#আড়ালে_অন্তরালে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বঃ১৫
ঈষাণ কোণে সাদা তুলোর মত টু ক রো মেঘগুলো জমা হয়েছে। ফাহিম একটু বেরিয়েছে, অনেকদিন বাদে গ্রামে ফিরেছে। এদিক সেদিক বেখেয়ালি হয়ে হাটঁতে তার ভালোই লাগে। মাহতাব খানও প্রতিদিনের মত নিজের কাজে বেরিয়েছেন। ব্যবসার সব তদারকি দক্ষ হাতে করেন তিনি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণে তিনি পটু।
মির্জা মহলে এখন শুধুমাত্র আয়েশা আর মায়াই আছে। বাদবাকি তিনজন লোকের মধ্যে একজন পুরো বাড়িটা পরিষ্কার রাখে, একজন ঘরোয়া কাজে সাহায্য করে আর অন্যজন রান্নার কাজে সাহায্য করে। তারাও এখন নিজের জন্য বরাদ্দ করা ঘরে আছে।
বাড়ির এই বাড়তি লোকগুলোকে সবাই কাজের লোক বললেও মাহতাব খানের মতে তারা সাহায্যকারী। আয়েশা আর ফাহিম তাদেরকে খালা বলেই সম্বোধন করে।
মেঘেরা জমে যখন চারদিক ক্রমশ আঁধার ঘনিয়ে এনেছে আয়েশার মনটা তখন আনন্দে নেচে উঠেছে। বৃষ্টি তার খুব ভালো লাগে। বৃষ্টি হবে আর সে ভিজবে না এ যেন অসম্ভব।
মায়া অনেকটা পথ জার্নিং করায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে নয়লে হয়ত তার সাথে আড্ডা দিতে পারত আয়েশা। কিন্তু এখন বৃষ্টি নামায় সে মনে মনে বলছে – ধন্যবাদ ভাবী, আরেকটু ঘুমাও। নইলে তো ভিজতেই পারতাম না।
টুপটাপ ছন্দ নিয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আছড়ে পড়ছে মাটিতে। বৃষ্টি নামলেই মাটির গন্ধটা উন্মত্ত করে আয়েশাকে। ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির খেলা দেখছে সে। এক পা এক পা করে নামতে নামতে উঠানে নেমে এলো একদম। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। তার স্নিগ্ধ আদলটা বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিচে নেমে আসছে। হালকা গোলাপি রঙা জামায় মেয়েটাকে একদম রূপকথার রাজকন্যা লাগছিল। গুনগুন করে গেয়ে উঠল –
টুপটাপ বৃষ্টিতে কি যে ভালো লাগছে,
হৃদয়ের কথাগুলো শিষ দিয়ে ডাকছে।
পরবর্তী লাইন গাওয়ার আগেই কর্কশ আওয়াজে সে চমকে উঠে। মাথা ঘুরিয়ে সেদিকে তাকিয়ে তার মায়াবী মুখখানায় বিরক্তির ছাপ জায়গা নিয়েছে।
মুখ ঘুরিয়ে নিল আয়েশা। তীক্ষ্ণ কন্ঠটা আবারো বলল – বুড়ো মেয়ের বৃষ্টিতে ভেজার শখ হয়েছে। তোর এসব হেয়ালিপনার জন্যইতো বারবার বিয়ে ভে:ঙে যাচ্ছে। কে ই বা যেচে পড়ে এমন মেয়ে ঘরে তুলবে? তোর লজ্জা করেনা বৃষ্টিতে ভিজে সবাইকে শরীর দেখিয়ে দিতে? কি ভেবেছিস! তাতে কেউ যদি প টে যায়! তাইতো?
জ্যেঠাতো ভাইয়ের কথাগুলো শুনে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু নেমে এল আয়েশার। লোকটা প্রতিনিয়ত তাকে এই কথাগুলো শুনিয়ে যায়। বিয়ে না হওয়া তার দোষ নয়। আর সে দেখতেও যথেষ্ট মায়াবী তাহলে কেন সবাই বিয়ে ভে:ঙে দেয়?
