#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৫২,
রিয়ানার কথার জবাবে রায়াদ বলে উঠলো,
“আংকেলকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর উনি-ই সাথো আনলেন। আর বেশি সমস্যা হলে উনি ঢাকায় ফিরবেন বলেছেন। এজন্য আমিও সাথে আসলাম। অসুস্থ মানুষ-কে নিয়ে আপনাদের দুজনের ফিরতে যদি কোনো সমস্যা হয়!”
রিয়ানা আর জবাব দিলো না। রায়াদকে পাশ কাটিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। রায়াদ ভ্রু-কুটি করে তাকিয়ে রইলো রিয়ানার পানে। মনে মনে প্রশ্ন জাগলো তার, ‘এতগুলার কথা কি একটা উত্তর ডিজার্ভ করেনা? এভাবে এভয়েড করে যায় কোনো মানুষ?’ রায়াদের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো,
“অবশ্যই যায়। মেয়ে-টা যদি রিয়ানা হোসাইন হয়! তবে অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আস্তো বেয়াদব এক মেয়ে।”
রায়াদ বিরক্ত হলো নিজের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোর প্রতি। হাঁটা ধরলো উপরদিকে। ফ্রেশ হওয়ার জন্য সাজ্জাদ বলেছিলো তার রুমে যেতে। কারণ ওখানেই একমাত্র ছেলেদের ফ্রেশ হওয়ার সবকিছু পাওয়া যাবে। সেজন্য রায়াদ উপরতলায় উঠছিলো। দুজন দু’দিকে নিজেদের স্থানে পৌঁছে ক্ষান্ত হয়। রিয়ানা ড্রইং রুমে পা ফেলতেই সোফায় বসা নিজের বাবার দিকে তাকায়। ক্লান্ত, অসুস্থ শরীর-টা সোফায় এলিয়ে শুয়ে রয়েছে। রিয়ানার বুকের মাঝে ধ্বক করে উঠে। তার সুস্থ সবল তেজী বাবা-টা ২-৩দিনের ব্যবধানে কেমন নেতিয়ে গেছে। দূর থেকেই বাবাকে দেখলো রিয়ানা। কাছে গেলো না। গেলেই আবার কোন সীন ক্রিয়েট হয়! তার ভরসা নেই। আয়াত হানিফ হোসাইনের পাশে বসা। অন্য পাশে আরিফ হোসাইন। অন্তির দেখা মিললো না। সাজ্জাদ সিঙ্গেল সোফায় বসে ফোনে কিছু একটা করতে ব্যস্ত। আসিফা বেগম তখন ট্রে-তে করে লেবুর শরবত করে নিয়ে আসলেন সবার জন্য। যে গরম পরেছে আজকাল! বাংলাদেশের এই একটা বিষয় রিয়ানার একদম অপছন্দ। সেটা হচ্ছে গরম। এই গরমে আর ধুলাবালিতে তার দেশে-ই আসার মনোভাব দমে যায়। না আসলে মন আকুপাকু করে। আসলে এই সমস্যাগুলো ফেইস করতে হয়। আবার শীতকালে আসলেও সমস্যার শেষ নেই। শীতপ্রধান দেশের একটিতে থেকে যা সমস্যা না হয়! এই সাময়িক শীতের দেশে এসে তার ঠান্ডা জ্বর লেগেই থাকে। এর আগের বার তো শীতের ভ্যাকেশনে এসেছিলো। সাজ্জাদের বিয়ের সময়। সেবার একদম যা তা অবস্থা হয়েছিলো রিয়ানা। হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ দিয়ে মেখে একাকার অবস্থা। সন্ধ্যা সময় গোসল দিয়ে ১০৩° ঘরে জ্বর উঠেছিলো। আগের সময়ের কথা মনে পরতেই রিয়ানার মনের ভিতর-টা দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠলো। না চাইতেও দৃষ্টি গিয়ে থামলো সাজ্জাদের পানে। এক নাগারে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষন। আচমকা সাজ্জাদও দৃষ্টি ফেরাতে দুজনের চোখাচোখি হলো বেশ ভালো ভাবেই। রিয়ানা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো চট করে। উপর তলায় হাঁটা ধরলো। রায়াদ উপর তলায় দাড়িয়ে রিয়ানার প্রতি-টা গতিবিধি লক্ষ্য করলো। সাজ্জাদ আর রিয়ানা দুজন-ই তার থেকে গম্ভীর মানুষ। এদের মাঝে কি কিছু ছিল আগে? কাজিন হয়! অথচ কোনো মিল নেই? রায়াদের মনে প্রশ্ন-রা দানা বাঁধলো। উত্তর গুলো নিশ্চিত ডায়েরিতে আছে। কিন্তু ডায়েরী জুবায়েরের কাছে আছে। রিয়ানা উপরে এসে রায়াদকে ফ্লোরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। শুধালো,
“আমার ডায়েরী কোথায়?”
