#কাজল_চোখের_মেয়ে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২
রাজ বাসায় ঢুকলো ঠিক রাত এগারোটা পঞ্চাশে খাবার টেবিলে রাজের বোন রুশা সহ পরিবারের সবাই উপস্থিত। রাজ গা ছাড়া ভাব নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।
সোহেল সিকদার টেবিল থেকে পানির জগটা রাজের সামনে এনে উঁচু থেকে ফেলে দিলো মূহুর্তেই কাঁচের জগটা ঝংকার তুলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো ফ্লোরে।
শান্ত নিজের মোবাইলের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে। সে যেনো এসব দেখতেও পায়নি শুনতেও পায়নি!
সোহেল সিকদার শান্তর হাত থেকে মোবাইল নিতে চাইলে,শান্ত দিশা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,আম্মু তোমার হ্যাসবেন্ডকে বলে দাও নিজের লিমিট ক্রস না করতে। সম্মান দিচ্ছে সেটা সহ্য না হলে অসম্মান করতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।
দিশা বেগম বললেন, বাবা তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
‘তুমি বসো আমি আসছি।শান্ত উঠে চলে গেলো দোতালায় নিজের রুমে।
বসায় সবাই সারফারাজকে শান্ত বলেই ডাকে।
রাজ উপরে উঠার আগে নিজের পকেট থেকে কিছু ডেইরী মিল্ক সিল্ক। রুশার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,কিরে আজকে চকলেটের জন্য বায়না ধরলিনা তো?
– এখন বায়না ধরলে ভাবি কবে পাচ্ছি সেটার জন্য বায়না ধরবো।চকলেট তো আমি নিজে কিনে খেতে পারি।
– তোর কপালে ভাবি নেই রুশ তুই হলি ভাবি হীন ননদী।
– তুমি বিয়ে করলে করবা না হলে রাস্তা থেকে ভাবি খুঁজে আনবো।
– ভাবি কি রাস্তায় থাকে?
– নিরশ হয়োনা বালক রাস্তায় পাইলে পাইতে পারো মনের মত মন।
– বুড়ি এবার তোর জন্য রাস্তা থেকে জামাই আর আমার জন্য ভাই খুঁজে আনবো।
– এহহহ এতো তাড়াতাড়ি আমি এ বাড়ি ছাড়ছিনা।
রাজ উপরে নিজের রুমে চলে আসলো এক বছর ধরে রাজের সম্পর্ক খারাপ তার বাবার সাথে। কিছু তিক্ত সত্য থাকে আমাদের জীবনে। যা মেনে নেয়া যায় না। আবার তা প্রকাশও করা যায়না।
ফ্রেশ হয়ে থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর হোয়াইট কালারের টিশার্ট পরে নিচে আসলো।
রুশা বললো,ভাইয়া দিন দিন আরো হ্যান্ডাসম হয়ে যাচ্ছ। কারণ কি কেউ এসেছে নাকি জীবনে?
‘তুই না আমার ছয় বছরের ছোট আর একবার যদি উল্টো পাল্টা কথা বলেছিস তো খবর আছে।
‘ক’টার খবর? আর আসছে ছোট বড় হিসেব করতে! বাড়িতে যদি এক ছেলে এক মেয়ে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে কোন ছোট বড় নেই। দু’জনেই সমান।
বাইদা ওয়ে ভাইয়া আজকে যেই মেয়ের সাথে তোমার ভিডিও ট্রেন্ডিংয়ে সেই মেয়েটার চোখের এক্সপ্রেশন দারুণ। মনে হচ্ছিলো মেয়েটার চোখ কথা বলছে!
‘তুই সানার কথা বলছিস!
– তুমি চেনো মেয়েটাকে?
‘ভিডিওটা আমার জন্যই ভাইরাল হয়েছে।এবার এই সিনেমা থেকে মাহাকে আউট করে সানাকে ইন করবো।
‘এই ভাইয়া সত্যি করে বলোতো তুমি সানা মেয়েটাকে কি ভাবে চিনো?
‘মাসখানিক আগেই সানার সাথে দেখন হয়েছিল। অবশ্য ও আমাকে চেনেনা। ও মঞ্চ নাটক করে। ওর অভিনয় আমার হৃদয় ছুঁয়েছে।তখন থেকেই নজরে ছিলো।
এবার ভাবছি মাধবীলতা মুভিটাতে মেইন ক্যারেক্টার ওকেই দেবো।এতো গভীর চোখের চাহনী আমি দ্বিতীয় বার দেখলাম।
– কি বলো শুটিং তো শুরু করে দিয়েছো। এখন কি ভাবে সম্ভব!
‘মাত্র দশ পার্সেন্ট কাজ হয়েছে। তার মধ্যে মাহার সিন নেই বললেই চলে। ওতটুকু কাট করে ঠিক করে নেবো।ডিরেক্ট আর প্রডিউসারের সাথে কথা বলে রেখেছে। আগামীকাল সানার সাথে মিটিং।
দিশা বেগম বললেন, একটা কথা বল শান্ত, তোর আর তোর বাবার মাঝে কি এমন হয়েছে আজ বছর খানেক আগে থেকে তোদের মাঝে এমন সম্পর্ক।
‘ডিয়ার আম্মু বাদ দাও সে-সব কথা। তোমার পাকা মেয়ের জন্য বুড়া জামাই দেখো। তাড়াতাড়ি এ বাড়ি থেকে একে বিদায় করি।
‘আগে তুই বিয়ে করবি তারপর রুশার বিয়ে দেবো।
শান্ত বলে তাহলে তোমার এ জীবনে শ্বাশুড়ি হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে।
————————————————————————
সারা বলে আমি একদম ঠিক আছি। এখন আমি ভবিষ্যত নায়িকার বোন। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন দেখ। তোর আর সারাফারাজের ভিডিও ক্লিপ এখন ভাইরাল।আর সবাই তোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
– কই দেখি। আরেহহহ এটা তো সকালের সিনটা কিন্তু এটা ভিডিও করলো কে?
