বর্ষার প্রণয়ের কথা পর্ব ৬

0
774

#বর্ষার_প্রণয়ের_কথা
#পর্ব_০৬
#নুর_নবী_হাসান_অধির

বিজ্ঞান ভবন ৩ এ যতগুলো ডিপার্টমেন্ট আছে সবগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে৷ সবাই ঠিক করেছে ছুটি কাটাবে মেঘদের বাসায়৷ ছোঁয়া, ঋতু যাবে ঠিক আছে৷ কিন্তু রঙ্গন, সৌরভ কিভাবে যাবে? ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া সমাজ ভালো চোখে দেখবে না৷ গ্রামে হলে কথাই নেই৷ রটে যাবে কলঙ্ক। শহরের মানুষ কি সব মেনে নিবে? মেঘ বাড়িতে কীভাবে জানাবে দু’জন ছেলে বন্ধুও যাবে৷ মেঘ সাহস করে তার বাবাকে ফোন দিল৷ কিন্তু জানাতে পারল না৷ মেঘ অপরাধী কন্ঠে বলল,

“রঙ্গন, সৌরভ তোরা যতদিন ঢাকায় থাকবি ততদিন তোরা হোটেলে থাকবি৷ তোদের সব খাবার আমি বাসা থেকে দিয়ে যাব৷ আমার বাড়িতে ছেলে মানুষের প্রবেশ নিষেধ। মধ্যবিত্ত পরিবারের মান সম্মান সবার আগে৷”

মেঘের সমস্যা বুঝতে পেরে সৌরভ বলল,
“সে নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না৷ আমরা রামপুরা কোন হোটেলে থেকে যাব৷”

মেঘ হাফ ছেড়ে বাঁচল। মেয়ে বড় হলে মা বাবা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকে৷ সেখানে যদি বাড়িতে অপরিচিত কোন ছেলে আসে তাহলে দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না৷ সবাই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিল৷ পরের দিন সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছে যায়৷ ছোঁয়া, ঋতু মেঘের সাথে মেঘদের বাসায় চলে যায়৷ সৌরভ রঙ্গন আশেপাশে একটা হোটেলে উঠে৷ সকালের নাস্তা করে সবাই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
__________________

পড়ন্ত বিকেলে সূর্য ডুবি দেখতে ব্যস্তা পাঁচ জোড়া চোখ৷ ভালোবাসায় আমেজের মেতে উঠেছে তারা৷ মুক্ত পাখির মতো আকাশে ডানা মেলে উঠছে৷ ঝিলের পানিতে সূর্যের লাল বর্ণের আভা দেখা যাচ্ছে৷ প্রতিটি প্রিয় মানুষের জন্য এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। শীতল হাওয়ায় মেঘের খোলা আবদ্ধ চুলগুলো উঠছে৷ সৌরভ ধীরো ধীরে মেঘের কাছে যায়৷ মেঘের আবদ্ধ চুলগুলো না চাওয়া সত্ত্বেও কানের কাছে গুছে দিল নিজ হাতে৷ মেঘ এতে কোন প্রকার বাঁধা দিল না৷ এখানে কিছু বললে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যাবে৷ ঘনবসতি পূর্ণ ঢাকার বুকে হাতির ঝিল যেন আলাদীনের জাদুর চিরাগের মতোন৷ সৌরভ নেশা ভরা কন্ঠে বলল,

“তোর অবাদ্ধ কেশগুলো মনের গহীনে সাড়া ফেলে৷ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে৷ মনের মাঝে যতন করে রাখতে ইচ্ছা করে৷”

মেঘ ঝিলের জলে তাকিয়ে বলল,
“কানের কাছে গুছে দিলি কেন? ভালো লাগার জিনিসকে কেউ এভাবে পায়ে ঠেলে৷”

“আমি অনেক হিংসুটে মানুষ৷ আমার ভালোবাসার মানুষের দিকে কেউ নজর দিবে আমি মানতে পারব না৷ আমি শুধু নজর দিব৷ খোলা হাওয়ায় তোর এলো কেশ শুধু আমি দেখব৷ অন্য কেউ দেখতে পারবে না৷ যেমনটা তিনবছর থেকে করে আসছি৷”

“আমাকে একটা কথা বলবি?”