নিজেকে সামলে আয়েশা বলল – আপনার মত
মা তাল, উ ন্মা দ লোকের কাছ থেকে এরথেকে ভালো ব্যবহার আর কি আশা করা যায়? সারাদিন ওসবে ডু:বে থাকাতো আপনার নে/শা। আপনি কে আমাকে এসব বলার?
আয়েশার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রায়হান বলল – আমি এ বাড়ির ছেলে। তোর এসব বেহায়াপনায় বাঁধা দিতে অধিকার লাগবে বলছিস? তাহলে আমি সে অধিকার খা টা তে পারি কারণ তুই আমার চাচাতো বোন।
রায়হানের ঐ দৃষ্টি উপেক্ষা করে আয়েশা বলল – ইস, মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল। মা:ত:লা:মি না করে নিজের কাজে যান।
কথাটা শেষ হতেই গালে সপাটে চড় পড়ল আয়েশার। গালে হাত দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। এরমধ্যে রায়হান একদলা মাটি নিয়ে মেখে দিল আয়েশার মুখে। রাগে অপমানে শব্দ করে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। রায়হান তাতেও থামেনি। বাঘের মত গর্জে উঠলো। আগের থেকে আরো বিশ্রী কথাটা শুনালো সে।
– ফ্রিতে নিজের শরীরটা দেখাতে কি এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? এত সস্তা করছিস কেন নিজেকে?
আর থেমে থাকলো না আয়েশা। দাপট বাড়িয়ে সে বলল – ফ্রিতে দেখতে এ বেলায় এসেছেন কেন? আপনি নন মাহরাম হয়েও কেন আমাকে দেখেও ভেতরে এসেছেন। ফ্রিতে ম জা নিতে?
আয়েশার কথা শুনে নিজেকে আর দমাতে পারলো না রায়হান। এক ধাক্কায় মেয়েটাকে মাটিতে ফেলে আরো কাঁদা মাখিয়ে বলল – তুই নন মাহরামদের নজর কাড়ার জন্য নিজেকে মেলে দিবি আর তারা দেখলেই দোষ? আর একটাও কথা না বাড়িয়ে এখনই ঘরে যাবি। নইলে মুখের মানচিত্র বদলে দিব।
কথাটা বলে তাকে টানতে টানতে ঘরে ঢুকিয়ে হনহন করে চলে গেল রায়হান। আজ মেয়েটা তাকে চরম অপমান করেছে। রাগে, অপমানে পুরো শরীরটা কাঁপছে তার। ঐ একটা মেয়ের জন্য সবকিছু উথাল-পাতাল লাগে তার। কেন ঐ মেয়েটা বোঝে না তার মনের কথা। কথায় কথায় মা-তা-ল বলে অপমান করে।
____
ইমতিয়াজ আর রিহানকে দেখে ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করলো মুরাদ। তার গ্রামে ফেরার খবর কেউ একজন জামশেদের কানে পৌঁছে দিয়েছে। সে তথ্য পেয়ে ইমতিয়াজ আর রিহানকে সরিয়ে নিজের কাছে এনেছে সে।
ইমতিয়াজ বলল – জানো তো আমাদের সাথে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তুমিই বা কেন জামশেদকে সব বলতে গেলে? তাকে নীরবে আক্রমণ করে ধরাশায়ী করা যেত।
মুরাদ হেসে বলল – যুদ্ধের নীতি জানো ডাক্তার? পিঠপিছে ছু-রি মা//রে কাপুরুষ। অ-স্ত্র-হীন শ-ত্রুকে ধরা/শায়ী করা বীরের কাজ নয়। আমি তাকে দগ্ধে দগ্ধে মা-র-ব।
রিহান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলল- তাহলে আমরা খুঁজব কিভাবে? কে আমাদের সাথে বেঈমানি করছে।
কিছু একটা ভেবে মুরাদ বলল – তোমরা কি খেয়াল করেছো নিরুপমা হঠাৎ উধাও! তার ব্যাপারটা আমায় ভাবাচ্ছে। একমাত্র সে বলতে পারবে আড়ালে অন্তরালে কে রয়েছে। তার খোঁজ করো, তাকে আমার চাই।
প্রসঙ্গ বদলে মুরাদ বলল – রিহান তুমি নিজের বাড়ি চলে যাও।
রিহানও হাসিমুখে মেনে নিল, বিদায় জানিয়ে সে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল।
ইমতিয়াজ বারবার মুরাদের দিকে তাকাচ্ছে, তার মনে কি চলছে তা জানতে মনটা উশখুশ করছে বড্ড।
নীরবতা ভে ঙে মুরাদ বলল – তোমার আদুরে ছানাটা কেমন আছে ডাক্তার?
