রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব ৩২

0
236

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৮২,
বেডরুমে বিছানায় বসে নিজের চাপা দুহাতে চেপে বসে আছে রিয়ানা। মাথা ভারের চোটে ইচ্ছে করছে না চোখ মেলে তাকাতে। রাতের কথা হুঁশ হতেই সে জোড় করেই চোখ মেললো। পুরো রুমে নজর বুলিয়ে রায়াদের হদিস পেলো না। দেয়াল ঘড়িতে দেখলো সময় ৯টার ঘর পেরিয়ে গেছে। ১১:১৫তে তার ক্লাস আছে। রেডি হতে হবে। আবার এই ছেলে কি করে আসলো এখানে! জানতে হবে। একহাতে মাথা চেপে ধরে বিছানা থেকে নামলো সে। নিজের পরনে লং স্কার্ট আর টিশার্ট দেখে একটু অবাক হলো। পরে হলো রায়াদ পাল্টিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে একটুও তার মাঝে কোনো ভাবনার উদয় হলো না। একটা ছেলে হয়ে তার কাপড় পাল্টে দিয়েছে! এটা নিয়ে একটু তো অবাক হওয়া উচিত! কিন্তু তারমাঝে কোনো অনুভূতি কেন কাজ করছে না! বুঝতে পারল না রিয়ানা। শরীরের তাল সামলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। লিভিং রুমে পা রাখতেই দেখলো রায়াদ কিচেনে চুলায় কিছু একটা বসিয়ে লন্ড্রি এরেয়ায় পা বাড়িয়েছে। বাসার নিচতলায় লিভিং রুম, তার মুখোমুখি কিচেন। একপাশে ব্যাজমেন্ট, যেটা রিয়ানা লন্ড্রি হিসেবেই ইউজ করে। রায়াদ সেখানে গিয়ে রিয়ানার রাতে চেঞ্জ করা কাপড় ওয়াশ করার জন্য সব হাতড়ে দেখছে। রিয়ানা ক্লান্ত শরীর-টা টেনে সোফায় গিয়ে বসে এলিয়ে দিলো। চোখ বুজে বললো,

“আমি ঠিক হই। ওয়াশ করে নিবো। আপনার এত ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই।”

রিয়ানার কথা রায়াদের কর্ণগোচর হতেই সে ফিরে তাকালো রিয়ানার দিকে। রিয়ানা চোখ বুজেই রয়েছে। তাকিয়ে দেখল না রায়াদের প্রতিক্রিয়া। রিয়ানার জ্ঞান ফিরেছে দেখে রায়াদ মুহুর্তে ছুঁটে আসলো রিয়ানার কাছে। রিয়ানার উপর একটু ঝুঁকে কপালে গালে স্পর্শ করে দেখল জ্বর আছে কিনা! শরীর ঠান্ডা দেখে বিস্মিত হয়ে বলল,

“একটু আগেও জ্বরে শরীরে ভাপ উঠছিলো। এখনই ঠান্ডা! অদ্ভুত।”

রায়াদের ব্যস্ত ভঙ্গিমায় রিয়ানার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা দিলো না। সে চুপচাপ রইলো। রিনরিনে স্বরে বলল,

“এক মগ কড়া লিকারের চা করে দিন তো। অসহ্য মাথা ব্যথা করছে।”

রায়াদ রিয়ানার কথায় থমকালো। সে ভেবেছিলো তার কথায় রিয়ানা রাগবে। ঝগড়া করবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না বলে অবাক হলো। ড্রেস পাল্টে দেওয়া! একবার জিগাসা করলোও না যে, কে পাল্টে দিলো! বাই এনি চান্স রিয়ানা ভাবলো না তো! সে পাল্টে দিয়েছে। এটা ভাবলে তো মহা মুশকিল। সে যা করেনি; তার দায়ভার সে কেন নিবে? রায়াদ নিজ দায়িত্বেই বললো,

“আপনার ড্রেস আমি নই। আপনার পাশের বাসায় বসবাস রত আপনার ক্লাসমেইট পিউয়ি পাল্টে দিয়েছে। কি নাম রে বাপ! উচ্চারণ করতে দাঁত নড়ে যায়।”

রিয়ানা এতেও ঘাবড়ালো না। সে শান্ত ভঙ্গিতেই বসে রইলো। আবার একটু আওয়াজ দিয়ে বললো,

“আমার চা চাই। দিতে পারলে বলেন। নতুবা বের হোন বাসা থেকে।”

