#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৪
নাহিদ সাহেব নীরবতা কাটিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে
গম্ভীরমুখে বললেন,
–“মাহিন তুমি ইমতিয়াজ সাহেব কে ডেকে নিয়ে এসো। এভাবে আর কতক্ষণ নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারবো। কখনো না কখনো আমাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। তাকে সবকিছু খুলে বলতে হবে। কিন্তু কিভাবে সবকিছু খুলে বলবো? সেদিন খুব বড় মুখ করে তাকে বলেছিলাম। আমার বড় মেয়ে শুভ্রতা কখনো আমার কথার অবাধ্য হবেনা। সে আমার অহংকার, আমার বিশ্বাস, আমার ভরসা, আমার সবকিছু। তার প্রশংসা করে কতো কিছুই না বলেছিলাম। ভাবতে আজকে নিজেকে
কেমন ছোট মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজের ভুলের মাশুল নিজেকে দিতে হচ্ছে। যে ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে যে মেয়েকে নিয়ে এতো অহংকার করেছিলাম, এতো গর্ব করেছিলাম । আজকে সেই মেয়ের কথা কিভাবে বলবো? কিভাবে সবকিছু সামাল দিবো। ভাবতে নিজেকে খুব দোষী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সব দোষ আমার।
তখন আলেয়া বেগম চোখের অশ্রু মুছে বললেন,
–“নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ করো। ভাগ্যের লেখা কে পরিবর্তন করতে পারবে? সব আমাদের ভাগ্যের দোষ। আমাদের ভাগ্যে এসব কিছু লেখা ছিলো। কিন্তু কি দোষ করেছিলাম আমরা? কেন ভাগ্যে
আমাদের সাথে এমন করলো?
তখন নাহিদ সাহেব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
–“ভাগ্যে! সবকিছু তোমার মেয়ে শুভ্রতা করেছে।আজকে আমাদের সাথে তাদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে শুভ্রতা। বিয়ে কি শুধু দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলে? বিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলে। যেখানে আজকে তাদের সাথে আমাদের মান সম্মান সবকিছু জড়িয়ে আছে। সেখানে তোমার মেয়ে কি করলো? আমাদের সাথে তাদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে চলে গেল?
আলেয়া বেগম ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বললেন,
–“আমার মেয়ে মানে? সে শুধু আমার মেয়ে! সে আমাদের মেয়ে। আমাদের কলিজার টুকরো। সে আমাদের সাথে কখনো এমন কিছু করবে চিন্তা করেছিলাম। আসলে আমাদের মেয়ের কোন দোষ ছিলোনা। সব পরিস্থিতিতে হয়েছে। আমাদের মেয়ের সাথে অবশ্যই এমন কিছু হয়েছে। যার জন্য আমাদের মেয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের মেয়ে শুভ্রতা কখনো আমাদের বিশ্বাস নষ্ট করতে পারেনা।
তখন নাহিদ সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন,
–“আজকের পর থেকে ভুল করেও কখনো ঐ নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবেনা আলেয়া। যে মেয়ে আমাদের মান সম্মানের এর কথা ভাবতে পারলোনা। আমাদের এমন জায়গায় রেখে চলে গেল? তারজন্য
কিসের এতো মায়া? কিসের এতো ভালোবাসা? তুমি কিভাবে পারছো তার পক্ষ টেনে কথা বলতে। আসলে তোমার জন্য সবকিছু হয়েছে। মা হয়ে মেয়ের ঠিক মতো খেয়াল রাখতে পারলে। আজকে আমাদের এমন দিন দেখতে হতোনা। এখন এসেছো
মেয়ের সুপারিশ করতে? মনে রাখো আজকে থেকে আমাদের বড় মেয়ে আমাদের জন্য আমাদের পরিবারের জন্য মরে গেছে। আজকে থেকে শুধু আমার একটা মেয়ে মুগ্ধতা। ভুল করে তোমারা কেউ আমার সামনে শুভ্রতা নাম উচ্চারণ করবে না। সে আমার কাছে মরে গেছে।
আলেয়া বেগম অশ্রু ভেজা চোখে বললেন,
–“কি বলছো তুমি? যে মেয়ে তোমার সবকিছু ছিলো।
তার সম্পর্কে এমন কথা বলতে। তোমার কষ্ট হচ্ছে না, তোমার বিবেকে বাধছে না।
–“না৷ সে তারজন্য আমার সব কষ্ট, আমার সব বিবেক শেষ করে দিয়ে চলে গেছে। তারজন্য আবার কিসের কষ্ট কিসের বিবেক?