– যার কারার ইচ্ছে করেছে। এবার নাচ। আয় নাগিনী ড্যান্স দেই। মে নাগিন নাগীন নাগীন এ ড্যান্স নাচনা।
– থামবি তুই কি শুরু করলি!
রুনা বেগম গানের আওয়াজ শুনে মেয়েদের রুমে চলে আসলো। সাউন্ড বক্স বন্ধ করে দিয়ে বলে কি শুরু করলি?
সারা সুর তুলে বলে,
দিন দুপুরে চুপিসারে ডাকো চেনা নাম।
এইতো আমি একটু দামী
স্বপ্ন বেচতে এলাম।
তাই তো কাছে দূরে
এভাবে বেঁচে, মরে
তোমাকে প্রেম জানালাম
Ohh ho… My love.. Why don’t you see
Tumse Pyar hai already
Ohh ho… My love.. Why don’t you see
Tumse Pyar hai already
রুনা বেগম বলেন, আগে এক মেয়ে পা’গ’ল ছিলো এখন দুই মেয়েই পা’গল হয়ে গেলো।
সারা ওই গান বন্ধ করে বলে,বাবা তোমার দরবারে সব পা’গ’লের মেলা। হরেকরকম পা’গ’ল দিয়া মিলাইছো মেলা।
সানা উঠে সারার মুখ চেপে ধরে বলে, তুই একটু থামবি কি শুরু করলি!
-যাহহহ থেমে গেলাম।
সানা নিজের ফোন হাতে নিয়ে দেখে ত্রিশ প্লাস মিসড কল। একটা অপরচিত নাম্বার থেকে। রাত তখন বারোটা ছাড়িয়েছে।
সানা ভ্রু কুঁচকে বলে এটা আবার কে?
সারা বলে নিশ্চয়ই কোন পরিচালক। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক কর।
– দূর এতো তারে কাউকে কল ব্যাক করবো না। যে হবে সকালে দেখা যাবে।
-উঁহু এখনি কল করবি। দেখ আমি শুনেছি পরিচালকরা রাতে দেরি করে ঘুমায়। তুই এখনি কল ব্যাক কর।
করবে নাকি করবে এসব ভাবনার মাঝেই আবার নিঃশব্দে কল আসলো। সানা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পরিচালক মামুন বলে, আমি পরিচালক মানুষ বলছি, তুমি কি সুনেহরা তাসনিম সানা?
– জ্বি
– আগামীকাল সকাল দশটায় একবার তাজ মাল্টিমিডিয়া প্রডাকশন হাউজে আসতে পারবে?
– জ্বি।
– ওকে টেক কেয়ার। বাকি কথা দেখা হলেই বলছি।
সানা ফোন রেখে সারার হাত ধরে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে, মনে হচ্ছে এবার আমার স্বপ্ন পূরণের সময় চলে এসেছে!
‘দেখেছিস আমি জানতাম এমনটাই হবে। এবার চল খুশির খবরটা বাবাকে জানাই।
______________________________________________
রাজ আধশোয়া হয়ে মোবাইলে ভিডিওটা দেখছে।বার কয়েক দেখছে। বারবার এক জায়গায় মুগ্ধ হচ্ছে। সানার চোখের এক্সপ্রেশন। মেয়েটা সংলাপ মুখে বলছে কিন্তু মনে হচ্ছে তার চোখ কথা বলছে। কি যেনো জাদু আছে ওই চোখে। রাজ আরো কয়েকবার ভিডিওটা দেখলো। কবির ভাষায় যে বর্ণনা দিয়েছে শ্যামলা মেয়েদের আজ রাজের কাছে তা কম মনে হচ্ছে। সানার চেহারায় যেনো পৃথিবীর সমস্ত মায়া ঢেলে দিয়েছে। আর ওই শ্যামলা বরনে কাজল কালো চোখ যেনো মধ্য দুপুরে চকচক সচ্ছ জলের মত। তবে তার গভীরতা মাপা যায় না। কবি হয়তো এই চোখের বর্ণনায় লিখেছিলেন,,, কাজল_চোখের_মেয়ে,,,, আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে, তোমার চোখে চেয়ে!
রাজ মোবাইল রেখে দিয়ে রোজির দেয়া একটা চিঠি বের করে পড়া শুরু করলো,
প্রিয় তুমি আমার কাছে সেই অবুঝ বালক, যার চোখের বিশালতায় আমার জন্য রোজ পদ্ম ফুটতো। যার ঠোঁটের কোনের মৃদু হাসিতে রোজ আমায় নিয়ে কাব্য রটতো।
আজ সে-সব মরিচীকা। সবটা যেনো সাজানো নাটক। তোমার ফিল্মের স্ক্রিপ্টের মত। তুমি আজ সফল অভিনেতা। যে চোখে শুধু আমি চোখ রাখতাম! সে চোখে আজ কত নারী।যে হাত শুধু আমাকে স্পর্শ করত, সে হাত আজ কত নারীকে স্পর্শ করে রোজ।
তোমাকে বলার মত অনেক কথাই আছে! সেসব বলা অর্থহীন।
শুধু এতোটুকু বলবো, এমন মেকি ভালোবাসায় আমাকে না ফাঁসালেও পারতে!
আমার হবে না জেনেও কেন আমাকে মিথ্যে মায়ায় জড়ালে?
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা বেশী দীর্ঘ হবে না।সল্প পর্বের ছোট গল্প হবে এটা।
হ্যাপি রিডিং 🥰