বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব ৯

0
1069

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (৯)

সকালটা সুন্দর হলেও একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। লাবণ্য’র বেশ ধকল গিয়েছে। সে এসেই গেছে শাওয়ার নিতে। এর মধ্যে হুট করেই পড়ে গিয়ে পা মচকে ফেলেছে। কাছেই ছিল অভি। ওর অবস্থা দেখে এক প্রকার হাসল সে। যখন বুঝতে পারল মেয়েটি সত্যিই নড়তে পারছে না তখনি কোলে তুলে নিল। বিছানায় বসানোর সময়ই ঘটনাটা ঘটল। উষশী দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সে লাবণ্য আর অভিরাজের ব্যপারটা অন্যরকম ভাবে কল্পনা করেছে। লাবণ্য শাওয়ার তোয়ালে পরা ছিল। সেই হিসেবে বিষয়টা খুবই অপ্রত্যাশিত হয়ে গেল। অভিরাজের সাথে দৃষ্টির বিনিময় হতেই মেয়েটি চলে আসে। অদ্ভুত ভাবে এই সাধারণ বিষয়টা মানতে পারছে না অভিরাজ। সে লাবণ্যকে মলম এগিয়ে দিয়ে উষশী’র কাছে এসেছে। উষশী তখন ভোরের নরম রোদ শরীরে মেখে চলেছে। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ডাকল সে।
“উষশী, শোনো।”

“হুম?”

“একটু আগের ঘটনাটা।”

“ইটস ওকে। আমি সরি,বুঝতে পারি নি ওমন একটা সময়ে।”

“তুমি যা ভাবছ তেমন কিছু নয়।”

“কে বলল আমি কিছু ভাবছি?”

পাল্টা প্রশ্নে ভরকে গেল অভিরাজ। উষশী’র দৃষ্টিতে অগ্নিও যেন হার মানবে।
“মনে হলো।”

“আমি কিছু ভাবি নি।”

“তবু সত্য জানা দরকার।”

“কি?”

“লাবণ্য, পড়ে গিয়ে পা মচকে ফেলেছে। সেই জন্যেই ওকে তুলে বিছানায় রেখেছি। অন্য কিছু নয়।”

“এটা আমাকে বলার কি আছে?”

“ক্লিয়ার থাকা প্রয়োজন।”

“জানেন তো,চোখের সামনে অল্প বয়সী ছেলে মেয়ের
অ ন্ত র ঙ্গ তা দেখেছি। এসবের কাছে এটা খুবই সামন্য।”

মেয়েটার কথাতে প্রায় পরিপক্বতা পাওয়া যায়। অভি হতাশ কণ্ঠে বলল,”তুমি খুব এডভান্স কথা বলো।”

“স্বাভাবিক নয় কি? আমি যে কালচারে বড়ো হয়েছি সেখানে ফি জি ক্যা ল রিলেশন খুবই ঠুনকো বিষয়।”

“মেয়ে তোমার লজ্জা নেই দেখছি।”

“লজ্জার কি আছে বলেন তো? এমন নয় কেউ এসবে আগ্রহী না।”

“হা,আমি ভুলে বসেছিলাম আমার সামনে থাকা মেয়েটি খুবই একরোখা আর জেদি।”

ঠোঁট টিপে হাসল উষশী। সে আসলেই এসবে অভ্যস্ত। তার সংস্কৃতি অনেক ভিন্ন। অভিরাজ হুট করেই তাকে টেনে নিয়ে গেল। ছাদে এসে বলল,”চোখ বন্ধ করো।”

“কেন?”

“বন্ধ করো।”

“ওকে। বাট ভয় দেখাবেন না তো?”

“উহু।”

একটু পর মেঘের গর্জন শোনা গেল। উষশী চোখ মেলতে চাইলে অভিরাজ নিষেধ করল। ওভাবেই চোখ বন্ধ করে রইল মেয়েটি। অভি তাকিয়ে আছে সুন্দর কিশোরী’র পানে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির নরম বিন্দু গুলো উষশী’র শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। ভীষণ আনন্দ পাচ্ছে সে। অভিরাজের শরীরের উষ্ণতা অনুভব করতে পারল যেন। ছেলেটা কি ওর খুব নিকটে?

