প্রেম প্রেম পায় পর্ব ৩৫

0
852

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব পয়ত্রিশ

৩৫.
দুদিন পরের ঘটনা।ফারাজ বিকেল বেলা সকলকে জড়ো করেছে অপরাজিতাদের বাসার ড্রয়িং রুমে। যেহেতু অপরাজিতাকে তুলে দেওয়া হয় নি তাই নিজেদের বাসায় ডাকতে পারে নি৷ সবাই বসে আছে কি উপলক্ষে তাদের ডাকা হয়েছে তা শুনার জন্য।

ফায়াদ আর অপরাজিতা পাশাপাশি বসে আছে। অপরাজিতার মুখে কোনো কৌতুহল নেই। আছে শুধু এক্সাইটমেন্ট।ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘আরে বলিস না কেন?’

ফারাজ ঘড়ি দেখে বলল,
‘দাড়াও আরেকটু।’

কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারাজ গিয়ে দরজা খুলে একটা বাক্স নিয়ে আসলো। সবাই তাকিয়ে আছে জানার জন্য।ফারাজ বাক্সটা খুলে সেখান থেকে একটা একটা করে কার্ড বের করে সকলের হাতে দিল। সবাই কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে ছিল। কার্ড হাতে পেয়ে অবাক হলো। উলটে পালটে কার্ড দেখছে সকলে। ফায়াদ কার্ড পড়লো,
‘কাজ থেকে ছুটি’

পড়ে ভ্রু কুচকে তাকালো ফারাজের দিকে৷ ফারাজ তা দেখে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘রুকো জারা, সাবার কারো।’

সবাই কার্ড দেখে ফারাজের দিকে তাকিয়ে আছে আসল কাহিনি জানার জন্য। ফারাজ এবার কেশে বলল,
‘একটা ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছি। ফুল ফ্যামিলি। কাজ টাজ করতে করতে সবাই নিশ্চয়ই খুব বোর হয়ে আছো। তাই এই ভাবনা।সবাই মিলে কিছুদিন নাহয় ছুটি কাটাই? আর হ্যা এটা পুরোটা আমার পক্ষ থেকে। কারো থেকে না শুনবো না।’

ফায়াদ সব শুনে অপরাজিতার কানের কাছে বলল,
‘তুমি জানতে তাই না?’

অপরাজিতা বলল,
‘কে বলেছে?’

ফায়াদ কার্ডের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কার্ডের আইডিয়া নিশ্চয়ই তোমার!’

অপরাজিতা মিট মিট হাসলো।ফারাদিন আহমেদ বললেন,
‘এটা তো মুখেই বলা যেত।কার্ডের কাহিনি কি?’

ফারাজ অপরাজিতার দিকে তাকালো। অপরাজিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘কার্ডের নিচে কিছু জায়গা খালি আছে দেখুন। ওখানে হেডলাইন দেওয়া অনুভূতি। ট্রিপ এর শেষদিন এখানে সবাই নিজেদের অনুভুতি লিখবেন। যার যেটা ইচ্ছা।তারপর সেটা নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন অথবা প্রিয় মানুষকেও দিতে পারেন।’

নীতি কার্ডটার শেষে তাকিয়ে ভাবলো,
‘অনুভূতি বলা বারণ। লিখা তো যেতেই পারে।’

রামিসা বেগম প্রশ্ন করলেন,
‘তুই জানতি ট্রিপের কথা?’

ফারাজ বলল,
‘আমি বলেছিলাম। আমার কিছু আইডিয়া লাগতো।’

আখি বেগম বললেন,
‘কে কে যাচ্ছি?’

ফারাজ বলল,
‘আমরা সবাই, রিজু, রাফিয়া যাবে মামি যাবে না। বলেছে তাদের নিতে। আর ছোট্ট ভাবির কাজিন সামির-সামিয়া, আমিনা আন্টি তাদের আমি বলি নি।উনার বলার কথা ছিল।’

অপরাজিতা বলল,
‘বলেছি। শুধু সামির যাবে।’

ফায়াদ এবার মুখ খুলল,
‘ট্রিপ কবে?’

