#ভালোবাসাটা_যেনো_বেরঙ্গিন
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অর্ণব নিজের চোখের সামনে দেখতে পেলো নবনীকে। অর্ণব নবনীকে দেখে খানেকটা অবাক হয়ে যায়। কারন নবনী তো অর্ণবকে বলা ছাড়া কোথাও বের হয় না। অর্ণব ভালো করে নবনীর দিকে তাকাতেই একটা ছেলে এসে নবনীকে অর্ণবের চোখের সামনে জড়িয়ে ধরলো। নিজের ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে অন্য কারোর বুকে দেখে কেউ সহ্য করতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। অর্ণবের শরীরের সমস্ত রক্ত যেনো টগবগ টগবগ করে ফুটতে লাগলো। অর্ণব নবনীর দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই অর্ণবের হাত দুম করে ধরে ফেলে অর্ণবকে আটকে নিলো তার পাশে থাকা সেই মেয়েটি। অর্ণব রাগে গজগজ করতে করতে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এটা কি হলো? আপনি আমার হাত ধরে ফেললেন কেনো?
— আপনি কি করছেন? ওদের দিকে কেনো যাচ্ছেন? আপনি এখন যদি নবনীকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন তবে তো আসল সত্যি জানতে পারবেন না। ও আপনার সামনে নতুন কোনো নাটক করবে। আগে দেখুন তো কি কি করে নবনী! তারপর ওদের ধরবেন।
— এতোটা ধৈর্য্য আমার নেই। আমার এখনি জানতে হবে এই ছেলেটা কে আর তার সাথে ওর কিসের সম্পর্কে!
মেয়েটি অর্ণবকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে। আর অর্ণবকে নবনীর কাছে যেতে বারণ করছে। তবে কোনো কিছুতেই যেনো কিছু হচ্ছে না। অর্ণব তো জেদ ধরে আছে এই মেয়েটার সাথে সে কথা বলেই ছাড়বে। অর্ণব মেয়েটির এমন বাধা দেয়া দেখে একটু অবাক হলো। অর্ণব কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে নিজের স্ত্রীর কাছে যেতে হলে এই মেয়েটির অনুমতি তার কেনো নিতে হবে? অর্ণব আপন মনে সন্দেহ করছে কিছু তো একটা ব্যাপার এখানে আছে। অর্ণব নবনীর দিকে আর এগলো না। এতোক্ষণ মেয়েটির অর্ণবের হাত ধরে ছিলো। অর্ণব নিজের মাথাটা একটা খাটিয়ে মেয়েটির হাত নিজের অন্য হাত দিয়ে ধরে ফেলল। অর্ণব মেয়েটির হাত শক্ত করে চেপে ধরতেই মেয়েটি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে এতো দূর এসেছি। আর সত্যিটা জানবো না তা কি করে হয়? আগে দেখি আমার নবনী কি কি করে! তারপর ওকে ধরবো।
অর্ণবের কথার বিপরীতে মেয়েটি হকচকিয়ে গিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
— হ্যাঁ, আমি ও তো তাই বলছি। আগে নবনীর আসল সত্যিটা আমাদের চোখের সামনে মূর্ত হোক। তারপর আমরা ওদের ধরবো।
— জ্বি তাই ধরবো।
— হুম। আমার হাতটা আপনার হাতে!
— তো কি হয়েছে? এই হাতটা কি আমি ধরতে পারি না?
অর্ণবের নরম শান্ত কন্ঠ স্বরটা শুনে মেয়েটি যেনো ভিশন চমকে যায়। এই মেয়েটা তো এটাই চেয়েছে যে অর্ণব তার হোক! মেয়েটি অর্ণবের দিক থেকে মেকি লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিলো। অর্ণব মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে নিজের ফোনটা পকেটে থেকে বের করে নিলো। অর্ণবের মাথায় একটা প্লান চলছে। অর্ণব ১০০% নিশ্চিত তার চোখের সামনে থাকা মেয়েটি নবনী নয়। তবে আরো একটু সিওর হতে হবে। মনের মধ্যে যেনো নবনীকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকে তাই অর্ণব নবনীর নাম্বারে কল দিয়ে দেয়। অর্ণব নবনীকে কল করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কলটা দুবার রিং হতেই নবনীর কলটা পিক করলো। অর্ণব নিজের সামনে ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলো তার সামনে থাকা নবনীর মত দেখতে মেয়েটি এখনও ঐ ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে। অর্ণবের প্রশ্ন নবনী যদি কল পিক করে তো এই মেয়ে জড়িয়ে ধরে থাকবে কেমন করে? নবনী কল পিক করে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হ্যালো অর্ণব। হঠাৎ করে কল করলে যে? বাড়িতে কিছু ভুলে গিয়েছো?