মায়ামাখা আদুরে ছানা শুনে ইমতিয়াজ হেসে বলল – পা জি হয়েছে খুব। তার মা আর আমার রোমান্সে বাঁ:ধা দেয় শুধু।
মুরাদ হেসে বলল – তুমি কি কম পাজি? জানো ডাক্তার, আমারও না খুব ইচ্ছে হয় বাবা হতে, আমি দেখতে চাই আমার সন্তানকে তার মা কিভাবে আদর করে, ভালবাসে! আমার অনিশ্চিত জীবনে তাকে জড়িয়েছি কিন্তু আমি না থাকলে সে কি করে আমার সন্তান বড় করবে?
মুরাদের হঠাৎ উদাস হয়ে যাওয়া কথায় ইমতিয়াজ বলল – কি সব ভাবো তানভীর?
মুরাদ বলল – বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে ডাক্তার। জানো ডাক্তার এই একটা ভয়ে এখনও নিজের স্ত্রীকে ছোঁয়ার সাহস পাইনি।
ভিরমি খেল ইমতিয়াজ। হাসি চেপে জিজ্ঞেস করল – তুমি সত্যি পুরুষ মানুষ তো? না মানে সেটিংস এ সমস্যা আছে?
ইমতিয়াজের আচমকা কথায় চোখ বড় করে তাকাল মুরাদ। তারপরেই হো হো করে হেসে উঠে বলল – আমি একদম ঠিক আছি ডাক্তার। তাছাড়া ওর মনে এখনো ট্রমা আছে। জানোই তো ডোমেস্টিক ভা;য়ো-লে-ন্সের স্বীকার ও। ওকে এত তাড়াতাড়ি আর কোন কষ্ট দিতে চাইনা। আমার কাছে সে আদুরে হয়ে থাকুক। ডাক্তার, আমি ভালবাসি ওকে। ও আমার অর্ধাঙ্গিনী, নারী ভেবে তার উপর পুরুষত্ব ফলাতে চাইনা। সে আমায় বুঝুক ডাক্তার। খুব করে বুঝুক। খুব ভালবাসুক। তাতেই চলবে। ও তো পুতুলের বা চ্চা।
ইমতিয়াজ হাসল নীরবে। একবার তাকাল মুরাদের দিকে। মনে মনে ভাবছে – কে বলবে এই লোকটার মনে হিং- স্রতাও আছে?
চলবে……
#আড়ালে_অন্তরালে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বঃ১৬
ঘুম থেকে জেগে উঠতেই মায়ার মনে হলো সে কোথায় আছে। ঝটপট উঠে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। পুরো বাড়িটায় কেমন ভৌতিক আবহ, সুনসান নীরবতা। নিজের নিশ্বাসের শব্দটাও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মায়া। নিশ্বাসের এই শব্দটা যেন আবহটা আরো ভৌতিক করে তুলেছে। ধীরে ধীরে নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে। হাঁটতে হাঁটতে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। তার অনুসন্ধানী দৃষ্টি কাউকে খুঁজতে ব্যস্ত। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে সে এবার রুমগুলোর দিকে এগোচ্ছে। এভাবে একা একা ভয় পাচ্ছে সে। হঠাৎ কিছু একটায় পা লেগে পড়ে যেতে নিলে সামনে থাকা দেয়ালটা ধরে নিজের ভারসাম্য ঠিক করে সে। তার মনে হচ্ছে সে কোন ভূত বাংলোয় আছে। তার নিশ্বাসের শব্দও প্রতিধ্বনি করছে তখন। আরেকটু এগিয়ে গেল সে। এবার যেন দম ফিরে পেল। সাদা কামিজ পরা, চুলগুলো পিঠে ছেড়ে দিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আয়েশাকে দেখতে পেল রুমটায়।
নিচু কন্ঠে মায়া বলল – আসব?
