি যা জিজ্ঞেস করছে তার উত্তর দে?নাহলে কিন্তু তুই শেষ।

লোকটি ভয়ে ভয়ে বলল,,

“আমি তারে চিনি না। কেউ একজন আমারে চিঠি দিছিল শাওনরে মারার জন্য আর বলছিল ১ কোটি টাকা দিব। সাথে বস বানাইবো। পরে অবশ্য আমারে ফোন ও দিছিল। তাই আমিও ক্ষমতার লোভে আর টাকার লোভে পইরা ওরে মাইরা ফালাইসি।”

“লোকটার মুখ দেখিস নি?”

“না দেখি নাই।”

“কোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল?”

“কোন প্রাইভেট নাম্বার থিকা।”

“আর কিছু বলেছিল নাকি শুধু মারা আর টাকার কথাই বলেছিল।”

“শুধু ঐ টুকুই করছিল আর কিছু কয় নাই। আমি জিজ্ঞেস করছিলাম তারে কেন মারবো সে কইছিল তারে রাখলে নাকি কেউ প্রমান পাইয়া যাইবো।”

“ওহ আচ্ছা।”

এতক্ষণ আইজান চুপ করে সব দেখছিল আর শুনছিল সব শুনে আইজান বলল,,

“আচ্ছা তোমার নাম তো আসিফ তাইনা।

“হ আমার নাম আসিফ।”

“তুমি এই লাইনে কতোদিন যাবৎ আছো ?”

“এই তো তিন বছর।”

“আচ্ছা তুমি কি ২০-২৫ দিন আগে শাওনকে কোন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে দেখেছো সবার আড়ালে যা তোমরা জানো না। শাওন তোমাদের কে জানায় নি।”

“শাওনের সব কাজেই আমাগো রাখতো কিন্তু এক মাস আগে উনি একটা কাজ করবো বলে আমাগো কেউরে সাথে নেয় নাই। ওনার নাকি বাইরে লোক আছে। তাগো দিয়ে কাজ করাইবো। আমরাও কিছু কই নাই। তবে একজন কোট প্যান্ট পড়া লোকের সাথে তারে অনেকবার দেখেছি একমাস আগে উনি আইলেই শাওন আমগো ঘর থিকা বাইর কইরা দিতো। আমার মনে হয় সেই লোকটাই হইবো।”

“ওয়াও গ্ৰেট। তোর কাছে কি তার কোন ছবি আছে?”

“না ছবি তো তুলি নাই। তবে সে কেমন দেখতে সেটা বলতে পারুম।”

“ওকে! আর একটা কথা পরশ এ লাইনে কবে থেকে ঢুকেছে?’

“তোমরা কারা এতকিছু জানলে কেমনে?”

“আমরা কারা সেটা তোর না জানলেও চলবে যে প্রশ্ন করছি তার উত্তর দে?”

“পরশ ছয় মাস হয়েছে এ লাইনে ঢুকেছে!”

“ওকে যা জানার জানা হয়ে গেছে। কাওসার ওকে নিয়ে যাও আর যা যা কালেক্ট করতে পারো করো আর স্কেস ও বানিয়ে নাও।”

কাওসার লোকটাকে নিয়ে চলে গেল। ওরা এর আগের লোকটার থেকে স্কেস বানিয়ে শাওন কে চিনেছিল। ওর ছবি বের করতেই সবাইকে জানিয়ে দেয় আর সবাই মিলে অনেক চেষ্টার পর জানা যায় শাওন সিলেট এ আছে। লোকটাকে নিয়ে যাওয়া হলে একজন বলল,,

“ও এত তাড়াতাড়ি সব বলে দিল কেন?”

তখন আইজান বলল,,

“কারন ও মার দেখে খুব ভয় পায়। মারে ওর ফোবিয়া টাইপ কিছু একটা আছে। ছোট বেলায় নাকি ওকে ওর বাবা অনেক মেরেছিল তবে থেকেই ও ভয় পায়। তাও এরকম খারাপ প্রফেশনে ঢুকেছে।”

“আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। তা ফুল কোথায়?”