নবনীর কন্ঠস্বরটা শুনতে পেয়ে অর্ণব সিওর হয় যায় তার সামনে থাকা মেয়েটি নবনী নয়। আর এটাও সিওর হয় যে নবনী আর অর্ণবের সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরাতে একটা গভীর প্লান চলছে। অর্ণব নবনীকে কোনো কথা না বলে মেয়েটিকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের দিকে মুখ করে দিয়ে মেয়েটির গালে সজোরে কষিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দেয়। নিজের শরীরের সব শক্তি দিয়ে চড় মারতেই মেয়েটি থাপ্পড়টা সহ্য করতে পারলো না। এক পাশ এলিয়ে গেলো মেয়েটির মাথা। অর্ণব রাগে গজগজ করতে করতে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিয়ে বলতে লাগলো
— আমি শুধু এটাই জানতে চাই যে আমার আর নবনীর মাঝে সমস্যা সৃষ্টি করতে তোকে কে বলেছে? আমি সত্যিটা জানতে চাই। যদি সত্যি জানতে না পারি তবে এর থেকেও খারাপ কিছু হবে।
— আপনি আমায় ভুল ভাবছেন আমি আপনাকে….!
— চুপ। তোর খেলা শেষ। আমি সত্যি জানতে চাইছি। যদি আমার প্রশ্নের উত্তর আমি না পাই তো অনেক খারাপ কিছু হবে এখন।
* অর্ণবের জোড়াজুড়িতে মেয়েটি বাধ্য হলো সব সত্যি বলে দিলে। আসলে অর্ণবের মা চাইছিলো অর্ণব আর নবনীর ডিভোর্স হয়ে যাক। এই জন্য উনি অনেক কিছু করেছেন। অর্ণবের কাছে নবনীকে অনেক ছোট করেছেন তিনি। একটা পর্যায় অর্ণব বাধ্য হয় নবনীকে ডিভোর্স দিতে। তবে এখন নবনীর প্রতি অর্ণবের সেই ভালোবাসা দেখে অর্ণবের মা এই গভীর ষড়যন্ত্র করে। অর্ণব এই মেয়েটির থেকে নিজের মায়ের বিষয়ে এই সকল কথা শুনে নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্ণব মানতে পারছে না অর্ণবের খারাপ থাকার কারন তার নিজের মা! অর্ণব এতো কথা শোনার পর কি করবে? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অর্ণব মেয়েটির হাত ছেড়ে দিতেই মেয়েটি অর্ণবের সামনে হাত জোড় করে বলল
— আমায় ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাকে পাবার জন্য আপনার মায়ের কথা মতো এসব করেছি। আমায় ক্ষমা করে দিন।
— হুম। ধন্যবাদ আপনাকে সত্যিটা বলার জন্য। আর আপাকে চড় মারার জন্য আমি দুঃখিত।
অর্ণব আর ঠাই দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। নিজের মায়ের উপর যেনো এক ঘৃণা বোধ কাজ করতে লাগলো তার। মা শব্দের মানে ভালোবাসা। মা কখনও নিজের সন্তানকে অসুখী দেখতে পারে না। তবে কেনো অর্ণবের মা অর্ণবের সুখ চাইছে না? অর্ণব নবনীকে ভালোবাসে। অর্ণবের ভালোবাসা তার মার মেনে নিতে কি এমন সমস্যা? অর্ণব বুঝতে পারছে না। অর্ণব বসুন্ধরা থেকে বেরিয়ে আসতেই কোর্ট থেকে উকিল অর্ণবকে কল করলো। অর্ণব কলটা পিক করতেই উকিল অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মাস্টার অর্ণব আপনার আর আপনার স্ত্রীর মধ্যে সকল ঝামেলা কি শেষ হয়েছে? নাকি ফাইনাল কাগজ পত্র রেডি করবো?
— ছিঁড়ে ফেলুন।
— মানে?
— মানে হলো ডিভোর্স পেপারটা ছিড়ে ফেলুন। আমি আমার স্ত্রীকে ছাড়তে পারবো ন। আমি ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। সরি আপনাকে শুধু শুধু বিরক্ত করলাম। আর আপনার সময় নষ্ট করলাম।
— আরে না ঠিক আছে। আমরা তো এটাই চাই যে কোনো সম্পর্ক যেনো না ভেঙে যায়। সব সম্পর্ক যেনো ভালো থাকে। আপনার এই সিদ্ধান্ত শুনে আমার ভালো লেগেছে।
— ধন্যবাদ।
* অর্ণব কলটা কেটে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। নবনী দুবার কল করেছে অর্ণবকে। হয়তো সে ভাবছে অর্ণব কোনো জরুরী কাজে তাকে কল করেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। আজ নবনীকে সে সারপ্রাইজ দিবে। নবনীর থেকে ক্ষমা চাইবে অর্ণব। অর্ণবের বিশ্বাস সকল কিছু শোনার পর নবনী অর্ণবকে ক্ষমা করে দিবে। অর্ণব গাড়ি দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করে চলে আসে বাড়িতে। বাড়ি এসে অর্ণব সোজা নিজের রুমে চলে এলো। রুমে আসতেই অর্ণব যা দেখলো তা দেখে অর্ণব ভিশন চমকে উঠল। অর্ণব রুমে এসে দেখলো নবনী………………
#চলবে………………………..
[ প্রথমে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত কারন গল্প রোজ কন্টিনিউ করতে পারিনি। আসলে দুম করেই আমার পরিক্ষার ডেট পরে গেছে। তাই একটু পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য সব কাজ ও করতে হয়। তাই সময় করে উঠতে পারিনি। আশা রাখি বিলম্ব ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]