মাহিন তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি ইমতিয়াজ সাহেব কে ডেকে নিয়ে আসো।
–“আচ্ছা বড় আব্বু।
মাহিন ইমতিয়াজ সাহেব কে ডাকতে চলে গেল। মুগ্ধতা টলমল চোখে তাকিয়ে আছে নাহিদ সাহেব এবং আলেয়া বেগমের দিকে। যে মানুষ দুটি কখনো কারো সামনে জোরে কথা পর্যন্ত বলেনি ঝগড়া তো দূরের কথা। যে মানুষ দুটি’র সব ঝগড়া, রাগ, অভিমান সবকিছু বন্ধ ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো।সেখানে আজকে তারা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে মুগ্ধতার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। তার কাছে আজকে কোন জাদুর কাঠি থাকলে। সে কাঠি দিয়ে আজকে সবকিছু ঠিক করে দিতো।
মাহিন ইমতিয়াজ সাহেব কে ডেকে নিয়ে আসলো। তখন সে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে সকলের চিন্তিত মুখ দেখে তার মনের মধ্যে অজানা কোন ভয় উঁকি দিলো। তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে নাহিদ সাহেব কে বললেন,
–“কি হয়েছে নাহিদ সাহেব সবকিছু ঠিক আছে? সকল কে এমন লাগছে কেন? শুভ্রতা কোথায়? কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে।
নাহিদ সাহেবের নীরবতা, তার চোখদুটো টলমল করছে। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
–“ইমতিয়াজ সাহেব পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন। বিয়েটা হচ্ছেনা।
তাৎক্ষণিক ইমতিয়াজ সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন,
–“মানে? কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন। বিয়ে হবেনা মানে? বিয়ে কি ছেলেখেলা, বিয়ে কি পুতুল খেলা ইচ্ছে হলো ভেঙে দিলেন। এখানে আমার ছেলের জীবন জড়িয়ে আছে। তার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের মান সম্মান সবকিছু। দেশের নামকরা বিজনেস ম্যান ইজহান খানের বিয়ে বলে কথা বুঝতে পারছেন কিছু? কি হবে আমাদের অবস্থা। আমার ইজহান কে নিয়ে কতো উল্টো পাল্টা
নিউজ হবে। তারজন্য তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে কি প্রভাব পড়বে।
তখন নাহিদ সাহেব মলিন স্বরে বললেন,
–“শুভ্রতা।
তখন ইমতিয়াজ সাহেব চোখে অনেক প্রশ্ন নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
–“শুভ্রতা কি? শুভ্রতার কি হয়েছে! কোথায় শুভ্রতা? আমাকে কিছু বলবেন?
নাহিদ সাহেব কিছু বলতে পারলো না। সে শুধু শুভ্রতার রেখে যাওয়া চিঠি ইমতিয়াজ সাহেব কে দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তখন ইমতিয়াজ সাহেবের কিছু বুঝতে বাকী রইলো না। কি হয়েছে শুভ্রতার! কোথায় শুভ্রতা? এমন অবস্থায় সে নিজেকে সামলাতে পারলোনা। অসুস্থতা বোধ করছিলেন। তখন মাহিন তাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। অনু এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে। মুগ্ধতা এসে তাকে জিজ্ঞেস করে।
–“আঙ্কেল ঠিক আছেন?
তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
–“হ্যাঁ।
তারপর মাহিন কে বললেন,
–“মাহিন তোমার ইজহান ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে এসো। তার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
–“আচ্ছা আঙ্কেল।
মাহিন চলে গেল ইজহান কে ডাকতে। বন্ধ রুমের মধ্যে সকলের নীরবতা।
___________________________
ইজহান কে নিয়ে ও তার বিয়ে কে কেন্দ্র করে, তার বন্ধু ও কাজিন’রা বিভিন্ন রকমের হাসি ঠাট্টা ও মজা করছিল। অবশেষে তাহলে আজকে সে বিশেষ দিন এলো। যে দিনের অপেক্ষায় ছিলো অনেক মেয়ে। কিন্তু তাদের কাঁদিয়ে আজকে ইজহান খান হতে যাচ্ছে অন্য কারো। কিন্তু বিয়েতে এতো সিক্রেট থাকবে কেন? এখনো আমরা আমাদের হবু ভাবির চেহারা তো দূর থাকুক নাম পর্যন্ত জানিনা। কেন ইজহান কেন? বউ কে আমাদের কাছে থেকে এতো লুকিয়ে রাখার কি আছে? সে কি শুধু তোমার বউ। সে কিন্তু সম্পর্কে আমাদের ভাবি। আমাদের ভাবিকে আমাদের কাছে থেকে লুকিয়ে রাখা কিন্তু অন্যায়।
তখন ইজহান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
–“বিয়ের আগে ভাবি হয়ে গেল। তাছাড়া তাকে লুকিয়ে কেন রাখবো? সময় হলে তাকে দেখতে পাবে এবং সময় হলে সবকিছু জানতে পারবে। কারণ
ইজহান খানের বিয়ে বলে কথা। সামান্য সিক্রেট থাকবে না বিয়েতে। সামান্য সারপ্রাইজ থাকবে না বিয়েতে। এটা কি করে সম্ভব। কিছু ভিন্ন’তা না থাকলে সবার থেকে ইজহান খানের বিয়ে কিভাবে আলাদা হবে?
_____________________________
ইজহান কে ডাকতে এসে দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাহিন। কারণ এখান থেকে কিভাবে ইজহান কে ডেকে নিয়ে যাবে বুঝতে পারছেনা। তখন তার ব্রেনে কিছু বুদ্ধি এলো। সে কিছু জুসের গ্লাস ট্রে করে তাদের দিকে নিয়ে গিয়ে তাদের জুস অফার করার সময় ইচ্ছে করে ইজহানের গায়ে সামান্য জুস ফেলে দিয়ে বললো,
–“সরি ভাইয়া। ভেতরে চলেন ফ্রেশ হয়ে আসবেন।
ইজহান বিষয়’টা বুঝতে পারলো মাহিন ইচ্ছে করে জুস ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সে কিছু বললো না। তার সাথে ভেতরে চলে আসে এবং আসার সময় বললো,
–“মাহিন কিছু লুকাচ্ছ আমার কাছে থেকে? কি হয়েছে বলোতো। তুমি ইচ্ছে করে জুস ফেলে দিলে বিষয় টা আমি বুঝতে পারছি। বিজনেস ম্যানের চোখ বলে কথা। সবকিছু ঠিক আছে? শুভ্রতা ঠিক আছে?
মাহিন মলিন স্বরে বললো,
–“ভাইয়া চলেন ইমতিয়াজ আঙ্কেল ডাকে।
ইজহান বিস্ময়কর দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আব্বু এখন ডাকছে? কোন কিছু হয়েছে মাহিন!
মাহিন বেশি কিছু বললো না। সে শুধু বললো,
–“ভাইয়া ভেতরে চলেন সবকিছু জানতে পারবেন।
ইজহান মাহিনের কথার মানে বুঝতে পারলো না। মাহিনের সাথে সে দ্রুত ভেতরে যাচ্ছে এবং তার বুকের হৃদ স্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে কিছু হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছেনা।
ইজহান রুমে আসতে সকলের অবস্থা দেখে। তার বাবা কে জিজ্ঞেস করে,
–“আব্বু কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক আছে। শুভ্রতা কোথায়?
ইমতিয়াজ সাহেব নিজেকে শক্ত করে বললেন,
–“ইজহান নিজের মন কে শক্ত করো? শুভ্রতা!
–“শুভ্রতা কি? আব্বু!
ইমতিয়াজ সাহেব শুভ্রতার রেখে যাওয়া চিঠি ইজহান কে দিয়ে বললেন,
–“ইজহান শুভ্রতা তোমাকে বিয়ে করতে পারবেনা। তারজন্য শুভ্রতা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
কথাগুলো ইজহানের কানের পর্দা পেরিয়ে তার
হৃদয়ে স্পর্শ করলো। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো সে। তারপর সে চিৎকার করে বললো,
–“শুভ্রতা কখনো আমার সাথে এমন করতে পারেনা।
#চলবে…
(কেমন হচ্ছে রেসপন্স করবেন। রেসপন্স না পেলে লেখার আগ্রহ থাকেনা)