“আমার কেবিনে কাল ঘুমায় নি তাই আজ সব ঘুম ওর চোখে ভর করেছে কেবিনে এসে ওকে ঘুমাতে বলেছি সেও চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়েছে।”

এ কথা শুনে লোকটদুটো মুচকি হাসলো আর বলল,,

“ধন্যবাদ আইজান সব কিছুর জন্য।”

“এসব ছাড় এখন তোদের ফুল কে ঘুমের কলি থেকে বের কর। ঘুম থেকে উঠা তারপর একসাথে খাবো।”

_______________________

রাতে বাসায় ফিরে ইরজা আর আইজান ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল। তারপর নিচে এলো তখন দেখলো সবাই ওদের দুজনের জন্য খাবার টেবিলে বসে আছে। সবাই বলতে তমা চৌধুরী আর স্বপ্না । তমা চৌধুরী বলল,,

” তোমাদের নানাবাড়ি কেমন কাটলো।”

তখন আইজান বলল,,

“ভালো কেটেছে তবে কাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসতে হলো।”

“ওরা আসবে কবে?”

“ওরা না বলে বলো তোমার মেয়ের জন্য টেনশন হচ্ছে?”

“ভাবি যখন আছে তাহলে আমার আবার টেনশন কিসের বাড়ির লোকজন বাড়িতে না থাকলে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”

তখন স্বপ্না বলল,,

“সব কি আপনারাই বলবেন এ বাড়ির বউদের ও কিছু বলার সুযোগ দিন।”

তখন ইরজা বলল,,

“আরে ভাবি আগে উনারা কথা শেষ করুক তারপর আমরা করবো। তা তৌকির কোথায়?”

“তোমরা আসছো শুনে খুব খুশি হয়েছিল। সারাবাড়ি দৌড়ে বেরিয়েছে কিন্তু তোমরা আসার আধ ঘণ্টা আগে ঘুমিয়ে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা।

তখন আইজান বলল,,

“আচ্ছা কাকিমনি কাকাই আর ভাইয়া কোথায়। কাকাইকে তো পাওয়াই যায় না। আমিও কাজে থাকি কে কি করে দেখায় হয় না।”

তমা চৌধুরী বলল,,

“আরে তোর কাকাই তো বাহিরের বিজনেসটা দেখছে। তিশার আংটিবদল এর সাত দিন আগে গেছিল। আবার তার দুদিন পরেই ফিরে এসেছে আবার তিশার আংটিবদল এর পরের দিনই তো গেল আর আসেনি। তুই তো তখন ইরজা কে নিয়ে ব্যস্ত ছিলিস তাই বোধহয় নজরে আসেনি। আর তোর ভাইয়ার তো দুদিন ধরে চাপ বেশি কারণ ভাইয়া নেই এখন পুরো অফিস টা ওই সামলাচ্ছে। আজকেও আসতে দেরি হবে।

“ওহ আচ্ছা।”

তখন স্বপ্না বলল,,,

“আচ্ছা ইরজা তুমি তো আমাদের বাড়িতে এসেছো অনেকদিন হলো তোমার ব্যাপারে তো কিছুই জানা হলো না। তোমার পরিবারে কে কে আছে।”

এ কথা শুনে ইরজা থতমত খেয়ে গেল। আইজান ওর অবস্থা বুঝতে পেরে কিছু বলবে তখনি তৌকির এর কান্নার শব্দ শোনা গেল বোধ হয় ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। স্বপ্না তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে গেল। ইরজা আর আইজান মনে মনে হাসলো। কিছুক্ষন পর স্বপ্না তৌকির কে নিয়ে এলো তৌকির ইরজা কে দেখে হেসে বলল,,

“কাকিমনি !”

ইরজা হেসে উঠে তৌকির কে কোলে নিল। কপালে একটা চুমু দিল এতেই তৌকির হেসে উঠলো। তখন স্বপ্না হেসে বলল,,

“মহারাজা কান্না শুরু করলে আর থামে না। কিন্তু ইরজার নাম বললাম ওমনি উনি কান্না থামিয়ে বলল কাকিমনির কাছে যাবে।”

তখন তমা চৌধুরী বলল,,

“অনেক গল্প হলো এখন খাওয়া যাক। ওরা কতোদূর জার্নি করে এসেছে খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই।”