রিয়ানার এমন কথায় রায়াদ বিরক্ত হলো। তাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য বাসায় থাকতে দিচ্ছে? কিন্তু রিয়ানার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে নিশ্চুপে কিচেনে গিয়ে চায়ের জন্য পানি গরম বসালো। এমনিই সকালে খাবার জন্য সে ভাত বসিয়েছে চুলোয়। ক্ষুধায় তার অবস্থা খারাপ। কিচেনে ফ্রিজে তেমন কিছু খুজে না পেয়ে চাল খুঁজে ভাত বসিয়ে দিয়েছে। সাথে আলু পেয়ে তা সিদ্ধ হতে দিয়েছে। আলুভর্তা করে ভাত খেয়ে নিবে আপাতত। ভেবেছিলো রিয়ানার সেন্স আসতে দেরি হবে! একা রেখে বাইরে যাওয়াও মুশকিল। কখন আবার কোন অবস্থা হয়! এই ভেবে কিচেন হাতরে যা পেয়েছে। তাই রাঁধতে শুরু করেছে সে। চলার মতল টুকটাক রান্না জানে রায়াদ। তার মা বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকে কোমড়ের অসুখ নিয়ে। এজন্য ঠ্যাকা কাজ পারি দিতে অল্পস্বল্প রান্না সে শিখেছে। রোজা তো সবসময় বাসায় থাকে না! সেক্ষেত্রে তার পেটের দায় এড়াতে শিখতেই হয়েছে। সবসময় তো বাইরে খাওয়া যায় না। ভাত দেখতে দেখতে ঝটপট চা বানিয়ে নিলো রায়াদ। কড়া লিকার দিয়ে তিতকুটে ধরণের চা বানিয়ে নিয়েছে সে। গলায় পরলে ঠান্ডার মধ্যে একটু আরাম পাবে। কিচেনের কোথায় কি! সব ঘেটে দেখা শেষ তার।

৮৩,
চা বানিয়ে নিয়ে রিয়ানার সামনে গিয়ে দাড়ালো রায়াদ। এগিয়ে দিলো রিয়ানার দিকে। রিয়ানা কপালে হাত রেখে মাথা সোফায় এলিয়ে চেখ বুজে ছিলো। রায়াদ চা এগিয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বললো,

“আপনার চা!”

রিয়ানা চোখ মেলে তাকালো। হাত বারিয়ে চায়ের মগ নিয়ে চুমুক দিলো। রায়াদকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

“বসুন আমার পাশে।”

রায়াদ সংকোচ নিয়ে রিয়ানার থেকে একহাত দূরত্ব রেখে বসলো। রিয়ানা তা দেখে একটু হাসলো। হাসি প্রশস্ত করে বললো,

“পিউয়ি ওত রাতে সারা দিলো? ও আমার ক্লাসমেইট জানলেন কি করে?”

“আয়াত বলেছে।”

“বাহ, আপু এসেছে কানে ভেসে এসেছিলো। আপনি এসেছেন আন্দাজ করিনি। আপুকে সবাই চিনে ওখানের। আপনাকে নয়। এজন্য বুঝতে পারিনি। তা আপু এসে এখানের সব খোঁজ নিয়েও গেছে দেখছি!”

“আপনার কি মনে হয়? আপনি কাউকে ভালোবাসেন না বলে আপনাকে কেউ ভালোবাসে না?”

কঠোর গলায় বললো রায়াদ। রিয়ানা চায়ের কাপে চুমুকের পর চুমুক দিয়ে চা শেষ করে আলস্য ভঙ্গিতে আবারও গা এলিয়ে বললো,

“আপনার রান্না আগে শেষ করুন। খেয়ে দেয়ে বিদায় হোন। আমার ভালো লাগছেনা।”

রায়াদ কিছু বললো না। রিয়ানার কথামতো কিচেনে এসে দেখলো ভাত হয়ে গেছে। আলুও সিদ্ধ হয়েছে। খাওয়ার তাগিদ-টা ততক্ষণে দমে গেছে। সব প্লেটে বেড়ে ঠান্ডা হতে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে রায়াদ এসে নিজের জায়গায় বসলো। থমথমে গলায় বললো,

“অনেক তো হলো খামখেয়ালি। এবার কি সিরিয়াস হওয়া উচিত নয় আপনার?”

“কি খামখেয়ালি করলাম?”