চোখ মেলতেই শূন্য ছাদ দেখতে পেল উষশী। বৃষ্টির জলে পুরো ভিজে গেছে সে। চারপাশে চোখ বুলানোর সময় ধাক্কাটা লাগল শরীরে। পুলে পড়ে গিয়ে পানি খেতে হলো তার। অভি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
“কি করলেন এটা, এভাবে কেন ধাক্কা দিলেন।”

“এটা একটা এডভেঞ্চার। এসব ফ্যান্টাসি জিনিস লাইফকে চিল মুড এনে দেয়।”

“তাই বলে এভাবে!”

“তো কোনভাবে?”

এইটুকু সময়েই উষশীর মস্তিষ্কে দুষ্টুমি খেলে গিয়েছে। সে এগিয়ে এসে অভিরাজের বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরল। মুহূর্তেই অভির পুরো শরীর অবশ হতে শুরু করল। নরম, তুলতুলে হাতটা তাকে এভাবে স্পর্শ করবে সে ভাবনায় ও আনে না। খানিক বাদে বুকে ব্যথা অনুভব হলো। মেয়েটার নখের জন্য ক্ষত হতে শুরু করেছে।
“হে আল্লাহ,কি করছো! তুমি মেয়ে না রাক্ষুসী।”

“যেটা ভাববেন।”

“তুমি তো যন্ত্রণা দিলে। এখন তো ভারী সমস্যায় পড়তে হবে।”

“সমস্যা’র কি আছে?”

“আমার বউ এসব দেখলে কি ভাববে বলো তো।”

“কি ভাববে?”

“ভাববে আমি কোনো সুন্দরী’র সাথে ভীষণ সুন্দর সময় পার করেছি। আর তার চিহ্ন এই শরীরে বসে গেছে।”

উষশী হো হো করে হেসে উঠল। অভিরাজ যেন কোনো কৌতুক বলেছে। মেয়েটার মসৃণ বাদামি চুল লেপ্টে গেছে শরীরে। গলার কাছে থাকা বিউটি বোন অন্যরকম আকর্ষণ দিচ্ছে। এই সময়টায় ভয়ঙ্কর ভাবে ওর স্পন্দন বেড়ে গেল। নিজেকে শাসন করেও বিশেষ লাভ করতে পারল না। সুন্দর লাস্যময়ী এই কিশোরী তার চোখে এখন নারী রূপে ধরা দিতে লাগল।

হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাচ্ছিল উষশী। তার শরীরে পাতলা একটা জামা। সে চিকন হওয়ায় সুন্দর দেখাচ্ছে। অভিরাজ দরজার কাছ থেকে ওকে দেখছিল। সেই সময়টায় লাবণ্য এল খুড়িয়ে খুড়িয়ে।
“উষশী কি করছে?”

“চুল শুকোয়। তুই এভাবে এলি কেন?”

“ঠিক আছি এখন। খাবার খাবি,ড্রাইনিং এ আয়।”

“তুই যা আমি সব আয়োজন করছি।”

“আচ্ছা।”

খাবারের টেবিলে উষশীকে বেশ খুশি দেখাচ্ছিল। ওর এই হাসির রহস্য খোঁজার চেষ্টায় লাবণ্য বলল,”কি ব্যপার বাবু? এত খুশি লাগছে যে।”

“জিতে যাওয়ার আনন্দ অনুভব করছি।”

“কার সাথে জিতলে?”

“আছে কেউ।”

লাবণ্য বুঝতে না পেরে অভি’র পানে তাকাল। ছেলেটা এক মানে খাবার খাচ্ছে। উষশীর ঠোঁটের কোণে থাকা মিষ্টি হাসি অন্যরকম সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। কোনো মেয়ে কি এতটা সুন্দর হয়?