ওরা সবাই মিলে খাবার খেল। ইরজা তৌকির কে কোলে নিয়েই খেয়েছে। খাবার খেয়ে আইজান রুমে চলে গেল আর ইরজা স্বপ্নার সাথে বসে গল্প করলো কিছুক্ষণ তারপর ওপরে চলে গেল। স্বপ্না মেয়েটা দারুন খুব সহজেই ইরজাকে নিজের বোন বানিয়ে নিয়েছি। তৌকির তো ইরজা বলতে পাগল। ইরজা ওকে খুব ভালোবাসে আর তৌকির ও তাই। ও ওপরে গিয়ে দেখলো আধশোয়া হয়ে আইজান চোখ বন্ধ আছে। তা দেখে ইরজা বলল,,

“ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পরুন ওমনি হয়ে শুয়ে আছেন কেন? ঘাড় ব্যাথা হবে তো?”

তখন আইজান চোখ খুলে বলল,,

“মাথা ব্যাথা করছে বউ মাথাটা একটু টিপে দাও তো?”

এটা শুনে ইরজা ব্যস্ত হয়ে বলল,,

“আগে বলবেন না আপনার মাথাব্যাথা দাড়ান আমি মাথাব্যাথার বাম নিয়ে আসছি দেখবেন তাড়াতাড়ি মাথাব্যাথা কমে যাবে।”

ইরজা ড্রয়ার থেকে বাম নিয়ে এলো। তারপর আলতো করে আইজানের মাথা টিপতে লাগলো। আইজান ইরজার কোলে মাথা রাখলো তা দেখে ইরজা মুচকি হাসলো আর বলল,,

“মাথা ব্যাথা কি আস্তে আস্তে কমছে জনাব?”

“আমার বউ আমার মাথা টিপে দিচ্ছে মাথার ঘাড়ে কটা মাথা যে মাথা ব্যাথা কমবে না।”

মাথার ঘাড়ে কটা মাথা শুনেই ইরজা হেঁসে উঠল। আর বলল,,

“মাঝে মাঝে এমন বোকা বোকা কথা বলেন না যে না হেঁসে পারি না।”

“বোকা বোকা কথা বলে যদি শুভ্রপরীর মুখে হাঁসি ফোটানো যায় তাহলে তোমার প্রেমিক পুরুষ সেই বোকা বোকা কথা বারবার বলবে!”

“আপনার না মাথাব্যথা করছে বেশি কথা না বলে চুপ করে শুয়ে থাকুন।”

আইজান আর কিছু বললো না কারন সে আজ বড় ক্লান্ত। কিছুক্ষণ পর আইজান ইরজার কোলে ঘুমিয়ে পরলো। তা দেখে ইরজা মুচকি হেসে আইজানের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,,

“প্রাণের মানুষকে এটা বুঝানো কষ্ট হয় যে, কতখানি ভালোবাসা যায় তাকে, কতখানি সে নেয় হৃদয়ের দখল। এই সংশয়ে থাকতেও যেন ভীষণ ভালোলাগার অনুভূতি। সেই অনুভূতি নিয়ে দূরে দূরে থাকলেও, তাকে মনে রাখতেই যেন সার্থক লাগে খুব। আপনি আমার প্রানের মানুষ বুঝলেন তো। আপনাকে যে আমার লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসতেই ভালো লাগে। কারন প্রকাশহীন ভালোবাসা আলাদা আনন্দ দেয়। আমিও আপনাকে ভালোবাসি প্রেমিক পুরুষ। আপনার শুভ্রপরী ও আপনাকে ভালোবাসে।”

_____________

দেখতে দেখতে কতো গুলো দিন পার হয়ে গেল। পাঁচ দিন পর তিশার বিয়ে। আজ ওরা সব ইয়াংস্টাররা সবাই যাবে বিয়ের শপিং করতে। সাথে মলি ওর ননদ ও আছে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র ভাগ্নি তাই সে একটু ভাব নিয়ে চলে। তিশার কাজিনরাও আসবে। তিশারা সিলেট থেকে ওরা দুদিন পরেই ফিরে এসেছে। পরশ কে কোন কারনে আইজানরা ধরে নি। তবে ওয়ার্নিং দিয়েছে আর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে।

