ছোট গল্প — হেলোসিনেশন
~ সবুজ আহম্মদ মুরসালিন
৩.
দুইদিন কেটে গেছে। রাসেলের শরীর এখন অনেকটা সুস্থ৷ এই দুইদিন রাসেল হাসপাতালে ছিলো। তাই সেরকম ভাবে আনিকার সাথে কথা হয়নি। আজ অনেকটা সুস্থ। সকালে বাসায় এসেছে। সকাল থেকে মন খারাপ। আনিকা এই দুই দিনে একটাও মেসেজ দেয়নি।
অবশেষে রাসেল রেগেমেগে আনিকাকে মেসেজ দিলো,
— কি করো?
আনিকা মেসেজ দেখেই হতবাক। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে হলো। রাসেলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে রাসেলকেই আবার প্রশ্ন করলো,
— করো? মানে কি?
কবে আমরা আপনি থেকে তুমিতে গেলাম?
আনিকার মেসেজ দেখে রাসেল রীতিমতো হতাশ। সেই সাথে সে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ দুইদিন আগেই তো কথা হলো। আজকে তাহলে আনিকা কি বলছে। কিছু বুঝে উঠতে পারছে না সে। আগের মেসেজ চেক করতেই লজ্জায় পড়ে গেলো রাসেল। দুইদিন আগে আনিকার সাথে কোনো কথাই বলেনি সে। তাহলে, আনিকা যে বলল, ভালোবাসি! তাহলে এটা কি সম্পূর্ণ আমার হেলোসিনেশন ছিলো? রাসেল কিছুই বুঝতে পারছে না। তার হঠাৎ বুক ভাড়ি হয়ে উঠল। তার কান্না পাচ্ছে। হাঠাৎ সে নিজেকে পৃথিবীর সবচে হতভাগা মনে করলো।
আনিকা আবার মেসেজ দিলো। সে লিখল,
— কী হলো? আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না তো।
রাসেল এলোমেলো ভাবনার জগৎ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে এনে লিখলো,
— সরি, সরি! অন্য কাউকে মেসেজ দিতে গিয়ে ভুলে আপনাকে দিয়ে দিয়েছি।
আনিকা ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিলো,
— ইট্স ওকে।
রাসেল ফোন হাতে বসে রইলো। নিজের উপর নিজের খুব রাগ হচ্ছে তার। এতো বড় বোকামি সে কীভাবে করলো। রাসেল ভাবলো, সম্পূর্ণ জীবনটা কেনো হেলোসিনেশন হতে পারে না। কেনো বাস্তবতা এসে সকল স্বপ্ন, ইচ্ছা, আশাকে হত্যা করতেই হবে? মানুষ কেনো তার তৈরি করা জগতে থাকতে পারে না? কেনো? কেনো?
আনিকা রাগ করে রাসেলের সাথে এক সপ্তাহ কথা বলেনি। রাসেল তাকে বারবার সরি বলেছি। আনিকা সেভাবে কিছুই বলেনি। সে ব্যস্ত বলে কথা বলার সময় পাচ্ছে না। রাসেলের মন সেই থেকে খারাপ। সে আজ আফিসে যায়নি। অফিসে না গিয়ে সে সবচে বড় ভুল করেছে। তার সময়ই কাটছে না। সময় থেমে আছে। অফিসে গেলে দিনটা কেটে যেতো।
সে এক কাপ চা হাতে টেবিলে বসল। আনিকাকে নিয়ে আবার ভাবতে শুরু করলো। সে কিছুতেই আনিকাকে তার মাথা থেকে বের করতে পারছে না। সে কি করবে? সে-তো ভালোবাসে। এখানে মন কিছুই শুনতে চায় না। কিছুই না।
সে আনিকাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মাথায় এলোমেলো কিছু কথা উঁকি দিলো। সে মেসেজে গিয়ে লিখলো,
“একদিন আপনি আমার পাশে এসে বসলেন
যেমন করা বৃক্ষের ডালে ঘরছাড়া পাখি এসে বসে।
আপনাকে আমি তুমি করে বললাম
আপনিতে যতটুকু দেখেছি তারচে’ ঢেড় খানিকটা বেশি দেখলাম তোমায়।
আপনিতে কাজল ছোঁয়া বারণ ছিলো
তুমিতে কত সহজে কাজল ছুঁয়ে দিলাম।
আপনিতে হাতের স্পর্শ বারণ ছিলো
তুমিতে না বলেই হাত ধরে হেটে চললাম দিগন্তের পথে।
চোখে চোখ, হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট
মাঝে কাটাতারের মত দূরত্ব ঘুচে গেলো এক নিমিষেই।
আপনি দিয়ে বলতে না পারা কথাটা
তুমিতে কত সহজে বলে দিলাম;
আমি তোমাকে ভালোবাসি!
আচ্ছা বলতে পারবেন;
স্বপ্নে কাউকে কি ছোঁয়া যায়?
সে মেসেজটা লেখা শেষ করে ভাবতে শুরু করলো আনিকাকে পাঠাবে কি না? সে আবার লেখাটা পড়ল। তারপর লেখাটা থেকে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এটা কেটে দিয়ে লেখাটা আনিকাকে পাঠিয়ে দিলো।
চলবে…