হৃদহরিনী পর্ব ১৫

0
316

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৫
অর্ণ বললো, তাসফিয়া কে? আমি কোনো তাসফিয়াকে চিনি বলে তো আমার মনে হয়না। তুই কার কথা বলছিস?

অর্ণর কথা শুনে হায়াতি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হায়াতি ভাবছে একটা মানুষ হঠাৎ এরকম মিথ্যা কিভাবে বলতে পারে। তাসফিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে আর এখন বলে ও নাকি কোনো তাসফিয়াকেই চিনেনা।

হায়াতি বললো, তুই আর কত মিথ্যা বলবি। অভিনয় করে বড় আব্বুর থেকে টাকা নিলি৷ বাসায় আসার পরই তো তাসফিয়া কল দিলো আর তুই বড় আব্বুকে ইমোশনাল কথা বলে টাকা নিয়ে নিলি।

‘ তোর মত মিথ্যা বলিনা আমি৷ আমাকে যেতে হবে এখন। তোর সাথে কথা বলার সময় আমার নেই।

অর্ণ চলে যাওয়ার পর হায়াতি ভাবলো, ওর পিছু নেওয়া উচিত। তাসফিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে তা নিশ্চিত। হায়াতিও অর্ণর পিছু পিছু চলে গেলো। কিছুদূর যাওয়ার পরই অর্ণকে হারিয়ে ফেললো হায়াতি৷ হায়াতি বাসায় চলে আসলো। তখন আরিয়া,হৃদিতা,নির্ঝর,নুশান হায়াতিকে ঘুরতে যেতে বললো। হায়াতিও ওদের সাথে চলে গেলো।

*****
রাফসান,আয়ান,ইশান অনেকখন থেকে অর্ণর জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছে। কিছুখন অর্ণ আসলে রাফসান বললো, সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি ভাই। এত সময় লাগে নাকি আসতে।

‘ আর বলিস না। ওই ডা’ইনিটার জন্য তো কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে তো আব্বুকে বলে দিবে। বলবে, এই ঝামেলা গেলো এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। তবে আমার কিছু করতে হয়নি। হায়াতি ভেবেছে আমি তাসফিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো। ডা’ইনিটা আমার পিছুও নিয়েছিলো। অনেক কষ্টে ওর থেকে রেহাই পেয়েছি।

ইশান বললো, ভাই হায়াতিকে বিশ্বাস নেই৷ ও আমার আম্মুকেও কল দিতে পারে। ওর জন্য কোথাও যেতেও পারিনা।

আয়ান বললো, যদি হায়াতি ভেবে থাকে অর্ণ তাসফিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে তখন আর আমাদের কল দিবেনা। এখন কথা না বলে চল৷ এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে। আবার বেশি রাত করা যাবেনা। অনেকদূর বাইক চালিয়ে যেতে হবে।

*****
হায়াতি হৃদিতাকে বললো, ওই ছেলেটা বিরক্ত করে এখনও?

‘ ওই ঝামেলার পর তো আর বিরক্ত করছেনা। অর্ণ ভাই যা মা’রলো এরপর আর বিরক্ত করার সাহস পাবেনা৷ ভাইয়া যে এতটা রাগি তা দেখলে বুঝা যায়না। আমাদের সাথে কিরকম ফান করে৷ অথচ ভিতরে ভিতরে ভাইয়া কতটা রাগি তা সেদিন বুঝতে পেরেছি। ভাইয়ার এরকম রাগি রুপ দেখে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমার ক্লাসের সব মেয়েরা তো ভাইয়ার ফ্যান হয়ে গেলো। সবাই শুধু ভাইয়ার নাম্বার দিতে বলে।

হায়াতি বললো, এটা অর্ণকে বলিস না আবার।

হায়াতি মনে মনে ভাবতে থাকলো, অর্ণ যদি হৃদিতার এই কথা শুনে তাহলে কি হবে। ও তো ওই সব মেয়েদের সাথেই কথা বলবে।

নির্ঝর বললো, আমি এখনও এটা বুঝতে পারছি না অর্ণ ভাইয়া কিভাবে জানতে পারলো। আমরা কলেজে আসা মাত্রই অর্ণ ভাইয়া হৃদিতাকে নিয়ে বের হলো৷

হায়াতি বললো, অর্ণ কিভাবে জানলো তা আমিও বুঝতে পারছিনা৷ হৃদিতার কলেজে হয়তে অর্ণর পরিচিত কেও আছে৷ তার কাছ থেকেই শুনেছে হয়তো৷

হায়াতি হঠাৎ তাসফিয়াকে দেখলো। হায়াতি ভাবলো, অর্ণও হয়তো এখানে আছে। কিন্তু তাসফিয়ার সাথে তো অর্ণকে দেখতে পারছেনা৷ হায়াতি গিয়ে তাসফিয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো।

তাসফিয়াকে বললো, তুমি এখানে? তা একা কেন?

‘ কাজিনদের সাথে এসেছি৷

‘ অর্ণর না তোমার সাথে দেখা করার কথা। তোমার সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বের হলো।

তাসফিয়া অবাক হয়ে গেলো হায়াতির কথা শুনে। অর্ণর সাথে তাসফিয়ার দেখা করার কথা ছিলোনা। তাহলে অর্ণ কেন হায়াতিকে মিথ্যা বললো। হায়াতি কি ভাববে আমার ব্যাপারে। অর্ণ কাজটা ঠিক করেনি।

হায়াতি তাসফিয়াকে বললো, আমরা যখন রেস্টুরেন্টে ছিলাম তখনই অর্ণ বললো, বিকালে তোমার সাথে দেখা করতে হবে৷ তা না হলে তুমি রাগ করবে।

তাসফিয়া বললো, আমাকে তো অর্ণ বললো তোমরা বাসায় যাবা

‘ বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো৷ হঠাৎ অর্ণ বললো, রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা। আমি অবশ্য যেতে চাইছিলাম না কিন্তু অর্ণই জোর করে নিয়ে গেলো। আমাকে তো অনেকগুলা সেলফি তুলতে বললো। অর্ণ নাকি তোমাকে সেগুলো পাঠাবে। তা তুমি দেখোনি?