ইরজা শপিং এ আসতে চাইছিল না তিশা আর ফায়জা জোর করে এনেছে। ইরজা বলেছে আইজান যদি বলে তাহলে সে আসবে। ফায়জা ফোন করে আইজানকে জানিয়েছে ইরজা আসছে শুনে আইজান ও আসবে। ওরা সবাই শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কারণ আইজান এসে এখনো পৌঁছায় নি। তখন মলি বলল,,

“আইজানের জন্য আবার অপেক্ষা করার কি হলো ও কি শপিংমল চেনে না।”

তখন ফায়জা বলল,,

“আরে ভাইয়া যখন আসছে তখন পাঁচ মিনিট দারাই না। সবাই একসাথে শপিংমলে ঢুকবো।”

তখন তুহিন বলল,,

“ফায়জা ঠিক বলেছে তাছাড়া তোদের মানে এতোগুলো লেডিস কে আমি একা সামলাবো কিভাবে?”

তখন স্বপ্না বলল,,

“আমাদের সামলাতে বলেছে কে? এমন ঢং করছে যেন ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারে না।”

তখন তুহিন মেকি হাসি দিয়ে বলল,,

“ঐ একটু,,, ঐ তো আইজান এসে পড়েছে।”

সবাই ওদিকে তাকালো দেখলো আইজান আসছে। আইজান এসেই বলল,,

“সরি একটু লেট হলো তো এখন যাওয়া যাক।”

হুম সবাই একসাথে শপিংমলে ঢুকলো। আইজান দৌড়ে এসে ইরজার হাত ধরলো। ইরজা একটা মেরুন রঙের বোরকা আর হিজাব পরে এসেছে। ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“আপনি সেদিন বললেন আমি নাকি সুযোগ পেলেই আপনার হাত ধরি। কিন্তু আপনিও যে সুযোগ পেলেই আমার হাত ধরেন সে বেলা।”

“তুমি তো পিচ্চি একটা মেয়ে তাই হাত ধরে চলাচল করি আবার হাড়িয়ে গেলে।”

‘কি! পিচ্চি বাচ্চা! হাও ফানি!”

“হাও ফানি কে পানি দিয়ে গুলে খেয়ে নিয়ে বলোতো তিশার বিয়েতে কি পরবে গ্ৰাউন না শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা।”

ইরজা আইজানের কথা শুনে হেসে বলল,,

“আপনি যেটা পরতে বলবেন সেটাই পারবো।”

তখন আইজান ভাবুক হয়ে বলল,,

“শাড়ী এত মানুষের মাঝে সামলাতে পারবে না। গ্ৰাউন না হলে লেহেঙ্গা ঠিক হবে। সাথে ম্যাচিং হিজাব আর মেক আপ আমি করে দিব। চলবে?”

“আপনি মেকআপ করতে পারেন? না মানে আমি মেয়ে হয়ে মেক আপ করতে পারি না। আর আপনি ছেলে হয়ে মেক আপ করতে পারেন।”

“আরে ইউটিউব দেখে করবো। তোমার জামাইয়ের অনেক টেলেন্ট একবার দেখেই সব পারে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে সেটা সেদিন দেখবো। এখন চলেন নাহলে আবার সবাই মজা করবে।”

ওরা সবাই ইচ্ছেমতো শপিং করলো। । সবার অগোচরে আইজান ইরজার জন্য একটা শুভ্র রঙের গ্ৰাউন আর ক্রীম কালারের হিজাব কিনলো সাথে প্রয়োজনীয় সব । তখন ইরজা ফায়জাদের সঙ্গে ছিল। এদিকে ইরজাও সবার অগোচরে আইজানের জন্য কাজ করা ক্রীম আর শুভ্র রঙের মিশ্রণ এর একটা পাঞ্জাবি কিনলো। দুজনেই দুজনের অগোচরে একি রঙের ড্রেস কিনলো। সবাই শপিং করে ক্লান্ত। আজ অবশ্য মলি ইরজাকে কিছু বলে নি। কারন আইজান ছিল ওর সাথে। সব শেষে তুহিন বলল,,

“এখন কিছু খাওয়া যাক এতো শপিং করে আমার ক্ষুদা লেগে গেছে। ”

সবাই তুহিনের কথায় মত প্রকাশ করলো এটা শুনে মলির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল। সবাই একটা রেস্টুরেন্টে গেল। তখন মলি বলল,,

