#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৩
নিয়াজ বিশ্রী ভাবে হাসি দিয়ে বললো,
–“অনেক হয়েছে লুকোচুরি এখন হবে মুখোমুখি। নিয়াজ ইজ ব্যাক শুভ্রতা। গেইম ইজ অন। তোমার সময় শুরু হচ্ছে এখন থেকে শুভ্রতা। তোমাকে জাস্ট পনেরো মিনিট সময় দিচ্ছি। এরমধ্যেই নিজের সিদ্ধান্ত আমাকে জানাবে। কারণ সময়ের মূল্য আমার কাছে অনেক। সময় পরিবর্তনের সাথে মানুষের জীবনের নতুন সূচনা কিভাবে পরিবর্তন হয়। তার মূল্য কিভাবে বুঝতে পারবে তুমি। কারণ কখনো সময় ছিল তোমার পক্ষে। আজকে সময় আমার পক্ষে। আজকে তোমাকে সুদে আসলে সময় এবং জীবনের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিবো। অপেক্ষা করো এবং দেখো নিয়াজ কি করতে পারে। এতোদিন নিয়াজের ভালোবাসা দেখেছো, ব্ল্যাকমেইল দেখছো। আজকে নিয়াজের প্রতিশোধ দেখবে এবং বুঝতে পারবে নিয়াজের প্রতিশোধ কতোটা ভয়ংকর হতে পারে। যে প্রতিশোধের কথা তুমি কখনো ভুলতে পারবে না। মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে ভয়াবহ হবে আমার প্রতিশোধ। বুঝতে পারছো তুমি?
কথাগুলো বলে নিয়াজ ফোন কেটে দেয়। শুভ্রতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। অতীতের কালো ছায়ার মধ্যে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে শুভ্রতা। তার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ভূমিকম্প। যে ভূমিকম্পের প্রত্যেক’টা
আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার নিষ্পাপ হৃদয়। যেখানে স্মৃতি হিসেবে থেকে যাচ্ছে শুধু কিছু ক্ষত বিক্ষতের চিহ্ন। এসব ভুলের জন্য এবং ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আজকে নিজেকে খুব দ্বায়ী মনে হচ্ছে তার। সে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছেনা। তার নিজেকে অনেক ঘিন্না লাগছে। ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে। আজকে নিজেকে তার খুব অসহায় এবং খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে নতুন জীবন শুরু করার আগে সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেলো। জীবন এমন কেন। কিছু ভুলের জন্য জীবন কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। যে ভুল গুলোর জন্য নিজেক কখনো ক্ষমা করা যায়না।
তার দুটি চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু পড়ছে। নীরবতার মধ্যে ডুবে গেছে শুভ্রতা।
কিছুক্ষণ পড়ে,
নীরবতা কাটিয়ে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে। রুমের দরজা বন্ধ করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কনে সাজে নিজেকে ক্ষুতিয়ে ক্ষুতিয়ে দেখছিল শুভ্রতা। বউ সাজে কি মিষ্টি লাগছে তাকে। নিজেকে দেখে নিজের খুব হিংসা হচ্ছে?
সৌন্দর্যের পরিবর্তন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হয়। কিন্তু এতো সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে শুভ্রতার না বলা পাহাড় সমান কষ্ট। যে কষ্টে তার হৃদয়’টা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে বাহির থেকে দেখে বোঝার কোন চিহ্ন ছিলনা। কারণ মানুষের বাহিরের সৌন্দর্য খুব সহজে তুলে ধরা যায়। কিন্তু ভেতরে সৌন্দর্য এবং কষ্ট গুলো কি খুব সহজে তুলে ধরা যায়? জীবন বড় অদ্ভুত বিচিত্র দৃশ্যের মতো। কখনো সাদা কালো ছায়ার মতো। কতো শতো ছায়া আসবে জীবনে। ভালোবাসা গুলো থেকে যাবে। কষ্ট গুলো দাগ কেটে যাবে।
তখন শুভ্রতা বিড়বিড় করে বললো,
–“ভালোবাসা কি ভুল? ভালোবাসার মানুষ কে বিশ্বাস করা কি ভুল। তার সাথে নিজেদের কিছু মুহূর্ত কাটানো কি ভুল। আমার কি ভুল ছিল? কোন ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আমাকে?
তখন তার সামনে আয়নার ভিতরে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। সে তার দিকে তিরস্কার দিয়ে দিয়ে বললো,
–“অবশ্যই তোমার ভুল ছিল শুভ্রতা। যে ভুলের মাশুল তোমাকে দিতে হচ্ছে। ভালোবাসা ভুল না, বিশ্বাস করা ভুল না। কিন্তু ভুল মানুষ কে ভালোবাসা ভুল, বিশ্বাস করা ভুল। আবেগের বশে প্রেমময় পিপাসা তে আসক্ত হয়ে নামহীন সম্পর্কে নিজেদের কিছু মুহূর্ত কাটানো ভুল। যে ভুল তুমি করেছো। নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো শুভ্রতা কি থেকে কি হয়ে গেলে তুমি। তোমার ভুলের জন্য। তোমার কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট পেতে হবে কেন? এমন ভুল কেন করলে তুমি। কি জবাব দিবে সকলের কাছে তুমি? তোমার কাছে কোন উত্তর আছে।
তখন শুভ্রতা উত্তেজিত হয়ে বললো,
–“কে তুমি? আমাকে বিরক্ত কেন করছো। আমার এসব কিছু ভালো লাগছেনা। আমি সবকিছু থেকে মুক্তি চাচ্ছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মুক্তি দিবে আমাকে?
