#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪৭,
“আজ আমার ১৫তম জন্মদিন গেলো। বরাবরের মতো-ই আশা রেখেছিলাম আমার বাবা আমার জন্য কিছু করবেন। মা থাকতে বাবা আদর করতেন। বড্ড আদর করতেন। ৮বছরেই আমার সেই আদর থমকে গেলো। এত স্মৃতি মনে না থাকলেও এটুকু বলতে পারি আমার বাবার ছোট্ট প্রিন্সেস ছিলাম আমি। মা মারা গেলেন। বাবাও একদম বড় বাবা, বড় মা, সাজ্জাদ ভাইয়া, রিফা আপু সবার থেকে আলাদা হয়ে এই কোন ভিনদেশে এসে ফেললেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে তো সবাইকে ভুলতেও বসেছি। ভুলতে বসেছি কি ভুলেও গেছি বোধহয়। কারোর সাথে কথা হয়না। আগের মতো আদরও করতেন না। মা-কে মিস করতাম। বাবাকেও আগের মতো পেতাম না। আপু-ও পড়াশোনা আর বাড়ি সামলাতে ব্যস্ত। বাবা নিজের জব পরে নিজস্ব ব্যবসা। সব সামলাতে শুরু করলেন। আমার বলতে কি রইলো! আমার আমি এবং একাকিত্ব। বড় হওয়ার পর হয়ে গেলাম ভীনদেশের কালচারে এক বেপরোয়া স্বভাবের মেয়ে। বুঝতে শেখার পর থেকে বাবার অবহেলা ভীষণ কষ্ট দিতে লাগলো আমায়। আমার চোখের সামনে আপুকে আদর করতো বাবা। আমার ভীষণ জ্বলতো বুকের মাঝখান টায়। কি করবো আমার জানা ছিলো না। ফ্রেন্ড’সদের সাথে বেশি সময় কাটাতে ধরলাম। ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমার ড্রেস আপ পাল্টে গেলো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওদের মতো হালকা পাতলা ড্রিংকস করতে শুরু করলাম। নিজে বয়সে ছোটো হয়ে ফ্রেন্ড’সদের বড় ভাই-বোনদের সাথে পরিচিত হবার পর তারা যেমন তাদের ভাইবোনকে ট্রিট করতো!আমাকেও তেমন ট্রিট করতে শুরু করে তারা। ধীরে ধীরে পুরোই জার্মানির আধুনিক কালচার ঢুকে পরলো নিজের সত্তার মাঝে। সব-টাই আমার একাকিত্ব কাটানোর দায়ে। বাবা সব টের পেয়ে দেখলাম আরও ক্ষীপ্ত হলেন। রাগারাগি, বকাবকি সব মিলিয়ে মন-টা বিষিয়ে গেলো। বাবার যা অপছন্দ সে-সবই করতে শুরু করলাম। আর আজ বাবা আমায় কি বললেন! সব দোষ আমার। আমি বিগড়ে গেছি আমার দোষে? আচ্ছা পরিবারের যে শিক্ষা, শাসন বলতে যে বস্তু! তা না পেলে কোনো সন্তান কি আদৌও ভালো থাকে? সেখানে তো আমি মা-কেও পেলাম না। বাবার কাছে মায়ের অভাব বুঝবোনা আশা রেখেছিলাম। আশা-টা পূর্ণ হয়নি। আর আজ বাবা আমায় কি করলেন? থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন গালে। আশা তো করেছিলাম বড় হচ্ছি। এখন একটু গুরুত্ব দিবেন। গুরুত্ব দিলেন না তিনি। আমি আমার মতো নাইট ক্লাবে চলে গেলাম। সবার মাঝে