#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২১
অর্ণ হায়াতিকে বললো, আমি কিছু জানিনা৷ তোকে যা বলার রাফসান বলবে৷ আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করিস না।
হায়াতি রাগি চোখে অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে৷ অর্ণ বুঝতে পারলো হায়াতি কেন এরকম তাকালো। ওকে তো তুমি করে বলার কথা ছিলো। কিন্তু আমি তুই করে বলেছি তাই রাগ করেছে।
হায়াতি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। অর্ণ তাসফিয়াকে বিদায় জানিয়ে হায়াতির পিছু পিছু যেতে লাগলো। অর্ণ পিছন থেকে হায়াতির হাত ধরলো। হায়াতি হাত ছাড়িয়ে বললো, হাত ছাড় আমার৷ আমার হাত ধরেছিস কেন?
‘ আমার বউয়ের হাত আমি ধরবো না তো অন্য কেও ধরবে
‘ থা’প্প’ড় খাবি কিন্তু এখন আগেই বলে দিলাম। হাত ছাড়তে বলেছি কিন্তু আমি
‘ আমি তো চাই তোমার হাতে থা’প্প’ড় খেতে৷ তারপর অবশ্যই ভালো কিছু হবে
হায়াতি বুঝতে পারলো অর্ণ কি বলতে চাইছে৷ হায়াতি বললো, সবসময় যে একিরকম হবে তা কিন্তু না। এখন শুধু থা’প্প’ড়ই খাবি। তোকে বলেছি আমাকে তুমি করে বলতে কিন্তু তুই ওই তাসফিয়ার সামনে আমাকে তুমি করে বলতে পারলি। কেন তাতে কি তাসফিয়া রাগ করতো।
” হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা৷ তাসফিয়ার ব্যাপারে না জানা পর্যন্ত এই ডা’ইনি আমারে শান্তিতে থাকতে দিবেনা৷ হায়াতিকে বললাম, আমি তুমি করে বলতে ভুলে গেছিলাম। ইচ্ছে করে তুই বলিনি
‘ কিছুদিন পর আমাকেও ভুলে যাবি।
‘ তোমাকে ভুলে যাওয়ার আগে নিজেকে ভুলে যাবো।
‘ এসব ক্রিন্জি ডায়লগ বলে আমার রাগ কমাতে পারবি না
‘ তাইলে কি করবো?
‘ কিছু করতে হবেনা
‘ ওই শুনো, রাফসান ওরা এসে পরবে। ওদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে নিও। তখন বুঝতে পারবা তাসফিয়া কে
******
কিছুখন পর রাফসান আসলে হায়াতি ওকে বললো, কি বলবি তুই? গতকাল থেকে অর্ণ একি কথা বলে যাচ্ছে। ওর কাছে জিজ্ঞেস করি বলে তুই বলবি৷ এখন বল কি হয়েছে
অর্ণ বললো, আমার দোষ কোথায়! রাফসানই তো আমাকে বলতে নিষেধ করেছিলো তাই আমি তোমাকে বলিনি৷ এমনিতেও এটা শুনলে তুমি আরও রাগ করবা। আমি কেনো শুধু শুধু নিজের ঘারে দোষ নিবো৷ রাফসানের ব্যাপার ও বলবে
এটা শুনে রাফসান,আয়ান,ইশান তিনজনই অবাক হয়ে অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ওদের এরকম রিয়্যাকশন দেখে হায়াতি হাসতে লাগলো৷ অর্ণ বুঝতে পারলো, হায়াতিকে তুমি করে বলায় ওদের এমন রিয়্যাকশন।
রাফসান বললো, আমরা কি ভুল শুনলাম নাকি?
আয়ান বললো, ব্যাপারটা কি শুনি?
ইশান বললো, তোদের ভিতরে কি শান্তি চুক্তি হলো নাকি। হায়াতির সাথে হঠাৎ এত ভালো ব্যবহার করছিস।
অর্ণ বললো, হায়াতি না বল ভাবি। এতগুলো প্রশ্ন করলে কয়টার উত্তর দিবো।
ইশান বললো, ভাবি মানে?
‘ হা’দা’রাম, হায়াতি যদি আমার বউ হয় তাইলে তো তোদের ভাবিই হবে তাইনা।
হায়াতি বললো, ভাবি বলবে কেন? তোকে ভাইয়া বলবে। ওরা আমার ফ্রেন্ড আমাকে ভাবি বলবে কেন?
‘ তাইলে আমাকেও ভাইয়া বলবেনা।
রাফসান অর্ণকে বললো, এতকিছু হয়ে গেলো আর আমাদের বললি না। তুই হায়াতিকে ভালোবাসি বলে দিবি এটা আগেও তো বলতে পারতি আমাদের৷
‘ হঠাৎই হয়ে গেলো সবকিছু। গতকাল রাতে সবকিছু ঠিকঠাক। এখন তোদের বললাম।
হায়াতি রাফসানকে বললো, এখন তুই বলবি কি হয়েছে। তুই তাসফিয়ার ব্যাপারে কি বলবি।
রাফসান বললো, মনে কিছু করিস না৷ তোকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর ব্লাকমেইলের ভয়ে বলিনি। তাসফিয়ার সাথে আমি রিলেশনে আছি
রাফসানের কথা শুনে হায়াতি কিছু না বলে চুপ করে আছে। ওরা ওর ফ্রেন্ড অথচ ওকেই বললো না। হায়াতি রাফসানকে বললো, ভালো তো। আমাকে বললে হয়তো অনেক বেশি সমস্যা হয়ে যেতো। আমি মনে হয় কারও বন্ধু না
রাফসান বললো, এভাবে বলিস না। মানছি আমার ভুল হয়েছে। তার জন্য সরি। বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তারপরও একটার পর একটা ঝামেলা শুরু হয়ে গেলো তাই আর বলা হয়নি। তারপর যখন বলতে যাবো তখন আবার তোর আর অর্ণর মাঝে অভিমানের দেয়াল৷ তুই তাসফিয়াকে নিয়ে অর্ণকে কত কি বললি৷ তোকে বলতে গেলেই কোনো না কেন ঝামেলা শুরু৷
হায়াতি অর্ণকে বললো, তুই আমায় বললি না কেন?