“এটেনশন মাই ডিয়ার কাজিনগন আমি হলাম কাজিন মহলের সবার থেকে বড় তাই আমি বড় হিসেবে আজ সবাইকে ট্রিট দিবো আর খাবারের অর্ডারও আমি দিয়ে এসেছি। কেউ মানা করতে পারবে না।”

এটা শুনে সকলে হৈ হৈ করে উঠলো তবে আইজান আর ইরজা অন্য কিছু ভাবছে ওরা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে আসলে মলি কি করতে চাইছে কেও কিছু বললো না। ইরজা মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বসে আছে। ওর হাঁসি দেখে মলি বলল,,

“হেঁসে নাও মেয়ে আরেকটু পর তোমার সকলের সামনে নাক কাটা যাবে তখন দেখবে এই হাঁসি কোথায় যায়।”

কিছুক্ষণ পর খাবার চলে এলো সব কন্টিনেন্টাল খাবার। তা দেখে সবাই বেশ খুশি হলো কারন ওদের কারো কারো খুব পছন্দের খাবার। মলি বলল,,

“নাও সবাই শুরু করো?”

সবাই শুরু করলো শুধু ইরজা আর আইজান খাচ্ছে না। তা দেখে মলি বলল,,

“কি হলো ইরজা খাচ্ছো না কেন?”

তখন ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“আসলে আপু আমার খেতে ইচ্ছে করছে না ।”

“ইচ্ছে করছে না! নাকি খেতে পারছো না কোনটা বলো তো!

“তেমন কোন ব্যাপার না আপু। আমার সত্যি খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“কেমন ব্যাপার সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি। তুমি যে এগুলো কোন দিন খাওনি সেটাও বুঝতে পারছি আর খেতে যে পারো না সেটাও বুঝতে পারছি। আচ্ছা তুমি কখনো স্পুন, ফর্ক এবং নাইফ দিয়ে খাবার খেয়েছো? আচ্ছা তুমি জানো তো নাইফ দিয়ে কিভাবে খাবার কাটতে হয়।

এ কথা শুনে তিশার কাজিনরা হেসে উঠলো। তিশা ফায়জা স্বপ্না মাথা নিচু করে ফেলল। তখন আইজান মুচকি হেসে বলল,,

“Don’t judge a book by its cover”

ইরজা মুচকি হেসে সুন্দর করে নাইফ দিয়ে খাবার টা কেটে ফর্ক দিয়ে খাবারটা খেল।এটা দেখে যারা মাথা নিচু করে ছিল ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আইজান তো প্রথম থেকেই মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিল। ওর খাওয়া দেখে সবাই চুপ করে নিজের মতো খেতে লাগলো কিন্তু মলি অপমানিত হলো কিছু না বলে কিভাবে মানুষ কে অপমান করা যায় সেটা সে ভালোই বুঝতে পারলো। মলি আর একটা কথাও বলে নি।সবার খাওয়া হয়ে গেলে সবাই যা যার মতো বাড়ি ফিরে গেল।

_______________

ইরজা আর আইজান ওদের গাড়িতে আলাদা এসেছে তাই ওকে কেউ প্রশ্ন করার সুযোগ পায় নি। ওরা ফ্রেশ হলো। ইরজা আইজানের জন্য কেনা পাঞ্জাবির প্যাকেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“মিস্টার আপনার জন্য একটা গিফট এনেছি দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা?”

আইজান অবাক হয়ে বলল,,

“কি আমার জন্য গিফট!”

“কেন আমি দিতে পারি না বুঝি।”

“তা না তবে মিসেস আমিও তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি। দারাও আমি নিয়ে আসছি দুজনে একসাথে খুলবো।”

“আচ্ছা।’

আইজান গিয়ে ইরজার জন্য আনা প্যাকেট গুলো নিয়ে এলো। তারপর ইরজাকে দিল আর ইরজার থেকে ওর প্যাকেট টা নিল। দু’জনে প্যাকেট খুলে অবাক হয়ে গেল একই রঙের দেখে। দুটোই খুব সুন্দর। আইজান বলল,,

“দেখেছো তো শুভ্রপরী আমাদের কতো মিল দু’জনেই দু’জনের জন্য শুভ্ররঙ পছন্দ করে এনেছি।”

“তাই তো দেখছি।”