থাপ্পড় মেরে বাড়িতে আনলেন। যে শাসনের অভাবে বিগড়ে গেছি। সেই শাসন আজ করলেন। সময় দেন না, আদর করেন না। অভিযোগ জানাতে কি বললেন তিনি? আমার জন্য মা মারা গেছেন। আমি মায়ের মৃত্যুর পেছনে দায়ী। আমি ছোটোবেলায় দূরন্ত ছিলাম। আমায় গোসল করাতে গিয়ে মা ওয়াশরুমে আছার খেয়ে মেরুদন্ডে আঘাত পেয়েছেন। আমায় সামলাতে গিয়ে বাসার উপর তলা থেকে সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পরে অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। অসুখে ভুগতে ভুগতে উনি বাঁচতে পারেননি। শরীরের ভেতরের অসুখগুলো আমার মা-কে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। আমি তো এত কিছু বুঝতাম না। ৬বছরের বাচ্চা ছিলাম তখন। দুই বছর অসুখে ভুগে আমার মা মারা গেলেন। আমার তো এসব ঘটনা মনেও নেই। আবছা স্মৃতিতেও নেই। শুধু চোখে ভাসে আমার মা মারা গেছে। বাড়িতে কান্নার ঢেউ উঠেছে। এটাই তো মনে রাখতে পারিনি ঠিকমতো। তবে আমি ইচ্ছাকৃত কি করে মাকে মারলাম? আমি নাকি মায়ের মৃত্যুর উছিলা। আপুকে নেওয়ার পর মায়ের আর সন্তান নেওয়া উচিত ছিলো না। মায়ের শারীরিক নাকি সমস্যা ছিলো। তবুও মা জোড় করে আমায় দুনিয়ার আলো দেখিয়েছেন। আর আমি মায়ের জান নিলাম তার বিনিময়ে? বাবা আমায় এই অপবাদ কি করে দিলেন? আমি কি ইচ্ছে করে এসব করেছি। নাকি জেনেবুঝে। আমার মনেও নেই এসব। বাবা কি একটু বুঝতে চেষ্টা করতে পারতো না আমায়। আমিও তো মানুষ একটা। রক্তে মাংশে গড়া মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আচ্ছা আমি আজরাইল যে মানুষের জান নিবো? বাবা এই আঘাত-টা কি করে দিলেন আমায়? আজ বাসায় এনে বাবা এই আঘাত গুলো জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে দিলেন আমায়। আর আমার বেস্টফ্রেন্ড মাদালিনা এই গিফট দিলো। এক ভালো স্মৃতিতে জীবনের সবথেকে বড় আঘাত-টা বন্দী হয়ে থাকুক। আই মিস ইউ মা। আই রিয়েলি মিস ইউ। তুমি থাকলে আজ এত আঘাত পেতাম না। আজ থেকে আমি পাথর বনে যাবো। নয়তো এই আঘাতগুলো আমায় তিলেতিলে শেষ করবে। জীবন একটাই। এটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে চাই। আমি এসব ভেবে ডিপ্রেশনে পরে মরতে চাইনা মা। আমায় ক্ষমা করো।”
৪৮,
সব পড়ে জুবায়ের স্তব্ধ। রায়াদ এরমাঝে ১টা সিগারেট পুড়ে ছাই করে ফেলেছে। জুবায়ের কিছু-টা বিমূড় কণ্ঠে-ই বললো,
“কারোর জীবনের উপর কারোর হাত থাকেনা। আন্টির হয়তো এই উছিলায় মৃত্যু ছিলো। তাই বলে একজন বাবা এমন হবেন?”