“পড়ার সুযোগ দিয়েছেন নাকি? ডায়েরীর খোজ পরে গেলো যে?”
রায়াদ রিয়ানার প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত বেঁধে প্রশ্ন করে। রিয়ানা আগের থেকেও কড়া গলায় বলে,
“আমার জিনিস, আমি ফেরত চেয়েছি। এতে খোজ পরার কি হলো?”
“দিয়ে দিবো। খালি হাত পায়ে এসেছি। আপনার ডায়েরী তো টেনে আনতে পারবো না! তাইনা?”
রিয়ানা জবাব দিলো না। এড়িয়ে নিজের রুমে ঢুকে পরলো রিয়ানা। রায়াদ হাফ ছাড়লো। বিরবির করে বললো,
“খোদা তায়ালা দিয়েছে আপনাকে এটিটিউড। এতদিন খেয়াল করিনি। এখন খেয়াল করতে বসে দেখছি আমার ব্যক্তিত্ব আপনার ব্যক্তিত্বের এক কোণাতেও যায় না।”
৫৩,
পরদিন সকালবেলায়। সাজ্জাদ গোসল দিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছিলো। আলমারী থেকে নিজের কাপড় বের করে লুঙ্গি ছেড়ে ফরমাল ড্রেসে রেডি হয়ে নিলো। উদ্দেশ্য অফিস যাওয়া। কয়েকদিন চাচাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কাজের দিকে খেয়াল করা হয়নি। অফিসের কি অবস্থা কে জানে? এরমাঝে আরেক ঝামেলা নিজের দাদুর নিজ পরিশ্রমে দাড় করিয়ে রেখে যাওয়া কাপরের বিজনেস-টায় তার চাচারও হক আছে। সেসব নিয়ে ভাগাভাগির কথা-ই চলছে। হানিফ হোসাইন নিজের ভাগ ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। তার বাবা নিতে রাজী নয়। সাজ্জাদও নিতে রাজী না। বোঝাতে গিয়ে একপ্রকার বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে পরেছিলো তার বাবা আর চাচা। হানিফ হোসাইনের অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার ফলে আর মেয়েদের টেনশনে হার্টের অসুখ জেগে যায়৷ আয়াতের যেন তেন রিয়ানার ফিউচার কি হবে? এটাই মূল চিন্তা। রিয়ানার কথা মনে আসতেই সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আজ অফিস থেকে আর বাসায় আসবেনা। নিজেদের বাগান বাড়িতে চলে যাবে। এখানে আসা মানেই রিয়ানার মুখোমুখি হওয়া। আর পুরোনো ক্ষততে ছুড়ি দিয়ে খোঁচানোর মতো কষ্ট। সাজ্জাদ পুরোপুরি রেডি হয়ে হাতে ঘড়ি পরতে ব্যস্ত ছিলো। তখনই অন্তি রুমে আসে। অন্তিকে দেখে সাজ্জাদ এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। ঘড়ি পরে অফিসের ফাইল, ল্যাপটপ, ফোন, আর ব্লেজার-টা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতে-ই অন্তি বলে উঠলো,
“পুরোনো প্রেমিকাকে চোখের সামনে দেখে পালাতে চাচ্ছেন?”