“তোর কাছ থেকে কোনদিন কিছু লুকাই নি৷ আর ভবিষ্যতে কোন কিছু লুকাব না৷”

“গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে পারিস না৷ আমি সব জেনে গেছি৷ আমার কাছ থেকে তুই কি কি লুকিয়েছিস৷ সব থেকে বড় কথা হলো আমি হলাম শ্যামবর্ণ মানুষ৷ তুই অনেক ফর্সা, দেখতে সুন্দর। আমাকে কেন তোর পছন্দ হবে?”

“তুই যে আমার সেই শ্যামলতা। যাকে দেখে মনের গহীনে কবিতার ছন্দ মেলে৷ গানে শুরু ময়ূর নৃত্য করে৷”

“থাম এবার৷ আমার কাছে রোমান্টিক হতে হবে না৷ আমার মাঝে কেন রোমান্টিক কাজ করবে না। তুই কি আমায় কোনভাবে সাহায্য করতে চাইছিস? যখন জানতে পারলি আমার সাথে মাহবুব বিশ্বাসঘাতকতা করছে সেদিন থেকেই আমার প্রতি বেশি যত্নশীল দেখা যাচ্ছে।”

“মানুষ যখন নিজেকে একা ভাবে তখন তার পাশে কাউকে না কাউকে এসে দাঁড়াতে হয়৷ এমন সময় আমরা তোর পাশে না থাকলে কে থাকবে? আমি আগেও তোর পাশে ছিলাম৷ কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিস নি৷”

“তুই কি আমায় সত্যি সত্যি ভালোবাসিস? নাকী সব লোভ দেখানো৷”

“লোভ দেখানোর কাজ সৌরভ করে না৷ আমি ভালোবাসি আমার শ্যামলতাকে। যে আমায় নিয়ে ভাবে৷ গোপনে আমার পিক দেখে কোণের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুলে৷ কারো উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে লুকিয়ে ফেলে।”

“আমায় যদি বিন্দু মাত্র ভালোবেসে থাকিস তাহলে আমায় ভুলে যাহ৷ আমি তোকে ভালোবাসা দিতে পারব না৷ আমাকে ভালোবাসলে তুই শুধু কষ্ট পাবি৷ কারণ মাহবুবের প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি৷”

“আমি কখনও মাহবুবের ভালোবাসায় ভাগ বসাতে আসব না৷ আমাকে বন্ধু মনে করে পাশে রাখবি শুধু৷ সারাজীবন তোর পাশে থাকব৷ আমি কখনও তোকে ছেড়ে যাব না।”

“তুই ঢাকায় ঘুরতে এসেছিস৷ ঘুরাঘুরি কর৷”
__________________

পরের দিন সকালের খাবার শেষ করে চলে যায় মিরপুরে৷ উদ্দেশ্য হলো একসাথে দু’টো পর্যটন ঘুরে দেখা৷ জাতীয় চিড়িয়াখানা এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ প্রথমে তারা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে৷ চিড়িয়াখানা ঘুরে ঘুরে প্রতিটি প্রাণী দেখে৷ প্রাণীর সাথে মানুষের ভালোবাসা সম্পর্ক খুবই অটুট৷ যা কখনও ছিন্ন করা যায় না৷ ছিন্ন হলে হিংস্র প্রাণীর মুখে মানুষ খাবার তুলে দিত না৷ সবকিছু ঘুরার পর চিড়িয়াখানায় সেই পুকুর পাড়ে বসে সকল মুহুর্ত ফোন বন্ধি করে রাখে৷ স্বর্গ থেকে ভালোবাসা পাঁচ জনের মাঝে এসেছে৷