রিয়ানা বিস্মিত হয়ে শুধালো। রায়াদ নিস্তেজ ভঙ্গিতে রিয়ানার দিকপ করুণ চাহনীতে তাকালো। রিয়ানার ভাবভঙ্গিতে সিরিয়াসনেস না দেখে রেগে একদম রিয়ানার বাহুতে হাত দিয়ে চেপে ধরলো। কঠিন স্বরে বললো,

“বুঝতে পারেন না ভালোবাসি! তবে এত কেন অবহেলা? একজনের ভালোবাসা না হয় সফট কর্ণার! মায়া, আবেগ মনে হয়েছিলো! আমার টাও কি তাই মনে হয়? থাপ্পড় চিনেন? আমার অনুভূতি নিয়ে ফাইজলামি করলে ঠাস ঠাস করে গালে বসিয়ে দিবো। পেয়েছেন টা কি আমায় হ্যাঁ? নিরবে চলে আসলেন! এচত সহজ মনে হলো সবকিছু? একবারও ভাবেননি আমার কি অবস্থা হবে? আপনার উপস্থিতিতে আমার একটুও যন্ত্রণা হয়নি। চলে আসলেন। সেই শূণ্যতায় আমায় ভাবনায, যাতনায় পুড়িয়েছে। কি চান আর! আমি মরে যাই?”

রায়াদের প্রতিটা কথায় ক্ষোভের পাশাপাশি অসহায়ত্ব খুঁজে পেলো রিয়ানা। সে স্মিত হেসে বললো,

“অনুভূতি শূণ্য নিষ্ঠুর হৃদয়ের অধিকারীনির কাছে এসে অনুভূতির কথা ব্যক্ত করছেন? অদ্ভুত! মানুষ মানুষের অভাবে মরে না! (কালেক্টেড) শুননেনি এই কথা?”

রায়াদের ক্ষোভ কমে আসলো। ঠান্ডা গলায় বললো,

“আপনি দিনদিন আর কত পাথর হবেন? ভালোবেসেছেন, তার জন্য অনুভূতি দাফন করে ফেলেছেন বলেন! তবে ২য় সূচনায় এত বিপত্তি কপন?”

“আমায় আপনি আদৌও ভালোবাসেন? আপনার মনে নেই কি বলেছিলেন? আপুর কথায় আপনি আমার আগলানোর একটা সুযোগ চান?”

“আসলে কি বলুন তো রিয়ানা! আমি মানুষ-টা কখনও ভালোবাসা! মানুষকে আপন করে পাওয়ার ইচ্ছে! একদমই ভাবিনি। ভাবলে হয়তো আয়াতের কথা আপনাকে বলতামই না। আপনার প্রতি আমার অনুভূতি-টা ঠিক কি? আমিও বুঝতে পারতাম না। ধরতেও পারতাম না। আয়াত আর জুবায়ের বুঝিয়েছে। এরপর তো আপনার শূণ্যতা আমায় সব-টা কড়ায়-গন্ডায় বুঝিয়েছে। একটা বছর কি করে প্রতিটা দিন কেটেছে! এক আল্লাহ আর ২আমি জানি। আমার ভেতর-টা চিরে আপনাকে দেখাতে পারিনি।”

রায়াদ শান্ত স্বরে রিয়ানার কথার জবাব দিলো। রিয়ানা সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো,

“আমার সময় চাই। এভাবে কিছু হয়না।”

৮৪,
“সময় নিয়ে এরপর কি সাজ্জাদ ভাইয়ের মতো আমায় নাকচ করে দিবেন?”

রায়াদের প্রশ্নে পা থেমে গেলো রিয়ানার। পিছন ফিরে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,

“সাজ্জাদ ভাইয়ের কথা ২য় বার আমার সামনে বলবেন না। পরিণাম ভালো হবে না। সে অন্যের স্বামী। আমার অতীত। একপাক্ষিক অতীত। সে আমার সাথে জড়ালে আমি দূরে থেকেছি। আমি জড়াতে গেলে সে ধরাছোয়ার বাইরে ছিলো। তাই তার কথা ২য় বার বলা একদমই ঠিক হবেনা।”

