#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৯
অর্ণ অবাক হয়ে হায়াতির দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণ ভাবতে পারেনি হায়াতি ওকে থা’প্প’ড় দিবে৷ হঠাৎ থা’প্প’ড়ের জন্য হায়াতি একদমই প্রস্তুত ছিলোনা৷ অর্ণ হায়াতিকে বললো, থা’প্প’ড় মা’রলি কেন?
‘ থা’প্প’ড় মা’রার মত কাজ করেছিস তাই মে’রেছি। বেশি কথা বললে আবার থা’প্প’ড় দিবো৷
‘ কিন্তু কেন? আমি কি বলেছি যে তুই আমাকে থা’প্প’ড় দিবি?
‘ তুই বললি কেন আমি ওই ছেলেটার সাথে রিলেশনে যাবো।
‘ তো ভুল কি বলেছি! যাবিই তো৷ ওই ছেলেটার তোকে বিরক্ত করে তা আমার কাছে গোপন করেছিস৷ ওর জন্য আমার সাথে ওইরকম ব্যবহার করেছিস। এতে তো এটাই বুঝায় তুই ওই ছেলেটাকে পছন্দ করিস
এটা শুনে হায়াতি আবার থা’প্প’ড় দিলো অর্ণকে। থা’প্প’ড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণ। মনে হচ্ছে যেনো ও কোনো তবলা। যেভাবে ইচ্ছে বাজিয়ে যাচ্ছে। অর্ণ গালে হাত রেখেই হায়াতিকে বললো, আবার থা’প্প’ড় মা’রলি কেন?
‘ তুই আবার উল্টা- পাল্টা বললি কেন?
‘ রিলেশনের কথা বললেই দোষ। শুধু আমার সাথেই পারিস৷ ওই ছেলেটা যখন বিরক্ত করে তখন তো কিছু বলতে পারিস না।
‘ ওকে কিছু বলার জন্য অন্য কেও আছে
‘ কে?
‘ আছে কেও একজন
অর্ণ আবার বিএফের কথা বলতে গিয়েও বললো না। ওর আবার থা’প্প’ড় খাওয়ার ইচ্ছে নাই। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। আবার থা’প্প’ড় মা’রলে দাগ পরে যাবে৷
অর্ণ আর হায়াতির এরকম আচরনে হৃদিতা,আরিয়া,নির্ঝর, নুশান সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগেনা এদের মধ্যে অভিমান ছিলো। মুহুর্তের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেলো। এখন দেখে বুঝার উপায় নেই এদের ভিতর অভিমান ছিলো।
হায়াতি বললো, দে আমার টাকা আমায় ফেরত দে। তোর ওয়ালেটে টাকা রাখাই ছিলো আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। আমার জমানো টাকা তোকে দিয়েছিলাম।
‘ এই টাকা ফেরত দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু এখন দিবো না৷ থা’প্প’ড় মে’রে আমার গাল লাল করে দিয়েছিস৷ ব্যাথাও করছে অনেক। এখন চিকিৎসার জন্য এই টাকা লাগবে।
‘ এতগুলো টাকা দিয়ে চিকিৎসা করবি?
‘ হ্যা। তখন দিয়েছিলি কেন?
‘ দেখলাম তোর ওয়ালেটে টাকা কম আছে। তাই দিলাম।
‘ আগে তো জোর করে নিতে হত। হঠাৎ কি হলো যে নিজে থেকে এতগুলো টাকা দিয়ে দিলি
‘ আমার উপর অভিমান করে আছিস। তোর জন্য আমি কেঁদেছি। অনেক খারাপ লাগছিলো আমার। তুই ঠিকমত কথাও বলছিলি না আমার সাথে। তারপর তোর ওয়ালেট চেক করলাম। তখন ভাবলাম আমার টাকা তোকে দিয়ে দেই। ভুল ছিলো সেটা। এখন আমার টাকা ফেরত দে
‘ এখন ফেরত দেওয়ার মুড নাই
‘ তাসফিয়া কে?
‘ ওরে বাবা! ওর সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবোনা। কালকে রাফসান তোকে বলবে
‘ কি হয়েছে? তুই বল এখন
‘ না। রাফসানের কাছ থেকে শুনিস কালকে
আরিয়া বললো, ভাইয়া চল কালকে আমরা সবাই সেই ভূ’তের বাড়ি ঘুরতে যাই। এখন টাকাও আছে।
হৃদিতা বললো, ভালোই হবে।
নির্ঝর বললো, বড় আব্বুর থেকে অনুমতি নিতে হবে আগে
নুশান বললো, তোরা যাবি অনুমতি নিতে৷ আমি কিন্তু যেতে পারবোনা৷
হায়াতি বললো, আরিয়া যাবে। ও সবথেকে ছোট। ওর কথা কেও ফেলতে পারবেনা৷
অর্ণ বললো, এখন আমার কাছে টাকা নাই। পরে যাবো। কিছুদিন পর
হায়াতি বললো, টাকা নাই মানে৷ এই টাকা দিয়ে কি করবি?