“শুকরিয়া এত সুন্দর একটা গিফট দেওয়ার জন্য।”

“আপনাকেও শুকরিয়া সত্যি এটা দারুন হয়েছে।”

“এটা তুমি তিশার বিয়ের দিন পরবে আর আমিও তাই।যদিও সবার সামনে অন্যরকম কিনেছি তবুও আমরা এই দুটোই পারবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

_____________________

তিশার বিয়ের আগের দিন মানে হলুদের দিন সবাই চৌধুরী বাড়িতে চলে এসেছে বাড়ি ভর্তি মানুষ। আইজান বলে দিয়েছে সবসময় আয়েশা চৌধুরীর সাথে থাকতে। তাই ইরজাও আয়েশা চৌধুরীর হাতে হাতে কাজ করছেন। চৌধুরী বাড়ির বউরা সবাই খুব ব্যস্ত আজ। সেদিনের পর কেউ ইরজাকে কোন প্রশ্ন করে নি। আইজান সোফায় বসে আছে কিন্তু কেউ এদিকে আসছে না। আইজান তিশার বিয়ের জন্য তিনদিন ছুটি নিয়েছি। এখন বেশি কাজ নেই তাই ওর স্যার ও ওকে ছুটি দিয়েছে। এদিকে বাড়ি ভর্তি মানুষ আইজানের ভালো লাগছে না। তার বউ কোথায় সে সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছে না তাই আরো বেশি বিরক্ত। ইরজা রান্না ঘরে আয়েশা চৌধুরীর কাছে সাহায্য করছে। আইজান উঠে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিল তখন তিশার দূরসম্পর্কের মামি আইজান কে বলল,,

“আরে আইজান বাবা কেমন আছো তুমি?”

এ কথা শুনে আইজান ওনার কাছে গেল আর বলল,,

“এই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামি আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমার সাথে একটা কথা ছিল। তোমার মায়ের সাথেই বলতাম কিন্তু তিনি তো ব্যস্ত।”

“জি বলেন মামি!”

“আসলে সকাল বেলা থেকেই দেখছি একটা মেয়ে তোয়ার মায়ের কাজে সাহায্য করছে। ঐ মেয়েটা কে হয় তোমাদের।”

“কোন মেয়েটা মামি!”

“আরে ঐ মেয়েটা যে হালকা আকাশি রঙের বড় জামা পড়েছে আর মাথাটা ওরনা দিয়ে পুরো ঢাকা।”

আজানের মনে পরলো ইরজা এরকম ড্রেস পরেছে তাই ও একটু কৌতুহল হলো আর বলল,,

“হুম মামি চিনতে পেরেছি কিন্তু আপনি ওর ব্যাপারে কি বলবেন বলেন।”

“আসলে মেয়েটারে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ও যদি তোমাদের চেনা জানা কেউ থাকে তাহলে আমার ছেলেটার সাথে মেয়েটার বিয়ের কথা বলতাম।”

ফায়জা ওখানেই ছিল আর কিছু একটা খাচ্ছিল তিশার মামির কথা শুনে ফায়জার মুখ থেকে খাবার পড়ে যায় আর ফায়জা কাঁশতে থাকে। আর বেচারা আইজানের মুখটা দেখার মতো হয়েছে নিজের বউয়ের বিয়ের কথা ওর কাছে এসেই করছে ইচ্ছে করছে সামনের ওনাকে কিছু একটা করতে ওখানে তুহিন ও ছিল ও আইজানের চেহারা দেখে হাসছে। আসলে মামি আজ সকালেই এসেছেন তাই জানে না ইরজা কে? আইজান ওখান থেকে সোজা রান্না ঘরে চলে গেল।তা দেখে তিশার মামি বলল,,

“আরে কি এমন বললাম যে আইজান চলে গেল।”

তখন তুহিন বলল,,

“ও কি বলবে মামি ও মেয়েটা তো বিবাহিত তাই কিছু বললো না। আর মেয়েটার জামাই আর কেউ না আমাদের আইজান।

“কি বিবাহিত! আইজান বিয়ে করেছে আমি চাইছিলাম আমার ছেলের পরে আমার মেয়ের জন্য আইজানের বাবা মার সাথে করবো। এটা কি হলো আমার নাক কাটা গেল।”

ওনার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।

___________________

আইজান রান্না ঘরে গিয়ে আয়েশা চৌধুরী কে বলল,,

“মা অনেক হয়েছে এখন আমার বউকে ছাড়ো আমার বউ এখন ওপরে যাবে।”

“আরে কি হয়েছে তোর এতো রেগে আছিস কেন? আর তোর বউকে কি আমি ধরে রেখেছি নাকি?”

