#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২২
” হৃদিতাকে কি’ড’ন্যাপ করার জন্য আর কত সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের? আমাদের ক্যাম্পাসে এসে বহিরাগত একটা ছেলে আমাদের মে’রে গেলো তারপরও আমরা কিছু বলতে পারলাম না৷ শুধু অপেক্ষায় করে যাচ্ছি। এভাবে আর কতদিন
নিহান ওর ফ্রেন্ডদেরকে বললো, বাবার নির্বাচন আছে সামনে। এখন আমরা কোনো ঝামেলা বাঁধালে তার প্রভাব নির্বাচনের উপর পরবে৷ আর কিছুদিন পরই তো নির্বাচন। সেটা যাক তখন আর অপেক্ষায় থাকবোনা৷ কোনো কিছু ভুলে যাইনি৷ ওর জন্য ক্যাম্পাসে আমাদের মা-সম্মান শেষ হয়ে গেছে। ওই হৃদিতাকে কতবার ভালোবাসি বলেছি পাত্তা দেয়নি। আর বলবোনা৷ এমন কিছু করবো যার জন্য হৃদিতা সারাজীবন আফসস করবে৷
****
হৃদিতা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তখন হিয়া ওকে বললো, কে জানো একটা চিরকুট ফেলে রেখেছিলো আমার সামনে৷ আমি সেটা খুলে পড়তে লাগলাম। সেখানে লেখা ছিলো, হৃদিতাকে কিছু ছেলে ফলো করছে৷
হৃদিতা অবাক হয়ে বললো, আমরা তো এরকম কিছু দেখলাম না৷ ওইদিনের ঘটনার পর ওরাও তো আর বিরক্ত করছেনা৷ তাহলে এটা কে লিখলো?
‘ জানিনা৷ তবে যাই হোক সাবধানে থাকতে হবে
‘ আমাদের কেও ফলো করছে আর আমরা একবারও বুঝলাম না! হতে পারে কেও আমাদের সাথে ফাইজলামি করে এরকমটা লিখে রেখেছে৷
‘ হতে পারে৷ আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তখন আমি ইশানের সাথে কথা বলতে ছিলাম৷ আমি ওকেও বলে দিয়েছি৷
‘ এখন তো ইশান ভাইয়া অর্ণ ভাইয়াকে বলে দিবে। ভাই তোরা রিলেশনে অথচ আমাকে ঝামেলায় ফেলিস। অর্ণ ভাইয়া আবার ঝামেলা না করলে হয়।
‘ তো কি করতাম। ওদেরকে বিশ্বাস নেই। ফলো করতেও পারে। ওই ঝামেলার পর ওরা একদম চুপচাপ। মানুষ চুপ থাকলে আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠে৷
‘ অর্ণ ভাইয়াকে বললে তো ঝামেলা কম হবেনা৷ এর আগের বার ঝামেলার জন্য কত কি হয়ে গেলো৷ এবার কিছু হলে পুলিশের কাছে যেতে হবে৷ ভাইয়া কিরকম তা তো জানিসই
‘ আর কি করতাম। কেও ফলো করছিলো। ব্যাপারটা মোটেই হালকা ভাবো নেওয়ার মত না৷ অর্ণ ভাইয়া এবার হয়তো কোনো ঝামেলা বাঁধাবে না৷ আমি ইশানকে বলেছি, ক্যাম্পাসে এসে কোনো ঝামেলা না করতে।
‘ আমিও হায়াতি আপুকে কল দিয়ে বলছি।
*****
ইশান অর্ণকে বললো, হিয়ার সাথে কথা হচ্ছিলো। তখন হিয়া বললো, হৃদিতাকে নাকি কেও ফলো করছে৷
অর্ণ রেগে গেলো কথাটা শুনে৷ ওদেরকে বাইকে উঠতে বললো। ইশান তখন বললো, শান্ত হ৷ ব্যাপারটা কিছুটা অন্যরকম
‘ মানে?
‘ ওরা নিজেরাও জানেনা কে ফলো করছে। কখনও দেখেওনি৷ হিয়ার সামনে কেও একটা চিরকুট ফেলে রেখেছিলো আর তাতে লেখা ছিলো, হৃদিতাকে কেও ফলো করছে। এখন কে বা কারা এমনটা করছে তা জানেনা৷ ওরাও এমন কিছু লক্ষ্য করেনি৷ ওদের ক্যাম্পাসে গিয়ে নিহান আর ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ঝামেলা করা ঠিক হবেনা৷ তার থেকে আগে এর সত্যতা যাচাই করে নেই৷
‘ সত্যতা যাচাই করার কিছু নেই৷ সত্য আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে৷ ওরাই হৃদিতাকে ফলো করছে৷ এখন আমি চুপ করে থাকতে পারবোনা৷
এমন সময় হায়াতি দৌড়ে আসলো৷ অর্ণকে বললো, কোথাও যাবেনা তুমি৷ হৃদিতা কল দিয়েছিলো৷ ওদেরকে কেও ফলো করছেনা৷ হিয়ার সাথে কেও হয়তো ফান করার জন্য এমনটা করেছে৷
‘ তুমি ভালো করেই জানো ওই ছেলেগুলো কিরকম। এখস যদি কোনো পদক্ষেপ না নেই তাহলে পরবর্তীতে এটা ভ’য়ংকর রুপ ধারন করবে৷
‘ ওরা নিজেরাই তো নিশ্চিত না৷ একটা চিরকুট পেলো আর তুমি চলে গেলে। এখন ওদের ক্যাম্পাসে গেলে এর থেকে ভ’য়ংকর কিছু হবেনা৷ হৃদিতাকে তো প্রতিতিন কলেজ থেকে তুমি নিয়ে আসো তাহলে সমস্যা কোথায়
হায়াতি অর্ণকে বুঝাতে সফল হলো৷ এখন যদি অর্ণ ক্যাম্পাসে যেতো তাহলে ওইদিনের মত ঝামেলা হত৷ আর সেটা হলে অর্ণকে ওর বাবা দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতো।
****
অর্ণ হৃদিতার কলেজের গেটের সামনে অপেক্ষা করছে৷ একটু পরই হৃদিতা আসবে৷ অর্ণের সাথে হায়াতি আর ওর ফ্রেন্ডরাও আছে৷ কিছুখন পর নিহান আর ওর ফ্রেন্ডরা বের হলো। হায়াতি অর্ণর হাত ধরে রেখেছে৷ অর্ণ নিহানের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু হায়াতি বাঁধা দিচ্ছে অর্ণকে৷
একটু পর হৃদিতা আর হিয়া বের হলো। ওরা গেটের কাছে সবাইকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। হৃদিতা ভয় পাচ্ছে আবার কোনো ঝামেলা হলো না তো। হৃদিতা অর্ণকে বললো, কি হয়েছে ভাইয়া? তোমরা সবাই একসাথে এখানে!
