প্রেম প্রেম পায় পর্ব ৩৪

0
802

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব চৌত্রিশ

৩৪.
ফায়াদ বাসায় আসতে আসতে বেশ রাত হলো।বাসায় চাবি দিয়ে প্রবেশ করলো। বাকিরা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।নিশব্দে গিয়ে ফারাজের রুমের বাহিরে দাড়ালো।রুমের দরজা ভিড়িয়ে রাখা। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো রুম অন্ধকার করা। ভ্যাপসা একটা সিগারেটের গন্ধ আসছে। ফারাজ বসে আছে বিছানার এক কোণায়। মাথা নিচু করে। ফায়াদ ফারাজের কাধে গিয়ে হাত রাখতেই ফারাজ ফায়াদকে ঝাপটে ধরে কান্না শুরু করলো।ফায়াদ পিঠ চাপড়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
ফারাজ বলতে লাগলো,
‘ভাই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কি করবো বুঝতেছি না। আমাকে সাহায্য কর ভাই।তুই ছাড়া কেউ বুঝে না আমায়’

ফায়াদ কিছুই বলছে না৷ আগে শান্ত করা দরকার ফারাজকে।ফারাজ আবার বলল,
‘ভাই আমি কি করবো?’

ফায়াদ হয়তো জানে ফারাজ কি কারনে অস্থির কিন্তু সে ফারাজের মুখ থেকে শুনতে চায়। ফারাজ কিছুটা শান্ত হলে ফায়াদ তাকে বেডসাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে খাওয়ালো। রুমে সিগারেটের গন্ধে টিকতে পারা যাচ্ছে না। সে ফারাজকে নিয়ে ফারাজের বারান্দায় গেল। সেখানে দুভাই পাশাপাশি ফ্লোরে বসে পড়লো।
ফায়াদ তাকিয়ে আছে ফারাজ কখন বলা শুরু করবে।
ফারাজ বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো।

একে একে সব কিছু বলে সে দম নিল। ফায়াদ সব মন দিয়ে শুনলো। শুনার পর তার প্রশ্ন ছিল,
‘তুই কি চাচ্ছিস?’

ফারাজ বলল,
‘আমি বুঝতে পারছি না।’

‘এটা কোনো ছোট খাটো বিষয় না৷ একটা মেয়ে দিনের পর দিন তোকে ভালোবেসেছে। তুই কষ্ট পাবি বলে কখনো প্রকাশ করে নি। তাকে গ্রহণ না করলে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তার লাইফে তার এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। তুই তাকে নিজের লাইফে আগলে না নিলে তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার তোর নেই।’

ফারাজ মাথা নিচু করে বসে আছে। মিন মিন করে বলল,
‘হারাতে চাই না। বাহিরে প্রত্যেকটা কাজে আমাকে সাথ দিয়েছে। বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। হারাতে চাচ্ছি না।’

ফায়াদ মৃদু হেসে বলল,
‘তাহলে বন্ধুকে সারাজীবন রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা নে।’

ফারাজ মাথা তুলে ফায়াদের দিকে তাকালো। বলল,
‘দ্বিতীয় বার ভালোবাসা যায়?’

‘যার সাথে স্বস্থি মিলে তাকে ভালোবাসা যায়’

ফারাজ ভাবলো।ফায়াদ তার কাধে হাত রেখে বলল,
‘আমি জানি তুই ভাবছিস এটা মাহিয়ার প্রতি অন্যায়। কিন্তু ভুল ভাবছিস। মাহিয়া নেই। মাহিয়া তোর প্রথম ভালোবাসা। নীতিকে শেষ ভালোবাসা হিসেবে রেখে দে। একাকীত্ব খুবই খারাপ। মাহিয়া নিশ্চয়ই চাইবে না ফারাজ বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্বে ধুকে ধুকে জীবন কাটাক।মাহিয়াকে ভুলতে বলছি না আমি। সে থাকুক মনে। কিন্তু জীবনেও তো কাউকে দরকার৷ আর আমার মনে হয় নীতি মনের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে।’

ফারাজ ভাবছে। ফায়াদের কথা ভাবাচ্ছে। ফারাজ যতবার ভেঙে পড়েছে ততবার ফায়াদ তাকে টেনে তুলেছে। তাই পরিস্থিতি নিজের মতো না হলে ফায়াদকে আগে মনে পড়ে ফারাজের।

ফারাজ বলল,
‘নীতি এখন যদি না মানে? ‘

ফায়াদ কাধ চাপড়ে বলল,
‘আরো একবার ভার্সিটি লাইফের রোমিও ফারাজ হয়ে যাবি।’