–“আমি তোমার বিবেক। আমি তোমার প্রতিচ্ছবি। আমি তোমার ছায়া। যে তোমাকে তোমার ভুল গুলোকে ঠিক করে, তোমাকে সঠিক পথ দেখাবে। যেখানে তুমি খুঁজে পাবে তোমার মুক্তি।
তখন শুভ্রতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
–“এতোদিন কোথায় ছিলে তোমরা? আমাকে কেন ভুল করতে দিলে তাহলে। আমার জীবন কে নরক বানিয়ে দেবার জন্য। এখন এসেছো আমাকে জ্ঞান দিতে। তোমাদের জ্ঞান আমার লাগবে।
ফোনে রিং হচ্ছে কিছু সময় ধরে কিন্তু শুভ্রতা ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিলো। অবশেষে ফোনের রিং শুনে শুভ্রতা বাস্তবে ফিরে এলো। নিয়াজের গিফট হিসেবে দেয়া ফোনে রিং হচ্ছে। ফোন’টা হাতে নিয়ে নিয়াজের কয়েক’টা মিস কল দেখতে পেলো। তখন শুভ্রতা ফোন’টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিলো। তখন সে ফোনে একটা মেসেজ আসে যেটা দেখে শুভ্রতা রীতিমতো আকাশ থেকে মাটিতে ভেঙে পরে। তারপর ফোনে রিং হতে সে দ্রুত ফোন রিসিভ করে বললো,
–“কি দোষ আমার নিয়াজ? কেন ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে?
তখন নিয়াজ রেগেমেগে আগুন হয়ে বললো,
–“তাছাড়া কি করবো বলো। তোমার সাথে আমার পুরানো কিছু হিসাব নিকাশ বাকী আছে। যেগুলো রেখে তুমি অন্যের সাথে বিয়ের পীড়িতে বসবে। তার সাথে নতুন জীবন শুরু করবে। নিয়াজ এসব মুখ বন্ধ করে মেনে নিবে ভাবলে কি করে?
–“কিসের হিসাব নিকাশ বাকী আছে নিয়াজ। তুমি নিজে আমার বিশ্বাস এবং ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছো। তারপর আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাচ্ছো। কিছুক্ষণ পরে আমার বিয়ে এখন তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো। তারপর কিসের হিসাব নিকাশ বাকী থাকতে পারে বলবে তুমি?
–“সবকিছু ভুল গেলে তুমি? ভুলে গেলে দুই বছর আগের ঘটনা। দুই বছর আগে কি করেছিলে তুমি আমার সাথে। আমার মান সম্মান সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলে তুমি। তোমার জন্য আমাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তোমার প্রত্যেক’টা আঘাতের জবাব দিবো আজকে।
–“নিয়াজ?
–“শুভ্রতা চিৎকার করে তোমার কোন লাভ হবেনা। বরং তোমার ক্ষতি হবে। আজকে সময়’টা আমার। দুই বছর আগে সময়’টা তোমার ছিল। তোমার কাছে সামান্য কিছু মুহূর্ত বাকী আছে। তারমধ্য নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে।
কথাগুলো বলে নিয়াজ ফোন কেটে দিলো। দু’চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝড়ছে শুভ্রতার। কি করবে সে কি করা উচিৎ তার?
সবকিছু ভেবে অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো। সে নিজেকে শক্ত করে তার মন কে শক্ত করে নিয়াজ কে ফোন দিয়ে বললো,
–“নিয়াজ তুমি জিতে গেলে। ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে হেরে গেলো শুভ্রতা।
নিয়াজ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
–“মানে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা? তুমি কি সত্যি বিয়েটা করছো না?
–“না।
–“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা?
–“সময় সবকিছু বলে দিবে নিয়াজ।
তখন শুভ্রতা ফোনটা কেটে দিয়ে। নিজের বিয়ে ছেড়ে। বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল অজানা কোন গন্তব্যে’র উদ্দেশ্যে।
___________________________
বাস কন্ট্রাক্টরের ডাকে শুভ্রতা বাস্তবে ফিরে আসে।
–“কোথায় যাইবেন?
শুভ্রতা নড়েচড়ে বসে বাসের টিকিট দুটি দিতে। বাস কন্ট্রাক্টর টিকিট দুটি হাতে নিয়ে তার দিকে প্রশ্ন
সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“মানুষ দেহি একজন টিকিট দুইটা? সিট দুইটা নিছেন।
তখন শুভ্রতা ইশারা করে তার পাসের সিট দেখায়। তখন সে হেসে দিয়ে বললো,
–” বড় লোক দের সব বড় বড় ব্যাপার। এগুলো এতো কিচ্ছু বুঝিনা। ব্যাগ রাখার জন্য সিট নিছেন। শুভ্রতা মলিন একটা হাসি দিয়ে। বাহিরের সৌন্দর্যের দিকে তাকাল ।
___________________________
বাহির থেকে শুভ্রতার কাজিন মাহিন ছুটে এসে বললো,
–“বড় আব্বু ছেলে পক্ষ তাড়া দিচ্ছে। কাজী বিয়ে পড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে এখন কি হবে?
#চলবে…