“বাদ দে। আপাতত মেয়ে-টা ভালো থাকার চেষ্টায় সফল হোক এই আর্জি উপরওয়ালার কাছে। বাড়ি ফিরে বাকি পাতাগুলো জানার চেষ্টা করবো। বাংলায় লিখলে জানা শেষ হতো। এই মেয়ে-র মাথায় এত বুদ্ধি। একেবারে নিজের ব্যক্তিত্ব, কষ্ট চাপা রাখতে জার্মানির ভাষায় লিখেছে।”
জুবায়ের আর কথা বাড়ালো না। ডায়েরী-টা স্বযত্নে তুলে রেখে শুয়ে পরো। রায়াদকে ইশারা করলো শুয়ে পরতে। দু বন্ধু ঘুমানোর চেষ্টায় মত্ত হলো। সারাদিন জার্নি করে ক্লান্ত থেকে পারলোনা জেগে থাকতে। ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সময়-টা দুপুর প্রায়। ঘড়ির কাটায় সময় বারোটার ঘর ছাড়িয়ে গেছে। ড্রইং রুমে সাজ্জাদের বোন রিফার সাথে সোফায় বসে আছে রিয়ানা। আয়াত এবং সাজ্জাদ দুজনে গেছে হানিফ হোসাইনকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে আনতে। আরিফ হোসাইন আগে থেকে ছিলেন-ই ক্লিনিকে ভাইয়ের কাছে। সব ফর্মালিটি উনি কমপ্লিট করেই রেখেছেন। দুজনে গাড়ি নিয়ে গিয়ে বাসায় আনবে শুধু। রিয়ানার হাতে কফির মগ। রিফা কথার ফাঁকে বলে উঠে,
“অনেক-টা বদলে গেছো রিয়ানা৷ আগের বার যখন আসলে; সেই মেয়ে আর এই মেয়ের মাঝে বিস্তর তফাৎ। কি সুন্দর থ্রিপিস পরেছো। সুন্দর লাগছে।”
রিয়ানা রিফার কথার বিনিময়ে মৃদু হাসলো। গতকাল ক্লিনিক থেকে আসার পর সারারাত আর ঘুম হয়নি তার। সকালের দিকে চোখ লেগে আসায় ঘুম থেকে উঠেছে এক ঘন্টা আগে। এরপর গোসল দিয়ে আয়াতের কিনে দেওয়া এক থ্রিপিস পরে নিচে এসেছে। আসার পর রিফা তার হাতে কফি দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে সোফায়। নয়তো সে রুমে যেত। রিয়ানাকে চুপ থাকতে দেখে রিফা ফের বলে উঠে,
“তুমি এত চুপচাপ কেন হুম? ছোটোবেলায় অনেক বিচ্ছু ছিলে। আমি আর আয়াত তোমায় সামলাতে পারতাম না। আম্মু, চাচী সারাদিন তোমার পিছনে ছুটতো। আর এখন এত চুপচাপ। আমি আর আয়াত তো তখন বড়ো-ই প্রায়। তাই সবটুকু মনে না থাকলেও অল্প স্বল্প তো মনে আছে-ই। পিচ্চি রিয়ানার সাথে এই রিয়ানার একটুও মিল নেই। ভাইয়ার বিয়ের সময় এসেছিলে তখনও নিরব ছিলে। এখনও। এত শান্ত হলে চলে? তুমি তো আমাদের তিনজনের ছোট। চটপটে হতে হবে তোমায়। তবে না বোঝা যাবে হোসাইন বাড়ির ছোট মেয়ে বাড়ি ফিরেছে।”
রিয়ানা কফির মগে চুমুক দিলো। মানুষের সাথে মেশার ক্ষমতা বা গুণ তার নেই। তাই কথা বাড়াবে কি করে বুঝলোনা। সেখানে রিফা-ও তাকে ছাড়ছেনা। রিয়ানার অসস্তি দূর করতে সেখানে আসলেন আরিফ হোসাইনের স্ত্রী আসিফা বেগম। তিনি বললেন,
” মেয়ে-টা সকালে উঠে খায়নি অব্দি। কফি ধরিয়ে বসিয়ে রেখেছিস। ওর নাস্তা করতে হবে না?”
রিফা মায়ের ধমকে হাসলো। বললো,
“তো নিয়ে যাও তাকে। আমি তো বেঁধে রাখিনি।”
৪৯,
আসিফা বেগম মেয়েকে পাশ কাটিয়ে রিয়ানার পাশে এসে দাড়ালেন। শুধালেন,
“কফি শেষ? হলে এসো নাস্তা করবে!”
