#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৯
কিন্তু ইজহান কোন ভ্রুক্ষেপ করছেনা। কারণ তার কাছে মনে হচ্ছে সে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ’টা করেছে। যে মানুষ’টা স্বার্থপরে’র মতো শুধু নিজের কথা ভেবে ও নিজের কথা চিন্তা করে। এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে দুই বার ভেবে দেখলো না। এমন সময় এভাবে সকল’কে ভাসিয়ে চলে গেলো। তারজন্য এতো মায়া কিসের। তারজন্য এতো আদিখ্যেতা কিসের। মায়া করতে হলে তার পরিবারের সদস্য’রা করুক। আদিখ্যেতা করতে হলে তার পরিবারের সদস্য’রা করুক। মুগ্ধতা কেন এসব কিছু করবে? সে কি ভুলে যাচ্ছে সে এখন আমার স্ত্রী। আমার বিয়ে করা বউ। তার সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে। তাহলে আমার স্ত্রী হয়ে সে কিভাবে পারে এমন কাজ করতে। কিভাবে পারে এমন বিশ্বাস ঘাতকের জন্য নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে। মুগ্ধতা এসব কিছু করতে পারবে কিন্তু ইজহান মুখ বুঝে সবকিছু দেখবে কোন কিছু বলবে’না? যার জন্য এতো কিছু তারজন্য মায়া বাড়াতে দিবে। ভুল করেও আমার স্ত্রী’কে ঐ বিশ্বাস ঘাতকের জন্য সামান্য অশ্রু ফেলতে দিবো না।
অতঃপর মুগ্ধতা নিজেকে সামলে নিয়ে। অশ্রু ভেজা চোখে রাগান্বিত স্বরে ইজহান কে বললো,
–“কোন সাহসে আপনি আমার বোনের ছবির ফ্রেম’টা ছুড়ে ফেলে দিলেন? আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন কিছু করার? কে আপনি? কোন অধিকারে’র আমার জীবনে এভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আমাদের বিয়েটা শুধু কাগজ কলমে’র। শুধু লোক দেখানো এবং দ্বায়িত্ব বোধের সম্পর্ক। সেখানে এতো অধিকার কোথায় থেকে আসছে? বলবেন প্লিজ আমাকে?
ইজহান কিছু বললো না। ইজহানে’র নীরবতা দেখে মুগ্ধতা বললো,
–“কি হলো ইজহান খান কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না? কিভাবে উত্তর খুঁজে পাবেন বলেন? যে মানুষ’টা সম্পর্কে’র মূল্য বুঝতে পারেনা। আসলে তার কাছে থেকে কোন উত্তর আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুনা। আমিতো ভুলে গিয়েছিলাম যে মানুষ’টা বিয়ে নিয়ে ডিল করে। সে কিভাবে সম্পর্কে’র মানে বুঝতে পারবে। তার কাছে কেন যে কোন উত্তর আশা করেছিলাম।
ইজহান তাৎক্ষণিক মুগ্ধতা’র দিকে ঝুকে তার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
–“অনেক হয়েছে মুগ্ধতা। সময়ে’র সাথে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। এখন চলুন এখান থেকে তাড়াতাড়ি।
তখন মুগ্ধতা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–“কোথায়?
ইজহান মুচকি হাসি দিয়ে আচমকা মুগ্ধতা’র হাতটা নিজের হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে বললো,
–“চলুন গেলেই দেখতে পাবেন। এতো প্রশ্ন করবেন না। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না।
ইজহানে’র এমন ব্যবহার দেখে মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে গেলো। তারপর সে ইজহানে’র কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
–“Don’t touch me ইজহান, ভুল করেও আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না। এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবেনা, বলে দিচ্ছি, ছাড়ুন আমাকে।
ইজহান আরো শক্ত করে মুগ্ধতা’র হাতা’টা আঁকড়ে ধরলো।
তখন মুগ্ধতা বললো,
–আহ্, ছাড়ুন আমাকে লাগছে আমার। কি হলো ছাড়ুন বলছি।
ইজহান বললো,
–“এই হাত কি ছাড়ার জন্য ধরেছি। চলেন আমার সাথে। কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখেন। আপনি আমার বিয়ে করে বউ। শুধু হাত ধরেছি তারজন্য এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। তাছাড়া বুঝতে পারলাম আপনার স্বামী অনেক হ্যান্ডসাম তারজন্য এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবেন আমাকে।
মুগ্ধতা লজ্জা পেয়ে। ইজহানে’র দিকে থেকে নিজের চোখ জোড়া নামিয়ে নিয়ে বললো,
–“আমি কিন্তু চিৎকার করবো ইজহান। ছাড়েন আমাকে আমার লাগছে। কথা কানে যাচ্ছে না আপনার।
ইজহান বললো,
–“আচ্ছা চিৎকার করেন। চিৎকার করে লোকজন জোর করেন। তারপর দেখি কি হয়। নিজের সদ্য বিয়ে করা বউ এর হাত ধরার শাস্তি কি হয়। ইজহান খান দেখতে চাচ্ছে। কি হলো লোকজন ডাকেন।
–“আপনি কিন্তু আমার সুযোগ নিচ্ছেন ইজহান।
–“আচ্ছা সুযোগ নিচ্ছি আপনার কোন সমস্যা। আমি আমার বিয়ে করা বউ এর সুযোগ নিচ্ছি।
–“হ্যাঁ আমার সমস্যা। কারণ হাতটা আমার। আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেনা।
–“বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু কোলে তুলে নিয়ে যাবো। তখন কিন্তু বাধা দিতে পারবেন না। তখন বুঝতে পারবেন ইজহান আসলে কি কি করতে পারে। তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেন না। বলে দিচ্ছি।
–“কি? কোলে তুলে নিয়ে যাবেন মানে? বললেই হলো। আমি কি আপনার প্রোপার্টি যে জোর করবেন। এসব কিছু কিন্তু আমার সাথে চলবে না।
–“হ্যাঁ অবশ্যই আপনি আমার প্রোপার্টি ।
আপনি আমার বিয়ে করা বউ। তারজন্য কোন সিনক্রিয়েট না করে ভালো ভাবে চলেন আমার সাথে।
–“কি প্রোপার্টি?
