ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন শেষ পর্ব

0
1203

#ভালোবাসাটা_যেনো_বেরঙ্গিন
#পর্বঃঅন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* অর্ণব রুমে এসে দেখলো নবনী বিছানার উপর রুমে থাকা সব জামা কাপড় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। সারা রুমটা এলোমেলো করে নবনী যেনো কিছু একটা খুঁজে চলেছে। অর্ণব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এসব দেখে ভিশন কৌতুহলী হয়ে উঠল। আচমকা নবনী কেনো এসব করছে? কিছুই তো অর্ণব বুঝতে পারছে না। অর্ণব খানেক সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে নবনীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলল

— কি হয়েছে নবনী? হঠাৎ করে সারা রুমটা এমন করে রেখেছো কেনো?

অর্ণবের কন্ঠস্বর শুনে নবনীর ঘোর কাটলো। নবনী অপ্রত্যাশিত ভাবে খানেকটা হকচকিয়ে গিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তুমি কল করেছো হয়তো কোনো জিনিস ভুলে বাড়ি রেখে গেছো। আমি সেটাই খুজছি। তবে কিছুই পাচ্ছি না।

নবনীর কথা আর তার করা পাগলামি গুলো দেখে অর্ণব হেসে ফেলল। নবনী এতোটা বোকা কেমন করে হতে পারে? একটা কল করে কিছু বলেনি অর্ণব তাই এই অবস্থা! সত্যি কিছু মানুষ একটু অদ্ভুত রকমের পাগল হয়ে থাকে। নবনী ও ঠিক তাই। অর্ণবের পাগলি। অর্ণব নবনীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নবনীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। নবনী অর্ণবের চোখের দিকে তাকিয়ে খানেকটা ভয় পাচ্ছে। অর্ণব আবার রেগে গেলো না তো! অর্ণব নবনীর কাছে এসে দুম করে নবনীর কোমর ধরে ফেলল। অর্ণব নবনীর কোমর স্পর্শ করতেই নবনী চমকে উঠলো ভিশন। হয়তো নবনী এমন কিছু হবে ভাবতেও পারেনি! নবনী অর্ণবের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্ণব নবনীকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— আমি আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদটা রেখে গেছি। যাকে ছাড়া আমার একটা মিনিট কাটানো অসম্ভব। সেই সম্পদকে এভাবে খুঁজলে পাবে না তুমি। কারন আমার সম্পদটাই তুমি।

— যদি তাই হতো না অর্ণব তা হলে আমায় ছেড়ে দিতে না এমন করে। ভালোবাসি তোমায় নিজের থেকেও অনেক বেশি। তবে আজ আমার ভালোবাসার মূল্য হয়তো তোমার কাছে নেই।

— ভালোবাসা এমন এক অনুভূতির নাম যেটার মূল্য হয় না। অমূল্য সম্পদ ভালোবাসা। তাকে পরিমাপ করা তো দূর চোখে দেখতে উবদি পাওয়া যায় না। আমি ভুল করেছি। তাই বলে কি সেই ভুলটা তুমিও করবে?

— আমি আর কি করবো বলো? আমি তোমায় মুক্তি দিয়ে দিলে তোমার জীবন সুন্দর হবে। তুমি তোমার মতো করে নিজের ভালো থাকা খুঁজে নিতে পারবে। তাই মুক্তি দেয়াটাই আবশ্যক।

— পরিবার এমন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যাতে করে আমার মনটা বিষিয়ে গেছে। এক মুহুর্তের জন্য ও বুঝতে পারিনি আমি কি করছি আর কি করা আমার উচিত নয়। তবে আজ সবটা পরিস্কার।

— কি হয়েছে আজ? আমায় বলো।

— সব কথা তোমায় বলার যাবে না। আগে আমার বুকে আসো প্লিজ! শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমায়। এই বুকটা এতো দিন ধরে তোমার পরশ পাবার জন্য ব্যাকূল ছিলো। সকল ব্যাকূলতাকে শান্ত করে দাও।

* অর্ণব কথাটা শেষ করতেই নবনীকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। নবনী নিজের চোখের জলকে আর আড়াল করতে পারলো না‌। অর্ণবের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করে করে নবনী অর্ণবের শার্ট ভিজিয়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অর্ণব নিজের বুকে নবনীকে পেতেই যেনো একটা স্বর্গ সুখ অনুভব করতে লাগলো‌‌। প্রিয়জন বুকে আসলে হয়তো এতোটাই শান্তি অনুভব হয়। অর্ণব নবনীকে বুকে নিয়ে শান্তির নিশ্বাস তো নিচ্ছে। তবে চোখের পাতা তার ভারী হয়ে আসছে। আরো কিছু সময় নবনীকে নিজের বুকে রেখে অতঃপর শান্ত গলায় নবনীকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এখন ছাড়ুন আমায় জনাবা। আর একটা কথা ভালো করে জেনে রাখুন যে জীবন চলার পথে হাজারটা বাধা আসবে। তবে কেউ কখনও কাউকে ছেড়ে থাকার কথা ভুল করেও চিন্তা করবো না। ঠিক আছে!