রিয়ানা মাথা দুলিয়ে বুঝালো শেষ। আসিফা বেগম হাত ধরে দাড় করালেন। পা বাড়ালেন ডাইনিং টেবিলের দিকে। নিচতলার একদিকে ড্রইং রুম, তার সরাসরি ডাইনিং টেবিল রাখা। তার পাশেই কিচেন। অন্যদিকে কয়েক-টা রুম। যার একটায় আরিফ হোসাইন এবং আসিফা বেগম থাকেন। বাসার ড্রাইভার এক রুমে আর একটা গেস্ট রুম। উপরতলায় চারটে রুম। একটা রিফা। অন্য-টায় সাজ্জাদ আর তার স্ত্রী। একটা আয়াত আর রিয়ানা ছিলো। অন্য-টা তার বাবার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। গতকাল ক্লিনিক থেকে বাসায় আসতেই রিফা সব ঘুরিয়ে দেখিয়েছে যেন দুবোনের চলাফেরা করতে অসুবিধা না হয়। আয়াত তো আগে এসেও থেকেছিলো। তাই তার সমস্যা হবেনা। কিন্তু রিয়ানার তো নিজের পিতৃ ভিটে পুরো চেনা দরকার। এজন্য সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রিফা। আসিফা বেগম ডাইনিং টেবিলে রিয়ানাকে বসিয়ে দিয়ে সাজ্জাদের স্ত্রী অন্তির উদ্দেশ্যে হাঁক ছেড়ে বলেন,
“বউ রিয়ানার নাস্তা-টা দিয়ে যাও তো।”
“কেন মা? তার কি হাত নেই যে নিজের নাস্তা নিজে নিয়ে যাবে বা আপনি নিয়ে গিয়ে দিলেন! সবসময় আমায় কেন ডাকেন? কাজের লোক পেয়েছেন?”
আসিফা বেগমের মুখ-টা মুহুর্তে চুপসে গেলো। বাড়িতে নতুন মানুষ। তার সামনে এভাবে অপমান করে বসবে কল্পনাও করেননি উনি। রিয়ানা আসিফা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,
“বড় আম্মু আপনি এত ব্যস্ত হবেন না। আমি আনছি। আপনি এখানে বসুন।”
রিয়ানা উঠে পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে। হাতে নিলো এঁটো কফির মগ-টা। আসিফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বোনের কথা শুনে যে ভুল-টা।করেছিলেন! তার মাশুল এখন প্রতি পদে দিচ্ছেন। ছেলের জীবন গুছাতে গিয়ে সবথেকে বড় সর্বনাশ তিনি মা হয়ে-ই করে ফেলেছেন। রিয়ানা মেয়ে-টাকে আপন করে নিয়ে শুধরানোর চেষ্টা করলে হয়তো এভাবেই সে শুধরে যেত। কিন্তু তা না করে ভুলকে ফুল ভেবে গ্রহণ করে এখন পদে পদে কাঁটার খোঁচা সহ্য করতে হচ্ছে। আসিফা বেগম হতাশ হয়ে ফিরে এসে বসলেন সোফায়। রিফা ততক্ষণে নিজের রুমে চলে।গেছে। রান্নাঘরে গিয়ে অন্তির মুখোমুখি হয়ে যায় রিয়ানা। ধবধবে ফর্সা মেয়ে-টার মুখ চুলার আগুনের আঁচে লাল টকটকে হয়ে উঠেছে। রান্নাঘরের এক ধারে বসে হাতে হাতে সাহায্য করার মহিলা-টা তরকারি কাটছেন। সে অন্তিকে পাশ কাটিয়ে বেসিনে কফির মগ-টা ধুয়ে অন্তির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
“নাস্তা কোথায় রাখা ভাবী? এটুকু জানাতে নিশ্চিত কষ্ট হবে না?”