ফারাজ মাথা চুলকে বলল,
‘পরশু’

সবাই অবাক হলো।এতো তাড়াতাড়ি। গোছগাছের একটা ব্যাপার আছে তো। আবার আসিফ ইসলাম ব্যবসায়ীক মানুষ তার তো কাজ আছে। নানা জনের নানা সমস্যা। সবাই কে অনেক কসরত করে মানালো ফারাজ। অপরাজিতা বলল,
‘কিছুদিন এর জন্য জীবন থেকে ব্যস্ততা বাদ দিয়ে দিন সবাই।কিছু সময় নিজেদের উপহার দেওয়া যাক।’

চলে আসার সময় ফায়াদ অপরাজিতাকে বলল,
‘তোমার ক্লাস আছে না?এভাবে পড়াশোনা মিস দেওয়া ঠিক হবে?’

‘আমি ম্যানেজ করে নিব। ট্রিপের পর দিন রাত এক করে পড়বো।’

ফায়াদ গম্ভীর ভাবে বলল,
‘হুম’

অপরাজিতা ফায়াদের পেটে চিমটি কেটে বলল,
‘আহা এতো ভাবার কি আছে। শুনুন কি বলি।’

‘কি?’

অপরাজিতা লাজুক মুখে বলল,
‘বিয়ের পর এটা আমাদের প্রথম কোথাও যাওয়া🤭’

ফায়াদ বলল,
‘তো?’

অপরাজিতা ভেঙচি কেটে বলল,
‘ধেত নিরামিষ!’

বলে চলে যাওয়া ধরলে ফায়াদ হাত টেনে বাকা হেসে বলল,
‘এখনো নিরামিষ বলো!’

অপরাজিতা জিবে কামড় দিয়ে আগের দিন গুলো স্মরণ করলো তারপর বলল,
‘ভুলে ভুলে’

——————————
যাত্রার দিন। বিকালে যাত্রা শুরু হবে। এখন দুপুর। সবাই সবকিছু বার বার দেখে নিচ্ছে ঠিক আছে কিনা। দুপুরের খাবার খেতে বসে ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘অনেক দিন পর যাচ্ছি কোথাও। ব্যস্ততার কারনে কিছুই হয়ে উঠে না।’

ফারাজ বলল,
‘হ্যা সে জন্যই তো তোমার আর আম্মুর জন্য ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছি।’

আখি বেগম ভ্রু কুচকে বললেন,
‘আমাদের জন্য মানে? ‘

ফারাজ মিট মিট করে হাসছে। ফায়াদ ফারাজের দিকে তাকিয়ে সেও হাসতে হাসতে বলল,
‘তোমার আর বাবার কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড হবে তাই।’

আখি বেগমের ভ্রু আরো কুচকে গেল।সে বুঝার চেষ্টা করছে। রাফিয়া তা বুঝতে পেরে বলল,
‘আরে ফুপি। হানিইইইইমুন!’

আখি বেগম চোখ বড় বড় করে তাকালেন।বললেন,
‘বদ’মাশ ছেলে’

সকলে হেসে দিল। ফারদিন আহমেদও হাসছেন। আখি বেগম তা দেখে বললেন,
‘লজ্জা নাই? আবার ছেলেদের এসব কথা শুনে হাসো?’

ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘লজ্জা থাকলে তো আর—কিছু না’

আর বলতে পারলেন না স্ত্রীর চোখ রাঙানিতে।

‘অপরাজিতাদের আনতে যাবে কে?’