‘ লাগবে।
নির্ঝর বললো, ভাইয়া আমাকে ধার দিও কিছু টাকা৷ ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যাবো।
‘ দরকার হলে আমার বাইক নিয়ে যা ভাই তাও টাকার কথা বলিস না। তোরা সবাই আমার থেকে বেশি টাকা পাস৷ সবাই তোদের টাকা দেয়৷ আমি এক ফকির। মাঝে মধ্যে এরকম লটারি পাই এর থেকেও তোরা চাস৷
অর্ণর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। নির্ঝর আগেই জানতো অর্ণ এরকম বলবে। তবে সত্যিই যদি নির্ঝরের প্রয়োজন হত তাহলে অর্ণ দিত। নির্ঝর যে ফান করেই বলেছে তা বুঝতে পেরেছে সবাই।
কিছুখন পর ওদের ছোট কাকিমা ছাদে ডাকতে আসলো ওদের। সবাইকে বললো, রাত কয়টা বাজে সেদিকে কি কারও খেয়াল আছে। রাতে কি খাওয়া বাদ আজকে? খাবার খেয়ে এসে আড্ডা দিও সবাই। এখন তাড়াতাড়ি খেতে আসো৷
সবাই নিচে গেলো৷ খাবার খেয়ে অর্ণ ওর রুমে আসলো। কিছুখন পর অর্ণ একা একা ছাদে চলে গেলো। ওর উদ্দেশ্য হচ্ছে সি’গা’রেট খাওয়া৷ এত রাতে নিচে যাওয়া যাবেনা তাই ছাদে আসলো। এখন ওরা সবাই রুমে আছে। এই সুযোগে অর্ণ ছাদে আসলো। অর্ণ সি’গা’রেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে হায়াতিকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।
হঠাৎ পিছন থেকে কেও একজন বলে উঠলো, তুই আবার সি’গা’রে’ট খাচ্ছিস!
অর্ণ তাড়াহুড়ো করে সি’গা’রে’টটা ফেলে দিলো। ভাবতে লাগলো এত রাতে হায়াতি আসলো কোথা থেকে। আজকে ওর কপালে খা’রাপ কিছু আছে। এখন এই ডা’ইনি কি করবে সেটা নিয়েই চিন্তিত অর্ণ। হায়াতি অর্ণকে বললো, তোকে নিষেধ করেছিলাম সি’গা’রে’ট খেতে৷ তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে সি’গা’রে’ট খাচ্ছিস৷ এর জন্যই খাবার শেষে ছাদে আসতে চাসনি। আমাদের পিছু ছাড়ানোর জন্য সুযোগ খুজতে ছিলি
” কপাল আমার! কি টাইমিং রে বাবা৷ আমার খা’রাপ সময়ে এই ডা’ইনিটার কাছে ফেঁসে যাই। এখন যে কত উপদেশমূলক কথা শুনতে হবে তার হিসেব নেই। যার জন্য ভয়ে থাকি সে সামনে চলে আসে৷ এখন এই ডা’ইনিকে কি বলবো৷
হায়াতি বললো, তুই বলছিলি আর কখনও সি’গা’রে’ট খাবিনা৷ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলি না! কেনো সি’গা’রে’ট খাওয়া লাগে তোর?
‘ কবে কথা দিয়েছিলাম? আমার তো এরকম কিছু মনে পরছেনা।
‘ একটু আগের থা’প্প’ড়ের কথা ভুলে গেলি! নাকি আবার থা’প্প’ড় দিয়ে মনে করাতে হবে৷
হায়াতির কথা শুনে অর্ণ গালে হাত দিয়ে রেখেছে। এই ডা’ইনিকে বিশ্বাস নেই। থা’প্প’ড় দিয়েও দিতে পারে৷ এখন কিছু একটা বলে কথা ঘুরাতে হবে৷ তা না হলে এই ডা’ইনি ছাড়বেনা৷ অর্ণ বললো, এত রাতে ছাদে থাকা যাবেনা। জ্বি’নে ধরবে কিন্তু। ওই শুনলাম কোন মেয়েকে নাকি জ্বি’নে ধরেছে৷
হায়াতি ভয়ে অর্ণর হাত ধরে রাখলো৷ অর্ণ ভালোভাবেই জানে এসব বললে হায়াতি ভয় পাবে৷ হায়াতি বললো, অর্ণ তুই ইচ্ছে করেই এসব বলছিস। তুই ভালো করেই জানিস আমি এসবে ভয় পাই৷ তারপরও এরকম বললি। তোকে তো কাল সকালে দেখে নিবে৷
‘ এখন যাবি না ছাদে থাকবি৷ ওইখানে কিন্তু কিরকম অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাচ্ছি
হায়াতি ভয় পেয়ে অর্ণকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। অর্ণ বললো, এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে বাসায় যাবি কিভাবে। ছাড় আমাকে৷
হায়াতি অর্ণকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে রাখলো। দুজনে নিচে চলে আসলো। অর্ণ ওর রুমে চলে গেলো। কিছু একটা বলে আপাতত রক্ষা পেয়েছি। তা না হলে এই ডা’ইনিটা সি’গা’রে’ট খাওয়ার জন্য আমার অবস্থা খা’রাপ করে দিত৷ এখন ডা’ইনিটা হৃদিতা আর আরিয়ার রুমে থাকবে আজকে৷ যা ভয়ে আছে আজকে ওর একা ঘুমানোর সাহস নেই৷
কিছুখন পর
হায়াতি অর্ণকে কল দিলো। অর্ণ রিসিভ করেই বললো, ঘুমোতে দিবি নাকি! কি হয়েছে বল?
‘ আমার ঘুম আসছেনা
‘ তাই বলে কি আমাকেও ঘুমোতে দিবিনা।
‘ তোর জন্যই তো এসব হয়েছে। তুই ভয় দেখালি কেন?
‘ তো কি হয়েছে! তুই তো আর একা নেই। ঘুমা আর আমাকেও ঘুমোতে দে
‘ আমাকে ভয় দেখিয়েছিস না তাই আজকে রাতে তোর ঘুম নেই
চলবে—-