–“হ্যাঁ চলেন। না কোলে তুলে নিবো।
তখন মুগ্ধতা মলিন স্বরে বিড়বিড় করে বললো,
–“শেষ পর্যন্ত আমি তার প্রোপার্টি। যে মানুষ’টা সম্পর্কে’র মূল্য দিতে জানেনা। নিজের বিয়ে করা স্ত্রী কে সম্মান দিতে জানেনা। তার সাথে কিভাবে কাটাবো আমার জীবন তুমি বলতে পারো আপু। কেন চলে গেলে আমাদের রেখে। আজকে দেখো তোমার জন্য আমাদের কি অবস্থা।
–“কি হলো কিছু বলেন।
মুগ্ধতা’র নীরবতা কারণ ইজহানে’র সাথে কথা’র জ্বালে ফেসে যাচ্ছে সে। তারপর ইজহান তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তার সাথে। তখন করিডোর দিয়ে যাবার সময় অনু তাদের দেখতে পেলো। কারণ অনু এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভেবেছিল ইজহান চলে গেলে মুগ্ধতা কে শুভ্রতা’র রুমে খুঁজে দেখবে। কিন্তু সে এখন দেখে শুভ্রতার রুম থেকে ইজহান মুগ্ধতা কে নিয়ে আসছে। মুগ্ধতা কে দেখে তার খুব ভালো লেগেছিল। অবশেষে তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তার ভালো লাগা বিলীন হয়ে গেলো। কারণ ইজহান মুগ্ধতাকে টেনে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছিলো। তারপর ইজহান মুগ্ধতা কে নিয়ে মুগ্ধতা’র রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। এসব কিছু অনু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। তারপর সেগুলো আলেয়া বেগম কে বলতে চলে যায়। তখন তার সামনে মাহিন পড়েছিল। তখন মাহিন কে সবকিছু খুলে বলতে। মাহিন বললো,
–“তাদের স্বামী স্ত্রী’র ব্যাপার তারা মিটিয়ে নিবে। এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবেনা অনু। তাছাড়া বড় আম্মুকে বললে সে অনেক চিন্তা করবে। ঝামেলা অনেক বাড়বে। এরমধ্যেই শুভ্রতা আপুকে নিয়ে এতো ঝামেলা। তারমধ্য ইজহান ভাইয়া এবং মুগ্ধতা’র বিষয় টা আড়ালে রাখা ভালো। সবকিছু সময়ে’র সাথে ঠিক হয়ে যাবে। অনু তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করিস না।
অনুর নীরবতা। তারপর সে নীরবতা কাটিয়ে বললো,
–“ঠিক আছে ভাইয়া। আমি তাহলে শুধু বড় আম্মু কে জানিয়ে আসি মুগ্ধতা আপুকে পাওয়া গেছে।
–“ঠিক আছে।
অনু চলে গেলো। তারপর তার বড় আম্মু”কে সবকিছু জানিয়ে দিল। যে মুগ্ধতা কে পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দিয়ে বাড়ির সকলে’র চিন্তা দূর হলো।
_________________________
ইজহান রুমের দরজা বন্ধ করতে মুগ্ধতা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–“কি হলো দরজা বন্ধ করছেন কেন?
তখন ইজহান তার কাছে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
–“কেন এখন কি খুব ভয় হচ্ছে আপনার? তখন তো খুব কথা শোনাচ্ছিল আমাকে। কারণে অকারণে, এখন কিছু বলেন শুনি। ঐ রুমে নিশ্চুপ ছিলাম কারণ ঐ রুমে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছিলাম না। কোথায় ছিলেন বলেন? সারা বাড়ির লোকজন খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিলো না। আপনার জন্য আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল বুঝতে পারছেন।
আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন করার। দুই বোন মিলে কি শুরু করেছেন আমার সাথে? আমার জীবন কি কোন খেলার জিনিস দুই বোন মিলে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
–“কি সব যা-তা বলছেন আপনি। আপনার জীবন নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেলতে যাবো।
–“তাছাড়া কি করছেন? কখনো বিয়ের কনে হারিয়ে যাচ্ছে। কখনো বিয়ে করা বউ হারিয়ে যাচ্ছে। পুরো বিয়েটা কে মজা বানিয়ে ফেলেছেন। তারপর সম্পর্ক নিয়ে লেকচার দিচ্ছেন। লজ্জা করছেনা?
–“ইজহান?
–“কোন কথা বলবেন না। আপনার কাছে থেকে কোন কৈফত চাচ্ছিনা। বাহিরে সকলে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে আসেন। আমাদের যেতে হবে এখন। আপনার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। দয়া করে নতুন কোন ঝামেলা করবেন না।
ইজহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর নিজেকে শক্ত করে বললো,
–“বাস্তবতা কে মেনে নেওয়া ছাড়া কি কোন কিছু করার আছে আমার। কিন্তু ভালোবাসা হীন সম্পর্কে কোন জীবনের সূচনা হবে আমাদের।
মুগ্ধতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর নিজেকে তৈরী করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
#চলবে…