অন্তি মুখ গোমড়া করে উত্তর দিলো,
“ঐ যে ঢেকে রাখা। ঐটাই আপনার নাস্তা। নিয়ে যান। টেবিলে বসে খেয়ে নিন।”
রিয়ানা দৃষ্টি ঘুরালো। কিচেন শেলফের এক তাকের দরজা খোলা। তারমাঝে সাদা প্লেটের উপর ছোটো ছিদ্রের ডালা দিয়ে ঢেকে রাখা নাস্তা। বাঙালি গ্রাম্য পরিবারের রান্নাঘরে এসব সাধারণ বিষয়। রিয়ানা খাবার-টা নিয়ে যাওয়ার সময় শুধু অন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
“বড় আম্মুর বয়স বাড়ছে বৈ কমছেনা। আদর করে আপনাকে ঘরের বউ করেছেন। তার ভাইয়ের মেয়ে আপনি। শাশুড়ী না হোক ফুফু হওয়ার খাতিরে অন্তত ভালো ব্যবহার করবেন। গতকাল থেকে এসে দেখছি আপনার ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। আর আমি আপনার ছোটো ননদ হই। তাই আপনি নয় তুমি বলার অনুরোধ রইলো।”
রিয়ানার নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলে অন্তি পেছন থেকে বলে উঠে,
“বাড়ির মেয়ে তুমি, নাস্তাটুকু নিয়ে খেলে তো সমস্যা হওয়ার কথা না তাইনা? আমি বাড়ির বউ বলে কি সবদিকে খেয়াল রাখবো? সকাল থেকে খেটে মরছি। এখন আবার দুপুরের রান্না। কয়দিকে যেতে বলো?”
রিয়ানা পিছন ফিরে তাকালো। আলতো হেসে বললো,
“খেটে মরার বিষয় নয়। আপনার উপর সব চাপিয়ে দেওয়াও হয়নি। বড় আম্মুও এতক্ষণ কিচেনেই ছিলেন। আর আপনার হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য ঐ যে এক আন্টি আছেন-ই। বাড়ির কোনো কাজ করতে হয়না। শুধু রান্নাটুকু ছাড়া। সেটাও বড় আম্মু আর হ্যাল্পিং হ্যান্ড আন্টি হ্যাল্প করে আপনাকে। এরপরও যদি আপনার এই রান্নাটুকু করতে জীবন শেষ হয়! তবে আর বিয়ে করার জরুরী কোনো প্রয়োজন ছিলো না। কারণ বিয়ের পর মেয়েদের জীবনের চিত্র-ই পাল্টে যায়।”
“চলে-ই তো গিয়েছিলাম। কোন দুঃখে বাবা আমায় এ বুড়ো একটা ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিলো। পালানোর পরও তার গলাতেই আমায় ঝুলিয়ে দিলো। বলেছিলো এখানে আর রেখে যাবেনা। ধরে এনে সেই এখানেই রেখে গেলো। সেই যে গেলো! আর নিতেও আসলোনা। কত্তদিন বাবার বাড়ি যাই না। কেউ বোঝে না আমার কষ্ট।”
অন্তির কথায় রিয়ানা বিস্ময়ে বিমূঢ়। অন্তির কথার আগামাথা কিছু বুঝলো না। সাজ্জাদ ভাই বুড়ো! অন্তি আর সে প্রায় একই বয়সী। বড়জোড় ২-৩মাসের বড় হতে পারে অন্তি। সাজ্জাদ রিয়ানার ৯বছরের বড়। তার বয়স এখন ৩০এর কোঠায়। এরমাঝেই সে বুড়ো হয়ে গেলো? অন্তি পালিয়েছিলো? কিন্তু কেন? কবে পালালো? একগাদা প্রশ্ন রিয়ানার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
“মানে-টা কি এসব কথার?”
অন্তি মনে মনে নিজেকে বকা দিচ্ছে। কি সব বেফাঁসে বলে দিলো।রিয়ানার প্রশ্নের জবাবে বললো,
“কিছু না। যাও নাস্তা করো।”
রিয়ানা বুঝলো অন্তি তাকে কিছু জানাবেনা। রিফাকে ধরতে হবে। তাই সে নাস্তার প্লেট নিয়ে বেরিয়ে আসলো রান্নাঘর থেকে। উদ্দেশ্য রিফার থেকে সব-টা জানা।
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। আবার বাবা অসুস্থ। দুয়ার আর্জি রইলো। আসসালামু আলাইকুম