কারো ক্ষীণ কন্ঠ শুনে আয়েশা পিছনে তাকালো। মায়া তাকিয়ে আছে সেদিকে। মায়া খেয়াল করল আয়েশার চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুফোঁটা।
আয়েশা উত্তেজিত হয়ে বলল – জেগে উঠেছ ভাবী? ভাইয়া, বাবা কেউ বাসায় নেই। দুবার তোমার রুমে গিয়েও ফিরে এসেছি। একা একা বোর হচ্ছিলাম। ভেবেছি সেঝ চাচার ঘরে একবার যাব। আজই ফিরেছে ঢাকা থেকে। কিন্তু তোমায় একা রেখে যাইনিগো। এখন তুমি এসেছ, বসো গল্প করি। তার আগে বল চা খাবে? বানাব?
আয়েশার কথায় মুচকি হাসলো মায়া। মায়া বুঝতে পেরেছে আয়েশা একটু গল্প প্রিয়। খুব মিশুক। কি সুন্দর বাচ্চাদের মত করে কথা বলছে।
মায়া গিয়ে খাটে বসলো। আয়েশা আবার বলল – ও ভাবী, তুমি এত সুন্দর কেন গো? ভাইয়া ফোনে বলেছে আমায়। জানো কি বলেছে!
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল – না।
আয়েশা নিজের মাথায় গাট্টা মে রে বলল – তুমি কিভাবে জানবে, ভাইয়া তো আমায় বলেছে। হা হা।
মায়া বুঝতে পারলো আয়েশা তার নির্বুদ্ধিতা দেখে হাসছে আর সে আয়েশার পাগলামি দেখে মুচকি হেসেই যাচ্ছে।
আয়শা এবার বলল – ভাইয়া বলেছে আমার জন্য একটা চাঁদের মত সুন্দর ভাবী আনছে, আরো কি বলেছে জানো?
মায়া এবার আর কথা বলল না। তাকিয়ে আছে ননদের দিকে।
আয়েশা আবার বলল – ও আরো বলেছে তুমি নাকি একদম খরগোশের বা চ্চার মত আদুরে। তুমি নাকি দেখতে পুরো সিনড্রেলার মত। তোমায় নাকি ভাইয়া বিয়ে না করলে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে কোন রাজকুমার নিয়ে যেত। ভাইয়া আরো বলল তুমি কোন মানুষ নও, তুমি নাকি পরীদের রাণী।
মায়া চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আয়েশার দিকে। মনে মনে ভাবছে লোকটার কি মাথায় কোন সমস্যা আছে না কি। কেউ এভাবে বলে?
মায়া অস্বস্তি বোধ করছিলো। তাই টপিক বদলে সে বলল – তুমি কি কাঁদছিলে?