ফায়াদ বলল,
‘আমি’

‘আচ্ছা।আমরা ফারাজের সাথে বাসের ওখানে চলে যাবো। তুই তাদের নিয়ে আসিস’

যাত্রার সময় কাছাকাছি চলে এসেছে।ফায়াদ গিয়েছে অপরাজিতাদের আনতে। ফারাজরাও বের হয়েছে। আখি বেগম তালা মারলেন বাসা তে। আজ ফ্যামিলি গাড়ি ভাড়া করেছে। তারা বাসে উঠলে গাড়ি নিয়ে আসবে কে? তাই নিজেদের গাড়ি নেয় নি। গাড়িতে উঠার সময় নীতি অপেক্ষা করলো লাস্ট এ উঠবে তাই। সে ঠাসাঠাসি করে উঠবে না। শেষের দিকে সিট বাকি। পিছনে রিজু আর নীতি বসলো।
ফারাজ উঠতে গিয়ে দেখলো গাড়ি ভরে গিয়েছে। সে এতোক্ষন লাগেজগুলো রাখছিল। শেষে একটা সিট আছে নীতি আর রিজুর পাশে। নীতিকে দেখে ফারাজের মনে লাড্ডু ফুটা শুরু করলো।সে গাড়ির দরজা খুলল।রিজুকে বের করে নিজে বসলো মাঝখানে।
তা দেখে নীতি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল।সাইডেই বসতে পারতো।যাক গা। যা খুশি করুক। তাতে নীতির কি?
ফারাজ বেশ জায়গা নিয়ে বসেছে। নীতি প্রথমে পাত্তা না দিলেও গাড়ি চলার পর বুঝলো ফারাজ আসলেই অনেক জায়গা নিয়ে বসেছে। নীতি ফারাজকে ডেকে আস্তে করে বলল,
‘এতো জায়গা জুড়ে বসেছেন কেন?’

ফারাজও ফিসফিস করে বলল,
‘আপনি সরে যাওয়া বন্ধ করেন তাহলে আর জায়গা নিয়ে বসবো না।’

ফারাজ বসার পর নীতি সরে গিয়েছিল। তারই শোধ নিল ফারাজ। ফারাজ এবার ঠিকঠাক হয়ে বসলো। নীতিও আর চাপলো না।তবে মনে মনে বকলো ফারাজকে।সকলে নানা কথা বলছে।রাফিয়া তো একেবারে সামনে বসে পটর পটর করতেই আছে।

বাসে এসে জড়ো হলো সবাই। সকলে মিলে বাসে বসলো। বড়রা সামনের দিকে বসেছে।ফায়াদ আর অপরাজিতা শেষের দিকে বসেছে একসাথে। নীতি বাসেও যখন আস্তে ধীরে উঠলো তখন দুটো সিট খালি ছিল। এক হচ্ছে রাফিয়ার পাশে যেটা ফায়াদ আর অপরাজিতার ওইপাশে।আরেক হচ্ছে ফায়াদদের এক সিট সামনে ফারাজের সাথে।নীতি চাইল রাফিয়ার সাথে বসতে। রাফিয়াকে বলল,
‘রাফিয়া আমি তোমার সাথে বসি?’

রাফিয়া হ্যা বলতে নিল।কিন্তু ফায়াদের দিকে চোখ যেতেই দেখলো ফায়াদ ইশারায় না বলতে বলছে। রাফিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে আছে দেখে নীতিও সেদিকে তাকালো।দেখলো ফায়াদ অপরাজিতাকে কিছু বলছে। নীতি আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘রাফিয়া?’

‘হ্যা?? নায়ায়া’

রাফিয়ার হকচকিয়ে যাওয়ায় নীতি বলল,
‘কি হয়েছে?’

রাফিয়া নিজেকে সামলে বলল,
‘না আসলে আপু। আমার একটু রিল্যাক্স এ যাওয়া চাই। বাসে মাথা ঘুরায়। তাই আমি দুই সিট নিয়ে শুয়ে শুয়ে যেতে চাচ্ছি। তুমি মাইন্ড করবা না তো?’