— হুম ঠিক আছে। আর কখনও আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না। তুমি জানো না তোমার পাগলিটা তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারবে না‌।

— হুম জানি সোনা আর কখনও তোমায় ছেড়ে চাওয়ার কথা ভূল করেও বলবো না আমি। এখন একটু আসছি আমি। তুমি একা একা এই রুমটা গুছিয়ে নাও। আর ভুল করেও নিচে আসবে না ঠিক আছে।

— কিন্তু কেনো? নিচে গেলে কি হবে?

— বারণ করেছি মানে যাবে না ব্যাস। আসছি আমি।

* অর্ণব কথাটা বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়‌। নিজের স্ত্রীর সামনে নিজের মাকে কিছু বলা উচিত নয়। কারন এতে করে আপনার স্ত্রী সাহস পাবে। এবং আপনার মাকে সঠিক ভাবে সম্মান করতে পারবে না। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্ণব বাড়ির নিচে এসে গলা ছেড়ে নিজের মাকে ডাকলো। অর্ণবের সামনে অর্ণবের মা আসতেই অর্ণব নিজের মাকে সব কিছু বলল। অর্ণব বসুন্ধরার ঘটনা সহ সব কথা বলার পর নিজের মায়ের থেকে এসব করার কারন জানতে চাইলো। কিন্তু উনি কোনো কথা বললেন না। অর্ণব আর কি করবে? আর যাই হোক উনি অর্ণবের মা। মাকে সন্তান কোনো দিন শাসন করতে পারে না। অর্ণব ও পারলো না। অর্ণব নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলল

— তুমি মা যা যা করতে চেয়েছো ঠিক তাই তাই হয়েছে। কিন্তু আফসোস অর্ণব আর নবনীর মাঝে এক ইঞ্চির ও দূরত্ব তৈরি হয়নি। ভালোবাসা মা সব পারে। সারা জীবন এক করে যেমন রাখতে পারে ঠিক তেমনি আলাদা ও করে দিতে পারে। ভালোবাসা শত্রুকে ও বন্ধু বানায়। আর তুমি তো….! আর কিছু বলার নেই আমার। এসব কাজ করে আমার চোখে তুমি ছোট হয়ে গেছো মা।

* অর্ণবের কথার কোনো জবাব তার মা দিলো না। আসলে তার কাছে কোনো জবাব ও নেই। কারন উনি নবনীকে অপছন্দ করে। এই একটা ভাবনা তার মাথায় চেপে বসে আর তার জন্য উনি এসব করেন। অর্ণব নিজের মায়ের সামনে থেকে সোজা আবার নিজের রুমে চলে আসে। নবনী একা একা রুম গুছিয়ে নিচ্ছে। অর্ণব পেছন থেকে নবনীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নবনীর ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে শুরু করে। নবনী অনেক মাস পর অর্ণবের ভালোবাসা পেতেই নিজের মনের মধ্যে একটা শান্তি অনুভব করতে লাগলো।

* ভালোবাসা শব্দটা ছোট্ট মনে হলেও এর মহত্ত্ব অনেক। আমার প্রায় সময় বলে থাকি একে অন্যকে ভালোবাসি। তবে সত্যিকার অর্থে মুখে ভালোবাসি বলা আর সারা জীবন ভালোবেসে যাওয়া এক কথা নয়। দুটি ভালোবাসার মানুষ এক হবার পর ও তাদেরকে অনেক সমস্যা মোবেলা করতে হয়। ভালোবাসার আসল মানে তখনই প্রকাশ পায়। ভালোবাসুন নিজের প্রিয়জনকেও। কারন ভালোবাসার বিপরীতে আপনার জন্য ভালোবাসাই আছে। ভালো থাকুন ভালোবাসা। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র ভালোবাসা।

————————— সমাপ্ত ———————–

[ গল্পটা কেমন লাগলো? অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। শুরু থেকে শেষ উবদি যারা সাথে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ 😊♥️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here