হাসিখুশি মেয়েটা তখন থমকে গেল। মাথা নিচু করে বলল – উঁহু। তুমি বসো, চা বানিয়ে আনি।
মায়া আয়েশার হাত ধরে বলল – আমিও যাব তোমার সাথে।
আয়েশা জোর করে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল – রান্নাঘর কিন্তু ঘরের বাইরে। তবে সমস্যা নেই, এরিয়ার ভেতরেই।
মায়া বলল – আমি যাব।
____
ফোনে হঠাৎ ভাইব্রেশন বুঝতে পেরে ফোনটা আনলক করে থমকে গেছে মুরাদ। একনজর ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল – বিশ্বাস করো ডাক্তার, জামশেদকে তো ফা”লা ফা”লা করবই আর আমাদের দলের ভেতরে থাকা ঐ মীরজাফরকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দেব একদম।
ইমতিয়াজ কিছু বুঝতে না পেরে বলল – কি হয়েছে? বুঝিয়ে বলো।
শান্ত দৃষ্টিতে ইমতিয়াজের চোখে চোখ রেখে বলল – আমাদের দলের প্রিয়তাকে ধ’র্ষ’ণ করে, খু*ন করে রাস্তায় ফেলে গেছে ঐ কাপুরুষের দল। ইস মেয়েটা কতটা যন্ত্রণা পেয়েছে আবার ম রা র পরও পেল অসম্মান।
ইমতিয়াজ ফুঁ সে উঠল। প্রিয়তাকে বোনের মত আদর করত সে। মেয়েটা গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য এনে দিত তাদের। কিন্তু মুরাদকে অমন শান্ত থাকতে দেখে ইমতিয়াজ যারপরনাই অবাক হলো।
এদিকে মুরাদের মনের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। দলের বাকি লোকদের সরিয়ে দিতে পারলেও প্রিয়তাকে সরানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি সে। তার একটু ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি কি বিভ/ৎস তা ভেবে নিজেকে শে-ষ করতে মন চাইছে তার।
বাড়ির বাইরে আরেকটু ঘুরতে চেয়েছিল মুরাদ। আচমকা অমন সংবাদ পেয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সে। তার সাথে কেউ বে-ঈ-মা-নী করছে এটা ভাবতেই তার রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। ভেতরে জ্ব লে যাচ্ছে নিজে কিন্তু বাইরে একটু ছিটেফোঁটা আভাষ নেই।
___
বাড়ির ছেলে নতুন বউ নিয়ে এসেছে, নতুন বউকে দেখতে এসেছে সবাই। মুহূর্তেই নীরব ঘরখানা হৈ হৈ রবে মুখরিত হলো। মাহতাব খান সবাইকে বসতে দিলেন। বাড়ির হেল্পিং হ্যান্ডদের বললেন সবার জন্য খাবার ব্যবস্হা করতে। ফাহিম তখনো এসে পৌঁছায় নি। মায়াও টুকটাক আয়েশার সাথে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।
নাস্তা নিয়ে মায়া যখন বাকিদের সাথে ড্রয়িংরুমে এসেছে তখন সবাই বলল – মাশাল্লাহ।
ফাহিমের চাচা – চাচী, জ্যেঠা, কাজিন সবাই মায়াকে দেখে বলল – তানভীর ভাই এবার তাহলে বাঁ ধা পড়ল।
মায়া চমকে তাকালো, তানভীর কে!
ততক্ষণে ফাহিম সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। ফাহিমকে দেখেই রায়হান বলল – আমি তোর বড় হয়ে এখনো সিঙ্গেল আর তুই বউ নিয়ে এসেছিস। তাও আমার বাবা আমার দিকে সুদৃষ্টি কেন দিচ্ছে না!
রায়হানের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
ফাহিম এসেই আগে তার সেজ জ্যেঠাকে জড়িয়ে ধরলো। বয়স্ক এই লোকটার সাথে ফাহিমের সম্পর্ক একটু বেশিই মজবুত। বাবার অবর্তমানে এই লোকটাকে সে নিজের অভিভাবক বলে জেনেছে।
বয়স্ক লোকটা বলল – বাবারে, আমার ছেলেদের চাইতে তুই আমার বেশি প্রিয়। তোর আজকের এই খুশির দিনে আমার থেকে কেউ বেশি আনন্দিত হয়নি। আমি এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। সবসময় চাইতাম কবে আমার তানভীর বিয়ে করে সংসারী হবে?