‘না না সমস্যা নেই।’

নীতি বাধ্য হয়ে গিয়ে ফারাজের পাশে বসলো।ফারাজ নীতিকে বসতে দেখে বলল,
‘আমার সাথে আগেই বসলে কি গায়ে ঠোসা পড়তো?’

নীতি মেকি হেসে বলল,
‘আমার পড়তো না। তবে আপনার পড়তেই পারে।’

রাফিয়া নীতিকে সে কথা বলায় তার পিছনের সিটে বসা রিজু তাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তোর কবে থেকে বাসে বসলে মাথা ঘুরায়?’

রাফিয়া হেসে বলল,
‘আজকে থেকে।’

রিজুর পাশের সামির বসে ছিল।সে বলল,
‘তোমার বোন নাটকও পারে’

রিজু আর সামির ইতিমধ্যে ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে।একই ব্যাচ তারউপর বেয়াইও বটে।
রিজু সামিরের কথা শুনে বলল,
‘তা ভালো পারে।’

রাফিয়া সামনে থেকে বলল,
‘আমি কিন্তু শুনতেছি।’

বাস চলতে শুরু করলো। তারা যাচ্ছে কক্সবাজার। ৫ দিন এর ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছে ফারাজ। সারা বছরের ব্যস্ততা থেকে ৫ টা দিন সকলে যাতে মন খুলে আনন্দ করে সেই ব্যবস্থা করেছে সে। হয়তো সেও মন খুলে কিছু বিষয় এই ৫ দিনের মধ্যে উপলব্ধি করবে এবং বিশেষ একজনকে উপলব্ধি করাবে।

ফারাজ ভাবনায় ডুবে আছে। বাস চলছে অনেকটা সময় ধরে। বিকেলটা কেটে আকাশ সন্ধ্যার আভাশ দিচ্ছে।অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে নীতি গলা খাকারি দিল। ফারাজ ভাবনা থেকে বের হয়ে নীতির দিকে তাকালো।নীতি আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলো,
‘উনার কথা ভাবছেন?’

ফারাজ বুঝতে না পেরে বলল,
‘কার?’

‘মা মাহিয়া আপু’

ফারাজ তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে। কিছু বলছে না। নীতি এদিকে ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘না মানে তার সাথেও ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করলাম।’

ফারাজ এবার দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
‘না। তার সাথে ঘুরা হয় নি। সময়টা পাই নি। পড়াশোনা, বিজনেস শিখতে ব্যস্ত ছিলাম।তারপর তো’

নীতি বুঝলো সে ভুল টপিক উঠিয়ে ফেলেছে।সে ভেবেছিল ফারাজ মধুর স্মৃতিচারণ করছে।
নীতি অপরাধী কন্ঠে বলল,
‘স্যরি আমি বুঝি নি’

ফারাজ হেসে দিল। বলল,
‘ইটস ওকে।’

নীতির বুকে চিনচিন ব্যথা করছে। সে আবারো কষ্ট দিল ফারাজকে। নিজেরও খারাপ লাগছে।নীতি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বারবার। নিজেকে ফারাজের থেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা।তার মনে হচ্ছে সে বাংলাদেশ এসে ভুল করেছে।এখানে এসে সে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।তার কান্না পাচ্ছে। ফারাজ নীতিকে দেখছে। নীতিকে এমন হাসফাস করতে দেখে ফারাজ আলতো করে নীতির হাতে হাত রাখলো।নীতি তাকাতেই ফারাজ নীতিকে ধীর স্বরে বলল,
‘নীতি!ইটস ফাইন! আই এম ওকে।’

নীতি হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।ফারাজ এবার আর হাত সরালো না। সে নীতিকে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিচ্ছে।

(চলবে)

(বাসায় আজ খুব লেটে এসেছি।তাই দেড়ি হয়েছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here