সাজ্জাদের পা থেমে যায়৷ ঘাড় ঘুরিয়ে অন্তির পানে তাকায়৷ অন্তি বিছানায় বসে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে পা দোলাচ্ছে। ফর্সা মুখ-টা লাল টকটকে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মিলছে কপাল ঘেষে। সাজ্জাদ শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
“রাতের কথা ভুলে যাচ্ছো অন্তি। তোমার অধিকার-টা কি আরও একবার মনে করিয়ে দিতে বলছো এই সাত সকালে? কতবার বোঝাবো তোমায়, রিয়ানা কখনও আমায় ভালোবাসেনি। আমি বেসেছি। হয়তো মনের কোথাও একটা রয়ে গেছে সে। তারমানে আমি এটা ভুলে যাবো না, তুমি আমার স্ত্রী। আর তোমার পরে আমার জীবনে আরও একটা নারীর অস্তিত্ব জুড়ে বসবে? এই ধারণা পাল্টাবে না তোমার? রিয়ানাকে জড়িয়ে আল্লাহর দোহায় লাগে, আর কিছু বলবেনা।”
অন্তির চুপ হয়ে যায় সাজ্জাদের কথায়। মনে পরে যায় রাতের কথা। সাজ্জাদের তার কাছে আসার কথা। রিয়ানার করা অপমানের কথা বলতেই সাজ্জাদের জবাব না পেয়ে একপ্রকার ঝগড়া করেছে অন্তি। পুরোনো প্রেমিকা তার বউকে অপমান করবে! অথচ সেটা স্বামী জেনেও তাকে কিছু বলবেনা! তার থেকে রিয়ানার অধিকার বেশি সাজ্জাদের উপর?এটা মানতে পারেনি সে। হালকা চেঁচামেঁচি করতেই সাজ্জাদ তার শাড়ির আঁচলে টান ফেলেছিলো। এরপর সাজ্জাদের উপর তার অধিকার-টা সাজ্জাদ ভালো মতোই বুঝিয়ে দিয়েছে। অন্তি সেসব কথা মনে পরতেই ফাঁকা ঢোক গিললো। সাজ্জাদ তখনও অন্তির জবাবের আশায় তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার জবাব না পেয়ে সে দু কদম আগালো। অন্তির মুখের উপর উবু হয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
“মিসেস অন্তি, ডোন্ট ফরগেট ইউর আইডেন্টিটি। সাজ্জাদ হোসাইনের ওয়াইফ আপনি। সাজ্জাদ হোসাইন আর যাই হোক, নিজের স্ত্রী-কে ঠকাতে শিখেনি। শিখলে আপনাকে আপনার ভুলের জন্যই ছেড়ে দিতাম। হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করবোনা, রিয়ানার প্রতি আমার ভালোবাসা মরেনি। আমার চরিত্রে দোষ আছে। আপনার ভাষ্যমতে, আমি দু নৌকায় পা দিয়ে ভাসছি। ভুলে যাবেন না, এক নৌকা! যেটা রিয়ানা নামক নাম দিয়েছেন আপনি? সে নৌকায় আমার ঠাই মেলেনি। আর আপনার নৌকায় আমি বাঁচার জন্য ঠাই নিয়েছি। এসব বলে আমায় জলে ডুবিয়ে মারবেন না আর। বুকের বা পাশ-টায় তিক্ত কষ্ট অনুভব হয়। দয়া করে একটু আমায় বোঝার চেষ্টা করুন৷ আমার একটু ভালোবাসার প্রয়োজন। আমার একটু শান্তি প্রয়োজন। আমি ভালো হতে চাই। ভালো থাকতে চাই। তাই দয়া করে একটু আমার পাশে থাকুন। সবকিছু আমার সহ্য সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে দিনদিন।”
সাজ্জাদ একদমে কথাগুলো বলে রুম ছাড়লো। অন্তি শ্বাস ছাড়লো সাজ্জাদ চলে যেতেই। এতক্ষণ কাছে এসে থাকায় দম-টা আঁটকে গিয়েছিলো যেন আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো অন্তির। কাঁধের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে সাজ্জাদের আদর না হিংসাত্মক আচরণ! কোনটার চিহ্ন বলবে অন্তি? সেই চিহ্ন-টায় হাত বোলালো। সম্পর্ক-টার কোনো কূল খুজে পায়না অন্তি। এটা নতুন না যে সাজ্জাদ প্রথম বার তার কাছে এসেছে। বারেবারে, বহুবার সাজ্জাদকে আপন করে পেয়েছে। দুজন নারী পুরুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকবে! এক