‘ কিসের সেলফি আমাকে দেখাও তো

হায়াতি ওর ফোনে তোলা সেলফিগুলো তাসফিয়াকে দেখালো। তাসফিয়া বললো, না অর্ণর সাথে আমার দেখা করার কথা আর না এই ছবিগুলো পাঠিয়েছে আমাকে। তবে অর্ণ আমাকে নিয়ে তোমার সাথে যে মিথ্যাগুলো বলেছে তা একদমই ঠিক হয়নি৷ আমি সহ্য করতে পারি কিন্তু কেও আমাকে নিয়ে এরকম মিথ্যা বলবে তা একদমই সহ্য করতে পারিনা। অনেক রাগ হয় আমার। এই দেখো তোমরা রেস্টুরেন্টে যাবা তা আমাকে বললে কি এমন হত। আমি তো রিকশাতেই যেতে চাইছিলাম কিন্তু অর্ণ আমাকে বললো, বাইকে যাওয়ার কথা। আমি তো ওকে বলিনি আমরা বিকালে দেখা করবো৷ তাহলে ও কেনো তোমার সাথে মিথ্যা কথা বললো।

‘ আমি জানিনা অর্ণ এরকমটা কেনো করলো। তুমি জিজ্ঞেস করে নিও ওকে।

‘ আমি ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করবোনা৷ আচ্ছা থাকো তোমরা। আমার কাজিনরা এসে পরেছে৷

*****

রাত ১০ টা। অর্ণ এখনও বাসায় আসেনি৷ কল দিচ্ছে সবাই তাও রিসিভ হচ্ছেনা। হায়াতি,হৃদিতা,আরিয়া,নির্ঝর,নুশান সবাই লাগাতার কল দিয়ে যাচ্ছে অর্ণকে৷ কিন্তু কারও কলই রিসিভ হচ্ছেনা। পরিবারের সবাই অনেক চিন্তায় পরে গেলো। কিছুদিন আগেই হৃদিতার কলেজে ঝামেলা এখন এই অবস্থা। সবাই বিপদের আশংকা করলো।

হায়াতি বললো, অর্ণ মনে হয় রাফসান ওদের সাথে আছে। কিন্তু ওদের কল দিচ্ছি তাও রিসিভ হচ্ছেনা।

কিছুখন পর বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে অর্ণকে দেখলো সবাই। অর্ণর আব্বু অর্ণকে কিছু বলতে যাবে তখনই সবাই থামিয়ে দিলো৷ অর্ণর ছোট কাকা ওকে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় ছিলি তুই? সবাই তোকে কল দিয়ে যাচ্ছে রিসিভ করছিস না। কলটা তো রিসিভ করে বলতে পারতিস তুই কোথায় আছিস৷ আমরা কতটা চিন্তায় ছিলাম তোর জন্য

অর্ণ বললো, বাইকে ছিলাম তাই শুনিনি৷ বাইক চালিয়ে ঘুরতে গেলাম। শহর থেকে একটু দূরে৷ তাই আসতে দেঁড়ি হলো।

মেঝো কাকা বললো, সেটা বলে গেলে কি হত৷ কল দিয়ে অন্তত আমাদের জানাতে পারতিস৷ তুই তো আর এখন বাচ্চা না যে কোনো কিছু বুঝিস না।

অর্ণর আব্বু বললো, ওকে কিছু বলে লাভ নেই। ওর থেকে এই বাচ্চা ছেলেগুলোও ভালো বুঝে।

এটা শুনে হৃদিতা,আরিয়া,নির্ঝর,নুশান অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রাখলো। অর্ণ ভাবছে এই প্রশ্ন উত্তর পর্ব কখন শেষ হবে। কখন না জানি আব্বু উল্টা- পাল্টা সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে। তাড়াতাড়ি এটা শেষ হওয়ার দরকার৷

অর্ণর মেঝো কাকি বললো, তোমরা চুপ কর তো এখন। কতটা পথ বাইক চালিয়ে এসেছে৷ ওকে ফ্রেশ হয়ে খেতে দাও। যা জিজ্ঞেস করার কাল করে নিও।

ছোট কাকি বললো, অর্ণ যাও তো ফ্রেশ হয়ে এসো।

অর্ণর আব্বু বললো, এই তোমাদের জন্যই ও এমন হয়েছে৷ ওকে কিছু বলতে গেলেই তোমরা ঢাল হয়ে সামনে পরো।

অর্ণর আম্মু বললো, এত রাতে সবাই চুপ কর এখন। কাররই খাওয়া হয়নি এখন। অর্ণকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও

***

অর্ণ, হায়াতি,হৃদিতা,আরিয়া, নির্ঝর,নুশান সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো৷ আরিয়া অর্ণকে বললো, ভাইয়া কোথায় গেছিলা তোমরা?

অর্ণ বললো, শহর থেকে দূরে একটা বনের ভিতর প্রাচিন একটা বাড়ি আছে৷ ভু’তুড়ে বাড়ি নামে পরিচিত। ওইখানে ঘুরতে গেছিলাম।

চলবে—

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here