মায়া সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো ফাহিমের দিকে। ফাহিমও মায়ার দিকে তাকালো একবার। মায়ার ঐ দৃষ্টি ফাহিমকে ভীত করে তুলছে। মায়ার এই চাহনি তার কাছে অচেনা।
আস্তে আস্তে সবাই যার যার ঘরে চলে গেল। ফাহিম অনেকক্ষণ আগেই নিজের ঘরে গেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মায়ার মনে চরকি পাক খাচ্ছে কত-শত প্রশ্ন।
সবাই যাওয়ার সময়ও ফাহিমের পছন্দের তারিফ করে গেল। এতটা সময়ের মধ্যে আয়েশা কারো সামনে আসেনি তবুও সবাই আফসোস করেছে এত বয়স হয়ে গেছে তবুও আয়েশার বিয়ে না হওয়ার জন্য। অথচ আয়েশার বয়স সবে ছাব্বিশ। রায়হান অবশ্য সব শুভাকাঙ্ক্ষীকে বলেছে আয়েশার চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করতে।
সবাই যাওয়ার পরে মায়া সোফাগুলোকে হালকা ঝেড়ে নিচ্ছিল। পরিষ্কার করাটা তার একটা শখ। সোফার দুই গদির মাঝে ছোট্ট বাটন সেটটায় তার দৃষ্টি আটকে গেল। ফাঁকা ড্রয়িংরুমটায় মায়া এদিক সেদিক তাকিয়ে ফোনটা নিজের কব্জায় নিল। ফোনে মিটিং মুড অন ছিল। ভাইব্রেট করা ফোনটা নিয়ে মায়া হালকা আড়ালে গেল। ফোনে আসা ক্ষুদেবার্তাটা দেখে সে রীতিমতো শিউরে উঠল। তাতে লেখা ছিল_
” প্রিয়তার দেহটাতো রাস্তায় পড়ে আছে কিন্তু ঐ মুরাদের দেহটা তো কুকুরকে খাওয়াবো, আপনার চাই ঐ শান-শওকত, আমার চাই ওর বউ আর ওর ক লি জা।”
কাঁপতে থাকা শরীরটাকে স্বাভাবিক করে ফোনটা সাধ্যমত লুকিয়ে নিল মায়া।
হিং স্র তায় ভরপুর দুনিয়াটা বড্ড এলোমেলো লাগছে। চোখ উপচে কান্না আসছে তার। এখানে আসা কোন একজন লোক কি নোং রা কাজে যুক্ত? আর মুরাদ?
সব প্রশ্ন নিয়ে টলতে টলতে উপরে গেল মায়া। আয়েশাকে অনেকক্ষণ দেখেনি। এখন আর তাকে খুঁজতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে।
ঘরে আসতেই মায়া দেখল ফাহিম কি যেন ভাবছে। মায়া তড়িঘড়ি করে তার সামনে এসে বলল – আপনার নাম তানভীর, তা তো বলেন নি।
স্ত্রীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফাহিম বলল – সবাই ডাকে এ নামে।
ফাহিম খেয়াল করলো মায়ার ঐ মায়াবী মুখটা কেমন পানসে দেখাচ্ছে। সে শুধালো – মন খারাপ?
মায়া দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল – না।
তাকে কাছে টেনে কপালে একটা গভীর চুম্বন এঁকে ফাহিম বলল – ও মুখে আঁধার কেন নেমেছে?
মায়া তাকিয়ে আছে অপলক। কেমন জড়তা নিয়ে বলল – কোথায় ছিলেন?
ফাহিম তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে বলল – একটু আড্ডা দিচ্ছিলামগো। আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি?
মায়া উত্তর দিলো না। সরে এসে বলল – মুরাদ নামে কাউকে চিনেন?
ফাহিম ভড়কালো না। মনে মনে যথেষ্ট ভয় পেলেও মুখে স্বাভাবিক ভঙ্গি রেখে বলল – চিনি নাহ। কে মুরাদ?
মায়া খানিক হেসে বলল – আপনিই মুরাদ, আপনিই ফাহিম, আপনিই তানভীর। আপনাকে এবার ভয় হচ্ছে আমার। ভীষণ ভয়।
চলবে….