ছাঁদের তলায় থাকার পরও একে অপরকে ছোঁবে না এমন টা তো হয় না। সেখানে তো দুজন স্বামী স্ত্রী। সম্পর্ক টাকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টায় নেমে একে অপরের অনেক বার কাছে এসেছে। ভালোবাসার চেষ্টায় মত্ত হয়েছে। কিন্তু দুজনের-ই অতীতের প্রতি একটা উইকনেস থাকায় একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থেকেছে। অন্তির একটু ভয় হয়েছে রিয়ানাকে দেখে। তার যা কড়া ধাচের ব্যক্তিত্ব। যেকোনো ছেলেকে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে সময় লাগবেনা তার। ভয় এই জায়গায় যে, সাজ্জাদ না আবার পুরোদমে রিয়ানার দিকে মন ঘুরিয়ে ফেলে। এসব ভেবেই লম্বা কয়েক-টা শ্বাস ফেলে অন্তি। স্বামী যখন তার, আগলে রাখার দায়িত্ব তার। অনেক হয়েছে বাচ্চামি। এবার ভালো থাকার সাথে রাখার পালা।
৫৪,
বিকেলবেলায়। বাড়িতে কেমন একটা সাজজ সাজ রব পরেছে। আয়াতকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। সেই নিয়ে বাড়িতে তোড়জোড় চলছে সব গোছানোর। রিয়ানার এতে হইচই ভালো লাগেনা। এজন্য কফি বানিয়ে নিয়ে ছাঁদে এসেছে। রিয়ানা ছাঁদে দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে চারপাশ টা দেখতে ব্যাস্ত। সাথে দেখছে দূর মাঠে ১২-১৩বছর বয়সী বাচ্চা ছেলেদের ফুটবল খেলার আনন্দ। তাদের বাড়ি-টা না শহরে, আবার না গ্রামের মাঝে পরে। একদিকে তাকালে মনে হয় শহর। অন্য দিকে তাকালে মনে হয় গ্রাম। তাদের বাড়ি পেরিয়ে গ্রামের সীমানা শুরু। আবার সামনের দিকে শহরের বুকে ঢোকার রাস্তা। আকাশে জাম কালোমেঘ, মৃদু বাতাস আর হাতে গরম কফি। সুন্দর একটা ওয়েদার। বিকেল-টা উপভোগ করার মতো। বাম হাতে থাকা ফোন-টা নিয়ে ডাটা এক্টিভ করলো রিয়ানা। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে বেস্টফ্রেন্ড মাদালিনাকে ভিডিও কল করলো। রিসিভ হবে কিনা দ্বিধায় ছিলো। কিন্তু তার দ্বিধা কাটিয়ে ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো। হতেই সে কিছু বলার আগে ঘুমঘুম চোখে মাদালিনা বললো,
“গুড মর্নিং রিয়া।”
রিয়ানা ফোন-টা কান থেকে নামিয়ে সময় দেখলো। চারটে বাজে। মানে জার্মানিতে ১১টা বাজে। ৫ঘন্টার ব্যবধান। এই মেয়ে এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে ভেবে অবাক হলো রিয়ানা। রাত জেগে পার্টি করে সারাদিন ঘুমায়। রিয়ানা অবাকের সুর টেনে জার্মানির এসেন্ট টেনে জার্মানির ভাষায় বলে উঠে,
“এত সকালে উঠেছো? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“ভ্লাদের সাথে ডেট আছে রিয়া। তুমি নেই, আমায় সাজাবে কে? আই মিস ইউ । প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।”
মাদালিনা বাচ্চাদের মতো সুর টেনে জবাব দিলো। ভ্লাদ মাদালিনার বয়ফ্রেন্ড। রিয়ানা হাসলো ওর কথার ধরণ দেখে। কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
“আমার বাংলাদেশকে দেখবে মাদালিনা? আমার দেশ-টা বড্ড সুন্দর।”
রিয়ানা ক্যামেরা ঘুরিয়ে ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে চার পাশ-টা দেখাতে শুরু করলো। মাদালিনা নিজের ফেস রিয়েকশন ওয়াও টাইপ করে হা করে তাকিয়ে দেখছে। বিস্ময় নিয়ে বললো,
“অনেক ডাস্ট রিয়া। তোমার ডাস্টে সমস্যা হয় তো!”