রিয়ানা রুমে চলে যায়। রায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সোফায় গা এলিয়ে দু আঙুলে কপাল চেপে ধরে। শান্ত স্বরে ধারালো অস্ত্রের ন্যায় খোঁচা দিয়ে গেলো মেয়ে-টা। আগের থেকে নিস্তেজ মনে হলেও এখনও তেজ একবিন্দুও কমেনি। রায়াদ উঠে আলুভর্তার জন্য কাচা মরিচ হাতের কাছে পেয়ে ভেজে নিয়ে ভর্তা করলো। এরপর ফ্রিজ থেকে দু’টো ডিম নিয়ে ভাজলো। ভাত সাজিয়ে রিয়ানাকে ডাকলো সে। রিয়ানার সারাশব্দ না পেয়ে উপরতলায় এসে দরজার সামনে গিয়ে নক করলো রায়াদ। কিন্তু রিয়ানার সারাশব্দ না পেয়ে রুমে ঢুকবে কি ঢুকবেনা! সংকোচ নিয়ে সরে আসলো নিচে। এরমাঝে কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসলো রায়াদের কানে। আয়াত-রা এসেছে ভেবে দ্রুত পদে এসে দরজা খুলে দিলো সে। কিন্তু দরজা খুলতেই একজন ছেলে-কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে জিগাস্যু দৃষ্টিতে তাকায়। ছেলে-টা জার্মানির ভাষায় কিছু একটা বললো। বাট রায়াদ আধো বুঝলো আধো বুঝলোনা। তাই ইংলিশে বললো,

“আমার সাথে ইংলিশে কথা বলুন। আমি জার্মানির ভাষা বুঝিনা।”

ছেলে-টা এবার হাসলো। ধবধবে ফর্সা ছেলে-টার চোখের মনি দু’টো একদম নীল। ছেলে-টাকে বিনাশব্দে দাড়িয়ে হাসতে দেখে রায়াদ বিরবির করে বলে উঠলো,

“উজবুকের ঘরের উজবুক। ব্রয়লার মুরগীর কেমন দাড়িয়ে আছে। ইংলিশও বুঝেনা নাকি!”

রায়াদের পরে মনে পরলো জার্মানিতে ইংলিশের থেকে নিজেদের ভাষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ছেলে-টার কাঁধে কলেজের ব্যাগ ঝুলছে। শিক্ষিত-ই তো। ইংলিশ অজানা হওয়ার তো কথা না। রায়াদপর ভাবনা চিন্তার মাঝেই রিয়ানা নিচে নেমে আসলো। পরনে ফুল জিন্স আর লেডিস শার্ট। ভেজা চুল বেয়ে টপটপিয়ে পানি পরছে । রায়াদ সেদিকে তাকিয়ে বুঝলো রিয়ানা গোসল করলো এতক্ষণ। কিন্তু রিয়ানা রায়াদকে পাশ কাটিয়ে ছেলে-টার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে জার্মানি ভাষায় বলে উঠলো,

“হেই ভ্লাদ। কখন আসলে? লিনা কোথায়? একা কেন তুমি?”

“আরে রিলাক্স। আস্তেধীরে বলছি। তারআগে বলো ভার্সিটি যাবে না তুমি?”

ভ্লাদের জবাবে রিয়ানা ওর হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালো। মুখোমুখি বসে বললো,

“এতদিন পর দেখা। একটু তো আনন্দে হাইপার হওয়াই যায়। আমার কথা মনে পরলো তবে?”

ভ্লাদের সাথে রিয়ানা আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এদিকে রায়াদ রাগে ফুঁসছে। তার যে অস্তিত্ব এখানে বিরাজ করছে! একটুও খেয়াল নেই রিয়ানার। তারমাঝে দেখো; ঐ ছেলের সাথে কত হাসিখুশি। আর তার সামনে হাসি বেরোয়-ই না। যেন হাসার জন্য দাম দিতে হবে? রায়াদ রাগের চোটে বাসা ছেড়েই দুম করে দরজা আগিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পরলো। রিয়ানা দরজা লাগানোর শব্দে সামনে তাকিয়ে রায়াদকে বেরুতে দেখে চিন্তিত হয়ে পরলো। এই ছেলে এখানকার কিছু চিনেনা। একা আবার কই যায়! গতকাল হয়তো গাড়িতে করে কেউ দিয়ে গিয়েছিলো! কিছুই তো তার ঠিকভাবে শোনা হয়নি। কিন্তু এখন গেলো টা কই! রিয়ানা ভ্লাদকে বলে দরজা খুলে বেরিয়ে পরলো। বাট রাস্তায় নেমে কোথায় রায়াদের ছায়া-টাও দেখলো না। আজব তো! এই ছেলে ২-৩মিনিটে কোথায় গেলো? রিয়ানা চিন্তিত ভঙ্গিতে সেন্টারের দিকে পা বাড়ালো।

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here