ফারাজ হেসে দিল। ফায়াদ বলল,
‘লাইফ তোকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছে। কাজে লাগা’

‘হুম’

দুভাই অনেকটা সময় কথা বলল।ফারাজের মন হালকা হলো।
ফায়াদ উঠে দাড়ালো। বলল,
‘ঘুমাতে গেলাম। রুম সাফ কর। গন্ধে টিকা যাচ্ছে না।’

ফারাজও উঠে দাড়ালো। ফায়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘থ্যাংক ইউ ভাই’

ফায়াদ ফারাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বাকা হেসে ফারাজের পেটে ঘুষি মেরে বলল,
‘তোর থ্যাংক ইউ তুই ধুয়ে পানি খা। তোর জন্য আমার কোয়ালিটি টাইম নষ্ট হয়ে গেছে।শা’লা সিগারেট কম খাবি। বমি আসতেছে।’

বলে সে বেরিয়ে গেল ফারাজের রুম থেকে। ফারাজ পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে আবারো বসে পড়লো বারান্দার ফ্লোরে।
মোবাইল বের করে লাস্ট ম্যাসেজ টা আবার দেখলো যেখানে নীতি লিখেছে,
‘আমি আজ হোটেলে থাকবো। কিছুটা টাইম দরকার আমার। কাল অফিসে টাইমলি এসে পড়বো স্যার। আপনি টেনশন করবেন না।’

ফারাজ ম্যাসেজ টা দেখে বিরবির করলো,
‘হুম কাল থেকে নতুন কিছু হবে আপনার লাইফে।টাইম তো দরকারই।’

——————–

সকালে ঘুম ভাঙলেও অপরাজিতা বিছানা থেকে উঠলো না। কাল রাতের কথা ভাবছে আর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। ফায়াদ চলে না গেলে হয়তো কাল এক অন্যরকম রাত কাটতো তাদের।
ভাবতে ভাবতেই বাক্সের কথা মনে পড়লো। উঠে বাক্সটা নিয়ে আবার খুললো।

বাক্সটার মধ্যে ছোট ছোট চিরকুট আছে অনেকগুলো।ফায়াদ লিখেছে। চিরকুট গুলো তখন থেকে লিখা যখন থেকে ফায়াদের অনুভূতি শুরু।আবার পড়তে শুরু করলো সে চিরকুট গুলো।

‘আজকাল বড্ড বেড়ে গিয়েছো।এভাবে হুটহাট মনে মধ্যে হানা দিচ্ছ কেন?’

‘তোমাকে আমি ভাবতে চাই না কিন্তু তুমি আমাকে ভাবাচ্ছো।ভীষণ করে ভাবাচ্ছো।আমি কি নিজেকে ধরে রাখতে পারবো?’

‘পুচকি ফুল! এতো ভালোবাসো কিভাবে? আমি তো অনুভূতিতে হারিয়ে যাচ্ছি।’

‘আমি বোধ হয় ভালোবাসায় আটকে যাচ্ছি।’

‘তোমাকে মনে পড়ে।তুমি এতো ছোট কেন?আরেকটু বড় হতে।’

এটা পড়ে হেসে দিল। বুঝাই যাচ্ছে যখন যা মন চেয়েছে লিখেছে সে। এরকম অনেকগুলো।সর্বশেষ যেটা লিখা হয়েছে তা হলো,
‘তোমায় আমি ছাড়ছি না।পা’গল করে দিচ্ছো। প্রেম প্রেম অনুভূতির তাড়নায় পা’গল হয়ে যাচ্ছি।’

সবগুলো পড়ে অপরাজিতা বাক্সটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো আবার। ফায়াদের ফোনে ভয়েস ম্যাসেজ পাঠালো,
‘পা’গল হয়ে যান ডাক্তার সাহেব।আমার জন্য। এজীবনে শুধু আমারই রয়ে যান।’

‘কিরে এ+ পেয়েছিস বলে কি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিস?উঠিস না কেন? ক্লাস আছে না?’

মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙলো তার।বলল,
‘আসছি আসছি।’

ফারাজের আজকে ঘুম ভেঙেছে খুব লেটে।অফিসে গেল বেশ বেলা করে। অনেক দিন পর তার আজ অনেক ফুরফুরে লাগছে।অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকেই দেখলো নীতি মুখ লটকিয়ে বসে আছে।নীতিকে এভাবে দেখে চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?’

‘সকালে মিটিং ছিল।আপনি কই ছিলেন?’

ফারাজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘ঘুমে ছিলাম।’

এরকম ভাবলেশহীন দেখে নীতির রাগ লাগলো।তবুও বলল,আ
‘আচ্ছা।’

নীতি চলে যেতে নিতেই ফারাজ বলল,
‘মিস.নীতি?’

নীতি পিছু ঘুরলো। ফারাজ বলল,
‘এক কাপ কফি প্লিজ!’

নীতি বেরিয়ে গেল কফি আনতে। কফি এনে দিতেই ফারাজ কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
‘চিনি বেশি দিয়েছেন’

নীতি ভ্রু কুচকে বলল,
‘আমি চিনি দেই নি তো’

ফারাজ নীতিকে বলল,
‘আপনি চেক করে দেখেন’

নীতি কফি মগ নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেক করছে মগের তলায় চিনি আছে নাকি।সে বলল,
‘আমি চিনি নেই নি স্যার।’

ফারাজ সিরিয়াস ভাবে বলল,
‘কিন্তু অনেক মিষ্টি হয়েছে।’

নীতি কপাল কুচকে ভাবছে। সে তো চিনি দেয় নি। তাহলে? ফারাজ তাকিয়ে আছে নীতির ভাবুক চেহারার দিকে। ইশ কি কিউট লাগছে!

নীতি আবার বলল,
‘এটা তো ব্লাক কফি, আমি চিনি কেন দিব বলেন?’

ফারাজ এবার বুঝতে পেরেছে এমনভাবে বলল,
‘ওহ আচ্ছা? এটা ব্লাক কফি ছিল? তার মানে ঠিক আছে। দিন তো’

কফির মগ টা নীতির হাত থেকে নিয়ে আবার চুমুক দিল। বলল,
‘হ্যা ঠিকই বলেছেন।চিনি নেই’

বলে মিটমিট হাসতে লাগলো। নীতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এটা কি ছিল।উনি কি পাগল হয়ে গেল? নীতিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারাজ খোচা মেরে বলল,
‘আমি জানি আমি সুন্দর।আর কতো দেখবেন?’

নীতি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলল।পরক্ষণেই আবার চোখ পাকিয়ে তাকালো ফারাজের দিকে। তারপর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
নীতিকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে ফারাজ উচ্চস্বরে হেসে দিল।

ফায়াদ অপরাজিতার ভয়েস ম্যাসেজ শুনলো দুপুরের পর। বুঝলো বাক্স খুলে সব পড়া হয়ে গিয়েছে। সে ফোন করলো অপরাজিতাকে। ফোন রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় তুমি?’

‘ক্যাফে’

‘কার সাথে?’

‘একটা ফ্রেন্ড ‘

‘তুমি আবার কবে থেকে ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যাফে বসো?’

‘আজকে থেকে জনাব’

ফায়াদ প্রশ্ন করলো,
‘ফ্রেন্ড টা কে?’

অপরাজিতা তার সামনের জনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটা মেয়ে। আমার সাথেই পড়ে।’

‘আচ্ছা। তাহলে পরে কল করছি। তোমরা এনজয় করো।’

‘জি’

ফোন রেখেই অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকালো সামনের জনের দিকে। বলল,
‘আপনি আমাকে মিথ্যা বলালেন ভাইয়া?’

ফারাজ হাসি মুখে বলল,
‘স্যরি গো পুচকি ভাবি। আমার খুবই দরকার ছিল আপনার হেল্প।বাকিদের সারপ্রাইজ দিতে চাই। একাও প্লান করতে পারতাম কিন্তু একা বেশি কিছু মাথায় আসতো না।আপনার মাথা তো আবার এদিকে চলে’

অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘তবুও!’

ফারাজ বলল,
‘ভাইকে আমি পরে বলব। রিল্যাক্স।’

‘হুম’

তারা দুজনে অনেক আলোচনা করে অনেক কিছু প্লান করলো। তারপর ক্যাফে থেকে বেরিয়ে ফারাজ অপরাজিতাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিল।যাওয়ার আগে ফারাজ অপরাজিতাকে দুষ্টুমির স্বরে বলল,
‘ছোট ভাবি। কালকের জন্য স্যরি।’

বলে ফারাজ অপেক্ষা করে নি। সে চলে গিয়েছে।অপরাজিতা ভাবছে স্যরি কিসের জন্য ছিল। কাল কি হয়েছে?অনেকক্ষন ভাবার পরে অপরাজিতার বোধগম্য হলো স্যরি কিসের।অপরাজিতা লজ্জায় পড়ে গেল।মনে মনে ভাবলো,
‘অসভ্য ভাই দুইটা!এগুলো ও শেয়ার করা লাগে? আবার স্যরিও বলছে। হায়হায়!’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here