“আ’ম ফাইন লিনা। প্যানিক হওয়ার প্রয়োজন নেই।”
রিয়ানা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে ধরে কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলো। ছাঁদের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে রায়াদ। তাকে মাদালিনা এক ঝলক দেখতেই বলে উঠে,
“হু ইজ হি রিয়া?”
মাদালিনার প্রশ্নে রিয়ানা চোখের সামনে থেকে ফোন সরায়। রায়াদকে দেখে অবাক হয়। কিন্তু তা চেপে মাদালিনাকে জবাব দেয়,
“বাবার বেস্টফ্রেন্ডের ছেলে। আমি পরে কথা বলবো লিনা। ইনজয় ইউর ডেট।”
“হেই রিয়া, ওয়ান মিনিট। সে তোমার বয়ফ্রেন্ড নয় তো? রিলেশন করছো দেশে গিয়ে?”
মাদালিনার প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় রিয়ানা। এই মেয়ের মুখে শুধু উল্টাপাল্টা কথা। রায়াদ তার বফ হতে যাবে কোন দুঃখে। সে জবাব দেয়,
“নো লিনা। যেমন ভাবছো, কিছু নয়। আমি ব্যাক করে সব জানাবো। নাউ বায়।”
রিয়ানা কল কেটে দিয়ে ছাঁদ ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়। ছাঁদের ছোট্ট দরজা দিয়ে যাওয়ার সময় রায়াদকে পাশ কাটাতে ধরলে রায়াদ বলে উঠে,
“আমি কিন্তু কিছু কিছু ভাষা বুঝি জার্মানির, সাথে ইংলিশও।”
“সো হোয়াট?”
রিয়ানা ঘাড় ঘুরিয়ে রায়াদ দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। রায়াদ মাথার চুল এলেমেলো করে বললো,
“না, কিছু না। শুধু বয়ফ্রেন্ড শব্দ-টা কানে আসলো। এটাই।”
রিয়ানা ভ্রুকুটি করলো। রায়াদকে ছেড়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসলো। রায়াদ ছাঁদে এসেছে জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এসে রিয়ানাকে দেখে আর পা বাড়ায়নি। রিয়ানা চলে যেতেই সে জুবায়েরের কাছে কল দেয়। ওপাশ থেকে জুবায়ের কল রিসিভ করতেই রায়াদ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
“তোর কি আয়াতকে পছন্দ না? ”
জুবায়ের তখন জুতার ফিতে বাঁধছিল। রায়াদের প্রশ্নে ঘাবড়ায় না সে। শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
“আয়াত রুপবতী, গুণও যথেষ্ট। শিক্ষা সেটাও বাংলাদেশের শিক্ষার তুলনায় ঢেড় বেশি। পছন্দ না হওয়ার কারণ নেই। তোর কি পছন্দ হয়েছে? হলে বল! আমি আমার পরিবারকে মানা করি যেন কথাবার্তা আগাতে না যায়।”
রায়াদ হতভম্ব হয়ে যায় জুবায়েরের জবাবে। বিস্মিত গলায় বললো,
“তারমানে আয়াতকে তোর পরিবার দেখতে আসছে? কিন্তু আমি জানলাম না কেন? আর আংকেল আবার রাজী হলো কি করে? তুই তো সব ভেস্তে দিয়েছিলি?”
“বাবা ডাকছে রায়াদ। আমি ওখানে পৌঁছে সব প্রশ্নের জবাব দিবো। এবারের মতো রাখি।”
জুবায়ের রায়াদের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই কল কেটে দেয়। রায়াদ ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে পরে। প্রশ্নগুলোর জবাব না পাওয়া অব্দি সে শান্তি বা সস্তি কোনো টাই পাবেনা।”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।