‘ আমার কি দোষ। রাফসান আমাকে নিষেধ করেছিলো৷ তাইতো বলিনি৷ তা না হলে আমি অবশ্যই তোকে বলতাম।
রাফসান অসহায় দৃষ্টিতে অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভাবছে, অর্ণ ওকে কোন ঝামেলায় ফেলে দিলো৷
ওরা কথা বলছিলো তখনই রুহাশা ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো। যা দেখে হায়াতি আরও রেগে গেলো। অর্ণকে বললো, তুই ওর দিকে তাকালি কেন? জিএফ থাকতে অন্য মেয়েদের দিকে তাকাস লজ্জা লাগেনা।
হায়াতির কথা শুনে অর্ণ বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণ বুঝতে পারছে হায়াতি এখন রেগে আছে তাই উল্টা- পাল্টা বলছে। এখন কিছু বললে হায়াতি আরও রেগে আছে৷ তাই অর্ণ চুপ করে আছে৷
অর্ণকে চুপ থাকতে দেখে হায়াতি বললো, এখন আমার সাথে কথা বলারও সময় হয়না তাইনা৷
” কপাল আমার! এই মেয়েটা আমাকে যে কি পরিমান প্যাড়া দিবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ আগেও দিতো কিন্তু এখন তো আবার আমরা রিলেশনে আছি। এখন যে কি অবস্থা হবে আমার৷
অর্ণ হায়াতিকে বললো, আমি রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছি। রুহাশার দিকে কেন তাকিয়ে থাকবো৷ আমার এত সুন্দর একটা ডা’ইনি পাশে থাকতে অন্য মেয়েদের দিকে তাকানো অসম্ভব।
‘ তারমানে আমি পাশে না থাকলে তাকানো সম্ভব
‘ কথাই বলবো না আর৷ রাফসানকে বল, ও কেন তাসফিয়ার কথা বলেনি৷
*****
হৃদিতাকে যে ছেলেগুলো বিরক্ত করেছিলো তারা এখনও হৃদিতার পিছু ছাড়েনি৷ হৃদিতাকে বিরক্ত করছেনা এটা ঠিক তবে হৃদিতাকে ফলো করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ শুধু সুযোগের অপেক্ষাতে আছে৷
নিহানকে ওর ফ্রেন্ডরা বললো, আর কতদিন এই মেয়েকে ফলো করে যাবো৷ ওর জন্য আমাদের ক্যাম্পাসে এসে আমাদেরই মে’রে গেলো। তারপরও আমরা চুপ ছিলাম৷
নিহান বললো, আব্বু এখন কোনো ঝামেলা করতে নিষেধ করেছে৷ সময় আসুক তখন আমরা প্রতিশোধ নিবো৷ এই মেয়ের জন্য আমরা মা’র খেয়েছি ওকে তো এত সহজে ছেড়ে দিবোনা।
‘ প্রতিদিন ওর ভাই এসে ওকে নিয়ে যায়। তারপর যখন কোচিং এ আসে তখন নিয়ে আসে আবার নিয়ে যায়। আমরা যে সুযোগের অপেক্ষাতে আছি তা পাবো বলে মনে হচ্ছেনা।
‘ কলেজ টাইমে এই মেয়ের কিছু হলে তখন সবাই বুঝে যাবে এর পিছনে আমরা আছি৷ নিজের জন্য না হউক বাবার জন্য হলেও এখন এরকম রিস্ক নেওয়া যাবেনা৷ সামনে অনেক সুযোগ আসবে তখন দেখা যাবে। তোরা শুধু ফলো করে যা৷ দেখ হৃদিতা কোথায় কোথায় যায়৷ সাদাত ওই ছেলেটার সম্পর্কে খোজ নিয়েছিলি
‘ কোন ছেলেটা?
‘ হৃদিতার জন্য আমাদের যে ছেলেটা মে’রেছিলো তার কথা বলছি৷
‘ ছেলেটার নাম অর্ণ৷ আমরা যেরকম ভেবেছিলাম ছেলেটা তার চাইতেও অনেক ভ’য়ংক’র। আমরা ওর কিছু করতে পারবোনা। ওর সাথে ওর তিনজন ফ্রেন্ড থাকে সবসময়। ওদেরকে কিছু করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। আমাদের যত বড় ভাই আছে সবাই ওকে চিনে৷ ওর নাম অর্ণ৷ দেখতে যতটা শান্তশিষ্ট মনে হয় ও তার বিপরীত। ওইদিন দেখলি না কিরকম বাইক নিয়ে সবাই আসলো৷ ওদের পুরো গ্যাং আছে। ওদের সাথে ঝামেলা বাঁধাতে গেলে তোর বাবারও সবকিছু সামন এসে পরবে৷ চুপচাপ থাকাই ভালো আমাদের জন্য। আমরা হৃদিতাকে ফলো করতে পারি৷ যখন সুযোগ আসবে তখন ওকে কি’ড’ন্যা’প করে নিবো।
চলবে—-