বিকেলের দিকে তারা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যায়৷ সকল রকমের গাছ এখানে রয়েছে৷ বোটানি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ছাত্রদের জন্য জ্ঞানের ভান্ডার। মানুষ জ্ঞান কম প্রেমকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে৷ কোণায় কোণায় কবুতরের জোড়া বসে আছে৷ ছোঁয়া মন খারাপ করে বলল,

“আজ বয়ফ্রেন্ড থাকলে আমিও প্রেম করতাম৷ আমার কপালে প্রেম নেই৷ কেউ প্রেম চাইনা কেউ প্রেম পাইনা৷”

মেঘ ব্রো কুচকিয়ে বলল,
“ছোঁয়া তুই কথাগুলো আমাকে বললি৷ আমার কাছে প্রেম ভালোবাসা বিষাক্ত। মানুষ ধ্বংসাত্নক৷”

ঋতু রঙ্গের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর। প্রতিটি মানুষ ধ্বংসাত্মক নয়৷ কিছু মানুষের জন্য তুই সবাইকে এক কথা বলতে পারিস না৷ মন্দ না থাকলে ভালোর কোন মূল্য থাকত না৷ অন্ধকার না থাকলে দিনের কোন গুরুত্ব ছিল না৷ তেমনই বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা না থাকলে ভালোবাসার মর্ম কেউ বুঝত না৷ মানুষ প্রতারিত হওয়ার পরও ভালোবাসার সন্ধান করে৷”

মেঘ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমাকে একদম জ্ঞান দিতে আসবি না৷ আমার এসব ভালো লাগে না৷ তোরা কি শাপলা পুকুরে বসে থাকবি৷ কে যে এই পুকুরের নাম শাপলা পুকুর দিছে? একটা শাপলা ফুল নেই তবুও নাম রাখা হয়েছে শাপলা পুকুর৷”

বুঝতে বাকী রইল না কারো মেঘ নিজের রাগটা পাশলা পুকুরের উপর নিচ্ছে৷ কোন মানুষ নিজের মধ্য রাগ পুষে রাখতে পারে না৷ সেই রাগটা কারো না কারোর উপর ছেড়ে দেয়৷
_________________

ছোঁয়া গভীর ঘুমে আছন্ন। ছোঁয়া ঘুমকে ভালোবাসে৷ ঘুম কাতর মেয়ে৷ সারাদিন ঘুমিয়ে পার করলেও রাত একটার আগে ঘুমিয়ে পড়বে৷ মহারানী ঘুমালে কেউ জাগাতে পারবে না৷ ঋতু চাপা স্বরে বলল,
“মেঘ রঙ্গন আমার সাথে দেখা করার জন্য নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷ তুই আমার সাথে একটু নিচে যাবি৷”

মেঘ চোখ বড় বড় করে বলল,
“এখন রাত একটা বাজে। আমি এখন যেতে পারব না৷ তুই একা যাহ৷ কেউ কিছু বলবে না৷”

বিনয়ী স্বরে বলল,
“দোস্ত চলনা৷ ছোঁয়া তো ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আমি একা যেতে পারব না৷”

মেঘ বিরক্তি স্বরে বলল,
“সারাদিন একসাথে ঘুরাঘুরি করলি স্বাদ মিটেনি৷ এখন দেখা করতে যেতে হবে৷”

“তুই তো প্রেম করিস নি৷ প্রেম করলে বুঝতি৷ কবিরা এমনি বলেনি, ‘তোমাকে দেখার স্বাদ মিটবে না জীবনে৷’ একটু দেখা করেই চলে আসব৷”

“রঙ্গনকে পেলে তো দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যাস৷ আমার কথাও মনে থাকে না৷ মাত্র পাঁচ মিনিট হলে যেতে পারি৷”

“পাঁচ মিনিট না৷ এক মিনিটের মধ্যেই চলে আসব৷”

ঋতুর কথায় বাধ্য হয়ে মেঘ নিয়ে আসে৷ গেইটের বাহিরে আসতেই কেউ মেঘের কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here