বিকেল বেলায় উষশীকে নিয়ে বের হলো অভিরাজ। লাবণ্য পায়ের চোটের জন্য আসতে পারে নি। একদিন রেস্টে থাকা প্রয়োজন। কোকো কে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। চটপটে কোকো আজ ভীষণ ক্লান্ত। তাকে অনেকটা বয়সী দেখাচ্ছে। উষশী’র কান্না পেল। সে কোকো কে বুকে জড়িয়ে ধরল।
“রাখো,ওর চিকিৎসা চলছে।”

“আমার কোকো খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি ওর খেয়াল রাখলাম না কেন।”

“এটা অস্বাভাবিক নয়।”

“গিল্টি ফিল হচ্ছে। ওর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী। আমার কোকো।”

“কান্না করলে কোকো ঠিক হয়ে যাবে?”

ওভাবেই জড়িয়ে রইল উষশী। কোকো খুব কষ্টে দুবার মিউ মিউ করল। উষশী’র বুকটা এই মুহূর্তে ছিঁড়ে যাচ্ছে। কোকো ওর জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীটার প্রতি যে অসীম মায়া তার।

হাওয়াই মিঠাই দেখে উষশী বায়না ধরল। এই সময়টাতে তাকে খুব বেশিই বাচ্চা দেখাচ্ছে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণেই মেয়েটিকে নিয়ে নামল না অভিরাজ। সে দুই রঙের হাওয়াই মিঠাই এনে দিল।
“আমি গেলে কি হতো?”

“সবাই তাকিয়ে থাকত।”

“তো?”

“ভাবত তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড অথবা বোন গোছের কেউ। প্রথমটা হওয়ার চান্স বেশি।”

বাক্যটি শেষ করে হো হো শব্দে হেসে উঠল অভি। ওর এই অহেতুক হাসার কারণ বুঝল না উষশী। সে হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে বলল,
“ইদানীং একটু বেশিই বৃষ্টি হচ্ছে তাই না?”

“হুম।”

“সব সময় এমন হয়?”

“না। এটা তো আবহাওয়ার উপর নির্ভর করছে।”

“জানেন,আমার কেন যেন মনে হয় প্রকৃতি ইচ্ছা করে এই বৃষ্টি নামিয়েছে।”

“অদ্ভুত ভাবনা।”

“হতে পারে। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে এই দিনগুলো একটা সময় পর আমায় ভীষণ পু ড়া বে।”

ছটফটে নয়নে তাকাল অভিরাজ। উষশী চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। মেয়েটির শরীর থেকে ভেসে আসছে বেলী ফুলের ঘ্রাণ। তার কোমল দুটি ঠোঁট তীরতীর করে কাঁপছে। কপালে চলে আসা বাদামি রঙা চুল বড়ো বিচলিত। এ যেন প্রকৃতির ই অন্য রূপ।

সন্ধ্যার দিকে লাবণ্য বলল,”উষশীর বাড়ির ঠিকানা এটা।”

“তুই সিউর?”

“লোকটা মিছে মিছে মিথ্যে কেন বলবে?”

“সেটাও ঠিক।”

“দেখ অভি ওনার সাথে হসপিটালে দেখা হলো। ওনিও ওনার বিড়াল নিয়ে এসেছিলেন, কোকো কে দেখেই বিড়ালটি চেচামেচি করতে লাগল। পরে জানতে পারলাম কিছু দিন আগে কোকো ঐ বিড়ালটিকে আ ঘা ত করেছে। এটা বানোয়াট হতে পারে তুই বল?”

“হুম। আর কিছু বল‍তে পেরেছে?”

“না। শুধু বলল পাশের বাসা থেকে এসেছিল কোকো।”

ঠিকানাটা নিয়ে নড়াচড়া করতে লাগল অভিরাজ। এটা খুব বেশি দূরে নয়। উষশী সেদিন যে রাস্তা দেখিয়েছিল এটা তার কাছেই। তার মানে এসব সত্য। বিষয়টা কল্পনা করেই বুকে চিন চিন কিছু একটা অনুভব হলো। সন্ধ্যার পর পরই বেরিয়ে পড়ল অভিরাজ। একটা ছোট্ট বাড়ির সামনে এসে থামাল গাড়িটা। তালা ঝুলছে গেটে। দারোয়ান ও নেই। অভির হৃদয় এত সময় উত্তপ্ত থাকলেও এখন হীম শীতল। কোনো এক অজানা প্রাপ্তিতে একদম শান্ত হয়ে পড়ল সে।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here