“অতশত আমি জানিনা ইরজা হাত ধুয়ে ওপরে চলো।”

তখন ইরজা বলল,,

“হাতে আর একটু কাজ আছে ওটা করেই আসছি।”

“আমার ইম্পোর্টেন্ট জিনিস খুজে পাচ্ছি না। এখন আমার ওটা লাগবে পরে গেলে হবে না চলো।”

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“ইরজা এখানের সব কাজ প্রায়ই শেষ তুমি যাও দেখো আইজানের কি লাগবে। বাকিটা আমরা করে নিচ্ছি।”

“আচ্ছা মা। আর আপনি যান আমি আসছি।”

“না তুমি হাত ধুয়ে নাও আমি এখানেই আছি আমার সাথেই যাবে।”

অগত্যা ইরজা হাত ধুয়ে নিল। আর আইজানের কাছে এলো তা দেখে আইজান ইরজার হাত ধরলো। তা দেখে ইরজা বলল,,

“এ কি সবার সামনে এমন হাত ধরছেন কেন? লোকে কি বলবে?

“আমার বউয়ের হাত আমি ধরেছি তাতে কার বাপের কি। এখন কোন কথা না চলো।’

আইজান সবার সামনে ইরজার হাত ধরে ওপরে চলে গেল। এদিকে আয়েশা চৌধুরীরা কিছু বুঝতে পারলো না। তখন হাসতে হাসতে ফায়জা রান্না ঘরে এলো। আর বলল,,

‘ভাইয়া হেব্বি ক্ষেপে গেছে আজ!”

তখন স্বপ্না বলল,,

“এই ফায়জা কেস টা কি বলোতো?”

“আরে ভাবি তিশার দুঃসম্পর্কের মামি আছে না উনি ভাইয়াকে বলছিল ওনার ছেলের সাথে ভাবির বিয়ের কথা ব্যস এতেই ভাইয়া রেগে ভাবি কে নিয়ে চলে গেল।””

ফায়জা সবটুকু বলল। তা শুনে সবাই হাসলো আর তমা চৌধুরী বলল,,

“ভাবি কিছু মনে করো না। উনি বোধহয় জানেন না । সকালে এসেছেন তো তাই বোধহয় ইরজার সম্পর্কে কিছু জানে না।”

তখন আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“আরে কি মনে করবো কিছুই মনে করি নি কিন্তু তোরা কি আমার ছেলের পাগলামো দেখলি সবার সামনে নির্লজ্জের মতো বউয়ের হাত ধরে নিয়ে গেল!”

এ কথা শুনে সবাই হাসলো। তখন ঐ মহিলাও এসে আয়েশা চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চাইলেন।

ওদিকে,,

আইজান রুমে এসে বলল,

“এরপর থেকে সবসময় আমার কাছাকাছি থাকবে বুঝতে পারলে।”

“কি হয়েছে বলুন তো আপনার? কি বলছেন কি?”

“কিছু হয় নি।”

“আমি আপনাকে ভালো মতোই চিনি তাই হেঁয়ালি না করে বলুন কি হয়েছে।”

আইজান মুখ লটকিয়ে সব বলল সব শুনে ইরজা হেসে উঠলো তা দেখে আইজান বলল,

“তুমি হাসছো আর আমার মনে হচ্ছিল ঐ মহিলাকে এখনি তুলে আছাড় মারতে। বলে কি না ওনার ছেলের সাথে তোমার বিয়ের কথা বলবে।”

“আরে আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না!”

” ও তুমি বুঝবে না তোমাকে দূরে যাওয়ার কথা বললেই আমার ভেতরটা হাহাকার করে উঠে।”

তখন ইরজা আইজান কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আপনিই যে আমার শান্তির নীড়।”

আইজান কিছু বললো না মুচকি হাসলো। অতঃপর তিশার বিয়ের দিন ,,,,

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here