অর্ণ বললো, তোদের ফলো কে করে?
হৃদিতা বললো, আমরাও জানিনা। হিয়া বললো এটা। ওকে কেও চিরকুট লিখে বলেছে।
অর্ণ দেখতে পেলো, নিহান আর ওর ফ্রেন্ডরা দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ অর্ণ ওদের কাছে যেতে লাগলো তখনই সবাই ওকে থামালো৷
হায়াতি বললো, তোমাকে বলেছি না কোনো ঝামেলায় না জড়াতে। বড় আব্বু জানলে কিন্তু কানাডা যেতে হবে। তখন সেটা কি ভালো হবে?
অর্ণ বললো, ওরা কিছু একটা পরিকল্পনা করছে৷ দেখছো না আমাদের দিকে কেমন তাকিয়ে আছে৷
‘ থাকুক। তাতে আমাদের কি? এখন বাসায় চলো৷
ইশান,রাফসান,আয়ান হিয়াকে ওর বাসায় পৌছে দিতে গেলো। অর্ণ,হায়াতি আর হৃদিতা ওদের বাসায় চলে আসলো।
****
রাতে খাবার সময় অর্ণর বাবা বললো, হায়াতিকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে কাল৷ সবাই বাসায় থেকো।
অর্ণ,হায়াতি দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ হায়াতি অর্ণকে ইশারায় ওদের ভালোবাসার কথা বলতে বলছে কিন্তু অর্ণ সাহস করে বলতে পারছেনা৷
হায়াতি বললো, আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না। পড়াশোনা শেষ হউক আগে
হায়াতির বাবা বললো, তোমাকে তো আর এখন বিয়ে করতে বলছি না। ছেলেকে দেখো, যদি তোমার পছন্দ না হয় তাহলে আমরা আগাবো না। এটা নিশ্চিত থাকতে পারো আমরা তোমার অমতে কিছু করবো না। তোমার পছন্দের কেও থাকলে বলতে পারো আমাদের। সে যেমনই হউক আমরা মেনে নিবো৷
হায়াতি আবার ইশারায় অর্ণকে বলতে বললো কিন্তু অর্ণ ভয় পাচ্ছে৷ একপর্যায়ে হায়াতি নিজেই বলে উঠলো৷ আমি অর্ণকে ভালোবাসি৷ বিয়ে করলে ওকেই করবো৷
সবাই অবাক হয়ে হায়াতি আর অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে। হায়াতি এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে দিলো। হায়াতির বাবা বললো, এটা কি সত্যি?
অর্ণ ভয়ে ভয়ে বললো, না মানে হায়াতি যখন আমাকে ভালোবাসে তখন আমিও ওকে ভালোবাসি৷
অর্ণর কথা শুনে হায়াতি রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ হায়াতি মনে মনে বলছে, একবার তোকে হাতের কাছে পাই তখন মজা বুঝাবো। অর্ণ দেখতে পেলো হায়াতি ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ অর্ণ বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো, হায়াতি ডা’ইনি রুপ ধারন করেছে৷ যতটা সম্ভব হায়াতির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই ওর জন্য ভালো হবে৷
ওদের ছোট আম্মু বললো, তোমাদের তো সবসময় ঝগড়া করতে দেখলাম। এই ভালোবাসা কোথা থেকে আসলো?
হায়াতি বললো, ঝগড়া করতে করতেই ভালোবেসে ফেলেছি৷
‘ তাহলে তো ভালোই হলো। ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো৷ আমরাও এটাই চাচ্ছিলাম কিন্তু তোমরা কি ভাববে তাই তোমাদের বলা হয়নি৷
****
খাবার শেষে সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে৷ আরিয়া অর্ণকে ডাকতে আসলো ওর রুমে কিন্তু অর্ণ যাচ্ছেনা৷ অবশেষে হায়াতি নিজেই আসলো৷ অর্ণ হায়াতিকে দেখে বললো, তুমি আমার রুমে কেন সবাই কি ভাববে?
হায়াতি কিছু না বলেই অর্ণকে থা’প্প’ড় দিলো।
চলবে—